রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৫৮
উলামায়ে কিরাম, প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ ও সম্মানীত ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, অন্যদের উপর তাদের অগ্রাধিকার প্রদান, তাদেরকে উচ্চস্থানে বসানো ও তাদের মরতবা প্রকাশ করা
প্রবীণ উলামার আদব ও সম্মানরক্ষায় নবীন উলামার করণীয়
হাদীছ নং : ৩৫৮

হযরত আবূ সা'ঈদ সামুরা ইবন জুনদুব রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমি ছিলাম একজন বালক। আমি তাঁর কাছ থেকে যা শুনতাম তা মুখস্থ করে রাখতাম। কাজেই আমার কথা বলায় এছাড়া আর কোনও প্রতিবন্ধক নেই যে, এখানে এমন অনেক লোক আছেন যারা আমার চেয়ে বেশি বয়স্ক -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৯৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২০২১৩: খারাইতী, মাকারিমুল আখলাক, হাদীছ নং ৩৫৮
44 - باب توقير العلماء والكبار وأهل الفضل وتقديمهم عَلَى غيرهم ورفع مجالسهم وإظهار مرتبتهم
قَالَ الله تَعَالَى: {قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الأَلْبَابِ} [الزمر: 9].
358 - وعن أَبي سعيد سَمُرة بنِ جُندب - رضي الله عنه - قَالَ: لقد كنتُ عَلَى عَهْدِ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - غُلاَمًا، فَكُنْتُ أَحْفَظُ عَنْهُ، فَمَا يَمْنَعُنِي مِنَ القَوْلِ إلاَّ أنَّ هَاهُنَا رِجَالًا هُمْ أسَنُّ مِنِّي. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত সামুরা ইবন জুনদুব রাযি. একজন বিশিষ্ট আলেম সাহাবী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু কথা তাঁর মুখস্থ ছিল। তিনি তাঁর সাহচর্যে থেকে অনেক কিছুই শিখেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা খুব বেশি নয়। কেন বেশি নয়, এ হাদীছে বর্ণিত তাঁর বক্তব্য দ্বারা সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তিনি এ বর্ণনায় স্বীকার করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে থেকে যা শুনতেন ও দেখতেন তা তাঁর মুখস্থ থাকত। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, তাহলে আপনি বর্ণনা কম করেন কেন? তিনি এর উত্তর দেন فما يمنعني من القول إلا أن هاهنا رجالا هم أسن مني (কাজেই আমার কথা বলায় এছাড়া আর কোনও প্রতিবন্ধক নেই যে, এখানে এমন অনেক লোক আছেন যারা আমার চেয়ে বেশি বয়স্ক)। অর্থাৎ তিনি যেহেতু অল্পবয়স্ক সাহাবী ছিলেন আর তিনি যেখানে অবস্থান করতেন সেখানে তাঁরচে' বয়োজ্যেষ্ঠ বহু সাহাবী বর্তমান ছিলেন, তাই তাঁদের সামনে হাদীছ বর্ণনা বা জ্ঞান প্রকাশ করাকে তিনি শিষ্টাচারের পরিপন্থী মনে করতেন।

এর দ্বারা বড়দের আদব ও সম্মান রক্ষার প্রতি তাঁর গভীর সতর্কতার পরিচয় পাওয়া যায়। বস্তুত বড়দের প্রতি আদব–ইহতিরাম হকপন্থী উলামায়ে কেরামের বৈশিষ্ট্য। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে বড়দের আদব–ইহতিরাম রক্ষার শিক্ষাদান করেছিলেন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁরা সে শিক্ষা অনুসরণে যত্নবান থেকেছেন। তাঁদের পারস্পরিক আদব–ইহতিরামের বহু ঘটনা হাদীছ ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে। তাঁদের পক্ষ থেকে ব্যাপক চর্চার কারণে আদব–ইহতিরাম দীনী শিক্ষার পরিমণ্ডলে এক সাধারণ রেওয়াজে পরিণত হয়। এ পরিমণ্ডলের শত শত বছরের ইতিহাসে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এ রেওয়াজটি বিশেষ দ্রষ্টব্যরূপে আপন অস্তিত্ব রক্ষা করে এসেছে। শিক্ষার্থীদের ছাপিয়ে লব্ধপ্রতিষ্ঠ উলামা পর্যন্ত প্রত্যেকেই তাঁরচে' বয়োজ্যেষ্ঠের আদব রক্ষাকে অবশ্যকর্তব্য জ্ঞান করেছে। বরং সমবয়স্ক ও সমপর্যায়ের উলামা মাশায়েখও পারস্পরিক ভক্তি–শ্রদ্ধার অনন্য দৃষ্টান্ত বজায় রাখতে সচেতন থেকেছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের উলামায়ে দেওবন্দের রয়েছে এক গৌরবজনক অবস্থান।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বড়দের সামনে জানাকথা প্রকাশেও সংযম অবলম্বন করা চাই। এটাও একপ্রকার আদব।

খ. জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আদব–ইহতিরাম রক্ষা দীনী শিক্ষাধারার এক ঐতিহ্য।
রিয়াযুস সালিহীন,মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৩৫৮ | মুসলিম বাংলা