রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৩০৭
প্রতিবেশীর হক এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপদেশ
এক প্রতিবেশীর দেয়ালে অপর প্রতিবেশীর আড়কাঠ লাগানো
হাদীছ নং : ৩০৭
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীকে নিজ দেওয়ালে আড়কাঠ গাড়তে বাঁধা না দেয়। তারপর আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, কী ব্যাপার, আমি যে তোমাদেরকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি? আল্লাহর কসম! আমি এটা তোমাদের দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করব -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬০৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৬৩৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৩৫৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৯৩৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫১৫; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৮৮১; তাবারানী, আল-মুজামুল আওসাত, হাদীছ নং ২৩২৯
হাদীছ নং : ৩০৭
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনও প্রতিবেশী যেন অপর প্রতিবেশীকে নিজ দেওয়ালে আড়কাঠ গাড়তে বাঁধা না দেয়। তারপর আবূ হুরায়রা রাযি. বলেন, কী ব্যাপার, আমি যে তোমাদেরকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি? আল্লাহর কসম! আমি এটা তোমাদের দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করব -বুখারী ও মুসলিম।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৬০৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৩৬৩৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১৩৫৩; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১৫৯৩৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীছ নং ৫১৫; বায়হাকী, আসসুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৮৮১; তাবারানী, আল-মুজামুল আওসাত, হাদীছ নং ২৩২৯
39 - باب حق الجار والوصية بِهِ
307 - وعنه: أن رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «لاَ يَمْنَعْ جَارٌ جَارَهُ أَنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً في جِدَارِهِ»، ثُمَّ يقُولُ أَبُو هريرة: مَا لِي أرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضينَ! وَاللهِ لأرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أكْتَافِكُمْ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
رُوِيَ «خَشَبَهُ» بالإضَافَة وَالجمع. وَرُويَ «خَشَبَةً» بالتنوين عَلَى الإفرادِ. وقوله: مَا لي أراكم عَنْهَا مُعْرِضينَ: يَعْني عَنْ هذِهِ السُّنَّة.
رُوِيَ «خَشَبَهُ» بالإضَافَة وَالجمع. وَرُويَ «خَشَبَةً» بالتنوين عَلَى الإفرادِ. وقوله: مَا لي أراكم عَنْهَا مُعْرِضينَ: يَعْني عَنْ هذِهِ السُّنَّة.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে বলা হয়েছে, দুই প্রতিবেশীর বাড়ির মাঝখানে যদি একটি প্রাচীর থাকে এবং সেটির মালিক তাদের একজন হয় আর সেই প্রাচীরে অন্য প্রতিবেশী নিজ ঘরের আড়কাঠ লাগাতে চায়, তবে মালিকের তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। প্রতিবেশী হিসেবে এতটুকু ছাড় তাকে দেওয়া উচিত। একজনের প্রাচীরে অন্যজন আড়কাঠ তো তখনই লাগাতে চায়, যখন নিজের প্রাচীর তৈরির মত সামর্থ্য না থাকে। এ অবস্থায় তাকে যদি নিজ প্রাচীরে আড়কাঠ লাগাতে বাধা দেওয়া হয়, তবে তার পক্ষে ঘর তৈরিই কঠিন হয়ে যাবে। এতটা নিকট প্রতিবেশীকে এরকম সংকটে ফেলা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করেছেন।
অবশ্য মালিকের নিজ মালিকানাধীন বস্তুতে অন্যের হস্তক্ষেপে বাধা দেওয়ার তো অধিকার থাকেই। আর বাধা দেওয়া অবস্থায় সেটি ব্যবহার করাও উচিত নয়। কেননা অন্যের মালিকানাধীন বস্তু তার অসম্মতিতে ব্যবহার করা জায়েয নয়। কিন্তু এটা হচ্ছে আইনের কথা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে আইনের ঊর্ধ্বে উঠে আখলাক ও মহানুভবতার উপর চলতে উৎসাহিত করেছেন। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। মহানুভবতা প্রদর্শনই ভ্রাতৃত্বের দাবি। সে দাবি অনুযায়ী নিজ প্রাচীর নিকটতম প্রতিবেশীকে তার ঠেকা অবস্থায় ব্যবহার করতে দেওয়াই উচিত, বাধা দেওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। সে কথাই এ হাদীছে বলা হয়েছে।
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. যখন এ হাদীছটি বর্ণনা করছিলেন, তখন তিনি মদীনা মুনাউওয়ারার ভারপ্রাপ্ত শাসক। শ্রোতাদের কাছে হয়তো হাদীছটি নতুন মনে হচ্ছিল। একজনের প্রাচীর আরেকজন ব্যবহার করবে আর তাতে বাধা দেওয়া যাবে না, এ বিষয়টা তাদের কাছে হয়তো অদ্ভুত লাগছিল। তাদের হাবভাব দেখে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বুঝতে পারছিলেন তারা বুঝি তাঁর বর্ণনা গ্রহণ করছে না। তাই এই ধমক দিলেন যে, কী ব্যাপার, আমি যে তোমাদেরকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি? তারপর বললেন- والله لأرمين بها بين أكتافكم (আল্লাহর কসম! আমি এটা তোমাদের দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করব)। দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করার কথাটি একটি বাগ্ধারা। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য- এটি আমি তোমাদের মধ্যে অবশ্যই প্রকাশ করব। কাউকে সজাগ ও সচেতন করার জন্য তার দুই কাঁধের মাঝখানে আঘাত করা হয়। সুতরাং হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. এ কথা বলে তাদেরকে সজাগ করতে চেয়েছেন যে, আমি তো তোমাদেরকে হাদীছ শোনাচ্ছি। এটা আমার নিজের কথা নয়। কাজেই তোমাদের উচিত খুশিমনে গ্রহণ করে নেওয়া।
ইমাম খাত্তাবী রহ. বাক্যটির অর্থ করেছেন- তোমরা যদি এ নির্দেশ খুশিমনে গ্রহণ না কর ও সন্তুষ্টচিত্তে এর উপর আমল না কর, তবে আমি তোমাদেরকে এটা মানতে বাধ্য করব এবং আড়কাঠ দেয়ালের পরিবর্তে তোমাদের কাঁধের উপর লাগিয়ে দেব। এটা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে একটি ধমক।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা প্রতিবেশীর প্রতি মহত্ত্ব প্রদর্শনের শিক্ষা পাওয়া যায়।
খ. প্রতিবেশীর সংকট ও অভাব-অনটন অবস্থায় সচ্ছল প্রতিবেশীর উচিত তার প্রতি সহযোগিতার মনোভাব রাখা।
গ. প্রত্যেক মুমিনের উচিত হাদীছের শিক্ষা খুশিমনে গ্রহণ করা।
ঘ. দীনের কোনও শিক্ষাগ্রহণে কেউ দ্বিধাভাব প্রকাশ করলে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি প্রয়োজনে তাকে ধমক দিতে পারে এবং তাকে তা মানতে বাধ্য করতে পারে।
অবশ্য মালিকের নিজ মালিকানাধীন বস্তুতে অন্যের হস্তক্ষেপে বাধা দেওয়ার তো অধিকার থাকেই। আর বাধা দেওয়া অবস্থায় সেটি ব্যবহার করাও উচিত নয়। কেননা অন্যের মালিকানাধীন বস্তু তার অসম্মতিতে ব্যবহার করা জায়েয নয়। কিন্তু এটা হচ্ছে আইনের কথা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে আইনের ঊর্ধ্বে উঠে আখলাক ও মহানুভবতার উপর চলতে উৎসাহিত করেছেন। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। মহানুভবতা প্রদর্শনই ভ্রাতৃত্বের দাবি। সে দাবি অনুযায়ী নিজ প্রাচীর নিকটতম প্রতিবেশীকে তার ঠেকা অবস্থায় ব্যবহার করতে দেওয়াই উচিত, বাধা দেওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। সে কথাই এ হাদীছে বলা হয়েছে।
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. যখন এ হাদীছটি বর্ণনা করছিলেন, তখন তিনি মদীনা মুনাউওয়ারার ভারপ্রাপ্ত শাসক। শ্রোতাদের কাছে হয়তো হাদীছটি নতুন মনে হচ্ছিল। একজনের প্রাচীর আরেকজন ব্যবহার করবে আর তাতে বাধা দেওয়া যাবে না, এ বিষয়টা তাদের কাছে হয়তো অদ্ভুত লাগছিল। তাদের হাবভাব দেখে হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বুঝতে পারছিলেন তারা বুঝি তাঁর বর্ণনা গ্রহণ করছে না। তাই এই ধমক দিলেন যে, কী ব্যাপার, আমি যে তোমাদেরকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছি? তারপর বললেন- والله لأرمين بها بين أكتافكم (আল্লাহর কসম! আমি এটা তোমাদের দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করব)। দুই কাঁধের মাঝখানে নিক্ষেপ করার কথাটি একটি বাগ্ধারা। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য- এটি আমি তোমাদের মধ্যে অবশ্যই প্রকাশ করব। কাউকে সজাগ ও সচেতন করার জন্য তার দুই কাঁধের মাঝখানে আঘাত করা হয়। সুতরাং হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. এ কথা বলে তাদেরকে সজাগ করতে চেয়েছেন যে, আমি তো তোমাদেরকে হাদীছ শোনাচ্ছি। এটা আমার নিজের কথা নয়। কাজেই তোমাদের উচিত খুশিমনে গ্রহণ করে নেওয়া।
ইমাম খাত্তাবী রহ. বাক্যটির অর্থ করেছেন- তোমরা যদি এ নির্দেশ খুশিমনে গ্রহণ না কর ও সন্তুষ্টচিত্তে এর উপর আমল না কর, তবে আমি তোমাদেরকে এটা মানতে বাধ্য করব এবং আড়কাঠ দেয়ালের পরিবর্তে তোমাদের কাঁধের উপর লাগিয়ে দেব। এটা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে একটি ধমক।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা প্রতিবেশীর প্রতি মহত্ত্ব প্রদর্শনের শিক্ষা পাওয়া যায়।
খ. প্রতিবেশীর সংকট ও অভাব-অনটন অবস্থায় সচ্ছল প্রতিবেশীর উচিত তার প্রতি সহযোগিতার মনোভাব রাখা।
গ. প্রত্যেক মুমিনের উচিত হাদীছের শিক্ষা খুশিমনে গ্রহণ করা।
ঘ. দীনের কোনও শিক্ষাগ্রহণে কেউ দ্বিধাভাব প্রকাশ করলে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি প্রয়োজনে তাকে ধমক দিতে পারে এবং তাকে তা মানতে বাধ্য করতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
