রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ২৭৩
অধ্যায়ঃ ৩৪
স্ত্রীদের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ
النساء শব্দটি দ্বারা যদিও সাধারণভাবে নারীদের বোঝানো হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষে এ শব্দটি স্ত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ অর্থে কুরআন মাজীদে শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার আছে। এরকম ব্যবহার আছে হাদীছেও। সুতরাং এখানে النساء শব্দ ব্যবহৃত হলেও মূলত স্ত্রীদের বোঝানো উদ্দেশ্য।
ইসলাম-পূর্বকালে স্ত্রীদের প্রতি মানবিক ব্যবহারই করা হত না। সবরকম মৌলিক অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হত। ইসলাম সে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটায়। ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের সম্পূরক সাব্যস্ত করেছে। দাম্পত্যসম্পর্ক পারস্পরিক শান্তি ও স্বস্তির উৎস এবং এটা মানবপ্রজন্ম সচল রাখার প্রকৃষ্ট ব্যবস্থা।
কুরআন ও হাদীছে দম্পতির জন্য মৌলিকভাবে زوج শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। زوج মানে জোড়া। স্বামী-স্ত্রী দু'জন মিলে একজোড়া জোড়ার একটি ছাড়া অন্যটি যেমন অপূর্ণ, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর একজন ছাড়া অন্যজন অপূর্ণ। কুরআন মাজীদ ইরশাদ করছে هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ “তারা তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক।৩১২
অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর একের প্রতি অন্যের প্রয়োজনটি পোশাকেরই মত। পোশাক ছাড়া যেমন কোনও মানুষ চলতে পারে না, তেমনি কোনও পুরুষ স্ত্রী ছাড়া এবং স্ত্রীও স্বামী ছাড়া যথার্থরূপে চলতে পারে না। পোশাক দ্বারা শরীরের হেফাজত হয়, লজ্জা নিবারণ হয়, দৈহিক সৌন্দর্য বর্ধন হয়, ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে ও সামাজিক মান-মর্যাদা রক্ষা হয়, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর একের দ্বারা অন্যের চরিত্র হেফাজত হয়, সামাজিক লজ্জা-শরম নিবারণ হয়, স্বাস্থ্য রক্ষা পায়, পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের বিকাশ হয় এবং তারা একে অন্যের শোভাও বটে।
দাম্পত্যজীবনের এসব কল্যাণ এবং এর মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কেবল তখনই অর্জিত হতে পারে, যখন স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের মূল্যায়ন করবে, একে অন্যের হক সম্পর্কে সচেতন থাকবে এবং পারস্পরিক কল্যাণ অনুধাবন করে একে অন্যের প্রতি সম্মানজনক ও প্রীতিপূর্ণ আচরণ করবে।
জাহিলী যুগে স্ত্রীর হক সম্পর্কে মানুষের কোনও ধারণা ছিল না। আরব-আজম নির্বিশেষে সর্বত্র মানবিক সব অধিকার পুরুষের জন্যই সংরক্ষিত ছিল। ইসলামই প্রথম এ জুলুম-অবিচারের মূলোৎপাটন করে। কুরআন ঘোষণা করে وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ‘আর স্ত্রীদেরও ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে, যেমন তাদের প্রতি (স্বামীদের) অধিকার রয়েছে।৩১৩
স্বামী তো তার অধিকার বুঝে নিতই, কিন্তু স্ত্রী দুর্বল হওয়ায় সে সবদিক থেকে বঞ্চিত থাকত। তাই ইসলাম একদিকে পুরুষের উপর নারীরও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, অন্যদিকে তার সে অধিকার আদায়ের জন্য পুরুষের উপর জোর তাগিদ করেছে। পুরুষ যাতে কোনওভাবে তার উপর জুলুম না করে এবং তার সর্বপ্রকার অধিকার আদায়ে বিশেষভাবে যত্নবান থাকে, সে ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা অত্যন্ত পূর্ণাঙ্গ।ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেসব নির্দেশনা-সম্বলিত কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।
৩১২. সূরা বাকারা (২), আয়াত ১৮৭
৩১৩. সূরা বাকারা (২), আয়াত ২২৮
‘স্ত্রীদের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ’ সম্পর্কিত দুটি আয়াত
এক নং আয়াত
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
অর্থ : 'আর তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর।"
ব্যাখ্যা
عَاشِرُو আজ্ঞাসূচক ক্রিয়াপদ। এর মূল হচ্ছে المعاشرة, যার অর্থ মেলামেশা করা, সহাবস্থান করা। এ আদেশটি পুরুষদের প্রতি। আয়াতে তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরা স্ত্রীদের সাথে মিলেমিশে থাক ও সহাবস্থান কর উত্তম আচরণের সঙ্গে। ইসলাম বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে পুরুষকে অভিভাবক বানিয়েছে। অভিভাবক হিসেবে প্রথম দায়িত্বটা স্বামীর উপরই আসে। প্রথমে তারই কর্তব্য স্ত্রীকে আপন করে নেওয়া, তাকে স্বস্তির সঙ্গে বসবাস করতে দেওয়া এবং তার প্রতি আচার-আচরণে সর্বোত্তম আখলাকের পরিচয় দেওয়া।
ইসলাম বিবাহের ব্যবস্থা দিয়েছে দৈহিক প্রশান্তি ও মানসিক স্বস্তিলাভের উদ্দেশ্যে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا
‘আল্লাহ তিনি, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার স্ত্রীকে বানিয়েছেন, যাতে সে তার কাছে এসে শান্তি লাভ করতে পারে।৩১৫
বলাবাহুল্য, স্ত্রীর কাছে এ শান্তিলাভ কেবল তখনই সম্ভব, যখন স্বামী তার সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ আচরণ করবে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যেহেতু সারাটা জীবনের জন্য, তাই জীবনভরই তার প্রতি সদ্ভাব বজায় রাখা জরুরি। কখনও স্ত্রীর দিক থেকে অপসন্দনীয় কিছু প্রকাশ পেলে সে কারণে তার প্রতি বিরূপ হয়ে যাওয়া উচিত নয়। প্রত্যেকেরই আলাদা রুচি-প্রকৃতি আছে। তাই একজনের সব আচরণ অন্যজনের মনমত নাও হতে পারে। কাজেই কোনও কোনও আচরণ মনমত না হওয়ায় তার প্রতি সম্পূর্ণ বিমুখ হয়ে যাওয়া নির্বুদ্ধিতা। এর পরিণাম সারা জীবনের অশান্তি। ক্ষেত্রবিশেষে অপ্রিয় আচরণের সম্মুখীন হলে কর্তব্য সবর করা। সে সবর প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনতে পারে । কেননা কোনও কোনও আচরণ অপ্রিয় হলেও আরও বহু আচরণ প্রীতিকর হতে পারে বৈকি। অপ্রিয় আচরণে মন্দ প্রতিক্রিয়া দেখানোর ফল কেবল সেসব প্রীতিকর আচরণ নস্যাৎ করা। তাই স্ত্রীর পক্ষ থেকে ভালোমন্দ সব আচরণের ক্ষেত্রেই নিজের পক্ষ থেকে সদ্ভাব বজায় রাখা জরুরি। সুতরাং আলোচ্য আয়াতে এর পরপরই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا (19)
'তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যে, তোমরা কোনও জিনিসকে অপছন্দ করছ অথচ আল্লাহ তাতে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।'
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَفْرَكُ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا أَخَرَ
‘কোনও মুমিন পুরুষ যেন মুমিন নারীকে (অর্থাৎ তার স্ত্রীকে) ঘৃণা না করে। তার কোনও একটি স্বভাব তার অপসন্দ হলে অন্য কোনও স্বভাবে সে খুশি হয়ে যাবে।৩১৬
দুই নং আয়াত
وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا (129)
অর্থ : 'তোমরা চাইলেও স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে সক্ষম হবে না। তবে (কোনও একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে অন্যজনকে মাঝখানে ঝুলন্ত বস্তুর মত ফেলে রাখবে। তোমরা যদি সংশোধন কর ও তাকওয়া অবলম্বন করে চল, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।৩১৭
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে যাদের একাধিক স্ত্রী আছে তাদেরকে বলা হয়েছে যে, তাদের কর্তব্য তো সব স্ত্রীর সঙ্গেই সমান আচরণ করা। তবে সকল ব্যাপারে শতভাগ সমান আচরণ কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বলা হচ্ছে, তোমরা চাইলেও স্ত্রীদের প্রতি পরিপূর্ণ সমতাপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না। তাই বলে ইচ্ছাকৃতভাবে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণও করবে না। তোমাদের পক্ষে যতটুকু সমতা রক্ষা সম্ভব, ততটুকু অবশ্যই রক্ষা করবে। যা তোমাদের ক্ষমতার অতীত, সে ব্যাপারে তোমাদের কোনও জবাবদিহিতা নেই।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ স্ত্রীদের প্রতি সবসময়ই সমতাপূর্ণ আচরণ করতেন। কিন্তু মহব্বত ও ভালোবাসার বিষয়টি আলাদা। এর উপর কারও হাত নেই। এটা আল্লাহ তাআলাই মানুষের মনে সৃষ্টি করেন। এ ক্ষেত্রে কমবেশি হতেই পারে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের মধ্যে সবকিছু সমহারে বণ্টন করার পর বলতেন-
اللَّهُمَّ هَذَا فِعْلِي فِيْمَا أَمْلِكُ، فَلَا تَلُمْنِي فِيْمَا تَمْلِكُ وَلَا أَمْلِكُ
'হে আল্লাহ! আমি যা করার ক্ষমতা রাখি, সে ক্ষেত্রে আমি তো এটা করলাম। আর যে ক্ষেত্রে আমার কোনও ক্ষমতা নেই, তুমিই ক্ষমতা রাখ, সে ব্যাপারে আমাকে দোষ দিও না।৩১৮
এর দ্বারা মহব্বত ও ভালোবাসার কথাই বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলাও এ আয়াতে জানিয়েছেন যে, মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই এ ক্ষেত্রে অক্ষম। সে নিজ মন আপন ইচ্ছামত ঘোরাতে পারে না। তার ইচ্ছার বাইরেই কোনও এক স্ত্রীর দিকে মন বেশি আকৃষ্ট হতে পারে। এটা দোষের নয়। দোষ হচ্ছে 'হক'-এর ক্ষেত্রে কমবেশি করা। তবে হাঁ, কোনও এক স্ত্রীর দিকে মন বেশি ঝুঁকলে অন্য স্ত্রীকে উপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয় নয়। সে কথাই আল্লাহ তাআলা আয়াতের পরের অংশে বলছেন যে-
فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ
‘তবে (কোনও একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে অন্যজনকে মাঝখানে ঝুলন্ত বস্তুর মত ফেলে রাখবে। অর্থাৎ আচার-আচরণে ইচ্ছাকৃতভাবে একজনের উপর অন্যজনকে এমন অগ্রাধিকার দিও না যে, অন্যজনের খবরই রাখলে না, যদিও তা তুচ্ছ ব্যাপারে হয়। যেহেতু এটা না করার ক্ষমতা আছে, তাই এর থেকে বিরত থাকা জরুরি। অন্যজনকে ঝুলন্ত রাখার মানে তার ব্যাপারে এমন বেখবর হওয়া, যদ্দরুন তার স্বামী আছে বলেই বোঝা যাবে না, আবার বাস্তবিকপক্ষে স্বামী থাকায় তাকে বিধবাও গণ্য করা হবে না। এরূপ আচরণ সম্পূর্ণ অসঙ্গত। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ يَمِيْلُ لإِحْدَاهُمَا عَلَى الأَخْرى، جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَحَدُ شِقيْهِ مَائِلٌ
'যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী আছে আর সে তাদের একজনকে রেখে অন্যজনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, সে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় হাজির হবে যে, তার শরীরের অর্ধাংশ থাকবে ঝোঁকানো।৩১৯
আসলে যার সমতাপূর্ণ আচরণ করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস নেই, তার একাধিক বিবাহ করাই উচিত নয়। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা হুকুম দেন-
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً
‘অবশ্য যদি আশঙ্কা বোধ কর যে, তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না, তবে এক স্ত্রীতে ক্ষান্ত থাক)।৩২০
তারপর আল্লাহ তাআলা বলছেন-
وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا
'তোমরা যদি সংশোধন কর ও তাকওয়া অবলম্বন করে চল, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু'। অর্থাৎ ইতোমধ্যে কোনও একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ার বা অন্যজনকে উপেক্ষা করার যে ভুল হয়ে গেছে তা যদি সংশোধন করে ফেল এবং আল্লাহ তাআলার ভয়ে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না কর; বরং উভয়ের প্রতি সমতাপূর্ণ আচরণ কর, তবে আল্লাহ তাআলা যেহেতু ক্ষমাশীল, সেহেতু তিনি অতীতের ভুলগুলো ক্ষমা করে দেবেন এবং তিনি দয়ালুও বটে, নিজ দয়ায় তিনি সংশোধনের তাওফীক দান করবেন আর সকলের সঙ্গে সমতাপূর্ণ আচরণে সাহায্য করবেন।
৩১৪. সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৯
৩১৫. সূরা আ'রাফ (৭), আয়াত ১৮৯
৩১৬. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৩৬৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭২৭; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা, হাদীছ নং ৬৪১৮
৩১৭. সূরা নিসা (৪), আয়াত ১২৯
৩১৮. সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৯৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৫১১১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯৭১; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭৫৪১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪২০৫
৩১৯. সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৯৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৯৩৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯৬৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১৩৩: সুনানুদ্ দারিমী, হাদীছ নং ২২৫২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪২০৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৭৩৮, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৪০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩২২
৩২০. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩
স্ত্রীদের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ
النساء শব্দটি দ্বারা যদিও সাধারণভাবে নারীদের বোঝানো হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষে এ শব্দটি স্ত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ অর্থে কুরআন মাজীদে শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার আছে। এরকম ব্যবহার আছে হাদীছেও। সুতরাং এখানে النساء শব্দ ব্যবহৃত হলেও মূলত স্ত্রীদের বোঝানো উদ্দেশ্য।
ইসলাম-পূর্বকালে স্ত্রীদের প্রতি মানবিক ব্যবহারই করা হত না। সবরকম মৌলিক অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হত। ইসলাম সে পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটায়। ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে পরস্পরের সম্পূরক সাব্যস্ত করেছে। দাম্পত্যসম্পর্ক পারস্পরিক শান্তি ও স্বস্তির উৎস এবং এটা মানবপ্রজন্ম সচল রাখার প্রকৃষ্ট ব্যবস্থা।
কুরআন ও হাদীছে দম্পতির জন্য মৌলিকভাবে زوج শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। زوج মানে জোড়া। স্বামী-স্ত্রী দু'জন মিলে একজোড়া জোড়ার একটি ছাড়া অন্যটি যেমন অপূর্ণ, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর একজন ছাড়া অন্যজন অপূর্ণ। কুরআন মাজীদ ইরশাদ করছে هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ “তারা তোমাদের জন্য পোশাক এবং তোমরাও তাদের জন্য পোশাক।৩১২
অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর একের প্রতি অন্যের প্রয়োজনটি পোশাকেরই মত। পোশাক ছাড়া যেমন কোনও মানুষ চলতে পারে না, তেমনি কোনও পুরুষ স্ত্রী ছাড়া এবং স্ত্রীও স্বামী ছাড়া যথার্থরূপে চলতে পারে না। পোশাক দ্বারা শরীরের হেফাজত হয়, লজ্জা নিবারণ হয়, দৈহিক সৌন্দর্য বর্ধন হয়, ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে ও সামাজিক মান-মর্যাদা রক্ষা হয়, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর একের দ্বারা অন্যের চরিত্র হেফাজত হয়, সামাজিক লজ্জা-শরম নিবারণ হয়, স্বাস্থ্য রক্ষা পায়, পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের বিকাশ হয় এবং তারা একে অন্যের শোভাও বটে।
দাম্পত্যজীবনের এসব কল্যাণ এবং এর মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কেবল তখনই অর্জিত হতে পারে, যখন স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের মূল্যায়ন করবে, একে অন্যের হক সম্পর্কে সচেতন থাকবে এবং পারস্পরিক কল্যাণ অনুধাবন করে একে অন্যের প্রতি সম্মানজনক ও প্রীতিপূর্ণ আচরণ করবে।
জাহিলী যুগে স্ত্রীর হক সম্পর্কে মানুষের কোনও ধারণা ছিল না। আরব-আজম নির্বিশেষে সর্বত্র মানবিক সব অধিকার পুরুষের জন্যই সংরক্ষিত ছিল। ইসলামই প্রথম এ জুলুম-অবিচারের মূলোৎপাটন করে। কুরআন ঘোষণা করে وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ‘আর স্ত্রীদেরও ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে, যেমন তাদের প্রতি (স্বামীদের) অধিকার রয়েছে।৩১৩
স্বামী তো তার অধিকার বুঝে নিতই, কিন্তু স্ত্রী দুর্বল হওয়ায় সে সবদিক থেকে বঞ্চিত থাকত। তাই ইসলাম একদিকে পুরুষের উপর নারীরও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, অন্যদিকে তার সে অধিকার আদায়ের জন্য পুরুষের উপর জোর তাগিদ করেছে। পুরুষ যাতে কোনওভাবে তার উপর জুলুম না করে এবং তার সর্বপ্রকার অধিকার আদায়ে বিশেষভাবে যত্নবান থাকে, সে ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা অত্যন্ত পূর্ণাঙ্গ।ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেসব নির্দেশনা-সম্বলিত কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করা যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।
৩১২. সূরা বাকারা (২), আয়াত ১৮৭
৩১৩. সূরা বাকারা (২), আয়াত ২২৮
‘স্ত্রীদের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ’ সম্পর্কিত দুটি আয়াত
এক নং আয়াত
وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ
অর্থ : 'আর তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর।"
ব্যাখ্যা
عَاشِرُو আজ্ঞাসূচক ক্রিয়াপদ। এর মূল হচ্ছে المعاشرة, যার অর্থ মেলামেশা করা, সহাবস্থান করা। এ আদেশটি পুরুষদের প্রতি। আয়াতে তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরা স্ত্রীদের সাথে মিলেমিশে থাক ও সহাবস্থান কর উত্তম আচরণের সঙ্গে। ইসলাম বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে পুরুষকে অভিভাবক বানিয়েছে। অভিভাবক হিসেবে প্রথম দায়িত্বটা স্বামীর উপরই আসে। প্রথমে তারই কর্তব্য স্ত্রীকে আপন করে নেওয়া, তাকে স্বস্তির সঙ্গে বসবাস করতে দেওয়া এবং তার প্রতি আচার-আচরণে সর্বোত্তম আখলাকের পরিচয় দেওয়া।
ইসলাম বিবাহের ব্যবস্থা দিয়েছে দৈহিক প্রশান্তি ও মানসিক স্বস্তিলাভের উদ্দেশ্যে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا
‘আল্লাহ তিনি, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার স্ত্রীকে বানিয়েছেন, যাতে সে তার কাছে এসে শান্তি লাভ করতে পারে।৩১৫
বলাবাহুল্য, স্ত্রীর কাছে এ শান্তিলাভ কেবল তখনই সম্ভব, যখন স্বামী তার সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ আচরণ করবে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যেহেতু সারাটা জীবনের জন্য, তাই জীবনভরই তার প্রতি সদ্ভাব বজায় রাখা জরুরি। কখনও স্ত্রীর দিক থেকে অপসন্দনীয় কিছু প্রকাশ পেলে সে কারণে তার প্রতি বিরূপ হয়ে যাওয়া উচিত নয়। প্রত্যেকেরই আলাদা রুচি-প্রকৃতি আছে। তাই একজনের সব আচরণ অন্যজনের মনমত নাও হতে পারে। কাজেই কোনও কোনও আচরণ মনমত না হওয়ায় তার প্রতি সম্পূর্ণ বিমুখ হয়ে যাওয়া নির্বুদ্ধিতা। এর পরিণাম সারা জীবনের অশান্তি। ক্ষেত্রবিশেষে অপ্রিয় আচরণের সম্মুখীন হলে কর্তব্য সবর করা। সে সবর প্রভূত কল্যাণ বয়ে আনতে পারে । কেননা কোনও কোনও আচরণ অপ্রিয় হলেও আরও বহু আচরণ প্রীতিকর হতে পারে বৈকি। অপ্রিয় আচরণে মন্দ প্রতিক্রিয়া দেখানোর ফল কেবল সেসব প্রীতিকর আচরণ নস্যাৎ করা। তাই স্ত্রীর পক্ষ থেকে ভালোমন্দ সব আচরণের ক্ষেত্রেই নিজের পক্ষ থেকে সদ্ভাব বজায় রাখা জরুরি। সুতরাং আলোচ্য আয়াতে এর পরপরই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا (19)
'তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যে, তোমরা কোনও জিনিসকে অপছন্দ করছ অথচ আল্লাহ তাতে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।'
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَفْرَكُ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا أَخَرَ
‘কোনও মুমিন পুরুষ যেন মুমিন নারীকে (অর্থাৎ তার স্ত্রীকে) ঘৃণা না করে। তার কোনও একটি স্বভাব তার অপসন্দ হলে অন্য কোনও স্বভাবে সে খুশি হয়ে যাবে।৩১৬
দুই নং আয়াত
وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا (129)
অর্থ : 'তোমরা চাইলেও স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে সক্ষম হবে না। তবে (কোনও একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে অন্যজনকে মাঝখানে ঝুলন্ত বস্তুর মত ফেলে রাখবে। তোমরা যদি সংশোধন কর ও তাকওয়া অবলম্বন করে চল, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।৩১৭
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে যাদের একাধিক স্ত্রী আছে তাদেরকে বলা হয়েছে যে, তাদের কর্তব্য তো সব স্ত্রীর সঙ্গেই সমান আচরণ করা। তবে সকল ব্যাপারে শতভাগ সমান আচরণ কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বলা হচ্ছে, তোমরা চাইলেও স্ত্রীদের প্রতি পরিপূর্ণ সমতাপূর্ণ আচরণ করতে পারবে না। তাই বলে ইচ্ছাকৃতভাবে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণও করবে না। তোমাদের পক্ষে যতটুকু সমতা রক্ষা সম্ভব, ততটুকু অবশ্যই রক্ষা করবে। যা তোমাদের ক্ষমতার অতীত, সে ব্যাপারে তোমাদের কোনও জবাবদিহিতা নেই।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ স্ত্রীদের প্রতি সবসময়ই সমতাপূর্ণ আচরণ করতেন। কিন্তু মহব্বত ও ভালোবাসার বিষয়টি আলাদা। এর উপর কারও হাত নেই। এটা আল্লাহ তাআলাই মানুষের মনে সৃষ্টি করেন। এ ক্ষেত্রে কমবেশি হতেই পারে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদের মধ্যে সবকিছু সমহারে বণ্টন করার পর বলতেন-
اللَّهُمَّ هَذَا فِعْلِي فِيْمَا أَمْلِكُ، فَلَا تَلُمْنِي فِيْمَا تَمْلِكُ وَلَا أَمْلِكُ
'হে আল্লাহ! আমি যা করার ক্ষমতা রাখি, সে ক্ষেত্রে আমি তো এটা করলাম। আর যে ক্ষেত্রে আমার কোনও ক্ষমতা নেই, তুমিই ক্ষমতা রাখ, সে ব্যাপারে আমাকে দোষ দিও না।৩১৮
এর দ্বারা মহব্বত ও ভালোবাসার কথাই বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলাও এ আয়াতে জানিয়েছেন যে, মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই এ ক্ষেত্রে অক্ষম। সে নিজ মন আপন ইচ্ছামত ঘোরাতে পারে না। তার ইচ্ছার বাইরেই কোনও এক স্ত্রীর দিকে মন বেশি আকৃষ্ট হতে পারে। এটা দোষের নয়। দোষ হচ্ছে 'হক'-এর ক্ষেত্রে কমবেশি করা। তবে হাঁ, কোনও এক স্ত্রীর দিকে মন বেশি ঝুঁকলে অন্য স্ত্রীকে উপেক্ষা করা বাঞ্ছনীয় নয়। সে কথাই আল্লাহ তাআলা আয়াতের পরের অংশে বলছেন যে-
فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ
‘তবে (কোনও একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে অন্যজনকে মাঝখানে ঝুলন্ত বস্তুর মত ফেলে রাখবে। অর্থাৎ আচার-আচরণে ইচ্ছাকৃতভাবে একজনের উপর অন্যজনকে এমন অগ্রাধিকার দিও না যে, অন্যজনের খবরই রাখলে না, যদিও তা তুচ্ছ ব্যাপারে হয়। যেহেতু এটা না করার ক্ষমতা আছে, তাই এর থেকে বিরত থাকা জরুরি। অন্যজনকে ঝুলন্ত রাখার মানে তার ব্যাপারে এমন বেখবর হওয়া, যদ্দরুন তার স্বামী আছে বলেই বোঝা যাবে না, আবার বাস্তবিকপক্ষে স্বামী থাকায় তাকে বিধবাও গণ্য করা হবে না। এরূপ আচরণ সম্পূর্ণ অসঙ্গত। হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
مَنْ كَانَتْ لَهُ امْرَأَتَانِ يَمِيْلُ لإِحْدَاهُمَا عَلَى الأَخْرى، جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَأَحَدُ شِقيْهِ مَائِلٌ
'যে ব্যক্তির দুই স্ত্রী আছে আর সে তাদের একজনকে রেখে অন্যজনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, সে কিয়ামতের দিন এ অবস্থায় হাজির হবে যে, তার শরীরের অর্ধাংশ থাকবে ঝোঁকানো।৩১৯
আসলে যার সমতাপূর্ণ আচরণ করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস নেই, তার একাধিক বিবাহ করাই উচিত নয়। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা হুকুম দেন-
فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوْا فَوَاحِدَةً
‘অবশ্য যদি আশঙ্কা বোধ কর যে, তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না, তবে এক স্ত্রীতে ক্ষান্ত থাক)।৩২০
তারপর আল্লাহ তাআলা বলছেন-
وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا
'তোমরা যদি সংশোধন কর ও তাকওয়া অবলম্বন করে চল, তবে (জেনে রেখ) আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু'। অর্থাৎ ইতোমধ্যে কোনও একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ার বা অন্যজনকে উপেক্ষা করার যে ভুল হয়ে গেছে তা যদি সংশোধন করে ফেল এবং আল্লাহ তাআলার ভয়ে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না কর; বরং উভয়ের প্রতি সমতাপূর্ণ আচরণ কর, তবে আল্লাহ তাআলা যেহেতু ক্ষমাশীল, সেহেতু তিনি অতীতের ভুলগুলো ক্ষমা করে দেবেন এবং তিনি দয়ালুও বটে, নিজ দয়ায় তিনি সংশোধনের তাওফীক দান করবেন আর সকলের সঙ্গে সমতাপূর্ণ আচরণে সাহায্য করবেন।
৩১৪. সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৯
৩১৫. সূরা আ'রাফ (৭), আয়াত ১৮৯
৩১৬. সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৩৬৩; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭২৭; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা, হাদীছ নং ৬৪১৮
৩১৭. সূরা নিসা (৪), আয়াত ১২৯
৩১৮. সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৯৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২৫১১১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯৭১; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭৫৪১; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪২০৫
৩১৯. সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৯৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৭৯৩৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯৬৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১৩৩: সুনানুদ্ দারিমী, হাদীছ নং ২২৫২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৪২০৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৬৭৩৮, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ৮৩৪০; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩২২
৩২০. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩
স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণের উপদেশ
হাদীছ নং : ২৭৩
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আমার নিকট থেকে নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার উপদেশ গ্রহণ কর। কেননা নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় দ্বারা। পাঁজরের হাড়ের মধ্যে উপরেরটা সবচেয়ে বেশি বাঁকা। কাজেই তুমি যদি সেটি সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি সেটি ছেড়ে দাও তবে সর্বদা বাঁকাই থাকবে। সুতরাং তোমরা আমার নিকট থেকে নারীদের সম্পর্কে (সদ্ব্যবহার করার) উপদেশ গ্রহণ কর -বুখারী ও মুসলিম।৩২১
বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে- নারী হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের মত। তুমি তাকে সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে ফেলবে আর তুমি যদি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তবে তার মধ্যে বক্রতা থাকা অবস্থায়ই তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।
সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় দ্বারা। সে কোনও উপায়েই তোমার জন্য সোজা হবে না। তুমি যদি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তার বাঁকা থাকা অবস্থায়ই উপকৃত হতে পারবে। আর যদি তাকে সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে ফেলবে। তাকে ভাঙ্গার অর্থ তার তালাক।
৩২১. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৩৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৬৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ১৮৫১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, হাদীছ নং ১৯২৭২; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭২২; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯০৯৫
হাদীছ নং : ২৭৩
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা আমার নিকট থেকে নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার উপদেশ গ্রহণ কর। কেননা নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় দ্বারা। পাঁজরের হাড়ের মধ্যে উপরেরটা সবচেয়ে বেশি বাঁকা। কাজেই তুমি যদি সেটি সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি সেটি ছেড়ে দাও তবে সর্বদা বাঁকাই থাকবে। সুতরাং তোমরা আমার নিকট থেকে নারীদের সম্পর্কে (সদ্ব্যবহার করার) উপদেশ গ্রহণ কর -বুখারী ও মুসলিম।৩২১
বুখারী ও মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে- নারী হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের মত। তুমি তাকে সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে ফেলবে আর তুমি যদি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তবে তার মধ্যে বক্রতা থাকা অবস্থায়ই তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।
সহীহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় দ্বারা। সে কোনও উপায়েই তোমার জন্য সোজা হবে না। তুমি যদি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তার বাঁকা থাকা অবস্থায়ই উপকৃত হতে পারবে। আর যদি তাকে সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে ফেলবে। তাকে ভাঙ্গার অর্থ তার তালাক।
৩২১. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩৩৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪৬৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীছ নং ১৮৫১; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা, হাদীছ নং ১৯২৭২; বায়হাকী, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৭২২; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৯০৯৫
34 - باب الوصية بالنساء
قَالَ الله تَعَالَى: {وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوف} [النساء:19]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا} [النساء: 129].
قَالَ الله تَعَالَى: {وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوف} [النساء:19]، وَقالَ تَعَالَى: {وَلَنْ تَسْتَطِيعُوا أَنْ تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِنْ تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَحِيمًا} [النساء: 129].
273 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «اسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا؛ فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلعٍ، وَإنَّ أعْوَجَ مَا في الضِّلَعِ أعْلاهُ، فَإنْ ذَهَبتَ تُقيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإنْ تَرَكْتَهُ، لَمْ يَزَلْ أعْوجَ، فَاسْتَوصُوا بالنِّساءِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية في الصحيحين: «المَرأةُ كالضِّلَعِ إنْ أقَمْتَهَا كَسَرْتَهَا، وَإن اسْتَمتَعْتَ بِهَا، اسْتَمتَعْتَ وفِيهَا عوَجٌ».
وفي رواية لمسلم: «إنَّ المَرأةَ خُلِقَت مِنْ ضِلَع، لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَريقة، فإن اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَفيهَا عوَجٌ، وإنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَها، وَكَسْرُهَا طَلاَقُهَا».
قوله: «عَوَجٌ» هُوَ بفتح العينِ والواوِ.
وفي رواية في الصحيحين: «المَرأةُ كالضِّلَعِ إنْ أقَمْتَهَا كَسَرْتَهَا، وَإن اسْتَمتَعْتَ بِهَا، اسْتَمتَعْتَ وفِيهَا عوَجٌ».
وفي رواية لمسلم: «إنَّ المَرأةَ خُلِقَت مِنْ ضِلَع، لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَريقة، فإن اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَفيهَا عوَجٌ، وإنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَها، وَكَسْرُهَا طَلاَقُهَا».
قوله: «عَوَجٌ» هُوَ بفتح العينِ والواوِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটি স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ সম্পর্কিত একটি মৌলিক নির্দেশনা। এতে তাদের প্রতি সদাচরণ করার হুকুম দেওয়ার পাশাপাশি কেন তা করতে হবে সে রহস্যও স্পষ্ট করা হয়েছে। বিষয়টা ভালোভাবে বুঝে নিলে স্ত্রীদের প্রতি সদ্ভাব বজায় রেখে চলা সহজ হয়ে যায়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন استوصوا بالنساء خيرا (তোমরা আমার নিকট থেকে নারীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার উপদেশ গ্রহণ কর)। استوصوا আজ্ঞাসূচক ক্রিয়াপদটির উৎপত্তি وصية থেকে। অর্থ আদেশ ও উপদেশ। অর্থ তোমরা আমার উপদেশ গ্রহণ কর এবং সে অনুযায়ী আমল কর। অর্থাৎ স্ত্রীদের প্রতি কোমল আচরণ করবে এবং জীবনযাপনে তাদের প্রতি সদ্ভাব বজায় রাখবে।
অতঃপর স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ কেন করতে হবে, এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ইরশাদ করেন-
فإن المرأة خلقت من ضلع وإن اعوج مافي الضلع اعلاه
(কেননা নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় দ্বারা। পাঁজরের হাড়ের মধ্যে উপরেরটা সবচেয়ে বেশি বাঁকা)। অর্থাৎ প্রথম মানবী হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামকে প্রথম মানব হযরত আদম আলাইহিস সালামের বাম পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের হাড় বাঁকা হয়ে থাকে। তার মধ্যেও উপরের হাড়টি বেশি বাঁকা। তা দ্বারাই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। ফলে সে বক্রতার আছর নারীর স্বভাবেও নিহিত আছে। এটা অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই।
বলাবাহুল্য, আল্লাহ তাআলা যাকে যেভাবে চান সৃষ্টি করেন। এতে কারও আপত্তি তোলার কোনও অবকাশ নেই। এমনিভাবে নারী স্বভাবে বক্রতা আছে বলে তাকে হেয়জ্ঞান করারও সুযোগ নেই। এটাও ভাবা সমীচীন নয় যে, এ কথা বলে নারীকে ছোট করা হয়েছে। সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন দ্বারা কাউকে ছোট করা হয় না। হাঁ, আনুমানিক কথা বলা দোষ। কিন্তু এটা অনুমান নয়। নবী যা বলেন, ওহীর ভিত্তিতেই বলেন। ওহীর কথা সত্য ও সঠিক।
তবে নারী স্বভাবের বক্রতা পুরুষের পক্ষে এক পরীক্ষা বটে। নারীকে বলা হয়নি যে, তুমি সোজা হয়ে যাও। পুরুষকে বলা হয়েছে, তুমি তাকে সমঝে চল। তার প্রতি সদা সদাচরণ কর। এটা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ। উম্মতের জন্য তা মেনে চলা জরুরি। তা জরুরি এ কারণেও যে, এটা মেনে চলার দ্বারাই দাম্পত্যজীবন স্থায়ী হতে পারে এবং দাম্পত্যজীবন শান্তিপূর্ণ হতে পারে। হাদীছে তারপর বলা হয়েছে- فان ذهبت تقيمه كسرته وإن تركته لم يزل أعوج (কাজেই তুমি যদি সেটি সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি সেটি ছেড়ে দাও তবে সর্বদা বাঁকাই থাকবে)। অর্থাৎ পাঁজরের হাড় যেমন সোজা করা যায় না, সোজা করতে গেলে ভেঙ্গে যাবে, তেমনি নারীস্বভাবকে সোজা করতে যাওয়ার চেষ্টা ভুল। সেই চেষ্টা করতে গেলে তাকে ভেঙ্গে ফেলা হবে। পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে ফেলার মধ্যে কোনও কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ সেটি বাঁকা থাকার মধ্যেই। হাড়গুলো বাঁকা বলেই বক্ষপিঞ্জর তৈরি হতে পেরেছে, যা কিনা বুকের ভেতরকার অঙ্গগুলোকে সুরক্ষা দিয়েছে। বাঁকা না হলে তা দ্বারা এ কল্যাণ লাভ হত না। তদ্রূপ নারীস্বভাবের বক্রতাও কল্যাণকরই বটে। তার মধ্যকার কল্যাণ ততক্ষণই অর্জিত হবে, যতক্ষণ তা বাঁকা থাকবে। সে কথাই হাদীছে বলা হয়েছে যে, বুকের হাড় সোজা করতে গেলে ভেঙ্গে যাবে আর ছেড়ে দিলে বাঁকা থাকবে। বলাবাহুল্য বাঁকা থাকার দ্বারাই তার স্থায়ীত্ব বজায় থাকে। তদ্রূপ স্ত্রী-স্বভাবকে সোজা করতে গেলে ভেঙ্গে যাবে অর্থাৎ দাম্পত্যজীবনের বিপর্যয় ঘটবে এবং পরিস্থিতি তালাক পর্যন্ত গড়াবে। হাদীছে ভেঙ্গে ফেলার দ্বারা তালাক হয়ে যাওয়া বোঝানো হয়েছে। আর যদি যেমন আছে তেমনই রেখে দেওয়া হয়, তবে দাম্পত্যজীবন স্থায়ী হবে। সুতরাং দাম্পত্যজীবনের স্থায়ীত্বের স্বার্থে সোজা করার ইচ্ছাই পরিত্যাগ করতে হবে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনা মোতাবেক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও স্পষ্ট করে বলেন وإن استمتعت بها استمتعت وفيها عوج (তুমি তাকে সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে ফেলবে আর তুমি যদি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তবে তার মধ্যে বক্রতা থাকা অবস্থায়ই তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে)। অর্থাৎ তুমি যদি চাও দাম্পত্যজীবন শান্তিপূর্ণ হোক, কোনও ঝগড়াঝাটি না হোক, তোমার ঘর ও ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্রের হেফাজত হোক, তোমার অর্থ-সম্পদ ও কামাই-রোযগারে বরকত হোক, তোমার সন্তান-সন্ততি নেককার হোক, তাদের উত্তম পরিচর্যা হোক, তাদের বুনিয়াদী দীনী শিক্ষাদীক্ষা হোক, তারা ইসলামী আদব-কায়দায় অভ্যস্ত হোক এবং বিবাহের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পুরোপুরি অর্জিত হোক, তবে তা ততক্ষণই সম্ভব হবে, যতক্ষণ তাকে তার বক্র অবস্থায়ই থাকতে দেবে।
পরিশেষে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন 'সুতরাং তোমরা আমার নিকট থেকে নারীদের সম্পর্কে (সদ্ব্যবহার করার) উপদেশ গ্রহণ কর। অর্থাৎ তোমরা উল্লিখিত বক্তব্য অনুধাবন কর এবং সেমতে আমার উপদেশ অনুযায়ী স্ত্রীদের প্রতি সর্বদা সদাচরণ কর।
বস্তুত এ হাদীছটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এতে পুরুষকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে সে যেন তার স্ত্রীকে পুরোপুরি সোজা করার কথা না ভাবে। সে তাকে সরল সোজা আখলাক-চরিত্রের উপর নিয়ে আসতে চাইলে তাকে বরং বিগড়েই দেবে। তারচে' যেমন আছে তেমন রাখলে তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, নারীচরিত্রের কিছুটা বক্রতা তার জন্য দোষের নয়, যেমন দোষের নয় পাজরের হাড় বাঁকা হওয়া। তাই পুরুষের জন্য সমীচীন নয় নারীর মধ্যে পুরুষ-চরিত্র খোঁজা। কেননা আল্লাহ তাআলা পুরুষ ও নারীর প্রত্যেককে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যা অপর শ্রেণীর মধ্যে পাওয়া যায় না।
প্রকাশ থাকে যে, নারীকে পাঁজরের হাড়ের সঙ্গে তুলনা করার অর্থ এ নয় যে, তাদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা বা সৎকাজের আদেশ করা যাবে না। বোঝানো উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদেরকে সংশোধন করতে হবে নম্র-কোমল পন্থায়। এমন কঠোর পন্থা অবলম্বন করা যাবে না, যা তাদের ভেঙ্গে ফেলে অর্থাৎ বিগড়ে দেয়। সংশোধনের চেষ্টা একদম না করাটাও ঠিক নয়। তাতে বরং বক্রতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সংশোধনের চেষ্টা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই জরুরি। আল্লাহ তাআলা হুকুম দেন يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا 'হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর জাহান্নাম থেকে।৩২২
সুতরাং স্ত্রী যদি শর'ঈ কর্তব্য পালনে অবহেলা করে বা কোনও পাপকর্মে লিপ্ত থাকে, তবে অবশ্যই তাকে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। এরকম বক্রতার উপর তাকে ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। এরূপ ক্ষেত্রে তাকে উপদেশ দেওয়া, তিরস্কার করা কিংবা লঘু মারারও অবকাশ আছে। ইরশাদ হয়েছে-
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ
‘আর যে সকল স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা কর, (প্রথমে) তাদেরকে বোঝাও এবং (তাতে কাজ না হলে) তাদেরকে শয়ন শয্যায় একা ছেড়ে দাও এবং (তাতেও সংশোধন না হলে) তাদেরকে প্রহার করতে পার।৩২৩
হাঁ, শরীআত যা ওয়াজিব ও আবশ্যিক করেনি, এমন ক্ষেত্রে তাদের আচার আচরণ ও কথাবার্তা অপসন্দনীয় ও অপ্রীতিকর বোধ হলে সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া বাঞ্ছনীয়, যদি না তাতে সুস্পষ্ট কোনও ক্ষতি লক্ষ করা যায়।
মোটকথা এ হাদীছ স্ত্রীদেরকে সংশোধনের চেষ্টা করতে নিষেধ করেনি। নিষেধ করা হয়েছে কেবল সংশোধনের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করতে। সেইসঙ্গে উৎসাহ দিচ্ছে যেন তাদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করা হয়, তাদের প্রতি ক্ষমাসুন্দর আচরণ করা হয়, তাদের পক্ষ থেকে অপ্রীতিকর আচরণের ক্ষেত্রে সবরের পরিচয় দেওয়া হয় এবং হিকমত ও সহনশীলতার সঙ্গে সহাবস্থান করা হয়। এর মধ্যেই দাম্পত্যজীবনের সুখ শান্তি নিহিত। এটাই বিবাহের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনের পক্ষে বেশি সহায়ক।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
প্রত্যেক স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর প্রতি সর্বদা সদ্ভাব বজায় রাখা। এ বিষয়ে বিশেষভাবে উপদেশ দেওয়ার দ্বারা এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।
৩২২. সূরা তাহরীম (৬৬), আয়াত ৭
৩২৩. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩৪
অতঃপর স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ কেন করতে হবে, এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি ইরশাদ করেন-
فإن المرأة خلقت من ضلع وإن اعوج مافي الضلع اعلاه
(কেননা নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড় দ্বারা। পাঁজরের হাড়ের মধ্যে উপরেরটা সবচেয়ে বেশি বাঁকা)। অর্থাৎ প্রথম মানবী হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামকে প্রথম মানব হযরত আদম আলাইহিস সালামের বাম পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের হাড় বাঁকা হয়ে থাকে। তার মধ্যেও উপরের হাড়টি বেশি বাঁকা। তা দ্বারাই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। ফলে সে বক্রতার আছর নারীর স্বভাবেও নিহিত আছে। এটা অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই।
বলাবাহুল্য, আল্লাহ তাআলা যাকে যেভাবে চান সৃষ্টি করেন। এতে কারও আপত্তি তোলার কোনও অবকাশ নেই। এমনিভাবে নারী স্বভাবে বক্রতা আছে বলে তাকে হেয়জ্ঞান করারও সুযোগ নেই। এটাও ভাবা সমীচীন নয় যে, এ কথা বলে নারীকে ছোট করা হয়েছে। সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন দ্বারা কাউকে ছোট করা হয় না। হাঁ, আনুমানিক কথা বলা দোষ। কিন্তু এটা অনুমান নয়। নবী যা বলেন, ওহীর ভিত্তিতেই বলেন। ওহীর কথা সত্য ও সঠিক।
তবে নারী স্বভাবের বক্রতা পুরুষের পক্ষে এক পরীক্ষা বটে। নারীকে বলা হয়নি যে, তুমি সোজা হয়ে যাও। পুরুষকে বলা হয়েছে, তুমি তাকে সমঝে চল। তার প্রতি সদা সদাচরণ কর। এটা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ। উম্মতের জন্য তা মেনে চলা জরুরি। তা জরুরি এ কারণেও যে, এটা মেনে চলার দ্বারাই দাম্পত্যজীবন স্থায়ী হতে পারে এবং দাম্পত্যজীবন শান্তিপূর্ণ হতে পারে। হাদীছে তারপর বলা হয়েছে- فان ذهبت تقيمه كسرته وإن تركته لم يزل أعوج (কাজেই তুমি যদি সেটি সোজা করতে যাও তবে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি সেটি ছেড়ে দাও তবে সর্বদা বাঁকাই থাকবে)। অর্থাৎ পাঁজরের হাড় যেমন সোজা করা যায় না, সোজা করতে গেলে ভেঙ্গে যাবে, তেমনি নারীস্বভাবকে সোজা করতে যাওয়ার চেষ্টা ভুল। সেই চেষ্টা করতে গেলে তাকে ভেঙ্গে ফেলা হবে। পাঁজরের হাড় ভেঙ্গে ফেলার মধ্যে কোনও কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ সেটি বাঁকা থাকার মধ্যেই। হাড়গুলো বাঁকা বলেই বক্ষপিঞ্জর তৈরি হতে পেরেছে, যা কিনা বুকের ভেতরকার অঙ্গগুলোকে সুরক্ষা দিয়েছে। বাঁকা না হলে তা দ্বারা এ কল্যাণ লাভ হত না। তদ্রূপ নারীস্বভাবের বক্রতাও কল্যাণকরই বটে। তার মধ্যকার কল্যাণ ততক্ষণই অর্জিত হবে, যতক্ষণ তা বাঁকা থাকবে। সে কথাই হাদীছে বলা হয়েছে যে, বুকের হাড় সোজা করতে গেলে ভেঙ্গে যাবে আর ছেড়ে দিলে বাঁকা থাকবে। বলাবাহুল্য বাঁকা থাকার দ্বারাই তার স্থায়ীত্ব বজায় থাকে। তদ্রূপ স্ত্রী-স্বভাবকে সোজা করতে গেলে ভেঙ্গে যাবে অর্থাৎ দাম্পত্যজীবনের বিপর্যয় ঘটবে এবং পরিস্থিতি তালাক পর্যন্ত গড়াবে। হাদীছে ভেঙ্গে ফেলার দ্বারা তালাক হয়ে যাওয়া বোঝানো হয়েছে। আর যদি যেমন আছে তেমনই রেখে দেওয়া হয়, তবে দাম্পত্যজীবন স্থায়ী হবে। সুতরাং দাম্পত্যজীবনের স্থায়ীত্বের স্বার্থে সোজা করার ইচ্ছাই পরিত্যাগ করতে হবে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফের অপর এক বর্ণনা মোতাবেক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও স্পষ্ট করে বলেন وإن استمتعت بها استمتعت وفيها عوج (তুমি তাকে সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে ফেলবে আর তুমি যদি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তবে তার মধ্যে বক্রতা থাকা অবস্থায়ই তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে)। অর্থাৎ তুমি যদি চাও দাম্পত্যজীবন শান্তিপূর্ণ হোক, কোনও ঝগড়াঝাটি না হোক, তোমার ঘর ও ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্রের হেফাজত হোক, তোমার অর্থ-সম্পদ ও কামাই-রোযগারে বরকত হোক, তোমার সন্তান-সন্ততি নেককার হোক, তাদের উত্তম পরিচর্যা হোক, তাদের বুনিয়াদী দীনী শিক্ষাদীক্ষা হোক, তারা ইসলামী আদব-কায়দায় অভ্যস্ত হোক এবং বিবাহের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পুরোপুরি অর্জিত হোক, তবে তা ততক্ষণই সম্ভব হবে, যতক্ষণ তাকে তার বক্র অবস্থায়ই থাকতে দেবে।
পরিশেষে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন 'সুতরাং তোমরা আমার নিকট থেকে নারীদের সম্পর্কে (সদ্ব্যবহার করার) উপদেশ গ্রহণ কর। অর্থাৎ তোমরা উল্লিখিত বক্তব্য অনুধাবন কর এবং সেমতে আমার উপদেশ অনুযায়ী স্ত্রীদের প্রতি সর্বদা সদাচরণ কর।
বস্তুত এ হাদীছটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এতে পুরুষকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে সে যেন তার স্ত্রীকে পুরোপুরি সোজা করার কথা না ভাবে। সে তাকে সরল সোজা আখলাক-চরিত্রের উপর নিয়ে আসতে চাইলে তাকে বরং বিগড়েই দেবে। তারচে' যেমন আছে তেমন রাখলে তার দ্বারা উপকৃত হতে পারবে। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, নারীচরিত্রের কিছুটা বক্রতা তার জন্য দোষের নয়, যেমন দোষের নয় পাজরের হাড় বাঁকা হওয়া। তাই পুরুষের জন্য সমীচীন নয় নারীর মধ্যে পুরুষ-চরিত্র খোঁজা। কেননা আল্লাহ তাআলা পুরুষ ও নারীর প্রত্যেককে বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যা অপর শ্রেণীর মধ্যে পাওয়া যায় না।
প্রকাশ থাকে যে, নারীকে পাঁজরের হাড়ের সঙ্গে তুলনা করার অর্থ এ নয় যে, তাদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা বা সৎকাজের আদেশ করা যাবে না। বোঝানো উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাদেরকে সংশোধন করতে হবে নম্র-কোমল পন্থায়। এমন কঠোর পন্থা অবলম্বন করা যাবে না, যা তাদের ভেঙ্গে ফেলে অর্থাৎ বিগড়ে দেয়। সংশোধনের চেষ্টা একদম না করাটাও ঠিক নয়। তাতে বরং বক্রতা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সংশোধনের চেষ্টা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই জরুরি। আল্লাহ তাআলা হুকুম দেন يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا 'হে মুমিনগণ! নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর জাহান্নাম থেকে।৩২২
সুতরাং স্ত্রী যদি শর'ঈ কর্তব্য পালনে অবহেলা করে বা কোনও পাপকর্মে লিপ্ত থাকে, তবে অবশ্যই তাকে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। এরকম বক্রতার উপর তাকে ছেড়ে দেওয়ার অবকাশ নেই। এরূপ ক্ষেত্রে তাকে উপদেশ দেওয়া, তিরস্কার করা কিংবা লঘু মারারও অবকাশ আছে। ইরশাদ হয়েছে-
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ
‘আর যে সকল স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা কর, (প্রথমে) তাদেরকে বোঝাও এবং (তাতে কাজ না হলে) তাদেরকে শয়ন শয্যায় একা ছেড়ে দাও এবং (তাতেও সংশোধন না হলে) তাদেরকে প্রহার করতে পার।৩২৩
হাঁ, শরীআত যা ওয়াজিব ও আবশ্যিক করেনি, এমন ক্ষেত্রে তাদের আচার আচরণ ও কথাবার্তা অপসন্দনীয় ও অপ্রীতিকর বোধ হলে সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া বাঞ্ছনীয়, যদি না তাতে সুস্পষ্ট কোনও ক্ষতি লক্ষ করা যায়।
মোটকথা এ হাদীছ স্ত্রীদেরকে সংশোধনের চেষ্টা করতে নিষেধ করেনি। নিষেধ করা হয়েছে কেবল সংশোধনের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করতে। সেইসঙ্গে উৎসাহ দিচ্ছে যেন তাদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করা হয়, তাদের প্রতি ক্ষমাসুন্দর আচরণ করা হয়, তাদের পক্ষ থেকে অপ্রীতিকর আচরণের ক্ষেত্রে সবরের পরিচয় দেওয়া হয় এবং হিকমত ও সহনশীলতার সঙ্গে সহাবস্থান করা হয়। এর মধ্যেই দাম্পত্যজীবনের সুখ শান্তি নিহিত। এটাই বিবাহের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনের পক্ষে বেশি সহায়ক।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
প্রত্যেক স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর প্রতি সর্বদা সদ্ভাব বজায় রাখা। এ বিষয়ে বিশেষভাবে উপদেশ দেওয়ার দ্বারা এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।
৩২২. সূরা তাহরীম (৬৬), আয়াত ৭
৩২৩. সূরা নিসা (৪), আয়াত ৩৪
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
