রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ১৯৮
অন্যকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করে
নিজে তার বিপরীত করার কঠিন শাস্তি

'আমর বিল মা'রূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার তথা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার দায়িত্ব এজন্যই দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ অসৎকাজ ছেড়ে দিয়ে সৎকাজে লিপ্ত হয়, এককথায় তারা শরী'আতের ওপর চলে। এ দায়িত্ব কোনও বিনোদনমূলক শিল্প নয় যে, কিছু লোক যত্নের সাথে এটা শিখবে, তারপর সুন্দর উপস্থাপনা ও আকর্ষণীয় অঙ্গভঙ্গি দ্বারা তা মঞ্চস্থ করে দর্শক ও শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করবে। বরং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের সংশোধন ও তাদের আমল-আখলাকের পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদেরকে আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত বান্দারূপে গড়ে তোলা, যাতে তারা আখিরাতে জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে জান্নাত লাভের উপযুক্ত হতে পারে। আল্লাহ তা'আলার প্রকৃত বান্দা হয়ে ওঠা যেমন দর্শক ও শ্রোতার প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন বক্তার নিজেরও। যাকে সৎকাজের আদেশ করা হবে তার যেমন সৎকাজ করা দরকার, তেমনি তা দরকার আদেশদাতারও। অসৎকাজ থেকে বিরত থাকা যেমন অসৎ কাজকারীরও দরকার, তেমনি দরকার যে ব্যক্তি তাকে নিষেধ করবে তারও।
সুতরাং যারা 'আমর বিল মারূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার'-এর দায়িত্ব পালন করবে, তাদের নিজেদেরও কর্তব্য সৎকাজ আঞ্জাম দেওয়া ও অসৎকাজ থেকে বিরত থাকায় যত্নবান হওয়া।
এ ব্যাপারে তাদের যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন এ কারণেও যে, নিজের আমল ঠিক না থাকলে আদেশ-নিষেধের বিশেষ আছর হয় না। বরং যাদেরকে আদেশ-নিষেধ করা হয় তারা এটাকে তামাশা হিসেবে দেখে এবং মনে মনে তিরস্কার করে যে, এহ্, নিজে আমল করে না আবার অন্যকে নসীহত করে বেড়ায়। এমনকি আমলবিহীন বক্তার বক্তব্যে অন্যরা আমলের প্রতি উৎসাহী তো হয়ই না; উল্টো তাদের অন্তর থেকে আমলের গুরুত্ব হালকা হয়ে যায়। এটা তো অতি গুরুতর ব্যাপার হল যে, যে ওয়াজ-নসীহতের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে আমলওয়ালা বানানো, উল্টো তা তাদের আমলবিমুখ হওয়ার কারণ হয়ে গেল। নিশ্চয়ই এ জাতীয় ওয়াজ-নসীহত করা অপেক্ষা না করাই ভালো। তাই কুরআন ও হাদীছে এ জাতীয় ওয়াজ-নসীহতের কঠোর নিন্দা করা হয়েছে এবং আখিরাতে এরূপ লোকদের কঠিন শাস্তিতে নিপতিত হওয়ার সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে।
প্রকাশ থাকে যে, ওয়াজ-নসীহতের জন্য নিজের আমল পুরোপুরি ঠিক থাকা শর্ত নয়। শর্ত হচ্ছে আমলের প্রতি গাফেল না থাকা। যে ব্যক্তি নিজে আমলে সচেষ্ট থাকে, তারপর কিছু ভুলত্রুটিও হয়ে যায়, তার জন্য ওয়াজ-নসীহত ও আদেশ-নিষেধ করা নিষেধ নয়; বরং এরূপ ব্যক্তির আদেশ-নিষেধ অন্যদের সংশোধনের পাশাপাশি নিজ সংশোধনের পক্ষেও সহায়ক হয়। আদেশ-নিষেধ ও ওয়াজ-নসীহতের জন্য পরিপূর্ণ আমলওয়ালা হওয়ার শর্ত করা হলে এ কাজ করার লোকই পাওয়া যাবে না। তাতে শরী'আতের এ গুরুত্বপূর্ণ বিধানটি সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে যাবে। ফলে অন্যায়-অসৎকর্ম বাড়তেই থাকবে। তা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না।
ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করে নিজে তার বিপরীত করলে সেজন্য যে কঠিন শাস্তির সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে— সে সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আমরা নিচে তার বঙ্গানুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।

‘অন্যকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করে নিজে তার বিপরীত করার কঠিন শাস্তি' সম্পর্কিত কিছু আয়াত

এক নং আয়াত

أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ (44)

অর্থ : তোমরা কি অন্য লোকদেরকে পুণ্যের আদেশ কর আর নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াতও কর। তোমরা কি এতটুকুও বোঝ না? সূরা বাকারা (২), আয়াত ৪৪

ব্যাখ্যা

এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের কর্মপন্থার কারণে তিরস্কার করেছেন। তারা মানুষকে নেককাজের হুকুম করত। আত্মীয়তা রক্ষা করা, মানুষের প্রতি সদ্ব্যবহার করা, আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা ইত্যাদি বিষয়ে আদেশ-উপদেশ দিত। কিন্তু নিজেরা তা পালন করত না। মানুষকে সৎকর্মের হুকুম দিয়ে নিজে তা পালন না করা যে গর্হিত কাজ তা তারা জানত। কারণ তারা তাদের কিতাব তাওরাত ও ইন্‌জীল পড়ত। তাতে এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে। জেনেশুনে এরূপ গর্হিত কাজ করা অধিকতর নিন্দনীয়। তা সত্ত্বেও তারা এরূপ করত। তাই আল্লাহ তা'আলা তাদের তিরস্কার করেছেন এবং এটাকে একটা নির্বুদ্ধিতা সাব্যস্ত করেছেন। কারণ যে-কোনও বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলবে যে, যে কাজটি ভালো, অন্যকে তা করতে বলে নিজে কিভাবে করা হতে বিরত থাকা যায়? কিংবা নিজে তা না করে অন্যকে কিভাবে করতে বলা যায়? বাস্তবিকই তা যদি ভালো হয় তবে তো আগে নিজেরই তা করা উচিত। সর্ববিচারেই অন্যকে ভালো কাজ করতে বলে নিজে তা থেকে বিরত থাকা নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক।
এ তিরস্কারটি যদিও বনী ইসরাঈলকে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে যে-কেউ এরূপ কাজ করবে তার জন্যই এটা প্রযোজ্য। সুতরাং আমরা যাতে এ তিরস্কারের আওতায় না পড়ি, সেজন্য আমাদের উচিত হবে অন্যকে কোনও ভালো কাজ করতে বললে নিজেও তা করতে সচেষ্ট থাকা। আর অন্যকে সৎকাজ করতে বলা তো শরী'আতের এক অবশ্যপালনীয় হুকুম। কাজেই অন্যকে তা বলতেই হবে। অন্যকে যখন বলতেই হবে, তখন নিজেরও সে আমলে যত্নবান থাকার চেষ্টা করতে হবে।

দুই নং আয়াত

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ (2) كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ (3)

অর্থ : হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা কর না? আল্লাহর কাছে এ বিষয়টা অতি অপসন্দনীয় যে, তোমরা এমন কথা বলবে, যা তোমরা কর না।সুরা সাফ্ (৬১), আয়াত ২-৩

ব্যাখ্যা

বর্ণিত আছে যে, কোনও কোনও মুসলিম বলেছিল- কোন আমলটি আল্লাহর বেশি প্রিয় তা জানতে পারলে আমরা নিজেদের জানমাল তাতে খরচ করতাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেন-

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ (4)

"বস্তুত আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে এভাবে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে, যেন তারা শিশাঢালা প্রাচীর। সূরা সাফ (৬১), আয়াত ৪
অতঃপর উহুদের যুদ্ধ হল। তখন দেখা গেল কাফেরদের পক্ষ থেকে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু হলে কেউ কেউ জান নিয়ে পালাল। এ পলায়ন তাদের কথার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হল না। তাই আল্লাহ তা'আলা আলোচ্য আয়াতে তাদেরকে তিরস্কার করেছেন যে, যা পারবে না তা বল কেন? মুখে তো বলেছিলে আল্লাহ তা'আলার সর্বাপেক্ষা প্রিয় কাজটি সম্পর্কে জানতে পারলে তার জন্য জানমাল দিয়ে দেবে। কই, এখন যে পালালে? সুতরাং আগেভাগে বড় বড় দাবি করে বসো না; বরং যখন জানমাল দেওয়ার পরিস্থিতি আসে, তখন অকাতরে জানমাল দিয়ে দাও।
প্রকাশ থাকে যে, উহুদের যুদ্ধে প্রথমদিকে জয়ের পালা মুসলমানদের পক্ষেই ছিল। পরিস্থিতি অনুকূলে দেখতে পাওয়ায় কোনও কোনও সাহাবীর পক্ষ থেকে সতর্কতার ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা দেখা দিয়েছিল। সে অবকাশে তাদের ওপর কাফেরদের পক্ষ থেকে অতর্কিত আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। অপ্রস্তুত অবস্থার সে আক্রমণ প্রতিহত করতে না পেরে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। কিন্তু পরক্ষণেই তাঁরা সম্বিত ফিরে পান এবং পূর্ণোদ্যমে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাতে অনেকেই শহীদ হয়ে যান এবং অনেকে মারাত্মকভাবে আহত হন। ওই যে ক্ষণিকের অসতর্কতা ও জান নিয়ে পলায়ন, এটা তাদের উচ্চমর্যাদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না বলেই আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে তিরস্কার করেছেন।
আমাদের মত দুর্বলদের দ্বারা এরচে' অনেক বড় বড় দোষত্রুটি হয়ে যায়। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে তিরস্কার করেছেন বলে আমরাও তাদের তিরস্কার শুরু করে দেব বা তাদের মর্যাদা খাটো করে দেখব, এর কোনও বৈধতা থাকতে পারে না। দীন ও ঈমানের জন্য তাঁরা যে ত্যাগ ও কুরবানী স্বীকার করেছেন, যার বদৌলতে আজ আমরা বিনা ত্যাগেই দীন ও ঈমানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, সেজন্য জীবনভর তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এবং আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাদের জন্য উত্তম প্রতিদানের দু'আ করা উচিত।
প্রকৃতপক্ষে এ আয়াত আমাদের জন্যই বেশি প্রযোজ্য। আমরাই মুখে বড় বড় কথা বলি, কিন্তু আমল করি তার সামান্যই। আমাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল বড় কম। আদেশ-উপদেশ এমনভাবে দেওয়া হয়, যেন নিজের আমল কত উন্নত। কার্যত সময় কাটে চরম গাফলাতির মধ্যে। তাই 'তোমরা যা কর না তা কেন বল'- এ তিরস্কার বাণী আমাদের বেলায়ই বেশি খাটে। সুতরাং আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত এবং মুখে যা বলি বাস্তবেও যেন অবশ্যই তা করি, সেই চেষ্টা করা উচিত।

তিন নং আয়াত

وقال تعالى إختبارًا عَنْ شُعَيْبٍ ﷺ وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ

অর্থ : আল্লাহ তা'আলা হযরত শু'আইব আলাইহিস সালাম-এর বাণী উদ্ধৃত করেন- আমার এমন কোনও ইচ্ছা নেই যে, আমি যেসব বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করি, তোমাদের পেছনে গিয়ে নিজেই তা করতে থাকব।সূরা হুদ (১১), আয়াত ৮৮

ব্যাখ্যা

হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম একজন উচ্চস্তরের নবী। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে মাদয়ান ও আয়কাবাসীদের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। এ স্থানদু'টি বর্তমান সৌদি আরবের উত্তর দিকে আকাবা উপসাগরের পূর্বে অবস্থিত। এখানকার অধিবাসীরা ছিল মূর্তিপূজারী। তাদের আখলাক-চরিত্র ছিল অত্যন্ত নিম্নপর্যায়ের। তারা দস্যুবৃত্তি করত, মাপে কম দিত এবং মানুষকে ঠকাত। আল্লাহ তা'আলা তাদের হিদায়াতের জন্য হযরত শুআইব আলাইহিস সালামকে নবী করে পাঠান। তিনি তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন এবং দস্যুবৃত্তি পরিত্যাগ ও মানুষের হক নষ্ট করা হতে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি একজন সুবক্তা ছিলেন। তাঁকে 'খতীবুল আম্বিয়া' অর্থাৎ নবীগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বক্তা বলা হয়ে থাকে। তিনি আদেশ-উপদেশদানের একপর্যায়ে তাদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন-

وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ

‘আমার এমন কোনও ইচ্ছা নেই যে, আমি যেসব বিষয়ে তোমাদেরকে নিষেধ করি, তোমাদের পেছনে গিয়ে নিজেই তা করতে থাকব।'
অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে যেসব বিষয়ে নিষেধ করি সেগুলো তো মন্দ কাজ। আর তা যখন মন্দ তখন তাতে আমার লিপ্ত হওয়ার প্রশ্নই আসে না। হাঁ, যদি তা ভালো কাজ হত, তবে আমি অবশ্যই করতাম। সে ক্ষেত্রে তোমাদেরকে তা করতে নিষেধ করতাম না। মোটকথা আমি তোমাদের বলব একটা আর নিজে করব অন্যটা, সেরকম লোক আমি নই। আমি একজন নবী। আর নবীগণ যা বলেন, নিজেরা তা করেও দেখান, যাতে মানুষ তাদের আমলকে নিজেদের আমলের জন্য আদর্শরূপে গ্রহণ করতে পারে।
হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের এ বক্তব্য উল্লেখ করার দ্বারা সবকালের আদেশ-নিষেধকারীকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যে, তারাও যেন মানুষকে যা বলে নিজেরা তার বিপরীত না করে; বরং যা বলে, সে ব্যাপারে নিজেদের আমল যেন অন্যদের জন্য নমুনাস্বরূপ হয়।
হাদীছ নং: ১৯৮
হযরত উসামা ইবন যায়দ ইবন হারিছা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন কোনও ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তাতে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসবে। সে তার চারদিকে এমনভাবে পাক খেতে থাকবে, যেমন গাধা ঘানির চারদিকে পাক খেয়ে থাকে। এ অবস্থায় জাহান্নামবাসীরা তার কাছে জমা হয়ে যাবে। তারা তাকে বলবে, হে অমুক, তোমার কী হল? তুমি না আমাদেরকে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করতে? তখন সে বলবে, অবশ্যই, আমি সৎকাজের আদেশ করতাম বটে, কিন্তু নিজে তা পালন করতাম না এবং আমি অসৎকাজে নিষেধ করতাম, কিন্তু নিজে তাতে লিপ্ত হতাম -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৩২৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৯৮৯: বায়হাকী, শুআবুল ঈমান,হাদীছ নং ৭১৬১; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪১৫৮; মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীছ নং ৫৫৭)
24 - باب تغليظ عقوبة من أمر بمعروف أَوْ نهى عن منكر وخالف قوله فعله

قَالَ الله تَعَالَى: {أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلا تَعْقِلُونَ} [البقرة: 44]، وَقالَ تَعَالَى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لا تَفْعَلُونَ كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لا تَفْعَلُونَ} [الصف: 2 - 3]، وَقالَ تَعَالَى إخبارًا عن شعيب - صلى الله عليه وسلم: {وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ} [هود:88].
198 - وعن أَبي زيد أسامة بن حارثة رضي الله عنهما، قَالَ: سمعت رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «يُؤْتَى بالرَّجُلِ يَوْمَ القيَامَةِ فَيُلْقَى في النَّارِ، فَتَنْدَلِقُ أقْتَابُ بَطْنِهِ فَيدُورُ بِهَا كَمَا يَدُورُ الحِمَارُ في الرَّحَى، فَيَجْتَمِعُ إِلَيْه أهْلُ النَّارِ، فَيَقُولُونَ: يَا فُلانُ، مَا لَكَ؟ أَلَمْ تَكُ تَأمُرُ بالمعْرُوفِ وَتنهَى عَنِ المُنْكَرِ؟ فَيقُولُ: بَلَى، كُنْتُ آمُرُ بِالمَعْرُوفِ وَلا آتِيهِ، وأنْهَى عَنِ المُنْكَرِ وَآتِيهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
قوله: «تَنْدلِقُ» هُوَ بالدالِ المهملةِ، ومعناه تَخرُجُ. وَ «الأَقْتَابُ»: الأمعاءُ، واحدها قِتْبٌ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে বেআমল আদেশ-নিষেধকারী সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে। বলা হয়েছে, জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পর তার নাড়িভূড়ি বের হয়ে পড়বে, তারপর সেই যন্ত্রণায় সে গাধা যেমন ঘানির চারদিকে ঘোরে তেমনি নাড়িভূড়ির চারদিকে ঘুরতে থাকবে। অথবা এর অর্থ নাড়িভুঁড়ি নিয়ে সে ঘুরতে থাকবে। কোনও কোনও ব্যাখ্যাকার বলেন, নাড়িভুঁড়ি তাকে পেচিয়ে ধরবে আর এ অবস্থায় সে ঘুরতে থাকবে। তার জাহান্নামে প্রবেশ এবং এরকম কঠিন শাস্তিতে নিপতিত দেখে অন্যান্য জাহান্নামীগণ, যাদেরকে সে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করত আর তাতে কর্ণপাত না করায় তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়েছে, আশ্চর্য হয়ে যাবে। কেননা সে যেহেতু তাদেরকে সৎকাজের আদেশ করত ও অসৎকাজ করতে নিষেধ করত, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার নিজের সে অনুযায়ী চলার কথা, আর সে হিসেবে তার ঠিকানা হওয়ার কথা জান্নাত। তার পরিবর্তে সে জাহান্নামে কেন? কেনই বা তার শাস্তি তাদেরচে'ও কঠিন? তারা তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করবে। সে উত্তরে বলবে, আমি আদেশ-নিষেধ করতাম বটে, কিন্তু নিজে আমল করতাম না। সেজন্যই তার এ পরিণতি। সে যখন আদেশ-নিষেধ করত, তখন তো তার জানা ছিল আল্লাহর অবাধ্যতা করার পরিণাম কী। সে হিসেবে তার অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকা উচিত ছিল এবং উচিত ছিল সে ভয়ে ভীত হয়ে তাঁর অবাধ্যতা হতে দূরে থাকা ও কোনও পাপকর্মে লিপ্ত না হওয়া। সে তার ইলম অনুযায়ী আমল করেনি বিধায় আজ তাকে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি থেকে রক্ষা করুন এবং ইলম অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দিন- আমীন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করার পাশাপাশি নিজে সে অনুযায়ী আমল করা চাই ।

খ. যে আলেম তার ইলম অনুযায়ী আমল করে না, তার শাস্তি ইলমবিহীন বেআমল অপেক্ষা কঠিন। তাই ইলমওয়ালা ব্যক্তির উচিত আমলের প্রতি অন্যদের তুলনায় বেশি মনোযোগী থাকা।

গ. জাহান্নামে কেবল আগুনে জ্বলাই নয়; তাছাড়াও নানারকম শাস্তি আছে। প্রত্যেকটি শাস্তি দুঃসহ। সুতরাং সর্বদা জাহান্নামের শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া উচিত। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সকলকে জাহান্নামের আযার থেকে রক্ষা করুন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)