রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ১৭৪
কল্যাণকর কাজের পথ দেখানো এবং সৎ পথ অথবা ভ্রান্ত পথের দিকে ডাকা।
হিদায়াতের দিকে ডাকার ফযীলত ও গোমরাহীর পথে ডাকার পরিণাম
হাদীছ নং: ১৭৪
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও হিদায়াতের দিকে ডাকে, তার জন্য তার অনুসরণকারীদের সমান ছাওয়াব রয়েছে। এটা তাদের ছাওয়াব কোনও অংশে কমাবে না। আর যে ব্যক্তি কোনও গোমরাহীর দিকে ডাকে, তার ওপর তার অনুসরণকারীদের সমান গুনাহ পড়বে। এটা তাদের গুনাহ কোনও অংশে কমাবে না- মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬৭৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২০৬; সুনানে আবূ দাউদ হাদীছ নং ৪৬০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬৭৪)
হাদীছ নং: ১৭৪
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও হিদায়াতের দিকে ডাকে, তার জন্য তার অনুসরণকারীদের সমান ছাওয়াব রয়েছে। এটা তাদের ছাওয়াব কোনও অংশে কমাবে না। আর যে ব্যক্তি কোনও গোমরাহীর দিকে ডাকে, তার ওপর তার অনুসরণকারীদের সমান গুনাহ পড়বে। এটা তাদের গুনাহ কোনও অংশে কমাবে না- মুসলিম। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ২৬৭৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ২০৬; সুনানে আবূ দাউদ হাদীছ নং ৪৬০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৬৭৪)
20 - باب في الدلالة عَلَى خير والدعاء إِلَى هدى أَوْ ضلالة
174 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدَىً، كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أجُورِ مَنْ تَبِعَه، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أجُورِهمْ شَيئًا، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيهِ مِنَ الإثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيئًا». رواه مسلم. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হিদায়াতের পথে ডাকার মানে নেক কাজের দিকে ডাকা। আল্লাহ তা'আলা যা-কিছু করতে আদেশ করেছেন তা করা যেমন নেক কাজ, তেমনি যা-কিছু করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকাও নেক কাজ। সুতরাং যে ব্যক্তি শরী'আতের আদিষ্ট কোনও কাজের দিকে ডাকবে,সে ওইসকল লোকের সমান ছাওয়াব লাভ করবে, যারা তার ডাক শুনে সেই কাজটি করেছে। যেমন কেউ নামাযের দিকে ডাকল, কোনও ভালো কাজে দান-খয়রাত করতে বলল, উত্তম আখলাক-চরিত্রের প্রতি উৎসাহ যোগাল ইত্যাদি। তো যারা যারা তার কথায় সাড়া দিয়ে এসব আমলে যত্নবান হবে, তাদের সকলের আমলের সমান ছাওয়াব এ ব্যক্তিকেও দেওয়া হবে। আর এ ব্যক্তিকে যে ছাওয়াব দেওয়া হবে তা তাদের ছাওয়াব থেকে কেটে নিয়ে নয়; বরং আলাদাভাবে আল্লাহ তা'আলা নিজ ভাণ্ডার থেকে তাদেরকে তা দান করবেন।
এমনিভাবে কেউ যদি মদ, জুয়া ইত্যাদি পরিহার করতে বলে; জুলুম-নিপীড়ন পরিহারের আহ্বান জানায়; অন্যায় রাগ করতে বারণ করে; অন্যকে ঠকানো, আমানতের খেয়ানত করা ইত্যাদি বদ্ আখলাক পরিহারের শিক্ষা দেয়, তবে একইভাবে সেও তার অনুসরণকারীদের মত ছাওয়াবের অধিকারী হবে।
ضَلَالَةٍ (গোমরাহী) দ্বারা বোঝানো হয়েছে শরী'আত বিরোধী কাজকে, যেসব কাজ করলে গুনাহ হয়। শরী'আত যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছে তা সবই গোমরাহী। এমনিভাবে শরী'আত যা-কিছু করতে আদেশ করেছে তা না করাও গোমরাহী। উভয়টাই গুনাহ। কেউ যদি কাউকে নামায না পড়তে বলে, তবে সে তাকে গোমরাহীর দিকে ডাকল, যেমন কাউকে সুদ-ঘুষ খেতে বললে গোমরাহীর দিকে ডাকা হয়। সুতরাং কেউ যদি কারও কথায় নামায ছেড়ে দেয় বা তার কথায় সুদ খায়, তবে এর দ্বারা সে নিজে যেমন গুনাহগার হবে, তেমনি যে ব্যক্তি তাকে এ কাজে উৎসাহ দিল তার আমলনামায়ও সমান গুনাহ লেখা হবে। ছাওয়াবের মত এ ক্ষেত্রেও কার্য সম্পাদনকারীর গুনাহ কমবে না। অর্থাৎ তার গুনাহ কেটে নিয়ে উৎসাহদাতার আমলনামায় লেখা হবে না; বরং উৎসাহদানের কারণে তার আমলনামায় গুনাহ লেখা হবে স্বতন্ত্রভাবেই। গুনাহের ওপর দ্বিগুণ গুনাহ। কেননা এটা তো স্পষ্ট যে, এরূপ লোক নিজেও এসব গুনাহ করে থাকে। কেবল বেনামাযী ব্যক্তিই অন্যকে নামায না পড়ার কথা বলতে পারে এবং সুদ খাওয়ার উৎসাহও দিতে পারে কেবল সুদখোরই। এরা নিজেরা তো গুনাহ করেই, সেইসঙ্গে অন্যদেরকে ডাকার দ্বারা দ্বিগুণ গুনাহর অধিকারী হয়। দ্বিগুণই বা বলি কেন, গাণিতিক হারে এটা যে কতগুণ বাড়ে তার তো কোনও ঠিকানা নেই। কেননা যাদেরকে তারা তাদের পথে ডেকেছে, তারা সারা জীবন যত গুনাহ করে আবার তাদের ডাকে যারা একই গুনাহে লিপ্ত হয়, তদ্রূপ এ সিলসিলা যতদূর যেতে থাকে, সকলের গুনাহের সমপরিমাণ গুনাহ প্রথম আহ্বানকারীদের আমলনামায় লেখা হতে থাকবে। হিদায়াতের দিকে ডাকার বিষয়টাও ঠিক একইরকম। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সবরকম গুনাহ থেকে হেফাজত করুন এবং সর্বপ্রকার নেক আমলের তাওফীক দিন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যকে নেক কাজের দিকে ডাকা ছাওয়াব অর্জনের একটি সহজ পন্থা। এ পন্থাটি হাতছাড়া করা কিছুতেই উচিত নয়।
খ. গুনাহের দিকে ডাকা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে নিজ আমলনামায় গুনাহের সিলসিলা জারি হয়ে যায়। সুতরাং এর থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
এমনিভাবে কেউ যদি মদ, জুয়া ইত্যাদি পরিহার করতে বলে; জুলুম-নিপীড়ন পরিহারের আহ্বান জানায়; অন্যায় রাগ করতে বারণ করে; অন্যকে ঠকানো, আমানতের খেয়ানত করা ইত্যাদি বদ্ আখলাক পরিহারের শিক্ষা দেয়, তবে একইভাবে সেও তার অনুসরণকারীদের মত ছাওয়াবের অধিকারী হবে।
ضَلَالَةٍ (গোমরাহী) দ্বারা বোঝানো হয়েছে শরী'আত বিরোধী কাজকে, যেসব কাজ করলে গুনাহ হয়। শরী'আত যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছে তা সবই গোমরাহী। এমনিভাবে শরী'আত যা-কিছু করতে আদেশ করেছে তা না করাও গোমরাহী। উভয়টাই গুনাহ। কেউ যদি কাউকে নামায না পড়তে বলে, তবে সে তাকে গোমরাহীর দিকে ডাকল, যেমন কাউকে সুদ-ঘুষ খেতে বললে গোমরাহীর দিকে ডাকা হয়। সুতরাং কেউ যদি কারও কথায় নামায ছেড়ে দেয় বা তার কথায় সুদ খায়, তবে এর দ্বারা সে নিজে যেমন গুনাহগার হবে, তেমনি যে ব্যক্তি তাকে এ কাজে উৎসাহ দিল তার আমলনামায়ও সমান গুনাহ লেখা হবে। ছাওয়াবের মত এ ক্ষেত্রেও কার্য সম্পাদনকারীর গুনাহ কমবে না। অর্থাৎ তার গুনাহ কেটে নিয়ে উৎসাহদাতার আমলনামায় লেখা হবে না; বরং উৎসাহদানের কারণে তার আমলনামায় গুনাহ লেখা হবে স্বতন্ত্রভাবেই। গুনাহের ওপর দ্বিগুণ গুনাহ। কেননা এটা তো স্পষ্ট যে, এরূপ লোক নিজেও এসব গুনাহ করে থাকে। কেবল বেনামাযী ব্যক্তিই অন্যকে নামায না পড়ার কথা বলতে পারে এবং সুদ খাওয়ার উৎসাহও দিতে পারে কেবল সুদখোরই। এরা নিজেরা তো গুনাহ করেই, সেইসঙ্গে অন্যদেরকে ডাকার দ্বারা দ্বিগুণ গুনাহর অধিকারী হয়। দ্বিগুণই বা বলি কেন, গাণিতিক হারে এটা যে কতগুণ বাড়ে তার তো কোনও ঠিকানা নেই। কেননা যাদেরকে তারা তাদের পথে ডেকেছে, তারা সারা জীবন যত গুনাহ করে আবার তাদের ডাকে যারা একই গুনাহে লিপ্ত হয়, তদ্রূপ এ সিলসিলা যতদূর যেতে থাকে, সকলের গুনাহের সমপরিমাণ গুনাহ প্রথম আহ্বানকারীদের আমলনামায় লেখা হতে থাকবে। হিদায়াতের দিকে ডাকার বিষয়টাও ঠিক একইরকম। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সবরকম গুনাহ থেকে হেফাজত করুন এবং সর্বপ্রকার নেক আমলের তাওফীক দিন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যকে নেক কাজের দিকে ডাকা ছাওয়াব অর্জনের একটি সহজ পন্থা। এ পন্থাটি হাতছাড়া করা কিছুতেই উচিত নয়।
খ. গুনাহের দিকে ডাকা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে নিজ আমলনামায় গুনাহের সিলসিলা জারি হয়ে যায়। সুতরাং এর থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
