রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ১৬৯
দীনের মধ্যে নব-উদ্ভাবিত বিষয়াবলী ও বিদ'আতে লিপ্ত হওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
বিদ'আত অৰ্থ নতুন উদ্ভাবন। একে 'ইহদাছ'-ও বলা হয়। নতুন উদ্ভাবিত বিষয়কে বলা হয় 'মুহদাছ'। আবার একে বিদআতও বলা হয়। সুতরাং বিদ'আত ও মুহদাছ শব্দদু'টি সমার্থবোধক। শরী'আতে বিদ'আত বলা হয় এমন কাজকে, যাকে আল্লাহ তা'আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের অন্তর্ভুক্ত না করা সত্ত্বেও তাকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করা ও দীনের অঙ্গ বানিয়ে নেওয়া এবং তাকে ছাওয়াবের কাজ মনে করা বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম বলে বিশ্বাস করা।
ইসলামে বিদ'আত অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এটা কালিমা তায়্যিবার দাবি ও চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কালিমা তায়্যিবার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার বান্দা ও রাসূল। এ সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বারা হয় আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য আমি কেবল ওই পন্থাই অবলম্বন করব, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর শিক্ষা পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হয়েছেঃ-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
অর্থ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নি'আমত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। (সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৩)
আল্লাহ তা'আলা তাঁর দীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও তা পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি সমবেত জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি তোমাদের কাছে যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছি? সকলে সমস্বরে উত্তর দিয়েছিল, হাঁ, আপনি যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছেন এবং আমানত আদায় করেছেন।
দীন যখন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং আমাদের কাছে তা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছানোও হয়েছে, তখন আর এর মধ্যে কারও কোনওকিছু যোগ বা বিয়োগ করার সুযোগ নেই।। কেউ যদি নতুন কোনও আমল তৈরি করে তাকে দীনের অংশ বানিয়ে দেয় এবং দীনের অন্যান্য বিধানাবলীর মত সেটাকেও পালন করা জরুরি মনে করে, তবে সে যেন দাবি করছে- আল্লাহ তাঁর দীন পরিপূর্ণ করেননি বা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পরিপূর্ণভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাননি। আমি এ আমলটির মাধ্যমে সেই অপূর্ণতা পূরণ করে দিলাম!
বলাবাহুল্য, এ দাবি হবে কুরআন মাজীদের ওই ঘোষণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সেইসঙ্গে এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে- যেন তিনি তাঁর দা'ওয়াতী দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেননি। তদুপরি এটা কালেমা তায়্যিবায় দেওয়া সাক্ষ্যেরও পরিপন্থী হবে। কেননা সে সাক্ষ্যে বলা হয়েছিল আমি ইবাদত-বন্দেগীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষারই অনুসরণ করব, তার বাইরে যাব না। বিদ'আত দ্বারা কার্যত তার বাইরে যাওয়া হয়। দেখা যাচ্ছে বিদ'আতী কর্ম দ্বারা প্রথমত আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণাকে আঘাত করা হয়। দ্বিতীয়ত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতী দায়িত্ব পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তৃতীয়ত কালেমা পাঠের মধ্যে নিহিত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়।
এজন্যই বিদ'আত অত্যন্ত কঠিন গুনাহ। এর ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে এবং কুফর ও শিরকের পর বিদ'আতকে একটি কঠিনতম গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এটা এমনই এক গুনাহ, যা থেকে সাধারণত তাওবাও নসীব হয় না। কারণ যে ব্যক্তি বিদ'আতী কর্ম করে, সে তো তা করে দীনের অংশ ও ছাওয়াবের কাজ মনে করে। তাই সে তা থেকে তাওবা করার কথা চিন্তাই করতে পারে না। ফলে এ গুনাহের বোঝা কাঁধে নিয়েই তাকে কবরে যেতে হয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, যাতে কোনওরকম বিদ'আতী কাজে লিপ্ত হয়ে না পড়ি।
বিদ'আতের নিষেধাজ্ঞা, নিন্দা ও এর কদর্যতা সম্পর্কে আছে কুরআন মাজীদের বহু আয়াত এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদীছ। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। আমরা নিচে তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
বিদ'আতের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত
এক নং আয়াত
فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ
অর্থ : সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী অবশিষ্ট থাকে? সূরা ইউনুস (১০), আয়াত ৩২
ব্যাখ্যা
হক ও সত্য তাই, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন। যেমন কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِنْ رَبِّكُمْ
'হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রাসূল এসেছেন সত্য নিয়ে। সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৭০
তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তার কিছু তো কুরআন ও হাদীছে বিস্তারিত বলা হয়েছে, আর কিছু আছে মৌলিক আকারে। যা মৌলিক আকারে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম ও মুজতাহিদগণ তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন এবং তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মাসাইল উদ্ভাবন করেছেন। পরোক্ষভাবে তাও কুরআন ও হাদীছের কথাই। সুতরাং কুরআন ও হাদীছে যা সরাসরি এবং যা-কিছু পরোক্ষভাবে বর্ণিত হয়েছে তা সবই আল্লাহর দেওয়া এবং তা সবই সত্য। সূরা ইউনুসের এ আয়াতে বলা হয়েছে, সত্যের পর গোমরাহী ছাড়া আর কী থাকতে পারে? তার মানে দাঁড়ায় কুরআন ও হাদীছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যা বলা হয়েছে তার বাইরের সবই গোমরাহী। যাবতীয় বিদ'আত এর মধ্যে পড়ে। কারণ তা কুরআন ও হাদীছ থেকে নেওয়া নয়; বরং মানুষের মনগড়া। সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
দুই নং আয়াত
مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَبِ مِنْ شَيْءٍ
অর্থ : আমি কিতাবে কিছুমাত্র ত্রুটি রাখিনি। সূরা আন'আম (৬), আয়াত ৩৮
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে 'কিতাব' দ্বারা যদি লাওহে মাহফুজ বোঝানো হয়ে থাকে, তখন এর অর্থ হবে- মানুষসহ সমস্ত সৃষ্টির যাবতীয় বিষয় তাতে লিপিবদ্ধ আছে, কোনওকিছুই বাদ যায়নি। যেমন মানুষের ক্ষেত্রে তাতে লেখা আছে, কার কী রকম জন্ম হবে, কোথায় জন্ম হবে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেমন হবে, গায়ের রঙ কেমন হবে, আখলাক-চরিত্র কেমন হবে, কতদিন বাঁচবে, জীবিকার ব্যবস্থা কী হবে, জীবনযাপন কেমন হবে। মোটকথা প্রত্যেক ব্যক্তির খুঁটিনাটি সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ তাতে লিপিবদ্ধ আছে। এমনিভাবে সমস্ত সৃষ্টির সবকিছু।
কারও মতে, এ আয়াতে কিতাব দ্বারা কুরআন মাজীদ বোঝানো হয়েছে। তখন হাদীছও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা কুরআন ও হাদীছ পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। কুরআন ছাড়া যেমন হাদীছ যথেষ্ট নয়, তেমনি হাদীছ ছাড়াও কারও পক্ষে কুরআন বোঝা সম্ভব নয়। তো এ আয়াতে যে বলা হয়েছে, কিতাবে কোনওকিছুই বাদ দেওয়া হয়নি, তার মানে দীন ও শরী'আত সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় কুরআন ও হাদীছে বলে দেওয়া হয়েছে, যেমনটা উপরের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। এ অবস্থায় দীনের নামে নিজেদের পক্ষ থেকে কোনওকিছু যোগ করা হলে তা হবে বাড়তি জঞ্জাল এবং এ আয়াতের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বিষয়। সব বিদ'আতই এরকম। তাই তা পরিত্যাজ্য।
তিন নং আয়াত
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَ الرَّسُولِ
অর্থ : অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনও বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তবে তোমরা সে বিষয়কে আল্লাহ ও রাসূলের ওপর ন্যস্ত কর। সূরা নিসা (৪), আয়াত ৫৯
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আমাদেরকে অতি মূল্যবান একটি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। কোনও আকীদা বা আমল নিয়ে যদি নিজেদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়, কেউ বলে সেটি শরী'আতসম্মত এবং কেউ বলে সেটি শরী'আতবিরোধী, তবে তার ফয়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর এখন কর্তব্য হবে বিষয়টিকে কুরআন ও হাদীছের সামনে নিয়ে আসা। যদি তা কুরআন ও হাদীছ দ্বারা সমর্থিত হয় তবে তো ঠিক আছে, অন্যথায় তা পরিত্যাজ্য। কুরআন ও হাদীছে তার সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও যদি কোনও পক্ষ তা নিয়ে জিদ ধরে এবং তারা সেটিকে দীনের অংশ বলে চালিয়ে দেয়, তবে তা বিদ'আত নামে আখ্যায়িত হবে এবং প্রথম আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী তা হবে সুস্পষ্ট গোমরাহী।
চার নং আয়াত
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ
অর্থ : (হে নবী! তাদেরকে) আরও বল, এটা আমার সরল-সঠিক পথ। সুতরাং এর অনুসরণ কর, অন্য কোনও পথের অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।সূরা আন'আম (৬), আয়াত ১৫৩
ব্যাখ্যা
এটি সূরা আন'আমের ১৫৩ নং আয়াত। এর আগের কয়েকটি আয়াতে বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ বর্ণিত হয়েছে। সারা কুরআন ও হাদীছেই এরকম বহু আদেশ-নিষেধ আছে এবং তার সমষ্টি দ্বারা দীন ও শরী'আত পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহপ্রদত্ত সে দীন ও শরী'আত হচ্ছে তাঁর দেওয়া সরল-সঠিক পথ। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ। যারা আল্লাহ তা'আলাকে পেতে চায় তাদের কর্তব্য এ সরল পথের অনুসরণ করা। সে আদেশই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে নিষেধ করে দিয়েছেন যেন এ পথ ছাড়া অন্য কোনও পথে চলা না হয়। ইসলামী শরী'আতের বাইরে দুনিয়ায় হাজারও পথ আছে। যারা ইসলামের অনুসরণ করার দাবি করে তাদের মধ্যেও অনেকে মনগড়া পথ বানিয়ে নিয়েছে। তা সবই বাঁকা পথ। শিরক ও বিদ'আতের পথ। সে পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছেনি। যারা সে পথে চলবে তারা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। তারা বিপথগামী হয়ে আল্লাহকে হারাবে এবং আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে যাবে। এভাবে এ আয়াত দ্বারাও শিরক ও কুফর পরিত্যাগের পাশাপাশি বিদ'আত পরিত্যাগের গুরুত্বও উপলব্ধি করা যায়।
পাঁচ নং আয়াত
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
অর্থ : (হে নবী! মানুষকে) বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ৩১
ব্যাখ্যা
কাউকে ভালোবাসার উদ্দেশ্য হয় তার ভালোবাসা লাভ করা। এ আয়াত বলছে, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক এবং তাঁর সত্যিকারের আশেক হও, তবে তো স্বাভাবিকভাবেই তাঁরও ভালোবাসা পেতে চাইবে। আর তা পাওয়ার একমাত্র উপায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা। তিনি আল্লাহ তা'আলার হাবীব এবং তাঁর সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করবে এবং তাঁর সুন্নত মোতাবেক জীবনযাপন করবে, সেও আল্লাহর মাহবূব ও প্রিয় হয়ে যাবে। কেননা এটাই সাধারণ নিয়ম যে, প্রিয়জনের অনুসারীও প্রীতিভাজন হয়ে যায়।
এ আয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী চলার জন্য দু'টি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। একটি হচ্ছে আল্লাহর মাহবূব হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার ভালোবাসায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুসরণ করবে, সে আল্লাহ তা'আলার মহব্বতের পাত্র হয়ে যাবে, আল্লাহ তা'আলা নিজেই তাকে ভালোবাসবেন। দ্বিতীয় হচ্ছে মাগফিরাত লাভ। আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। সুবহানাল্লাহ, কত বড় পুরস্কার! এর পরও কি কারও সুন্নতপরিপন্থী জীবনযাপন করা উচিত? বিদ'আত সরাসরিই সুন্নতের পরিপন্থী। বিদ'আতের ওপর চলার দ্বারা কখনও এ মহাপুরস্কার লাভ করা যেতে পারে না। কাজেই আল্লাহপ্রেমিকের উচিত সর্বাবস্থায় বিদ'আত থেকে বেঁচে থাকা।
বিদ'আত অৰ্থ নতুন উদ্ভাবন। একে 'ইহদাছ'-ও বলা হয়। নতুন উদ্ভাবিত বিষয়কে বলা হয় 'মুহদাছ'। আবার একে বিদআতও বলা হয়। সুতরাং বিদ'আত ও মুহদাছ শব্দদু'টি সমার্থবোধক। শরী'আতে বিদ'আত বলা হয় এমন কাজকে, যাকে আল্লাহ তা'আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের অন্তর্ভুক্ত না করা সত্ত্বেও তাকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করা ও দীনের অঙ্গ বানিয়ে নেওয়া এবং তাকে ছাওয়াবের কাজ মনে করা বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম বলে বিশ্বাস করা।
ইসলামে বিদ'আত অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এটা কালিমা তায়্যিবার দাবি ও চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কালিমা তায়্যিবার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার বান্দা ও রাসূল। এ সাক্ষ্য দেওয়ার দ্বারা হয় আল্লাহ তা'আলার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য আমি কেবল ওই পন্থাই অবলম্বন করব, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর শিক্ষা পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়ে দেওয়া হয়েছেঃ-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
অর্থ : আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নি'আমত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চিরদিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম। (সূরা মায়িদা (৫), আয়াত ৩)
আল্লাহ তা'আলা তাঁর দীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামও তা পরিপূর্ণভাবে মানুষের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন। বিদায় হজ্জের ভাষণে তিনি সমবেত জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, আমি কি তোমাদের কাছে যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছি? সকলে সমস্বরে উত্তর দিয়েছিল, হাঁ, আপনি যথাযথভাবে পৌছিয়ে দিয়েছেন এবং আমানত আদায় করেছেন।
দীন যখন পরিপূর্ণ হয়ে গেছে এবং আমাদের কাছে তা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছানোও হয়েছে, তখন আর এর মধ্যে কারও কোনওকিছু যোগ বা বিয়োগ করার সুযোগ নেই।। কেউ যদি নতুন কোনও আমল তৈরি করে তাকে দীনের অংশ বানিয়ে দেয় এবং দীনের অন্যান্য বিধানাবলীর মত সেটাকেও পালন করা জরুরি মনে করে, তবে সে যেন দাবি করছে- আল্লাহ তাঁর দীন পরিপূর্ণ করেননি বা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা পরিপূর্ণভাবে আমাদের কাছে পৌঁছাননি। আমি এ আমলটির মাধ্যমে সেই অপূর্ণতা পূরণ করে দিলাম!
বলাবাহুল্য, এ দাবি হবে কুরআন মাজীদের ওই ঘোষণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। সেইসঙ্গে এর দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে- যেন তিনি তাঁর দা'ওয়াতী দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেননি। তদুপরি এটা কালেমা তায়্যিবায় দেওয়া সাক্ষ্যেরও পরিপন্থী হবে। কেননা সে সাক্ষ্যে বলা হয়েছিল আমি ইবাদত-বন্দেগীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষারই অনুসরণ করব, তার বাইরে যাব না। বিদ'আত দ্বারা কার্যত তার বাইরে যাওয়া হয়। দেখা যাচ্ছে বিদ'আতী কর্ম দ্বারা প্রথমত আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার ঘোষণাকে আঘাত করা হয়। দ্বিতীয়ত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দা'ওয়াতী দায়িত্ব পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তৃতীয়ত কালেমা পাঠের মধ্যে নিহিত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা হয়।
এজন্যই বিদ'আত অত্যন্ত কঠিন গুনাহ। এর ব্যাপারে কুরআন ও হাদীছে অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে এবং কুফর ও শিরকের পর বিদ'আতকে একটি কঠিনতম গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এটা এমনই এক গুনাহ, যা থেকে সাধারণত তাওবাও নসীব হয় না। কারণ যে ব্যক্তি বিদ'আতী কর্ম করে, সে তো তা করে দীনের অংশ ও ছাওয়াবের কাজ মনে করে। তাই সে তা থেকে তাওবা করার কথা চিন্তাই করতে পারে না। ফলে এ গুনাহের বোঝা কাঁধে নিয়েই তাকে কবরে যেতে হয়। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা, যাতে কোনওরকম বিদ'আতী কাজে লিপ্ত হয়ে না পড়ি।
বিদ'আতের নিষেধাজ্ঞা, নিন্দা ও এর কদর্যতা সম্পর্কে আছে কুরআন মাজীদের বহু আয়াত এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক হাদীছ। ইমাম নববী রহ. এ অধ্যায়ে সেরকম কিছু আয়াত ও হাদীছ উদ্ধৃত করেছেন। আমরা নিচে তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করছি। আল্লাহ তা'আলাই তাওফীকদাতা।
বিদ'আতের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত
এক নং আয়াত
فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ
অর্থ : সত্য স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর বিভ্রান্তি ছাড়া আর কী অবশিষ্ট থাকে? সূরা ইউনুস (১০), আয়াত ৩২
ব্যাখ্যা
হক ও সত্য তাই, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে নিয়ে এসেছেন। যেমন কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِنْ رَبِّكُمْ
'হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রাসূল এসেছেন সত্য নিয়ে। সূরা নিসা (৪), আয়াত ১৭০
তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা কুরআন ও হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তার কিছু তো কুরআন ও হাদীছে বিস্তারিত বলা হয়েছে, আর কিছু আছে মৌলিক আকারে। যা মৌলিক আকারে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম ও মুজতাহিদগণ তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন এবং তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মাসাইল উদ্ভাবন করেছেন। পরোক্ষভাবে তাও কুরআন ও হাদীছের কথাই। সুতরাং কুরআন ও হাদীছে যা সরাসরি এবং যা-কিছু পরোক্ষভাবে বর্ণিত হয়েছে তা সবই আল্লাহর দেওয়া এবং তা সবই সত্য। সূরা ইউনুসের এ আয়াতে বলা হয়েছে, সত্যের পর গোমরাহী ছাড়া আর কী থাকতে পারে? তার মানে দাঁড়ায় কুরআন ও হাদীছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যা বলা হয়েছে তার বাইরের সবই গোমরাহী। যাবতীয় বিদ'আত এর মধ্যে পড়ে। কারণ তা কুরআন ও হাদীছ থেকে নেওয়া নয়; বরং মানুষের মনগড়া। সুতরাং তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
দুই নং আয়াত
مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَبِ مِنْ شَيْءٍ
অর্থ : আমি কিতাবে কিছুমাত্র ত্রুটি রাখিনি। সূরা আন'আম (৬), আয়াত ৩৮
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে 'কিতাব' দ্বারা যদি লাওহে মাহফুজ বোঝানো হয়ে থাকে, তখন এর অর্থ হবে- মানুষসহ সমস্ত সৃষ্টির যাবতীয় বিষয় তাতে লিপিবদ্ধ আছে, কোনওকিছুই বাদ যায়নি। যেমন মানুষের ক্ষেত্রে তাতে লেখা আছে, কার কী রকম জন্ম হবে, কোথায় জন্ম হবে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেমন হবে, গায়ের রঙ কেমন হবে, আখলাক-চরিত্র কেমন হবে, কতদিন বাঁচবে, জীবিকার ব্যবস্থা কী হবে, জীবনযাপন কেমন হবে। মোটকথা প্রত্যেক ব্যক্তির খুঁটিনাটি সবকিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ তাতে লিপিবদ্ধ আছে। এমনিভাবে সমস্ত সৃষ্টির সবকিছু।
কারও মতে, এ আয়াতে কিতাব দ্বারা কুরআন মাজীদ বোঝানো হয়েছে। তখন হাদীছও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। কেননা কুরআন ও হাদীছ পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। কুরআন ছাড়া যেমন হাদীছ যথেষ্ট নয়, তেমনি হাদীছ ছাড়াও কারও পক্ষে কুরআন বোঝা সম্ভব নয়। তো এ আয়াতে যে বলা হয়েছে, কিতাবে কোনওকিছুই বাদ দেওয়া হয়নি, তার মানে দীন ও শরী'আত সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় কুরআন ও হাদীছে বলে দেওয়া হয়েছে, যেমনটা উপরের আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে। এ অবস্থায় দীনের নামে নিজেদের পক্ষ থেকে কোনওকিছু যোগ করা হলে তা হবে বাড়তি জঞ্জাল এবং এ আয়াতের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বিষয়। সব বিদ'আতই এরকম। তাই তা পরিত্যাজ্য।
তিন নং আয়াত
فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَ الرَّسُولِ
অর্থ : অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনও বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তবে তোমরা সে বিষয়কে আল্লাহ ও রাসূলের ওপর ন্যস্ত কর। সূরা নিসা (৪), আয়াত ৫৯
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আমাদেরকে অতি মূল্যবান একটি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। কোনও আকীদা বা আমল নিয়ে যদি নিজেদের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়, কেউ বলে সেটি শরী'আতসম্মত এবং কেউ বলে সেটি শরী'আতবিরোধী, তবে তার ফয়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর এখন কর্তব্য হবে বিষয়টিকে কুরআন ও হাদীছের সামনে নিয়ে আসা। যদি তা কুরআন ও হাদীছ দ্বারা সমর্থিত হয় তবে তো ঠিক আছে, অন্যথায় তা পরিত্যাজ্য। কুরআন ও হাদীছে তার সমর্থন না থাকা সত্ত্বেও যদি কোনও পক্ষ তা নিয়ে জিদ ধরে এবং তারা সেটিকে দীনের অংশ বলে চালিয়ে দেয়, তবে তা বিদ'আত নামে আখ্যায়িত হবে এবং প্রথম আয়াতের বক্তব্য অনুযায়ী তা হবে সুস্পষ্ট গোমরাহী।
চার নং আয়াত
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ
অর্থ : (হে নবী! তাদেরকে) আরও বল, এটা আমার সরল-সঠিক পথ। সুতরাং এর অনুসরণ কর, অন্য কোনও পথের অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।সূরা আন'আম (৬), আয়াত ১৫৩
ব্যাখ্যা
এটি সূরা আন'আমের ১৫৩ নং আয়াত। এর আগের কয়েকটি আয়াতে বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ বর্ণিত হয়েছে। সারা কুরআন ও হাদীছেই এরকম বহু আদেশ-নিষেধ আছে এবং তার সমষ্টি দ্বারা দীন ও শরী'আত পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহপ্রদত্ত সে দীন ও শরী'আত হচ্ছে তাঁর দেওয়া সরল-সঠিক পথ। আল্লাহকে পাওয়ার একমাত্র পথ। যারা আল্লাহ তা'আলাকে পেতে চায় তাদের কর্তব্য এ সরল পথের অনুসরণ করা। সে আদেশই আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে নিষেধ করে দিয়েছেন যেন এ পথ ছাড়া অন্য কোনও পথে চলা না হয়। ইসলামী শরী'আতের বাইরে দুনিয়ায় হাজারও পথ আছে। যারা ইসলামের অনুসরণ করার দাবি করে তাদের মধ্যেও অনেকে মনগড়া পথ বানিয়ে নিয়েছে। তা সবই বাঁকা পথ। শিরক ও বিদ'আতের পথ। সে পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছেনি। যারা সে পথে চলবে তারা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। তারা বিপথগামী হয়ে আল্লাহকে হারাবে এবং আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামের উপযুক্ত হয়ে যাবে। এভাবে এ আয়াত দ্বারাও শিরক ও কুফর পরিত্যাগের পাশাপাশি বিদ'আত পরিত্যাগের গুরুত্বও উপলব্ধি করা যায়।
পাঁচ নং আয়াত
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ
অর্থ : (হে নবী! মানুষকে) বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ৩১
ব্যাখ্যা
কাউকে ভালোবাসার উদ্দেশ্য হয় তার ভালোবাসা লাভ করা। এ আয়াত বলছে, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক এবং তাঁর সত্যিকারের আশেক হও, তবে তো স্বাভাবিকভাবেই তাঁরও ভালোবাসা পেতে চাইবে। আর তা পাওয়ার একমাত্র উপায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করা। তিনি আল্লাহ তা'আলার হাবীব এবং তাঁর সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয়। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করবে এবং তাঁর সুন্নত মোতাবেক জীবনযাপন করবে, সেও আল্লাহর মাহবূব ও প্রিয় হয়ে যাবে। কেননা এটাই সাধারণ নিয়ম যে, প্রিয়জনের অনুসারীও প্রীতিভাজন হয়ে যায়।
এ আয়াতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুযায়ী চলার জন্য দু'টি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। একটি হচ্ছে আল্লাহর মাহবূব হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার ভালোবাসায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত অনুসরণ করবে, সে আল্লাহ তা'আলার মহব্বতের পাত্র হয়ে যাবে, আল্লাহ তা'আলা নিজেই তাকে ভালোবাসবেন। দ্বিতীয় হচ্ছে মাগফিরাত লাভ। আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। সুবহানাল্লাহ, কত বড় পুরস্কার! এর পরও কি কারও সুন্নতপরিপন্থী জীবনযাপন করা উচিত? বিদ'আত সরাসরিই সুন্নতের পরিপন্থী। বিদ'আতের ওপর চলার দ্বারা কখনও এ মহাপুরস্কার লাভ করা যেতে পারে না। কাজেই আল্লাহপ্রেমিকের উচিত সর্বাবস্থায় বিদ'আত থেকে বেঁচে থাকা।
ইসলামে নব-উদ্ভাবিত বিষয় পরিত্যাজ্য
হাদীছ নং : ১৬৯
উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কোনও নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত-বুখারী ও মুসলিম।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি এমন কোনও আমল করে যার ওপর আমাদের হুকুম নেই (অর্থাৎ যা আমাদের তরিকামত নয়), তা প্রত্যাখ্যাত।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭১৮, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৬০৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৪)
হাদীছ নং : ১৬৯
উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কোনও নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত-বুখারী ও মুসলিম।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি এমন কোনও আমল করে যার ওপর আমাদের হুকুম নেই (অর্থাৎ যা আমাদের তরিকামত নয়), তা প্রত্যাখ্যাত।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৭১৮, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪৬০৬; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৪)
18 - باب في النهي عن البدع ومحدثات الأمور
قَالَ الله تَعَالَى: {فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلاَّ الضَّلال} [يونس: 32]، وَقالَ تَعَالَى: {مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْء} [الأنعام: 38]، وَقالَ تَعَالَى: {فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ} [النساء: 59] أيِ الكِتَابِ وَالسُّنَّةِ. وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ} [الأنعام: 153]، وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ} [آل عمران:31] وَالآياتُ في البَابِ كَثيرةٌ مَعلُومَةٌ.
قَالَ الله تَعَالَى: {فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلاَّ الضَّلال} [يونس: 32]، وَقالَ تَعَالَى: {مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْء} [الأنعام: 38]، وَقالَ تَعَالَى: {فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ} [النساء: 59] أيِ الكِتَابِ وَالسُّنَّةِ. وَقالَ تَعَالَى: {وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ} [الأنعام: 153]، وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ} [آل عمران:31] وَالآياتُ في البَابِ كَثيرةٌ مَعلُومَةٌ.
169 - عن عائشة رَضِي الله عنها، قَالَتْ: قَالَ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ
أحْدَثَ في أمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ (1)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ.
وفي رواية لمسلم: «مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا فَهُوَ رَدٌّ (2)». (3)
أحْدَثَ في أمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ (1)». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ.
وفي رواية لمسلم: «مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا فَهُوَ رَدٌّ (2)». (3)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে দীনকে ‘আম্র' (امر) শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ‘আম্র' অর্থ বিষয়, পথ ইত্যাদি। দীনে ইসলামকে ‘আম্র' বা বিষয় বলে বোঝানো হচ্ছে যে, দীনই আমাদের একমাত্র বিষয়, যার প্রতি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি এবং সর্বাবস্থায় তার এমন অনুসরণ করি, যাতে আমাদের কোনও কথা ও কাজ তার বাইরে চলে না যায়।
তারপর এর সাথে ইঙ্গিতসূচক শব্দ ‘এই' (هذا) ব্যবহার করে বোঝানো হচ্ছে যে, দীনে ইসলাম এমন পূর্ণাঙ্গ, এমন পরিচিত ও সুবিদিত যে, তা কোনও জ্ঞানীজন ও বিবেকবানের কাছে অস্পষ্ট ও অজ্ঞাত নেই। যেন তা চাক্ষুষ ও দৃশ্যমান বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। ফলে 'এই' বলে তার প্রতি ইঙ্গিত করা চলে।
তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কোনও বিষয় নতুনভাবে তৈরি করে, যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কুরআন সুন্নাহ'র দ্বারা প্রমাণিত নয় অর্থাৎ তার পক্ষে কুরআন-হাদীছের প্রকাশ্য বা ইঙ্গিতমূলক কোনও দলীল নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত, সে বিষয়টি বিশ্বাসগত হোক বা কর্মগত। আল্লাহ তা'আলার কাছে তা তো কবূল হবেই না; বরং ভিত্তিহীন কাজকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করার কারণে কঠিন গুনাহ হবে। তাই তা থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
কয়েকটি বিশ্বাসগত বিদ'আতঃ- বিশেষ নক্ষত্রের উদয়-অস্তের সাথে ভাগ্যের ভালো মন্দের সম্পর্ক আছে বলে মনে করা; কোনও মাজারে গেলে উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা; বিশেষ কোনও মাস, বিশেষ কোনও দিন বা বিশেষ সময় সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা যে, তখন বিবাহ-শাদী করা, ব্যবসা শুরু করা, গৃহ নির্মাণ করা ইত্যাদি অশুভ; বিশেষ কোনও পাখির ডাককে কুলক্ষণ মনে করা; যাত্রাকালে হাঁচি দিলে সে যাত্রা অশুভ হয় বলে মনে করা ইত্যাদি।
কয়েকটি কর্মগত বিদ'আতঃ- কবর ও মাজারে বাতি জ্বালানো; ওরস করা; কবরে চাদর দেওয়া; কারও মৃত্যুর পর চল্লিশা করা; খৎনার অনুষ্ঠান করা; শবে বরাতে হালুয়া রুটি বিতরণ করা; প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম করা; শবে বরাত ও শবে কদরে গোসল করাকে সুন্নত মনে করা; ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা; ফাতেহা দোয়াজদহম পালন করা; বিয়েতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, এ হাদীছটি দীনের প্রধান মূলনীতিসমূহের একটি। ইমাম নববী রহ. বলেন, এ হাদীছটি মুখস্থ রাখা চাই। অন্যায় ও আপত্তিকর কাজের খণ্ডনে এটি একটি মজবুত দলীল। কেউ কেউ বলেন, এটি শরী'আতের দলীলসমূহের অর্ধেক। কেননা কাজ তো দু'রকম— অর্জনীয় ও বর্জনীয়। যা-কিছু বর্জনীয় তার বর্জন সম্পর্কে দলীল হিসেবে এই এক হাদীছই যথেষ্ট।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ প্রমাণ করে, ইসলাম এক পরিপূর্ণ দীন। এতে নতুন কিছু যোগ করার সুযোগ নেই।
খ. কারও মনগড়া বিশ্বাস ও কর্ম গ্রহণ করতে নেই। কেননা তা দীনের মধ্যে নতুন সংযোজনের নামান্তর।
গ. সমাজে দীনের নামে কোনওকিছু চালু থাকলেই তা সত্যিকারের দীন হয়ে যায় না। দেখতে হবে কুরআন-সুন্নাহ তা সমর্থন করে কি না। সমর্থন না করলে তা বিদ'আত। সুতরাং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তাতে সমাজ যাই মনে করুক না কেন।
তারপর এর সাথে ইঙ্গিতসূচক শব্দ ‘এই' (هذا) ব্যবহার করে বোঝানো হচ্ছে যে, দীনে ইসলাম এমন পূর্ণাঙ্গ, এমন পরিচিত ও সুবিদিত যে, তা কোনও জ্ঞানীজন ও বিবেকবানের কাছে অস্পষ্ট ও অজ্ঞাত নেই। যেন তা চাক্ষুষ ও দৃশ্যমান বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। ফলে 'এই' বলে তার প্রতি ইঙ্গিত করা চলে।
তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কোনও বিষয় নতুনভাবে তৈরি করে, যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কুরআন সুন্নাহ'র দ্বারা প্রমাণিত নয় অর্থাৎ তার পক্ষে কুরআন-হাদীছের প্রকাশ্য বা ইঙ্গিতমূলক কোনও দলীল নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত, সে বিষয়টি বিশ্বাসগত হোক বা কর্মগত। আল্লাহ তা'আলার কাছে তা তো কবূল হবেই না; বরং ভিত্তিহীন কাজকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করার কারণে কঠিন গুনাহ হবে। তাই তা থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য।
কয়েকটি বিশ্বাসগত বিদ'আতঃ- বিশেষ নক্ষত্রের উদয়-অস্তের সাথে ভাগ্যের ভালো মন্দের সম্পর্ক আছে বলে মনে করা; কোনও মাজারে গেলে উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা; বিশেষ কোনও মাস, বিশেষ কোনও দিন বা বিশেষ সময় সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা যে, তখন বিবাহ-শাদী করা, ব্যবসা শুরু করা, গৃহ নির্মাণ করা ইত্যাদি অশুভ; বিশেষ কোনও পাখির ডাককে কুলক্ষণ মনে করা; যাত্রাকালে হাঁচি দিলে সে যাত্রা অশুভ হয় বলে মনে করা ইত্যাদি।
কয়েকটি কর্মগত বিদ'আতঃ- কবর ও মাজারে বাতি জ্বালানো; ওরস করা; কবরে চাদর দেওয়া; কারও মৃত্যুর পর চল্লিশা করা; খৎনার অনুষ্ঠান করা; শবে বরাতে হালুয়া রুটি বিতরণ করা; প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম করা; শবে বরাত ও শবে কদরে গোসল করাকে সুন্নত মনে করা; ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা; ফাতেহা দোয়াজদহম পালন করা; বিয়েতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, এ হাদীছটি দীনের প্রধান মূলনীতিসমূহের একটি। ইমাম নববী রহ. বলেন, এ হাদীছটি মুখস্থ রাখা চাই। অন্যায় ও আপত্তিকর কাজের খণ্ডনে এটি একটি মজবুত দলীল। কেউ কেউ বলেন, এটি শরী'আতের দলীলসমূহের অর্ধেক। কেননা কাজ তো দু'রকম— অর্জনীয় ও বর্জনীয়। যা-কিছু বর্জনীয় তার বর্জন সম্পর্কে দলীল হিসেবে এই এক হাদীছই যথেষ্ট।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ প্রমাণ করে, ইসলাম এক পরিপূর্ণ দীন। এতে নতুন কিছু যোগ করার সুযোগ নেই।
খ. কারও মনগড়া বিশ্বাস ও কর্ম গ্রহণ করতে নেই। কেননা তা দীনের মধ্যে নতুন সংযোজনের নামান্তর।
গ. সমাজে দীনের নামে কোনওকিছু চালু থাকলেই তা সত্যিকারের দীন হয়ে যায় না। দেখতে হবে কুরআন-সুন্নাহ তা সমর্থন করে কি না। সমর্থন না করলে তা বিদ'আত। সুতরাং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তাতে সমাজ যাই মনে করুক না কেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
