রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫৮
ভূমিকা অধ্যায়
সুন্নত ও তার আদবসমূহ রক্ষায় যত্নবান থাকার আদেশ।
জান্নাতকামীর কর্তব্য
হাদীছ নং : ১৫৮

হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের প্রত্যেকেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যে ব্যক্তি প্রবেশ করতে চায় না তার কথা আলাদা। জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে তা চায় না? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করে, সে-ই (জান্নাতে প্রবেশ করতে) চায় না -বুখারী।” (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৭২৮০; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৭২৮; তাবারানী, আল- আওসাত, হাদীছ নং ৮১২; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ১৭)
مقدمة الامام النووي
16 - باب في الأمر بالمحافظة على السنة وآدابها
158 - الثَّالثُ: عَنْ أَبي هريرةَ - رضي الله عنه: أنَّ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «كُلُّ أُمَّتِي يَدخُلُونَ الجَنَّةَ إلاَّ مَنْ أبَى (1)». قيلَ: وَمَنْ يَأبَى يَا رَسُول الله؟ قَالَ: «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أبَى». رواه البخاري. (2)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছ দ্বারাও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত ও তাঁর রেখে যাওয়া তরিকা অনুযায়ী চলা যে কত জরুরি তা উপলব্ধি করা যায়। কেননা এ হাদীছে তাঁর আনুগত্য করাকে জান্নাতে প্রবেশের ভিত্তি সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাঁর আনুগত্য বলতে তাঁর তরিকা অনুসারে চলাকেই বোঝায়। যে ব্যক্তি তাঁর তরিকা অনুযায়ী চলবে, কেবল সেই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। আর যে ব্যক্তি সে অনুযায়ী চলবে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।

মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকা অনুসরণের দু'টি দিক আছে। একটি বিশ্বাসগত, আরেকটি কর্মগত। বিশ্বাসগত দিক হচ্ছে, তিনি সর্বশেষ নবী এবং কেবল তাঁর তরিকা মেনে নেওয়ার মধ্যেই রয়েছে আখিরাতের মুক্তি—এ কথা অন্তরে স্বীকার করে নেওয়া। এটা স্বীকার করার নাম ঈমান। আর যার অন্তরে ঈমান আছে, কেবল সেই জান্নাত লাভ করবে। ঈমান ছাড়া কেউ কস্মিনকালেও জান্নাতে যেতে পারবে না ।

আর কর্মগত দিক হচ্ছে বাস্তবজীবনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকা অনুসরণ করা। অর্থাৎ মনেপ্রাণে তাঁর তরিকার ওপর ঈমান আনার পর কাজেকর্মেও তা বাস্তবায়ন করা। এর জন্য কর্তব্য তিনি যা-কিছু আদেশ-নিষেধ করেছেন তা পালন করা তথা তাঁর রেখে যাওয়া শরী'আত মোতাবেক জীবনযাপন করা। এই কর্মগত অনুসরণ যে ব্যক্তি সন্তোষজনক পর্যায়ে করতে পারবে, সে প্রথম যাত্রাতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যার ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যাবে তার ক্ষেত্রে ভয় রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা যদি ক্ষমা করে দেন, তবে তো প্রথমবারেই জান্নাতে যাবে। অন্যথায় ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য তাকে প্রথমে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে, তারপর জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে প্রথম যাত্রাতেই জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে নিন- আমীন।

এ হাদীছে যে ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবাধ্যতা করে অর্থাৎ তাঁর সুন্নত মোতাবেক চলে না, তার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সে জান্নাতে যেতে চায় না। এ কথাটি রূপক। বোঝানো হচ্ছে, তাঁর তরিকা অনুযায়ী না চলা জান্নাতে যেতে না চাওয়ারই নামান্তর। সুতরাং জান্নাতকামী বান্দাদের একান্ত কর্তব্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকা আঁকড়ে ধরা এবং তাঁর সুন্নতের আশেক হয়ে যাওয়া। সতর্ক থাকা উচিত জীবনের কোনও ক্ষেত্রেই যাতে তাঁর একটি সুন্নতও ছুটে না যায়। একটি কদমও যদি তাঁর তরিকার বাইরে চলে যায়, তবে এই ভেবে ভীত ও প্রকম্পিত হওয়া চাই যে, এটা জান্নাতে যেতে না চাওয়ার মত পদক্ষেপ হয়ে গেল না তো? এরকম 'ইশক ও এ পর্যায়ের ভীতির সাথে আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন- আমীন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. জান্নাত লাভের নিশ্চয়তা কেবলই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণের মধ্যে নিহিত।

খ, সুন্নত অমান্য করা জান্নাতে যেতে না চাওয়ার নামান্তর। সুতরাং কোনও কাজই যাতে সুন্নত ও নববী তরিকার পরিপন্থী না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ১৫৮ | মুসলিম বাংলা