রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ১১০
মুজাহাদা ও সাধনা-সংগ্ৰাম।
দান-সদাকা করার প্রতি সাহাবায়ে কিরামের উৎসাহ
হাদীছ নং: ১১০
হযরত আবূ মাস'উদ আনসারী রাযি. বলেন, দান-সদাকা সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলে আমরা (অর্থোপার্জনের জন্য) মানুষের বোঝা বহন করতাম। এ অবস্থায় এক ব্যক্তি (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে) এসে প্রচুর পরিমাণ দান করল। তারা (মুনাফিকরা) বলল, এ লোকটা রিয়াকার (মানুষকে দেখাচ্ছে)। আরেক ব্যক্তি এসে এক সা পরিমাণ দান করল। তারা বলল, এই ব্যক্তির এক সা' পরিমাণ দান গ্রহণ করার কোনও প্রয়োজন আল্লাহ তা'আলার নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হল-
الَّذِينَ يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُونَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللَّهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ (79)
(এসব মুনাফিক তো এমন,) যারা মুমিনদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদাকাকারীদেরকে দোষারোপ করে এবং তাদেরকেও, যারা নিজ শ্রম (লব্ধ অর্থ) ছাড়া কিছুই পায় না। এ কারণে তারা তাদেরকে উপহাস করে। আল্লাহও তাদের উপহাস করেন। আর তাদের জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে। [সূরা তাওবা, আয়াত ৭৯] -বুখারী ও মুসলিম।
এখানে হাদীছটি বুখারী রহ.-এর শব্দে উল্লেখিত হয়েছে
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০১৮; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৩০)
হাদীছ নং: ১১০
হযরত আবূ মাস'উদ আনসারী রাযি. বলেন, দান-সদাকা সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হলে আমরা (অর্থোপার্জনের জন্য) মানুষের বোঝা বহন করতাম। এ অবস্থায় এক ব্যক্তি (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে) এসে প্রচুর পরিমাণ দান করল। তারা (মুনাফিকরা) বলল, এ লোকটা রিয়াকার (মানুষকে দেখাচ্ছে)। আরেক ব্যক্তি এসে এক সা পরিমাণ দান করল। তারা বলল, এই ব্যক্তির এক সা' পরিমাণ দান গ্রহণ করার কোনও প্রয়োজন আল্লাহ তা'আলার নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে নাযিল হল-
الَّذِينَ يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُونَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللَّهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ (79)
(এসব মুনাফিক তো এমন,) যারা মুমিনদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদাকাকারীদেরকে দোষারোপ করে এবং তাদেরকেও, যারা নিজ শ্রম (লব্ধ অর্থ) ছাড়া কিছুই পায় না। এ কারণে তারা তাদেরকে উপহাস করে। আল্লাহও তাদের উপহাস করেন। আর তাদের জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে। [সূরা তাওবা, আয়াত ৭৯] -বুখারী ও মুসলিম।
এখানে হাদীছটি বুখারী রহ.-এর শব্দে উল্লেখিত হয়েছে
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১৪১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১০১৮; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ২৫৩০)
11 - باب في المجاهدة
110 - السادس عشر: عن أبي مسعود عقبة بن عمرو الأنصاري البدري - رضي الله عنه - قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ آيةُ الصَّدَقَةِ كُنَّا نُحَامِلُ عَلَى ظُهُورِنَا، فَجَاءَ رَجُلٌ فَتَصَدَّقَ بِشَيءٍ كَثيرٍ، فقالوا: مُراءٍ، وَجَاءَ رَجُلٌ آخَرُ فَتَصَدَّقَ بِصَاعٍ، فقالُوا: إنَّ اللهَ لَغَنيٌّ عَنْ صَاعِ هَذَا! فَنَزَلَتْ: {الَّذِينَ يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِينَ لا يَجِدُونَ إِلاَّ جُهْدَهُمْ} [التوبة: 79]. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، هذا لفظ البخاري (1).
وَ «نُحَامِلُ» بضم النون وبالحاء المهملة: أي يحمل أحدنا عَلَى ظهره بالأجرة ويتصدق بِهَا.
وَ «نُحَامِلُ» بضم النون وبالحاء المهملة: أي يحمل أحدنا عَلَى ظهره بالأجرة ويتصدق بِهَا.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটি সাহাবায়ে কিরামের দানশীলতা সম্পর্কে। যখন আয়াত নাযিল হলঃ-
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
অর্থ : (হে নবী!) তাদের সম্পদ থেকে সদাকা গ্রহণ কর, যার মাধ্যমে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও বরকতপূর্ণ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর। নিশ্চয়ই তোমার দোয়া তাদের পক্ষে প্রশান্তিদায়ক। আর আল্লাহ সব কথা শোনেন, সবকিছু জানেন।সূরা তাওবা, আয়াত ১০৩
তখন সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দান-সদাকার ধুম পড়ে গেল। এমনিতেই তো তাঁরা ছিলেন দুনিয়াবিমুখ। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতে নাজাত লাভই ছিল তাঁদের জীবনের লক্ষ্যবস্তু । কখন কী উপায়ে তা লাভ করা যায়, সর্বক্ষণ তার সন্ধানে থাকতেন। কাজেই এ আয়াত যখন নাযিল হল, তখন প্রত্যেকেই আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সদাকায় লেগে গেলেন।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি আসলেন প্রচুর সম্পদ নিয়ে। অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, তিনি ছিলেন হযরত ‘আব্দুর রহমান ইব্ন 'আওফ রাযি.। তিনি আট হাজার দিরহাম নিয়ে এসেছিলেন। এত বিপুল অঙ্কের দান দেখে মু'মিনদের ভালো কাজেও ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো যাদের অভ্যাস সে মুনাফিকরা বলতে লাগল, এ লোক রিয়াকার। মানুষকে দেখানোর জন্যই এত বেশি দান করছে।
সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নিতান্তই গরীব। তাঁদের কাছে নগদ টাকাপয়সা থাকত না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা দানখয়রাত থেকে পিছিয়ে থাকতেন না। তাঁরা বাজারে গিয়ে মানুষের মুটে বইতেন। কেউ বা কোনও ধনীর বাড়িতে, যাদের অধিকাংশই ছিল ইহুদী, শ্রম খাটতেন। এতে যা অর্জন হত, তা থেকেই তাঁরা আল্লাহর পথে দান করতেন। এরকমই এক সাহাবীর কথা এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, তিনি এক সা' পরিমাণ খেজুর নিয়ে এসেছিলেন। এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায় তাঁর নাম আবু 'আকীল। তিনি দুই সা' খেজুরের বিনিময়ে এক ব্যক্তির বাগানে কুয়ার পানি তুলে সেচ দিয়েছিলেন। তারপর সেই দুই সা' খেজুরের এক সা নিজ পরিবারবর্গের জন্য রেখে আসেন, আরেক সা' নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এনে আল্লাহর পথে সদাকা করেন।
এবার মুনাফিকরা ছিদ্রান্বেষণের ভিন্ন পথ ধরল। এত কম পরিমাণের দান দেখে এই বলে উপহাস করতে লাগল, এত অল্প পরিমাণ দান গ্রহণ করার কোনও প্রয়োজন আল্লাহ তা'আলার নেই। আসলে দোষ খোঁজা যাদের অভ্যাস তারা সবকিছুতেই তা দেখতে পায়। তাদের সমালোচনা থেকে কেউ নিস্তার পায় না। এটা মুনাফিকী চরিত্র। আল্লাহ তা'আলা তাদের এ চরিত্রের নিন্দা করে কুরআন মাজীদে আয়াত নাযিল করেছেন, যেমনটা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ আর্থিক মুজাহাদার শিক্ষা দেয়। আল্লাহর পথে খরচ করার বেলায় নিজের মন ও সমাজের পক্ষ থেকে যে-কোনও বাধাই আসুক না কেন, তাতে দমে যাওয়া উচিত নয়।
খ. নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান করাই আসল কথা। তাতে দানের অঙ্ক যদি কমও হয়, মনের ইখলাসের কারণে আল্লাহ তা'আলার কাছে তা অনেক মূল্যবান হতে পারে।
গ. অন্যের আমলে খুঁত ধরা এবং তাকে রিয়াকার বলা বা আমলকে নগণ্য গণ্য করা মুনাফিকদের কাজ। এর থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
অর্থ : (হে নবী!) তাদের সম্পদ থেকে সদাকা গ্রহণ কর, যার মাধ্যমে তুমি তাদেরকে পবিত্র ও বরকতপূর্ণ করবে এবং তাদের জন্য দোয়া কর। নিশ্চয়ই তোমার দোয়া তাদের পক্ষে প্রশান্তিদায়ক। আর আল্লাহ সব কথা শোনেন, সবকিছু জানেন।সূরা তাওবা, আয়াত ১০৩
তখন সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দান-সদাকার ধুম পড়ে গেল। এমনিতেই তো তাঁরা ছিলেন দুনিয়াবিমুখ। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতে নাজাত লাভই ছিল তাঁদের জীবনের লক্ষ্যবস্তু । কখন কী উপায়ে তা লাভ করা যায়, সর্বক্ষণ তার সন্ধানে থাকতেন। কাজেই এ আয়াত যখন নাযিল হল, তখন প্রত্যেকেই আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সদাকায় লেগে গেলেন।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি আসলেন প্রচুর সম্পদ নিয়ে। অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, তিনি ছিলেন হযরত ‘আব্দুর রহমান ইব্ন 'আওফ রাযি.। তিনি আট হাজার দিরহাম নিয়ে এসেছিলেন। এত বিপুল অঙ্কের দান দেখে মু'মিনদের ভালো কাজেও ত্রুটি খুঁজে বেড়ানো যাদের অভ্যাস সে মুনাফিকরা বলতে লাগল, এ লোক রিয়াকার। মানুষকে দেখানোর জন্যই এত বেশি দান করছে।
সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নিতান্তই গরীব। তাঁদের কাছে নগদ টাকাপয়সা থাকত না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা দানখয়রাত থেকে পিছিয়ে থাকতেন না। তাঁরা বাজারে গিয়ে মানুষের মুটে বইতেন। কেউ বা কোনও ধনীর বাড়িতে, যাদের অধিকাংশই ছিল ইহুদী, শ্রম খাটতেন। এতে যা অর্জন হত, তা থেকেই তাঁরা আল্লাহর পথে দান করতেন। এরকমই এক সাহাবীর কথা এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, তিনি এক সা' পরিমাণ খেজুর নিয়ে এসেছিলেন। এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায় তাঁর নাম আবু 'আকীল। তিনি দুই সা' খেজুরের বিনিময়ে এক ব্যক্তির বাগানে কুয়ার পানি তুলে সেচ দিয়েছিলেন। তারপর সেই দুই সা' খেজুরের এক সা নিজ পরিবারবর্গের জন্য রেখে আসেন, আরেক সা' নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এনে আল্লাহর পথে সদাকা করেন।
এবার মুনাফিকরা ছিদ্রান্বেষণের ভিন্ন পথ ধরল। এত কম পরিমাণের দান দেখে এই বলে উপহাস করতে লাগল, এত অল্প পরিমাণ দান গ্রহণ করার কোনও প্রয়োজন আল্লাহ তা'আলার নেই। আসলে দোষ খোঁজা যাদের অভ্যাস তারা সবকিছুতেই তা দেখতে পায়। তাদের সমালোচনা থেকে কেউ নিস্তার পায় না। এটা মুনাফিকী চরিত্র। আল্লাহ তা'আলা তাদের এ চরিত্রের নিন্দা করে কুরআন মাজীদে আয়াত নাযিল করেছেন, যেমনটা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ আর্থিক মুজাহাদার শিক্ষা দেয়। আল্লাহর পথে খরচ করার বেলায় নিজের মন ও সমাজের পক্ষ থেকে যে-কোনও বাধাই আসুক না কেন, তাতে দমে যাওয়া উচিত নয়।
খ. নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান করাই আসল কথা। তাতে দানের অঙ্ক যদি কমও হয়, মনের ইখলাসের কারণে আল্লাহ তা'আলার কাছে তা অনেক মূল্যবান হতে পারে।
গ. অন্যের আমলে খুঁত ধরা এবং তাকে রিয়াকার বলা বা আমলকে নগণ্য গণ্য করা মুনাফিকদের কাজ। এর থেকে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: