রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ১০৩
মুজাহাদা ও সাধনা-সংগ্ৰাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীর্ঘ নামায
হাদীছ নং: ১০৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাস'উদ রাযি. বলেন, আমি কোনও এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে নামায পড়ছিলাম। তিনি এত দীর্ঘ কিয়াম করলেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম। জিজ্ঞেস করা হল, আপনি কী ইচ্ছা করেছিলেন? তিনি বললেন, আমি ইচ্ছা করেছিলাম বসে পড়ব এবং তাঁকে পরিত্যাগ করব?। -বুখারী ও মুসলিম।
(সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ১১৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ৭৭৩)
11 - باب في المجاهدة
103 - التاسع: عن ابن مسعود - رضي الله عنه - قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - لَيلَةً، فَأَطَالَ القِيامَ حَتَّى هَمَمْتُ بأمْرِ سُوءٍ! قيل: وَمَا هَمَمْتَ بِهِ؟ قَالَ: هَمَمْتُ أَنْ أجْلِسَ وَأَدَعَهُ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাহাজ্জুদের নামায অনেক দীর্ঘ করার কথা বর্ণিত হয়েছে। কতটা দীর্ঘ ছিল তা হযরত ইবনে মাস'উদ রাযি.-এর কথা দ্বারাই অনুমান করা যায়। তিনি ছিলেন একজন যুবক। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণে অতি আন্তরিক ও উৎসাহী ছিলেন। তা সত্ত্বেও যখন বসে পড়ার ইচ্ছা করেছিলেন তখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সে নামায ছিল অতি দীর্ঘ। এটা ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ‘ইবাদত-বন্দেগীর মুজাহাদা।
বসে পড়ার ইচ্ছা হওয়া সত্ত্বেও হযরত ইব্ন মাস'উদ রাযি. সে ইচ্ছা পরিত্যাগ করেন এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই নামায আদায় করতে থাকেন। কেননা বসলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আদব রক্ষার পরিপন্থি হয়। তিনি দাড়িয়ে নামায পড়ছেন আর আমি বসে বসে পড়ব? বলাবাহুল্য, ওজর অবস্থায় এরূপ করলে তা মোটেই বেআদবী হয় না। তাঁর যে বসে পড়ার ইচ্ছা হয়েছিল, তা নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে পড়ার কারণে। সেটা তো একটা ওজরই। কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম আদবের উচ্চ পর্যায়ে ছিলেন বলে সে ওজর উপেক্ষা করেছেন এবং কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও দাড়িয়ে থাকাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
সাহাবায়ে কিরাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি বিষয় অত্যন্ত আগ্রহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অন্যদের কাছে বর্ণনা করতেন। তা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁরা নিজেদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও উল্লেখ করতেন, যাতে শ্রোতার কাছে বিষয়বস্তু ভালোভাবে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁরা ছিলেন অতি সরল ও অকৃত্রিম চরিত্রের মানুষ। তাই তো কেমন অকপটে তিনি জানাচ্ছেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম। যদিও বাস্তবিকপক্ষে তা মন্দ ছিল না।
হযরত 'আব্দুল্লাহ ইবনে মাস'ঊদ রাযি. ছিলেন সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে একজন বিশিষ্ট আলেম ও ফকীহ। তিনি ছাত্রদের কুরআন ও হাদীছ শিক্ষাদান করতেন। এ বর্ণনা দ্বারা তাঁর শিক্ষাদানের একটি বিশেষত্ব সম্পর্কে জানা যায়। তা এই যে, এত বড় ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি অতি রাশভারী ও কঠোর ভাবাপন্ন ছিলেন না। কেউ কোনও বিষয় বুঝতে না পারলে প্রশ্ন করার সুযোগ পেত এবং তিনি তা বুঝিয়ে দিতেন। তিনি কী মন্দ কাজের ইচ্ছা করেছিলেন, শিক্ষার্থী তা বুঝতে না পেরে তাঁকে প্রশ্ন করল। তিনিও বলে দিলেন যে, তা ছিল বসে পড়া ও নামায ছেড়ে দেওয়া। এর দ্বারা শিক্ষার্থীর প্রতি একজন আদর্শ শিক্ষকের কেমন আন্তরিক হওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছেরও প্রধান শিক্ষা হচ্ছে 'ইবাদত-বন্দেগীতে নফসের বিরুদ্ধে মুজাহাদা।

খ. এর দ্বারা বড়র প্রতি ছোটর আদব রক্ষার তা'লীম পাওয়া যায়। ছোটর কর্তব্য, বড়র বিরুদ্ধাচরণ করা থেকে বিরত থাকা এবং কথা ও কাজে তার অনুসরণ করে যাওয়া, তাতে যতই কষ্ট হোক না কেন।

গ. হযরত ইব্ন মাস'উদ রাযি.-এর বক্তব্য দ্বারা জানা গেল, বড়দের কাজের বিরুদ্ধাচরণ করা একটি মন্দ কর্ম (যদি তা শরী'আতবিরোধী কাজ না হয়)।

ঘ. শিক্ষকের কর্তব্য, শিক্ষার্থীর প্রতি সহজ ও আন্তরিক থাকা।

ঙ. শিক্ষার্থীর কর্তব্য, কোনও বিষয় বুঝে না আসলে উস্তাযের কাছে জিজ্ঞেস করে তা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন