রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং:
ইয়াকীন ও তাওয়াক্কুল।
ঘর হতে বের হওয়ার সময় আল্লাহর প্রতি ভরসা করা ও এ সম্পর্কিত দু‘আ
হাদীছ নং : ৮২

উম্মুল মু'মিনীন হযরত উম্মু সালামা (তাঁর নাম হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া হুযায়ফা আল-মাখযূমিয়্যাহ) রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ঘর থেকে বের হতেন তখন বলতেন-
بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ
আমি আল্লাহর নামে বের হচ্ছি এবং তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই, যেন আমি নিজে নিজে পথভ্রষ্ট না হই বা অন্যের দ্বারা পথভ্রষ্ট হয়ে না পড়ি। আশ্রয় চাই, যেন আমি নিজে নিজে পদস্খলিত না হই কিংবা অন্যের দ্বারা পদস্খলিত না হয়ে পড়ি। আশ্রয় চাই, যেন নিজে কারও প্রতি জুলুম না করি কিংবা অন্যের দ্বারা জুলুমের শিকার না হই এবং আশ্রয় চাই, যেন (কারও প্রতি) মূর্খতাসুলভ আচরণ না করি কিংবা আমি (অন্যের দ্বারা) মূর্খতাসুলভ আচরণের শিকার না হই।
এটি একটি সহীহ হাদীছ। ইমাম আবু দাউদ ও তিরমিযী এবং অন্যান্য ইমামগণ সহীহ সনদে এটি উল্লেখ করেছেন। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি 'হাসান সহীহ' স্তরের হাদীছ। এখানে হাদীছটি ইমাম আবূ দাউদ রহ. বর্ণিত ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে।
(সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৫০৯৪; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ৩৪২৭; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৩৮৮৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৫৪৮৬)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে ঘর থেকে বের হওয়াকালীন দু'আ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। দু'আটি নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে পড়তেন। আবূ দাউদ শরীফের বর্ণনায় আছে, তিনি এ দু'আটি পড়তেন আকাশের দিকে তাকিয়ে। এতে আল্লাহর নামে বের হওয়া এবং তাঁর প্রতি ভরসা করার শিক্ষা রয়েছে। প্রত্যেক মু'মিনেরই উচিত ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দু'আটি পড়া। কেননা সে জানে না ঘর থেকে বের হওয়ার পর তার সময়টা কিভাবে কাটবে এবং সে কোন্ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। দুনিয়ায় নিজ ঘরই তুলনামূলক বেশি নিরাপদ স্থান। বাইরে নানারকম ফিতনা। জিন ও মানব শয়তান। নানাভাবে প্ররোচনা দেয়। ফলে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। যদি কোনও শত্রু থাকে তবে সেও ক্ষতি করার বেশি সুযোগ পায়। হিংস্র ও ক্ষতিকর প্রাণীর আক্রমণেরও ভয় রয়েছে। তাছাড়া আরও বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। এতসব ক্ষতি থেকে কেবল আল্লাহ তা'আলাই রক্ষা করতে পারেন। তিনিই সব লাভ-লোকসানের মালিক। উপকারী-অপকারী যাবতীয় সৃষ্টি তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি যাকে রক্ষা করেন, তার ক্ষতি করার সাধ্য কারও নেই। সুতরাং যে বান্দা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তাঁর নাম নেবে ও তাঁর উপর ভরসা করবে, সে তাঁর হেফাজতে থাকবে।
বান্দা যখন আল্লাহর হেফাজতে চলে যায়, তখন আল্লাহ তা'আলা তার সঙ্গে এমন আচরণ করেন, যা বান্দার পক্ষে কল্যাণকর হয়। সেই কল্যাণ বিপদ দূর করা বা বিপদ থেকে হেফাজত করার মাধ্যমেও হতে পারে এবং হতে পারে বিপদের সম্মুখীন করে তাতে ধৈর্যধারণের তাওফীক দেওয়ার মাধ্যমেও। সুতরাং এ দু'আ পড়ে বের হওয়ার পর কোনও বিপদ দেখা দিলে বান্দার কর্তব্য তাতে ধৈর্য ধরা এবং এ বিশ্বাস রাখা যে, এ বিপদের মধ্যেই তার কল্যাণ নিহিত আছে। এরূপ ধারণা করা কিছুতেই সমীচীন হবে না যে, দু'আ পড়ে বের হলাম, তা সত্ত্বেও কেন বিপদে পড়লাম। বান্দার পক্ষে কোনটা কল্যাণকর তা বান্দা অপেক্ষা আল্লাহই বেশি ভালো জানেন। তাছাড়া দু'আ পড়ার এ ফায়দা তো রয়েছেই যে, এর দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটা সুন্নতের অনুসরণ হল এবং এরই বিনিময়ে আখিরাতের ছওয়াব লাভও নিশ্চিত হল।
দু'আটির শব্দাবলির ব্যাখ্যা

بسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ

আমি আল্লাহর নামে বের হচ্ছি এবং তাঁর উপর তাওয়াক্কুল করছি।

অর্থাৎ আমি আল্লাহর সাহায্যপ্রার্থী হয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছি এবং আমার ঘরের ও বাইরের যাবতীয় বিষয়ে তাঁর উপর ভরসা করছি, যাতে তিনি বাড়িতে আমার উপস্থিত থাকাকালে যেমন সকলের হেফাজত করেছেন তেমনি আমার অনুপস্থিতিতেও সকলের হেফাজত করেন, আমার যাবতীয় বিষয় সুষ্ঠুভাবে সমাধান করে দেন এবং সবরকম অনিষ্ট থেকে আমাকে ও আমার গৃহবাসীকে রক্ষা করেন।
এ দু'আয় চারটি বিষয় থেকে আল্লাহর পানাহ চাওয়া হয়েছে। নিচে প্রত্যেকটির ব্যাখ্যা দেওয়া যাচ্ছে।

এক.

اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই, যেন আমি নিজে নিজে পথভ্রষ্ট না হই বা অন্যের দ্বারা পথভ্রষ্ট হয়ে না পড়ি ।
এ শব্দদু'টি الضلال থেকে নির্গত। এর অর্থ গোমরাহী ও সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতি। বলা হচ্ছে, আমি নিজে নিজে যেন হিদায়াত থেকে সরে গিয়ে গোমরাহীর পথে না চলি এবং সত্য-সঠিক পথ ছেড়ে ভ্রান্ত পথ অনুসরণ না করি। আমি নিজের পক্ষ থেকেও যেন বিপথগামী না হই এবং তা না হই অন্যের দ্বারাও। অর্থাৎ শয়তানের প্ররোচনায় বা কোনও মানুষের কুমন্ত্রণায়। বলাবাহুল্য কুরআন-সুন্নাহ'র পথই হিদায়াত ও সত্য-সঠিক পথ, এছাড়া অন্যসব পথই গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা।

দুই.

أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ

যেন আমি নিজে নিজে পদস্খলিত না হই কিংবা অন্যের দ্বারা পদস্খলিত না হয়ে পড়ি।
এ শব্দদুটি الزلة থেকে নির্গত। এর অর্থ পদস্খলন। সত্যপথ থেকে সরে যাওয়াও এক প্রকার পদস্খলন বটে। পদস্খলন সাধারণত অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়। তাই অনিচ্ছাকৃত বা অসতর্কতাবশত কৃত গুনাহকেও الزلة বলে। যেন গুনাহ হয়ে যাওয়াকে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। পা পিছলে পড়ে যাওয়াটা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও তা কারও কাম্য নয়। অনুরূপ অনিচ্ছাকৃত গুনাহ করাও কাম্য হওয়া উচিত নয়। তাই এ হাদীছে তা থেকেও পানাহ চাওয়া হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায় ইচ্ছাকৃতভাবে গুনাহ করাটা কত গুরুতর অপরাধ।
রাস্তায় পা পিছলে পড়ে যাওয়াটা কখনও কখনও অন্যের চক্রান্তেও হতে পারে। কেউ যাতে সেভাবেও পদস্খলন ঘটাতে না পারে, সচেতন ব্যক্তি সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকে। তদ্রূপ সতর্কতা জরুরি হিদায়াতের পথে অবিচল থাকার ব্যাপারেও। কেননা এখানেও শত্রু আছে। সে শত্রু শয়তান এবং ওই সকল মানুষ, যারা চায় না বান্দা সত্যদীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকুক। তারা নানা চক্রান্তে হিদায়াত ও সত্যদীন থেকে বান্দার পদস্খলন ঘটাতে চায়। তাই এ দু'আয় পানাহ চাওয়া হয়েছে যেন অন্যের প্ররোচনায়ও কোনওভাবে পদস্খলন না ঘটে এবং গুনাহ না হয়ে যায়।

তিন.

أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَم

যেন নিজে কারও প্রতি জুলুম না করি কিংবা অন্যের দ্বারা জুলুমের শিকার না হই।'
জুলুম অর্থ অন্যের প্রতি এমন আচরণ করা, যা সমীচীন নয় কিংবা বলা যায় অন্যের অধিকারে অন্যায় হস্তক্ষেপ করা। মানুষের অধিকার তিন প্রকার। জানের অধিকার, মালের অধিকার ও ইজ্জত-সম্মানের অধিকার। ঘর থেকে বের হলে মানুষের সঙ্গে কোনও না কোনওরকম লেনদেন ও আচার-আচরণ করতেই হয়। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অন্যের এসব অধিকারে অন্যায় হস্তক্ষেপ হয়ে যায় এবং কোনও না কোনওভাবে অন্যের অধিকার খর্ব করা হয়। যে-কোনও রকম অধিকার খর্ব করা জুলুম। জুলুম করা মহাপাপ। তাই এ দু'আয় আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া হয়েছে যাতে ঘর থেকে বের হওয়ার পর কারও প্রতি কোনওরকম জুলুম না হয়ে যায়। অর্থাৎ অন্যায়ভাবে যেন কারও শরীর ও জানকে কষ্ট দেওয়া না হয়, কারও মালের ক্ষতি করা না হয় এবং কারও মান-সম্মানে আঘাত করা না হয়।
এ দু'আয় অন্যের পক্ষ হতে জুলুমের শিকার হওয়া বা মজলুম হওয়া থেকেও পানাহ চাওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের জান, মাল ও ইজ্জত আল্লাহর দেওয়া আমানত। এ আমানতের হেফাজত করা অবশ্যকর্তব্য। যদি নিজ অবহেলাবশত অন্যের পক্ষ হতে জুলুম ভোগ করা হয়, তবে তাও শরী'আতে কাম্য নয়। নিজের জান, মাল ও ইজ্জতের উপর কেউ আঘাত করলে যথাসম্ভব তা প্রতিহত করা কর্তব্য। এমনকি প্রতিহত করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে হাদীছের ভাষ্য অনুযায়ী সে শহীদের মর্যাদা লাভ করে ।
যদি কেউ জবরদস্তি জুলুম করে এবং তা ঠেকানোর ক্ষমতা নিজের না থাকে, তবে এরকম জুলুম মানুষের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। অধিকাংশের পক্ষে তা বরদাশত করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় এ কারণে ব্যক্তির ঈমান-আমলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যথাসম্ভব অন্যের জুলুম থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা উচিত। এজন্য কেবল নিজ চেষ্টাই যথেষ্ট নয়, আল্লাহর সাহায্যলাভও জরুরি। তাই এ হাদীছে মজলুম হওয়া থেকেও পানাহ চাইতে বলা হয়েছে।
অবশ্য দীন ও ঈমান হেফাজত করতে গিয়ে যদি কেউ জুলুমের শিকার হয় এবং তাতে ধৈর্যধারণ করে, প্রয়োজনে জান দিতেও প্রস্তুত হয়ে যায় ও শাহাদাত কবুল করে নেয়, তবে তা অনেক বড় হিম্মতের কাজ এবং নবী-রাসূল, সিদ্দীকীন ও শহীদানের আদর্শ। এ আদর্শ অনুসরণের তাওফীক যার লাভ হয়, সে বড়ই খোশনসীব।

চার.

أَوْ أَجْهَلَ أَوْ يُجْهَل عَلى

এবং যেন (কারও প্রতি) মূর্খতাসুলভ আচরণ না করি কিংবা আমি (অন্যের দ্বারা) মূর্খতাসুলভ আচরণের শিকার না হই'।
এ শব্দদু'টি الجهل والجهالة থেকে নির্গত। এর অর্থ অজ্ঞতা ও মূর্খতা। এখানে এর দ্বারা দুর্ব্যবহার বোঝানো হয়েছে। যেন দুর্ব্যবহার করা অজ্ঞ ও মূর্খ লোকেরই কাজ। জ্ঞানী ব্যক্তি অন্যের প্রতি দুর্ব্যবহার করতে পারে না।
বাইরে বের হলে নানারকম মানুষের সঙ্গে মেলামেশা হয়। মানুষের সঙ্গে নানাবিধ কাজকর্ম থাকে। তাতে নানারকম কথাবার্তা ও আচার-আচরণের দরকার পড়ে। আবার সব মানুষের চিন্তাভাবনা ও পসন্দ-অপসন্দ একরকম হয় না। ফলে গরমিলের ক্ষেত্রে অনেক সময় মেযাজ-মর্জি ঠিক থাকে না। তাতে করে সীমালঙ্ঘন হয়ে যায়, ব্যবহার ভালো করা হয় না। অথচ মানুষের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করা ইসলামের এক অন্যতম প্রধান শিক্ষা। এ শিক্ষা অনুসরণ করা না হলে অনেক সময় কঠিন গুনাহ হয়ে যায়। তাই ঘরের বাইরে থাকাকালে সকল কাজকর্মে মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা উচিত। কোনওক্রমেই যাতে কারও প্রতি দুর্ব্যবহার করা না হয়ে যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া তা সম্ভব হয় না। হাদীছের এ বাক্যে রয়েছে সে তাওফীকেরই প্রার্থনা।
এমনিভাবে এ বাক্যে অন্যের অজ্ঞতাসুলভ আচরণের শিকার হওয়া থেকেও পানাহ চাওয়া হয়েছে। কেননা অন্যের দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হলে এক তো তাতে নিজের সম্মানহানী হয়, অথচ আত্মসম্মান রক্ষা করা জরুরি। দ্বিতীয়ত প্রতিশোধস্বরূপ নিজের পক্ষ থেকেও তখন দুর্ব্যবহার করার আশঙ্কা থাকে। আর অধিকাংশ সময় প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা হয় না। নিজের প্রতি যেমন দুর্ব্যবহার করা হয়েছে, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে তার চেয়ে আরও বেশি দুর্ব্যবহার করা হয়, যা নিশ্চিত জুলুম। এর থেকে বাঁচার জন্যই যাতে অন্যের দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হতে না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকা উচিত। এ দু'আও সে জন্যই।
এ বাক্যে অজ্ঞতা ও জাহালাত দ্বারা জাহিলী যুগের আচার-আচরণ বোঝানো উদ্দেশ্য হতে পারে। সেকালে মানুষ বংশ নিয়ে বড়াই করত, ধন-সম্পদের বাহাদুরী দেখাত এবং অন্যের উপর জোরজুলুম করত। ইসলাম এসব নিষিদ্ধ করেছে। এ দু'আয় বলা হচ্ছে- আমি যেন বাইরে গিয়ে মানুষের প্রতি ইসলাম-পূর্বকালের মত ব্যবহার না করি এবং আমার প্রতিও যেন সেরকম ব্যবহার করা না হয়। অর্থাৎ ইসলাম মানুষের সঙ্গে যেমন আচরণ শিক্ষা দিয়েছে, সেরকম আচরণেই যেন আমি যত্নবান থাকি এবং আমার প্রতিও যেন সেরকম আচরণই করা হয়।
একটু লক্ষ করলেই বোঝা যায় এ দু'আটি কত পূর্ণাঙ্গ। প্রথমে بسْمِ اللَّهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ বলে দীন-দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ে আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা প্রকাশ করা হয়েছে। ইতঃপূর্বে আমরা জেনে এসেছি ইসলামে 'তাওয়াক্কুল' বলতে নিজের পক্ষে যতটুক সম্ভব চেষ্টা করা এবং তার ফলাফল আল্লাহর উপর ন্যস্ত করাকে বোঝায়। দীন ও দুনিয়ার যাবতীয় কাজই এর অন্তর্ভুক্ত। সে হিসেবে একজন মুসলিমের ইহ ও পরকালীন জীবন- সংক্রান্ত সবকিছুই এর আওতায় এসে গেছে।
তারপর اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أَوْ أُضَلَّ أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ - এর মধ্যে রয়েছে দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার চেতনা। সবশেষে أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أَوْ أَجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ -এর ভেতর আছে পার্থিব বিষয়ে সত্য ও ন্যায়ের উপর অবিচলিত থাকার তাগিদ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ঘরে-বাইরে সব জায়গায় বান্দার কর্তব্য, চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহ তা'আলার উপর তাওয়াক্কুল রাখা।

খ. নফসের কুমন্ত্রণা বা শয়তানের প্ররোচনায় যে-কোনও সময়ই হিদায়াত থেকে বিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ ব্যাপারেও আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত।

গ. জুলুম করা মহাপাপ। তাই কারও প্রতি যাতে জুলুম না হয়ে যায় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

ঘ. অন্যের দ্বারা জুলুমের শিকার হওয়া একটা কঠিন পরীক্ষা। অনেক সময় তা ঈমান- আমলের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে থাকে। তাই আল্লাহর কাছে দু'আ করা উচিত যাতে অন্যের জুলুমের শিকার হতে না হয়।

ঙ. কারও প্রতি দুর্ব্যাবহার করা একটি নাজায়েয কাজ ও মূর্খতাসুলভ আচরণ। প্রত্যেকের উচিত এর থেকে বিরত থাকা।
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৮২ | মুসলিম বাংলা