রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৭৯
ভূমিকা অধ্যায়
ইয়াকীন ও তাওয়াক্কুল।
পাখির মত সহজে রিয্ক পেতে চাইলে
হাদীছ নং : ৭৯

হযরত উমর রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা যদি আল্লাহ তা'আলার উপর যেমন তাওয়াক্কুল করা উচিত তেমন তাওয়াক্কুল করতে, তবে আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে রিযক দিতেন যেমন তিনি পাখিদের রিযক দিয়ে থাকেন। ভোরবেলা খালিপেটে বের হতে, বিকেল বেলা ভরাপেটে ফিরতে।-তিরমিযী।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি 'হাসান' স্তরের হাদীস।
(জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ২৩৪৪; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ৪১৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২০৫)
مقدمة الامام النووي
7 - باب في اليقين والتوكل
79 - السادس: عن عُمَر - رضي الله عنه - قَالَ: سمعتُ رَسُول الله - صلى الله عليه وسلم - يقول: «لَوْ أَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُونَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ، تَغْدُو خِمَاصًا وَتَرُوحُ بِطَانًا». رواه الترمذي، (1) وَقالَ: «حديث حسن».
معناه: تَذْهبُ أَوَّلَ النَّهَارِ خِمَاصًا: أي ضَامِرَةَ البُطُونِ مِنَ الجُوعِ، وَتَرجعُ آخِرَ النَّهَارِ بِطَانًا. أَي مُمْتَلِئَةَ البُطُونِ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহ তা'আলা সকল জীবের স্রষ্টা এবং তিনিই সকলের রিদাতা। কুরআন মাজীদের এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছ—

وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا

অর্থ : ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনও জীব নেই, যাকে আল্লাহ রিয্ক দান করেন না।সূরা হুদ, আয়াত ৬
অর্থাৎ তিনি প্রত্যেককেই জীবিকা দিয়ে থাকেন। কোনও প্রাণীকে সৃষ্টি করার পর তাকে জীবিকা দেবেন না, ফলে সে না খেয়ে মারা যাবে, এটা আল্লাহ তা'আলার রীতি নয়। তবে ইহজগতে রিদানের জন্য তিনি এই নিয়ম জারি রেখেছেন যে, প্রত্যেককে তার সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। সেই ধারায় তিনি পাখিদেরও নিয়মিত রিয্ক দিয়ে থাকেন। তারা আপন সাধ্যমত চেষ্টা করে আর সে অনুযায়ী আল্লাহ তা'আলা তাদের জীবিকা সরবরাহ করেন। প্রতিদিন ভোরবেলা তারা রিয্কের সন্ধানে বের হয়ে পড়ে। ব্যস যখন যা সামনে পায় খেয়ে নেয়। সন্ধ্যা হতে হতে ক্ষুধা মিটে যায়। তারপর ভরাপেটে নিজ বাসায় ফেরে। পরদিন আবার বের হয়ে পড়ে এবং ক্ষুধা নিবারণ করে সন্ধ্যাবেলা ফিরে আসে। এভাবে তাদের জীবন কেটে যায়। তো এখানে লক্ষণীয় হল

ক. পাখিরা নিজ বাসায় হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে না, খাদ্যের সন্ধানে বের হয়ে পড়ে।

খ, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন যা পায় তৃপ্তিভরে তাই খেয়ে নেয় এবং তাতেই সম্ভষ্ট থাকে। এভাবে অতি সহজে তাদের রিয্কের ব্যবস্থা হয়ে যায়। না খেয়ে মরতে হয় না।

হাদীছে বলা হয়েছে- আল্লাহর প্রতি যথার্থ তাওয়াক্কুল করলে আল্লাহ তা'আলা পাখিদের মত রিয্ক দান করবেন। এর মানে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা নয়। পাখিরা বসে থাকে না। আল্লাহ তা'আলা চাইলে পাখিদের খাবার তাদের বাসায়ই পৌঁছে দিতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেন না। বরং তাদের ক্ষেত্রেও আল্লাহর প্রাকৃতিক বিধান এটাই যে, সকাল-বিকাল তাদেরকে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়ে পড়তে হবে। কাজেই জীবিকার জন্য সকলকেই চেষ্টা করতে হবে। রিয্কের সন্ধানে বের হয়ে পড়তে হবে যেমন পাখিরা বের হয়। তবে ভরসা নিজ চেষ্টার উপর হবে না। ভাববে না যে, আসবাব-উপকরণ দ্বারাই সব হয়ে যাবে। নিজ বিদ্যা-বুদ্ধি ও কলাকৌশলকেই সব মনে করবে না। রিকের জন্য চেষ্টা করবে, কিন্তু ভরসা করবে আল্লাহর উপর। তারপর আল্লাহ তা'আলা চেষ্টার যে ফল দান করেন তাতে সন্তুষ্ট থাকবে। এটাই তাওয়াক্কুলের হাকীকত । এভাবে তাওয়াক্কুলের সাথে চললে আল্লাহ তা'আলা সহজে রিয্ক দান করেন। যে আল্লাহ পাখিদের এত সহজে রিয্ক দিয়ে থাকেন, তিনি তাঁর প্রতি তাওয়াক্কুলকারী বান্দাদের রিয্ক থেকে বঞ্চিত রাখবেন কিংবা তাদের অনাহারের কষ্ট দেবেন? কক্ষনই নয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদের অন্তরে পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল দান করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মু'মিন ব্যক্তির কর্তব্য সকল কাজে আল্লাহ তা'আলার উপর পরিপূর্ণ ভরসা রাখা।

খ. যে আল্লাহ অতি সহজে পাখিদের রিয্ক দিয়ে থাকেন, তিনি তাঁর প্রতি তাওয়াক্কুলকারী বান্দাকে অনাহারে রাখবেন তা হতে পারে না।

গ. বান্দার কর্তব্য আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের সাথে জীবিকা অর্জনের চেষ্টা করা, যেমন পাখিরাও রিয্কের সন্ধানে বের হয়ে থাকে।

ঘ. আল্লাহর প্রতি যথার্থ তাওয়াক্কুলের একটা অংশ এইও যে, রিয্ক সন্ধান করা হবে হালাল পথে এবং সর্বপ্রকার হারাম ও সন্দেহজনক উপায় পরিহার করা হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান