রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৭৩
অধ্যায়: ৬ তাকওয়া ও আল্লাহভীতি।
৭৩। জান্নাত লাভের জন্য যে সকল কাজ করা জরুরি:

হযরত আবু উমামা বাহিলী রাযি. বলেন, আমি বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভাষণ দিতে শুনেছি। তাতে তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহকে ভয় করবে, তোমাদের পাঁচ (ওয়াক্ত) নামায পড়বে, তোমাদের নির্ধারিত (রমযান) মাসের রোযা রাখবে, তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় করবে এবং তোমাদের আমীরদের আনুগত্য করবে। তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে – তিরমিযী। (হাদীস নং ৬১৬)
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এটি একটি 'হাসান সহীহ' হাদীছ।
6 - باب في التقوى
73 - الخامس: عن أبي أُمَامَةَ صُدَيّ بنِ عجلانَ الباهِلِيِّ - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يَخْطُبُ في حجةِ الوداعِ، فَقَالَ: «اتَّقُوا اللهَ وَصَلُّوا خَمْسَكُمْ، وَصُومُوا شَهْرَكُمْ، وَأَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ، وَأَطِيعُوا أُمَرَاءَكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ». رواه الترمذي، (1) في آخر كتابِ الصلاةِ، وَقالَ: «حديث حسن صحيح».

হাদীসের ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে আরাফা ও মিনায় দীর্ঘ ভাষণ দিয়েছিলেন। এ হাদীছে সে দুই ভাষণের কোনও একটির অংশবিশেষ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মৌলিক পাঁচটি বিষয়ের হুকুম দেওয়া হয়েছে। সর্বপ্রথম হুকুম তাকওয়া ও আল্লাহভীতি সম্পর্কে।

তাকওয়া একটি ব্যাপক কথা। আল্লাহ তা'আলা যা কিছু করার আদেশ করেছেন তা করা এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে তাকওয়ার মূল কথা। এর ভেতর শরীআতের যাবতীয় আদেশ-নিষেধ এসে যায়। সে হিসেবে এই হুকুমটি সর্বপ্রথম দেওয়া হয়েছে। বাকি চারটি হুকুমও মূলত এর অন্তর্ভুক্ত। তবে যেহেতু শরীআতের অন্যান্য বিধানের ভেতর এ চারটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, সেই বিবেচনায় এগুলো আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাকওয়ার হুকুমটি সর্বপ্রথম দেওয়ার কারণ এও হতে পারে যে, অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকলে শরীআতের সমস্ত হুকুম মানা সহজ হয়ে যায়। অনেক সময় অলসতার কারণে নামায পড়তে কষ্টবোধ হয়। রমযানে রোযা রাখতেও কিছু না কিছু কষ্ট হয়ই। অর্থ-সম্পদের যাকাত দিতে মনের উপর বেশ চাপ পড়ে। আমীরের আনুগত্য করতেও মনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়। অন্তরে আল্লাহর ভয় ও তাকওয়া না থাকলে কেবলমাত্র কষ্ট-ক্লেশ বরদাশত করে এসব বিধান পালন করা সহজ হয় না। তাই প্রথমে তাকওয়া ও আল্লাহভীতির হুকুম দিয়ে মন-মানসিকতাকে পরবর্তী চার বিধান পালনে প্রস্তুত করা হয়েছে।

বলা হয়েছে- তোমাদের নামায, তোমাদের রোযা, তোমাদের যাকাত ইত্যাদি। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য, এ সকল বিধান পূর্ববর্তী উম্মতসমূহকেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে যে নিয়মে দেওয়া হয়েছিল, তোমাদেরকে ঠিক সে নিয়মে দেওয়া হয়নি। তাদের থেকে তোমাদের অনেক পার্থক্য রয়েছে। তোমাদের কর্তব্য এ সমস্ত বিধান তোমাদের শরীআতে যেভাবে বলা হয়েছে ঠিক সে নিয়মে পালন করা। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-

لِكُلٍ جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَ مِنْهَاجًا

তোমাদের মধ্যে প্রত্যেক (উম্মত)-এর জন্য আমি এক (পৃথক) শরীয়ত ও পন্থা নির্ধারণ করেছি।

আমীরের আনুগত্য করা
এ হাদীছে পঞ্চম হুকুম আমীরের আনুগত্য সম্পর্কে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে তোমাদের আমীর ও নেতা বানিয়েছেন, তোমাদের কর্তব্য তাদের আনুগত্য করা ও তাদের আদেশ মানা। সবরকম আমীর ও নেতা এর অন্তর্ভুক্ত। রাষ্ট্রপ্রধান, তার প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিসহ যে কোনও দায়িত্বশীল কোনও আদেশ করলে তা মানা জরুরি। এবং তা মানাও শরীআতেরই হুকুম। শর্ত এই যে, আদেশটি নাজায়েয কাজের না হতে হবে। কেননা হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে-

لا طاعَةَ لِمَخْلُوقِ فِي مَعْصِيَةِ الخَالِقِ.

'আল্লাহর অবাধ্যতার কাজে কোনও মাখলুকের আনুগত্য নেই”।

সুতরাং সরকারি যে সকল আদেশ কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নয়, তা মেনে চলা নাগরিকদের অবশ্যকর্তব্য। পাশাপাশি এ শর্তও প্রযোজ্য যে, সে আদেশ শাসকের স্বার্থসিদ্ধি ও জনকল্যাণবিরোধী না হতে হবে। হলে তা মান্যযোগ্য নয়।
প্রকাশ থাকে যে, আমীর বা শাসকের আদেশ পালনের জন্য তার মুত্তাকী- পরহেযগার হওয়া শর্ত নয়। সে নিজে শরীআতবিরোধী কাজ করলেও তার প্রদত্ত হুকুম যদি শরীআতবিরোধী না হয়, তবে তা মানা জরুরি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. তাকওয়া সকল আমলের প্রাণবস্তু। সর্বাবস্থায় এর প্রতি যত্নবান থাকা উচিত।

খ. জান্নাত লাভের জন্য নামায, রোযা প্রভৃতি ইসলামের রুকনসমূহ পালন করা অবশ্যকর্তব্য।

গ. আমীরের আনুগত্য করাও শরীআতের অপরিহার্য বিধান, যতক্ষণ না তার হুকুম কুরআন সুন্নাহবিরোধী হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
রিয়াযুস সালিহীন - হাদীস নং ৭৩ | মুসলিম বাংলা