রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং:
অধ্যায় : ৩ সবর।
৪৯। বিপদ-আপদ দ্বারা পর্যায়ক্রমে পাপ মোচন হয়

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মু'মিন নর-নারীর উপর তার নিজের, তার সন্তান-সন্তুতি ও অর্থ-সম্পদের দিক থেকে বালা-মুসিবত আসতে থাকে। পরিশেষে সে আল্লাহ তাআলার সংগে এমনভাবে মিলিত হয় যে, তার একটি গুনাহও অবশিষ্ট থাকে না।
ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি একটি হাসান সহীহ স্তরের হাদীস। (হাদীস নং ২৩৯৯)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

'বালা' শব্দের আসল অর্থ পরীক্ষা। আল্লাহ তা'আলা বিপদ-আপদ দ্বারা বান্দাকে পরীক্ষা করেন বলে বিপদ-আপদকেও 'বালা' বলা হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা মু'মিন নর-নারীকে পরীক্ষা করেন কখনও সরাসরি তার নিজের উপর বিপদ দিয়ে, যেমন রোগ-ব্যাধি, অভাব-অনটন, মামলা-মুকাদ্দামা, ইজ্জতের উপর হামলা, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি। কখনও পরীক্ষা করেন তার সন্তানদের দ্বারা। হয়তো সন্তান মারা যায় বা অসুস্থ হয়ে পড়ে বা সন্তান অবাধ্যতা করে, এমন কাজ করে, যা পিতার পক্ষে অপ্রীতিকর হয় ইত্যাদি। কখনও পরীক্ষা করেন অর্থ-সম্পদ দ্বারা। হয়তো ব্যবসায় লোকসান হল, ঘরে চুরি-ডাকাতি হল কিংবা আগুনে সব পুড়ে গেল ইত্যাদি। এসব দ্বারা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, বান্দার সবরের পরীক্ষা করা। যদি সে সবর করতে সক্ষম হয়, তবে এর বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ হতে থাকে। একেকবার একেকটি বিপদ দেখা দেয় আর একেকটি গুনাহ মাফ হয়। সারা জীবনই কোনও না কোনও দিক থেকে বিপদ আসতে থাকে। বান্দা যদি প্রত্যেকটিতে ধৈর্যধারণ করতে পারে, তবে একটা সময় এমন আসে যখন তার আর কোনও গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না। তখন মৃত্যু হলে সে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয় সম্পূর্ণ নিষ্পাপরূপে। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে বালা-মুসিবত দান বান্দার প্রতি তাঁর অসন্তুষ্টির প্রকাশ নয়; বরং তা একান্তই তাঁর রহমত ও নিআমত। কাজেই বালা মুসিবতে বাহ্যিক যত কষ্টই হোক, মনের দিক থেকে সন্তুষ্ট থাকা উচিত এবং আল্লাহর নিআমত গণ্য করে শোকরগুযার হওয়া উচিত। তাই বলে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করা যাবে না, ব্যাপারটা এমন নয়। যেহেতু বাহ্যিক কষ্ট-ক্লেশ হয়ে থাকে, তাই সে কষ্ট-ক্লেশ থেকে মুক্তির জন্য অবশ্যই দুআ করা যাবে। বরং এ হিসেবেও বালা-মুসিবত একটা নি'আমত হল যে, এর কারণে আল্লাহর দিকে রুজু করা হয় এবং তাঁর কাছে দু'আর অবকাশ তৈরি হয়। নিঃসন্দেহে দুআও এক ইবাদত। ইবাদতের তাওফীক লাভ হওয়াও অতিবড় নিআমত বটে।

প্রকাশ থাকে যে, বিপদ-আপদ দ্বারা সরাসরি মাফ হয় সগীরা গুনাহ। আর তখন যেহেতু আল্লাহর দিকে রুজু করা হয়, তাই স্বভাবতই তাওবাও করা হয়ে থাকে। সেই তাওবার বদৌলতে কবীরা গুনাহও মাফ হয়ে যায়। অবশ্য যেসব গুনাহের সম্পর্ক বান্দার হকের সাথে, তাতে ক্ষমালাভের জন্য বান্দার পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়াও জরুরি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বিপদ-আপদ দ্বারা যেহেতু গুনাহ মাফ হয়, তাই বিপদ-আপদে অধৈর্য হতে নেই। তাকে নিজের জন্য দুর্ভাগ্য মনে করা উচিত নয় কিছুতেই।

খ. 'জান-মাল ও সন্তান-সন্তুতি'-এর যে-কোনওটিতেই বালা-মুসিবত দেখা দিক, বান্দার কর্তব্য তাতে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া এবং তাঁর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থেকে নিজ গুনাহের জন্য তাওবা করা।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান