রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
ভূমিকা অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৪
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায় : ৩ সবর।
৪৪। জনৈকা আনসারী সাহাবিয়ার ধৈর্যের দৃষ্টান্ত:
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু তালহা রাযি.- এর এক পুত্র অসুস্থ ছিলেন। এ অবস্থায় হযরত আবু তালহা রাযি. বাইরে কোথাও গেলেন। ইত্যবসরে ছেলেটির মৃত্যু হল। হযরত আবু তালহা রাযি. ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার পুত্রের কী অবস্থা? বাচ্চাটির মা উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন, সে এখন আগের তুলনায় বেশি শান্ত আছে। তারপর তিনি তাঁর সামনে রাত্রের খাবার পেশ করলেন। তিনি তা খেলেন। তারপর তিনি (সে রাতে) স্ত্রী-সহবাস করলেন। শেষে উম্মু সুলায়ম রাযি. (শিশুর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করলেন এবং) বললেন, ছেলেকে দাফন করুন।
ভোরবেলা আবু তালহা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি আজ রাতে সহবাস করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করলেন, হে আল্লাহ! তাদেরকে বরকত দান করুন। অতঃপর উম্মু সুলায়ম রাযি. এক পুত্র সন্তানের জন্মদান করলেন। (হযরত আনাস রাযি. বলেন) আবু তালহা রাযি. আমাকে বললেন, একে তুলে নাও এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাও । তিনি তার সংগে কয়েকটি খেজুরও পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে দেখে) বললেন, এর সংগে কিছু আছে কি? হযরত আনাস রাযি. বললেন, হ্যাঁ, কয়েকটি খেজুর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিলেন এবং চিবালেন। তারপর নিজ মুখ থেকে তা নিয়ে শিশুটির মুখে দিলেন। এভাবে তার ‘তাহনীক' করলেন আর তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ - বুখারী ও মুসলিম ।
বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় আছে, ইবনে উয়াইনা রহ. বলেন, জনৈক আনসারী ব্যক্তি বলেছেন, আমি তার (অর্থাৎ আব্দুল্লাহর) ৯জন পুত্র দেখেছি, যাদের সকলেই কুরআন পড়েছিল (অর্থাৎ কুরআনের হাফেজ ছিল বা কুরআনের জ্ঞান অর্জন করেছিল)।
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী আবু তালহার ঔরসজাত এক পুত্র মারা গেল। উম্মু সুলায়ম রাযি. পরিবারের সকলকে বলে রাখলেন, তোমরা আবু তালহাকে তার পুত্রের মৃত্যুর খবর দিও না। আমিই তাকে তার সংবাদ জানাব। তারপর আবু তালহা রাযি. আসলে তিনি রাত্রের খাবার তার সামনে পেশ করলেন। আবু তালহা রাযি. তা খেলেন ও পান করলেন। তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি. স্বামীর জন্য ইতোপূর্বে যেমন সাজসজ্জা করতেন, তারচে' আরও ভালোভাবে সাজলেন। তারপর আবু তালহা রাযি. তার সংগে মিলন করলেন।
উম্মু সুলায়ম রাযি. যখন দেখলেন, আবু তালহা রাযি. তৃপ্তিলাভ করেছেন এবং তার সংগে মিলনও করেছেন। তখন বললেন, হে তালহার বাবা! বলুন তো কোনও কওম যদি কোনও পরিবারকে কিছু ধার দেয়, তারপর তাদের সেই ধার ফেরত চায়, তবে কি সেই পরিবার তাদেরকে তা (ফেরত) না দেওয়ার অধিকার রাখে? তিনি বললেন, না। উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন, তবে আপনার পুত্রের ব্যাপারে (ধৈর্যধারণ করুন ও) ছওয়াবের আশা রাখুন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, এ কথা শুনে আবু তালহা রেগে গেলেন এবং বললেন, তুমি আমাকে আগে কিছু বললে না। অবশেষে যখন নাপাক হয়ে গেলাম, এখন কিনা আমার পুত্রের খবর আমাকে জানাচ্ছ! তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে যা-কিছু হয়েছে সব তাঁকে জানালেন। (সব শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের এ রাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের বরকত দান করুন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি. গর্ভবতী হলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। উম্মু সুলায়ম রাযি.- ও তাঁর সংগে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল, যখন কোনও সফর থেকে মদীনায় ফিরে আসতেন, তখন রাতে মদীনায় প্রবেশ করতেন না। এ সফরে যখন তাঁরা মদীনার কাছাকাছি পৌঁছলেন, তখন উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রসববেদনা শুরু হল । ফলে আবু তালহা রাযি. তাঁর সংগে থেকে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হলেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, আবু তালহা বলতে লাগলেন, হে রব্ব! তুমি তো জান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোথাও যান, তখন আমি তাঁর সংগে যেতে ভালোবাসি এবং যখন তিনি মদীনায় প্রবেশ করেন, তাঁর সংগে প্রবেশ করা আমার পসন্দ। কিন্তু তুমি দেখছ আমি এখানে আটকে গেছি। উম্মু সুলায়ম রাযি. বলতে লাগলেন, হে তালহার বাবা! এতক্ষণ যে বেদনা অনুভব করছিলাম, এখন আর তা অনুভব করছি না। সুতরাং সামনে চলুন। তো আমরা চলতে লাগলাম। তাঁরা মদীনায় পৌঁছে যাওয়ার পর উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রসববেদনা শুরু হল। তখন আমার মা (উম্মু সুলায়ম রাযি.) আমাকে বললেন, হে আনাস! এ বাচ্চাকে কেউ দুধপান করানোর আগে ভোরে ভোরে তুমি একে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাবে। সুতরাং ভোরবেলা আমি তাকে কোলে তুলে নিলাম এবং তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। এভাবে তিনি পূর্ণ হাদীছ বর্ণনা করলেন। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৪৬০, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২১৪৪)
হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত আবু তালহা রাযি.- এর এক পুত্র অসুস্থ ছিলেন। এ অবস্থায় হযরত আবু তালহা রাযি. বাইরে কোথাও গেলেন। ইত্যবসরে ছেলেটির মৃত্যু হল। হযরত আবু তালহা রাযি. ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার পুত্রের কী অবস্থা? বাচ্চাটির মা উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন, সে এখন আগের তুলনায় বেশি শান্ত আছে। তারপর তিনি তাঁর সামনে রাত্রের খাবার পেশ করলেন। তিনি তা খেলেন। তারপর তিনি (সে রাতে) স্ত্রী-সহবাস করলেন। শেষে উম্মু সুলায়ম রাযি. (শিশুর প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করলেন এবং) বললেন, ছেলেকে দাফন করুন।
ভোরবেলা আবু তালহা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং তাঁর কাছে ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি আজ রাতে সহবাস করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু'আ করলেন, হে আল্লাহ! তাদেরকে বরকত দান করুন। অতঃপর উম্মু সুলায়ম রাযি. এক পুত্র সন্তানের জন্মদান করলেন। (হযরত আনাস রাযি. বলেন) আবু তালহা রাযি. আমাকে বললেন, একে তুলে নাও এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে যাও । তিনি তার সংগে কয়েকটি খেজুরও পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাকে দেখে) বললেন, এর সংগে কিছু আছে কি? হযরত আনাস রাযি. বললেন, হ্যাঁ, কয়েকটি খেজুর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিলেন এবং চিবালেন। তারপর নিজ মুখ থেকে তা নিয়ে শিশুটির মুখে দিলেন। এভাবে তার ‘তাহনীক' করলেন আর তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ - বুখারী ও মুসলিম ।
বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় আছে, ইবনে উয়াইনা রহ. বলেন, জনৈক আনসারী ব্যক্তি বলেছেন, আমি তার (অর্থাৎ আব্দুল্লাহর) ৯জন পুত্র দেখেছি, যাদের সকলেই কুরআন পড়েছিল (অর্থাৎ কুরআনের হাফেজ ছিল বা কুরআনের জ্ঞান অর্জন করেছিল)।
মুসলিম শরীফের এক বর্ণনায় আছে, উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী আবু তালহার ঔরসজাত এক পুত্র মারা গেল। উম্মু সুলায়ম রাযি. পরিবারের সকলকে বলে রাখলেন, তোমরা আবু তালহাকে তার পুত্রের মৃত্যুর খবর দিও না। আমিই তাকে তার সংবাদ জানাব। তারপর আবু তালহা রাযি. আসলে তিনি রাত্রের খাবার তার সামনে পেশ করলেন। আবু তালহা রাযি. তা খেলেন ও পান করলেন। তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি. স্বামীর জন্য ইতোপূর্বে যেমন সাজসজ্জা করতেন, তারচে' আরও ভালোভাবে সাজলেন। তারপর আবু তালহা রাযি. তার সংগে মিলন করলেন।
উম্মু সুলায়ম রাযি. যখন দেখলেন, আবু তালহা রাযি. তৃপ্তিলাভ করেছেন এবং তার সংগে মিলনও করেছেন। তখন বললেন, হে তালহার বাবা! বলুন তো কোনও কওম যদি কোনও পরিবারকে কিছু ধার দেয়, তারপর তাদের সেই ধার ফেরত চায়, তবে কি সেই পরিবার তাদেরকে তা (ফেরত) না দেওয়ার অধিকার রাখে? তিনি বললেন, না। উম্মু সুলায়ম রাযি. বললেন, তবে আপনার পুত্রের ব্যাপারে (ধৈর্যধারণ করুন ও) ছওয়াবের আশা রাখুন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, এ কথা শুনে আবু তালহা রেগে গেলেন এবং বললেন, তুমি আমাকে আগে কিছু বললে না। অবশেষে যখন নাপাক হয়ে গেলাম, এখন কিনা আমার পুত্রের খবর আমাকে জানাচ্ছ! তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে যা-কিছু হয়েছে সব তাঁকে জানালেন। (সব শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের এ রাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের বরকত দান করুন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, তারপর উম্মু সুলায়ম রাযি. গর্ভবতী হলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। উম্মু সুলায়ম রাযি.- ও তাঁর সংগে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিয়ম ছিল, যখন কোনও সফর থেকে মদীনায় ফিরে আসতেন, তখন রাতে মদীনায় প্রবেশ করতেন না। এ সফরে যখন তাঁরা মদীনার কাছাকাছি পৌঁছলেন, তখন উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রসববেদনা শুরু হল । ফলে আবু তালহা রাযি. তাঁর সংগে থেকে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে অগ্রসর হলেন। হযরত আনাস রাযি. বলেন, আবু তালহা বলতে লাগলেন, হে রব্ব! তুমি তো জান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোথাও যান, তখন আমি তাঁর সংগে যেতে ভালোবাসি এবং যখন তিনি মদীনায় প্রবেশ করেন, তাঁর সংগে প্রবেশ করা আমার পসন্দ। কিন্তু তুমি দেখছ আমি এখানে আটকে গেছি। উম্মু সুলায়ম রাযি. বলতে লাগলেন, হে তালহার বাবা! এতক্ষণ যে বেদনা অনুভব করছিলাম, এখন আর তা অনুভব করছি না। সুতরাং সামনে চলুন। তো আমরা চলতে লাগলাম। তাঁরা মদীনায় পৌঁছে যাওয়ার পর উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রসববেদনা শুরু হল। তখন আমার মা (উম্মু সুলায়ম রাযি.) আমাকে বললেন, হে আনাস! এ বাচ্চাকে কেউ দুধপান করানোর আগে ভোরে ভোরে তুমি একে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাবে। সুতরাং ভোরবেলা আমি তাকে কোলে তুলে নিলাম এবং তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম। এভাবে তিনি পূর্ণ হাদীছ বর্ণনা করলেন। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫৪৬০, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ২১৪৪)
مقدمة الامام النووي
3 - باب الصبر
44 - وعن أنسٍ - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ - رضي الله عنه - يَشتَكِي، فَخَرَجَ أبُو طَلْحَةَ، فَقُبِضَ الصَّبيُّ، فَلَمَّا رَجَعَ أَبُو طَلْحَةَ، قَالَ: مَا فَعَلَ ابْنِي؟ قَالَتْ أمُّ سُلَيم وَهِيَ أمُّ الصَّبيِّ: هُوَ أَسْكَنُ مَا كَانَ، فَقَرَّبَتْ إليه العَشَاءَ فَتَعَشَّى، ثُمَّ أَصَابَ منْهَا، فَلَمَّا فَرَغَ، قَالَتْ: وَارُوا الصَّبيَّ فَلَمَّا أَصْبحَ أَبُو طَلْحَةَ أَتَى رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأخْبَرَهُ، فَقَالَ: «أعَرَّسْتُمُ اللَّيلَةَ؟» قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمَا»، فَوَلَدَتْ غُلامًا، فَقَالَ لي أَبُو طَلْحَةَ: احْمِلْهُ حَتَّى تَأْتِيَ بِهِ النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - وَبَعَثَ مَعَهُ بِتَمَراتٍ، فَقَالَ: «أَمَعَهُ شَيءٌ؟» قَالَ: نَعَمْ، تَمَراتٌ، فَأخَذَهَا النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - فَمَضَغَهَا، ثُمَّ أَخَذَهَا مِنْ فِيهِ فَجَعَلَهَا في فِيِّ الصَّبيِّ، ثُمَّ حَنَّكَهُ وَسَمَّاهُ عَبدَ الله. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. (1)
وفي رواية للبُخَارِيِّ: قَالَ ابنُ عُيَيْنَةَ: فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصارِ: فَرَأيْتُ تِسعَةَ أوْلادٍ كُلُّهُمْ قَدْ قَرَؤُوا القُرْآنَ، يَعْنِي: مِنْ أوْلادِ عَبدِ الله المَولُودِ.
وَفي رواية لمسلمٍ: مَاتَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ مِنْ أمِّ سُلَيمٍ، فَقَالَتْ لأَهْلِهَا: لاَ تُحَدِّثُوا أَبَا طَلْحَةَ بابْنِهِ حَتَّى أَكُونَ أَنَا أُحَدِّثُهُ، فَجَاءَ فَقَرَّبَتْ إِلَيْه عَشَاءً فَأَكَلَ وَشَرِبَ، ثُمَّ تَصَنَّعَتْ لَهُ أَحْسَنَ مَا كَانَتْ تَصَنَّعُ قَبْلَ ذلِكَ، فَوَقَعَ بِهَا. فَلَمَّا أَنْ رَأَتْ أَنَّهُ قَدْ شَبِعَ وأَصَابَ مِنْهَا، قَالَتْ: يَا أَبَا طَلْحَةَ، أَرَأَيتَ لو أنَّ قَومًا أعارُوا عَارِيَتَهُمْ أَهْلَ بَيتٍ فَطَلَبُوا عَارِيَتَهُمْ، أَلَهُمْ أن يَمْنَعُوهُمْ؟ قَالَ: لا، فَقَالَتْ: فَاحْتَسِبْ ابْنَكَ، قَالَ: فَغَضِبَ، ثُمَّ قَالَ: تَرَكْتِني حَتَّى إِذَا تَلطَّخْتُ، ثُمَّ أخْبَرتني بِابْنِي؟! فانْطَلَقَ حَتَّى أَتَى رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأخْبَرَهُ بِمَا كَانَ فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «بَارَكَ اللهُ في لَيْلَتِكُمَا»، قَالَ: فَحَمَلَتْ. قَالَ: وَكانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - في سَفَرٍ وَهيَ مَعَهُ، وَكَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا أَتَى المَدِينَةَ مِنْ سَفَرٍ لاَ يَطْرُقُهَا طُرُوقًا فَدَنَوا مِنَ المَدِينَة، فَضَرَبَهَا المَخَاضُ، فَاحْتَبَسَ عَلَيْهَا أَبُو طَلْحَةَ، وانْطَلَقَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم. قَالَ: يَقُولَ أَبُو طَلْحَةَ: إنَّكَ لَتَعْلَمُ يَا رَبِّ أَنَّهُ يُعْجِبُنِي أَنْ أخْرُجَ مَعَ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا خَرَجَ وَأَدْخُلَ مَعَهُ إِذَا دَخَلَ وَقَدِ احْتَبَسْتُ بِمَا تَرَى، تَقُولُ أُمُّ سُلَيْمٍ: يَا أَبَا طَلْحَةَ، مَا أَجِدُ الَّذِي كُنْتُ أجدُ، انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا وَضَرَبَهَا المَخَاضُ حِينَ قَدِمَا، فَوَلدَت غُلامًا. فَقَالَتْ لِي أمِّي: يَا أنَسُ، لا يُرْضِعْهُ أحَدٌ حَتَّى تَغْدُو بِهِ عَلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم. فَلَمَّا أصْبَحَ [ص:33] احْتَمَلْتُهُ فَانْطَلَقْتُ بِهِ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم ... وَذَكَرَ تَمَامَ الحَدِيثِ.
وفي رواية للبُخَارِيِّ: قَالَ ابنُ عُيَيْنَةَ: فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصارِ: فَرَأيْتُ تِسعَةَ أوْلادٍ كُلُّهُمْ قَدْ قَرَؤُوا القُرْآنَ، يَعْنِي: مِنْ أوْلادِ عَبدِ الله المَولُودِ.
وَفي رواية لمسلمٍ: مَاتَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ مِنْ أمِّ سُلَيمٍ، فَقَالَتْ لأَهْلِهَا: لاَ تُحَدِّثُوا أَبَا طَلْحَةَ بابْنِهِ حَتَّى أَكُونَ أَنَا أُحَدِّثُهُ، فَجَاءَ فَقَرَّبَتْ إِلَيْه عَشَاءً فَأَكَلَ وَشَرِبَ، ثُمَّ تَصَنَّعَتْ لَهُ أَحْسَنَ مَا كَانَتْ تَصَنَّعُ قَبْلَ ذلِكَ، فَوَقَعَ بِهَا. فَلَمَّا أَنْ رَأَتْ أَنَّهُ قَدْ شَبِعَ وأَصَابَ مِنْهَا، قَالَتْ: يَا أَبَا طَلْحَةَ، أَرَأَيتَ لو أنَّ قَومًا أعارُوا عَارِيَتَهُمْ أَهْلَ بَيتٍ فَطَلَبُوا عَارِيَتَهُمْ، أَلَهُمْ أن يَمْنَعُوهُمْ؟ قَالَ: لا، فَقَالَتْ: فَاحْتَسِبْ ابْنَكَ، قَالَ: فَغَضِبَ، ثُمَّ قَالَ: تَرَكْتِني حَتَّى إِذَا تَلطَّخْتُ، ثُمَّ أخْبَرتني بِابْنِي؟! فانْطَلَقَ حَتَّى أَتَى رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - فَأخْبَرَهُ بِمَا كَانَ فَقَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «بَارَكَ اللهُ في لَيْلَتِكُمَا»، قَالَ: فَحَمَلَتْ. قَالَ: وَكانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - في سَفَرٍ وَهيَ مَعَهُ، وَكَانَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا أَتَى المَدِينَةَ مِنْ سَفَرٍ لاَ يَطْرُقُهَا طُرُوقًا فَدَنَوا مِنَ المَدِينَة، فَضَرَبَهَا المَخَاضُ، فَاحْتَبَسَ عَلَيْهَا أَبُو طَلْحَةَ، وانْطَلَقَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم. قَالَ: يَقُولَ أَبُو طَلْحَةَ: إنَّكَ لَتَعْلَمُ يَا رَبِّ أَنَّهُ يُعْجِبُنِي أَنْ أخْرُجَ مَعَ رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا خَرَجَ وَأَدْخُلَ مَعَهُ إِذَا دَخَلَ وَقَدِ احْتَبَسْتُ بِمَا تَرَى، تَقُولُ أُمُّ سُلَيْمٍ: يَا أَبَا طَلْحَةَ، مَا أَجِدُ الَّذِي كُنْتُ أجدُ، انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا وَضَرَبَهَا المَخَاضُ حِينَ قَدِمَا، فَوَلدَت غُلامًا. فَقَالَتْ لِي أمِّي: يَا أنَسُ، لا يُرْضِعْهُ أحَدٌ حَتَّى تَغْدُو بِهِ عَلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم. فَلَمَّا أصْبَحَ [ص:33] احْتَمَلْتُهُ فَانْطَلَقْتُ بِهِ إِلَى رسولِ الله - صلى الله عليه وسلم ... وَذَكَرَ تَمَامَ الحَدِيثِ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে মূলত হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. ও হযরত আবু তালহা আনসারী রাযি দম্পতির একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। প্রথমে এ দুই মহান সাহাবীর সংগে পরিচিত হই।
হযরত আবু তালহা রাযি.
হযরত আবু তালহা রাযি. একজন বিখ্যাত সাহাবী। তাঁর মূল নাম যায়দ ইব্ন সাহল। তিনি আনসারদের খাযরাজ শাখার লোক ছিলেন। আবু তালহা নামেই তিনি বেশি প্রসিদ্ধ। তিনি হিজরতের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পেছনে হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর ভূমিকা আছে। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর স্বামী ছিলেন মালিক ইবনে নযর। উম্মু সুলায়ম রাযি. ইসলামের শুরু দিকেই ইসলামগ্রহণ করেছিলেন। তাতে মালিক ভীষণ ক্রুদ্ধ হয় এবং তাঁকে পরিত্যাগ করে শাম চলে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। অতঃপর আবু তালহা রাযি. তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। তখনও আবূ তালহা রাযি. ইসলাম গ্রহণ করেননি। উম্মু সুলায়ম রাযি. তাঁকে বললেন, আবূ তালহা! তোমার কি লজ্জাবোধ হয় না? তুমি গাছ-বৃক্ষের পূজা কর? তুমি যদি ইসলামগ্রহণ কর, তবে আমি তোমাকে বিবাহ করতে রাজি আছি। সে ক্ষেত্রে তোমার আমাকে কোনও মাহরও দিতে হবে না। আবূ তালহা রাযি. বললেন, আমি ভেবে দেখব। এই বলে তিনি চলে গেলেন। তারপর চিন্তা-ভাবনার পর তাঁর বুঝে আসল, আসলেই তাঁর ধর্ম ভ্রান্ত। মানুষ হয়ে গাছ-বৃক্ষের পূজা করার কোনও মানে হয় না। অবিলম্বে তিনি ইসলামগ্রহণ করলেন। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়ে গেল। হযরত আবূ তালহা রাযি. আকাবার বাই'আতে শরীক ছিলেন। বদর ও উহুদসহ সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। উহুদ যুদ্ধে তাঁর ত্যাগ ও বীরত্বের ঘটনা সুবিদিত। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে থেকে শত্রুদের প্রতি তীর ছুঁড়ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুলে সেদিকে দেখতে চাইলে আবূ তালহা রাযি. তাঁকে বারণ করলেন। বললেন, আপনি মাথা তুলবেন না। শত্রুদের তীর লেগে যেতে পারে। আমার বুক আপনার বুক রক্ষার জন্য ঢাল হয়ে থাকল। তিনি অতিবড় দানশীল ছিলেন। যখন আয়াত নাযিল হল-
لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون
‘তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে।-
তখন তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ ‘বাইরুহা' নামক খেজুরের বাগানটি। আমি এ বাগানটি আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, শাবাশ আবু তালহা! এটি খুবই লাভজনক সম্পদ। হযরত আবু তালহা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আরও চল্লিশ বছর জীবিত ছিলেন। তিনি শামে হিজরী ৫১ সালে ইন্তিকাল করেন। এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল এক সামুদ্রিক যুদ্ধাভিযানে। তাঁকে দাফন করার জন্য কোনও দ্বীপ পাওয়া যাচ্ছিল না। ৭ দিন অপেক্ষার পর একটি দ্বীপ পাওয়া যায় এবং সেখানে তাঁকে দাফন করা হয়। এত দেরিতে দাফন সত্ত্বেও তাঁর লাশ নষ্ট হয়নি।
হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.
হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. আনসার গোত্রীয়া এক বিখ্যাত সাহাবী। তাঁর ভাই হারাম ইবন মিলহান রাযি. এবং পিতা মিলহান রাযি.-ও খ্যাতনামা সাহাবী ছিলেন। তাঁরা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন। উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রকৃত নাম সম্পর্কে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। কেউ বলেন, সাহলা। কেউ বলেন, রুমাইলা। কারও মতে মুলাইকা। কারও মতে, রামীসা ইত্যাদি। জাহিলী যুগে মালিক ইবনুন নাযরের সংগে তাঁর বিবাহ হয়েছিল। মালিকের ঔরসে তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্মদান করেন। তাঁর সেই পুত্রই বিখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি., যিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাস খাদেম ছিলেন। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. অত্যন্ত বুদ্ধিমতী নারী ছিলেন। ইসলামের শুরুর দিকেই তিনি ঈমান আনয়ন করেন। পরে আবু তালহা আনসারী রাযি.-এর সংগে তাঁর বিবাহ হয়। এ বিবাহে তাঁর পুত্র আনাস রাযি. অভিভাবকত্ব করেছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-কে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তিনি মাঝেমধ্যে তাঁকে দেখতে যেতেন এবং হাদিয়া-তোহফা দিতেন। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. একজন বীরাঙ্গনা নারী ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে বিভিন্ন যুদ্ধেও শরীক থেকেছেন। তাঁর যুদ্ধসংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনাও বর্ণিত আছে, যেমন হুনায়নের যুদ্ধে তিনি একটি খঞ্জর নিয়ে গিয়েছিলেন। আবূ তালহা আনসারী রাঃ সে কথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালে তিনি বলেছিলেন, কোনও মুশরিককে কাছে পেলে আমি এই খঞ্জর দিয়ে তার পেট চিড়ে ফেলব। হযরত আবু তালহা রাযি.-এর ঔরসে তিনি ১১জন পুত্রসন্তানের জন্মদান করেন। তাদের মধ্য থেকে একজন শৈশবেই ইন্তিকাল করেন। বাকি সকলেই কুরআন মাজীদের আলেম ছিলেন।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, হযরত আবু তালহা রাযি.-এর এক পুত্রসন্তান শৈশবে মারা যায়। তার নাম ছিল আবু উমায়র। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খুব স্নেহ করতেন। তার একটি ছোট পাখি ছিল। দিনমান সেটি নিয়ে মেতে থাকত। কিন্তু পাখিটি বেশিদিন টিকল না। সেটি মারা গেলে সে শোকে অনেক কান্নাকাটি করল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাড়ি এসে দেখেন সে পাখির শোকে কাঁদছে। তিনি এই বলে তার সংগে রসিকতা করলেন-
«يا أبا عمير ما فعل النغير»
‘ওহে আবূ উমায়র! কোথায় তোমার নুগায়র?
‘নুগায়র' মানে ছোট পাখি। উমায়র মানে স্বল্পায়ু। কেউ কেউ বলেন, তার এ নাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামই রেখেছিলেন এবং এর মধ্যে ইঙ্গিত ছিল, সে বেশি দিন বাঁচবে না। হয়তো ওহী মারফত তিনি তা জানতে পেরেছিলেন।
ইবন মাজাহ শরীফের এক বর্ণনায় হযরত আবূ তালহা রাযি. ও উন্মু সুলায়ম রাযি. এর বিবাহের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তাতে আছে, অতঃপর উম্মু সুলায়ম রাযি. একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান জন্ম দিলেন। আবূ তালহা রাযি. তাকে বেজায় ভালোবাসতেন। শিশুটি বড় হয়ে উঠল এবং দৌড়াদৌড়ির বয়সে পৌঁছাল। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাতে আবূ তালহা রাযি. ভীষণ শোকাতর হয়ে পড়েন। তিনি সকাল সন্ধ্যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন। এক সন্ধ্যায় তিনি যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যান, তখন শিশুটির মৃত্যু হয়ে যায়। তারপর বাড়ি ফিরে যথারীতি শিশুটির খোঁজখবর নিলেন। তার মা উম্মু সুলায়ম রাযি জানালেন, সে আগের তুলনায় শান্ত আছে।
উম্মু সুলায়ম রাযি. যে বললেন শান্ত আছে, তার মানে এর আগে অসুখে কষ্ট পাচ্ছিল। মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। এখন তার মৃত্যু হয়ে গেছে। সেই কষ্ট-ক্লেশ ও যন্ত্রণা নাই। মৃত্যুর মাধ্যমে শান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আবূ তালহা রাযি. বুঝেছিলেন সে আগের তুলনায় সুস্থ আছে। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. চাচ্ছিলেন আবূ তালহা রাযি. তাই বুঝুক। আগেই বলা হয়েছে, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ছিলেন। অসাধারণ ধৈর্যশীলা ছিলেন। তাঁর তো জানা ছিল আবূ তালহা রাযি.তাঁর এই শিশুপুত্রকে কতটা ভালোবাসেন। হঠাৎ মৃত্যুসংবাদ শুনলে তাঁর পক্ষে তা সহ্য করা কঠিন হবে। তাই হঠাৎ করে শোকসংবাদ না জানিয়ে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় থাকলেন। তাকে রাতের খাবার দিলেন। তাঁর অন্যসব প্রয়োজন মেটালেন। তারপর আবূ তালহা রাযি. যখন সম্পূর্ণ শান্ত ও পরিতপ্ত হয়ে গেলেন, তখন একটা ভূমিকা দিয়ে মৃত্যুসংবাদ জানালেন। ভূমিকাটি বড় কৌতূহলোদ্দীপক। 'ধার'-এর যুক্তি উত্থাপন করলেন। হাঁ, ধারই তো। সকল বাবা-মায়ের পক্ষে তাদের সন্তান-সন্ততি আল্লাহর দেওয়া ধার। আল্লাহই তাদের সৃষ্টিকর্তা এবং আল্লাহই মালিক। তিনি যখন তাদের মালিক, তখন যে-কোনও সময় তার তাদেরকে ফেরত নেওয়ারও অধিকার আছে। পিতা-মাতার তাতে আপত্তি করার কোনও হক নেই । অখণ্ডনীয় এ যুক্তি শোনার পর কারও ধৈর্যহারা হওয়ার অবকাশ থাকে না। এখানেও তাই হল। হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি. খানিকটা রাগ করলেও অধৈর্যের কোনও কাজ করেননি। খুশিমনে তিনি আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেন এবং শান্তভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে গোটা বৃত্তান্ত জানান।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আয় হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. ও আবু তালহা রাযি. দম্পতির এক পুত্রসন্তান জন্ম নিল। তার নাম রাখা হল আব্দুল্লাহ। হযরত আনাস রাযি.-এর বৈপিত্রেয় ভাই। উভয়ের মা উম্মু সুলায়ম রাযি., কিন্তু পিতা ভিন্ন। হযরত আনাস রাযি.-এর পিতা উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রাক্তন স্বামী মালিক ইবনুন নাযর আর আব্দুল্লাহর পিতা তাঁর বর্তমান স্বামী আবু তালহা রাযি। উম্মু সুলায়ম রাযি. আনাস রাযি.-কে দিয়ে আব্দুল্লাহকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সংগে 'তাহনীক'-এর জন্য কিছু খেজুর দিলেন।
তাহনীক করা মানে খেজুর বা এ জাতীয় কিছু চিবিয়ে নরম করে শিশুর মুখের তালুতে লাগিয়ে দেওয়া। খেজুর একটি বরকতময় ফল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছকে মু'মিন ব্যক্তির সংগে তুলনা করেছেন। খেজুর দ্বারা তাহনীক করা হয় এই উদ্দেশ্যে, যাতে এর বরকতে আল্লাহ তা'আলা শিশুকে ঈমানদার বানান। তাছাড়া একটি সুমিষ্ট ফল হওয়ায় এর তাহনীক উপকারীও বটে। তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহনীক করলেন এবং তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ।
আব্দুল্লাহ মানে আল্লাহর বান্দা। হাদীছমতে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ নাম। তারপর সেরা নাম আব্দুর রহমান। তারপর আল্লাহর যে-কোনও নামের সংগে যুক্ত করে নাম রাখা উত্তম। নবীদের নামে নামকরণ করতেও উৎসাহিত করা হয়েছে। শিশুর উপর নামের আছর পড়ে থাকে। তাই অভিভাবকের কর্তব্য শিশুর সুন্দর নাম রাখা। সেই নামই সুন্দর, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা মোতাবেক হয়।
আব্দুল্লাহ বড় হয়েছিলেন এবং দীনের শিক্ষা লাভ করে অনেক বড় মুহাদ্দিছ হয়েছিলেন। তিনি পিতার সূত্রে হাদীছও বর্ণনা করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আর বরকতে হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. ও আবূ তালহা রাযি. দম্পতির আব্দুল্লাহ ছাড়াও আরও কয়েকজন পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করেছিল। পুত্রগণ হলেন, ইসহাক, ইসমাঈল, ইয়া'কুব, উমর, কাসিম, উমারা, ইবরাহীম, উমায়র, যায়দ ও মুহাম্মাদ। আর কন্যা ছিল চারজন।
এ হাদীছের বর্ণনায় প্রসঙ্গক্রমে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে আসার সময় রাত্রিবেলায় বাড়িতে প্রবেশ করতেন না। অন্যান্য হাদীছেও মুসাফিরকে রাতে ঘরে ঢুকতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা একটা সতর্কতা। কেননা আকস্মিক প্রবেশ করলে হয়তো এমন কিছু চোখে পড়বে, যা পারিবারিক অশান্তির কারণ হবে। হাদীছে দেরি করে ঘরে ঢুকতে বলার কারণ এই বলা হয়েছে, যাতে সেই অবকাশে স্ত্রী তার মলিন বেশভূষা পরিবর্তন করে স্বামীর জন্য সাজগোজ করে নিতে পারে। অবশ্য এ হুকুম ফরয বা ওয়াজিব পর্যায়ের নয়, সুন্নত পর্যায়ের। তবে সুন্নত অনুসরণের ভেতরে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, তা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনের জন্য উপকারী ও সাফল্যজনক।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শোকে-দুঃখে ধৈর্যধারণের উৎসাহ লাভ হয়।
খ. নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল সাহাবীই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষায় নিজেদের কতটা আদর্শনীয়রূপে গড়ে তুলেছিলেন, তাও জানা যায়। আমাদের কর্তব্য তাদের আদর্শ অনুসরণ করা।
গ. বাবা-মায়ের কর্তব্য শিশুর উত্তম তরবিয়াত করা। সুন্দর নাম রাখা এবং বুযুর্গানে দীনের দু'আ ও বরকত লাভ করাও তার অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. স্ত্রীর কর্তব্য স্বামী ঘরে ঢোকার পর ঘরের কোনও দুঃসংবাদ তাকে আকস্মিকভাবে না শোনানো।
ঙ. শিশুকে আদর-স্নেহ করা ও হাস্য-পরিহাসের মাধ্যমে তাকে আনন্দদানের শিক্ষাও এ হাদীছ দ্বারা লাভ হয়।
এ হাদীছে আরও বহু শিক্ষণীয় বিষয় আছে। মনোযোগী পাঠক চিন্তা-ভাবনা করলে সহজেই তা বুঝতে পারে।
হযরত আবু তালহা রাযি.
হযরত আবু তালহা রাযি. একজন বিখ্যাত সাহাবী। তাঁর মূল নাম যায়দ ইব্ন সাহল। তিনি আনসারদের খাযরাজ শাখার লোক ছিলেন। আবু তালহা নামেই তিনি বেশি প্রসিদ্ধ। তিনি হিজরতের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পেছনে হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর ভূমিকা আছে। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর স্বামী ছিলেন মালিক ইবনে নযর। উম্মু সুলায়ম রাযি. ইসলামের শুরু দিকেই ইসলামগ্রহণ করেছিলেন। তাতে মালিক ভীষণ ক্রুদ্ধ হয় এবং তাঁকে পরিত্যাগ করে শাম চলে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। অতঃপর আবু তালহা রাযি. তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। তখনও আবূ তালহা রাযি. ইসলাম গ্রহণ করেননি। উম্মু সুলায়ম রাযি. তাঁকে বললেন, আবূ তালহা! তোমার কি লজ্জাবোধ হয় না? তুমি গাছ-বৃক্ষের পূজা কর? তুমি যদি ইসলামগ্রহণ কর, তবে আমি তোমাকে বিবাহ করতে রাজি আছি। সে ক্ষেত্রে তোমার আমাকে কোনও মাহরও দিতে হবে না। আবূ তালহা রাযি. বললেন, আমি ভেবে দেখব। এই বলে তিনি চলে গেলেন। তারপর চিন্তা-ভাবনার পর তাঁর বুঝে আসল, আসলেই তাঁর ধর্ম ভ্রান্ত। মানুষ হয়ে গাছ-বৃক্ষের পূজা করার কোনও মানে হয় না। অবিলম্বে তিনি ইসলামগ্রহণ করলেন। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. এর সাথে তাঁর বিবাহ হয়ে গেল। হযরত আবূ তালহা রাযি. আকাবার বাই'আতে শরীক ছিলেন। বদর ও উহুদসহ সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। উহুদ যুদ্ধে তাঁর ত্যাগ ও বীরত্বের ঘটনা সুবিদিত। তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে থেকে শত্রুদের প্রতি তীর ছুঁড়ছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুলে সেদিকে দেখতে চাইলে আবূ তালহা রাযি. তাঁকে বারণ করলেন। বললেন, আপনি মাথা তুলবেন না। শত্রুদের তীর লেগে যেতে পারে। আমার বুক আপনার বুক রক্ষার জন্য ঢাল হয়ে থাকল। তিনি অতিবড় দানশীল ছিলেন। যখন আয়াত নাযিল হল-
لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون
‘তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে।-
তখন তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ ‘বাইরুহা' নামক খেজুরের বাগানটি। আমি এ বাগানটি আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলাম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, শাবাশ আবু তালহা! এটি খুবই লাভজনক সম্পদ। হযরত আবু তালহা রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আরও চল্লিশ বছর জীবিত ছিলেন। তিনি শামে হিজরী ৫১ সালে ইন্তিকাল করেন। এক বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল এক সামুদ্রিক যুদ্ধাভিযানে। তাঁকে দাফন করার জন্য কোনও দ্বীপ পাওয়া যাচ্ছিল না। ৭ দিন অপেক্ষার পর একটি দ্বীপ পাওয়া যায় এবং সেখানে তাঁকে দাফন করা হয়। এত দেরিতে দাফন সত্ত্বেও তাঁর লাশ নষ্ট হয়নি।
হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.
হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. আনসার গোত্রীয়া এক বিখ্যাত সাহাবী। তাঁর ভাই হারাম ইবন মিলহান রাযি. এবং পিতা মিলহান রাযি.-ও খ্যাতনামা সাহাবী ছিলেন। তাঁরা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাতবরণ করেন। উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রকৃত নাম সম্পর্কে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। কেউ বলেন, সাহলা। কেউ বলেন, রুমাইলা। কারও মতে মুলাইকা। কারও মতে, রামীসা ইত্যাদি। জাহিলী যুগে মালিক ইবনুন নাযরের সংগে তাঁর বিবাহ হয়েছিল। মালিকের ঔরসে তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্মদান করেন। তাঁর সেই পুত্রই বিখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি., যিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাস খাদেম ছিলেন। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. অত্যন্ত বুদ্ধিমতী নারী ছিলেন। ইসলামের শুরুর দিকেই তিনি ঈমান আনয়ন করেন। পরে আবু তালহা আনসারী রাযি.-এর সংগে তাঁর বিবাহ হয়। এ বিবাহে তাঁর পুত্র আনাস রাযি. অভিভাবকত্ব করেছিলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি.-কে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তিনি মাঝেমধ্যে তাঁকে দেখতে যেতেন এবং হাদিয়া-তোহফা দিতেন। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. একজন বীরাঙ্গনা নারী ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে বিভিন্ন যুদ্ধেও শরীক থেকেছেন। তাঁর যুদ্ধসংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনাও বর্ণিত আছে, যেমন হুনায়নের যুদ্ধে তিনি একটি খঞ্জর নিয়ে গিয়েছিলেন। আবূ তালহা আনসারী রাঃ সে কথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালে তিনি বলেছিলেন, কোনও মুশরিককে কাছে পেলে আমি এই খঞ্জর দিয়ে তার পেট চিড়ে ফেলব। হযরত আবু তালহা রাযি.-এর ঔরসে তিনি ১১জন পুত্রসন্তানের জন্মদান করেন। তাদের মধ্য থেকে একজন শৈশবেই ইন্তিকাল করেন। বাকি সকলেই কুরআন মাজীদের আলেম ছিলেন।
এ হাদীছে বলা হয়েছে, হযরত আবু তালহা রাযি.-এর এক পুত্রসন্তান শৈশবে মারা যায়। তার নাম ছিল আবু উমায়র। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খুব স্নেহ করতেন। তার একটি ছোট পাখি ছিল। দিনমান সেটি নিয়ে মেতে থাকত। কিন্তু পাখিটি বেশিদিন টিকল না। সেটি মারা গেলে সে শোকে অনেক কান্নাকাটি করল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাড়ি এসে দেখেন সে পাখির শোকে কাঁদছে। তিনি এই বলে তার সংগে রসিকতা করলেন-
«يا أبا عمير ما فعل النغير»
‘ওহে আবূ উমায়র! কোথায় তোমার নুগায়র?
‘নুগায়র' মানে ছোট পাখি। উমায়র মানে স্বল্পায়ু। কেউ কেউ বলেন, তার এ নাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামই রেখেছিলেন এবং এর মধ্যে ইঙ্গিত ছিল, সে বেশি দিন বাঁচবে না। হয়তো ওহী মারফত তিনি তা জানতে পেরেছিলেন।
ইবন মাজাহ শরীফের এক বর্ণনায় হযরত আবূ তালহা রাযি. ও উন্মু সুলায়ম রাযি. এর বিবাহের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তাতে আছে, অতঃপর উম্মু সুলায়ম রাযি. একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান জন্ম দিলেন। আবূ তালহা রাযি. তাকে বেজায় ভালোবাসতেন। শিশুটি বড় হয়ে উঠল এবং দৌড়াদৌড়ির বয়সে পৌঁছাল। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাতে আবূ তালহা রাযি. ভীষণ শোকাতর হয়ে পড়েন। তিনি সকাল সন্ধ্যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতেন। এক সন্ধ্যায় তিনি যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যান, তখন শিশুটির মৃত্যু হয়ে যায়। তারপর বাড়ি ফিরে যথারীতি শিশুটির খোঁজখবর নিলেন। তার মা উম্মু সুলায়ম রাযি জানালেন, সে আগের তুলনায় শান্ত আছে।
উম্মু সুলায়ম রাযি. যে বললেন শান্ত আছে, তার মানে এর আগে অসুখে কষ্ট পাচ্ছিল। মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। এখন তার মৃত্যু হয়ে গেছে। সেই কষ্ট-ক্লেশ ও যন্ত্রণা নাই। মৃত্যুর মাধ্যমে শান্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আবূ তালহা রাযি. বুঝেছিলেন সে আগের তুলনায় সুস্থ আছে। হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. চাচ্ছিলেন আবূ তালহা রাযি. তাই বুঝুক। আগেই বলা হয়েছে, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ছিলেন। অসাধারণ ধৈর্যশীলা ছিলেন। তাঁর তো জানা ছিল আবূ তালহা রাযি.তাঁর এই শিশুপুত্রকে কতটা ভালোবাসেন। হঠাৎ মৃত্যুসংবাদ শুনলে তাঁর পক্ষে তা সহ্য করা কঠিন হবে। তাই হঠাৎ করে শোকসংবাদ না জানিয়ে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় থাকলেন। তাকে রাতের খাবার দিলেন। তাঁর অন্যসব প্রয়োজন মেটালেন। তারপর আবূ তালহা রাযি. যখন সম্পূর্ণ শান্ত ও পরিতপ্ত হয়ে গেলেন, তখন একটা ভূমিকা দিয়ে মৃত্যুসংবাদ জানালেন। ভূমিকাটি বড় কৌতূহলোদ্দীপক। 'ধার'-এর যুক্তি উত্থাপন করলেন। হাঁ, ধারই তো। সকল বাবা-মায়ের পক্ষে তাদের সন্তান-সন্ততি আল্লাহর দেওয়া ধার। আল্লাহই তাদের সৃষ্টিকর্তা এবং আল্লাহই মালিক। তিনি যখন তাদের মালিক, তখন যে-কোনও সময় তার তাদেরকে ফেরত নেওয়ারও অধিকার আছে। পিতা-মাতার তাতে আপত্তি করার কোনও হক নেই । অখণ্ডনীয় এ যুক্তি শোনার পর কারও ধৈর্যহারা হওয়ার অবকাশ থাকে না। এখানেও তাই হল। হযরত আবূ তালহা আনসারী রাযি. খানিকটা রাগ করলেও অধৈর্যের কোনও কাজ করেননি। খুশিমনে তিনি আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেন এবং শান্তভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে গোটা বৃত্তান্ত জানান।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আয় হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. ও আবু তালহা রাযি. দম্পতির এক পুত্রসন্তান জন্ম নিল। তার নাম রাখা হল আব্দুল্লাহ। হযরত আনাস রাযি.-এর বৈপিত্রেয় ভাই। উভয়ের মা উম্মু সুলায়ম রাযি., কিন্তু পিতা ভিন্ন। হযরত আনাস রাযি.-এর পিতা উম্মু সুলায়ম রাযি.-এর প্রাক্তন স্বামী মালিক ইবনুন নাযর আর আব্দুল্লাহর পিতা তাঁর বর্তমান স্বামী আবু তালহা রাযি। উম্মু সুলায়ম রাযি. আনাস রাযি.-কে দিয়ে আব্দুল্লাহকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সংগে 'তাহনীক'-এর জন্য কিছু খেজুর দিলেন।
তাহনীক করা মানে খেজুর বা এ জাতীয় কিছু চিবিয়ে নরম করে শিশুর মুখের তালুতে লাগিয়ে দেওয়া। খেজুর একটি বরকতময় ফল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর গাছকে মু'মিন ব্যক্তির সংগে তুলনা করেছেন। খেজুর দ্বারা তাহনীক করা হয় এই উদ্দেশ্যে, যাতে এর বরকতে আল্লাহ তা'আলা শিশুকে ঈমানদার বানান। তাছাড়া একটি সুমিষ্ট ফল হওয়ায় এর তাহনীক উপকারীও বটে। তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহনীক করলেন এবং তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ।
আব্দুল্লাহ মানে আল্লাহর বান্দা। হাদীছমতে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ নাম। তারপর সেরা নাম আব্দুর রহমান। তারপর আল্লাহর যে-কোনও নামের সংগে যুক্ত করে নাম রাখা উত্তম। নবীদের নামে নামকরণ করতেও উৎসাহিত করা হয়েছে। শিশুর উপর নামের আছর পড়ে থাকে। তাই অভিভাবকের কর্তব্য শিশুর সুন্দর নাম রাখা। সেই নামই সুন্দর, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা মোতাবেক হয়।
আব্দুল্লাহ বড় হয়েছিলেন এবং দীনের শিক্ষা লাভ করে অনেক বড় মুহাদ্দিছ হয়েছিলেন। তিনি পিতার সূত্রে হাদীছও বর্ণনা করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু'আর বরকতে হযরত উম্মু সুলায়ম রাযি. ও আবূ তালহা রাযি. দম্পতির আব্দুল্লাহ ছাড়াও আরও কয়েকজন পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করেছিল। পুত্রগণ হলেন, ইসহাক, ইসমাঈল, ইয়া'কুব, উমর, কাসিম, উমারা, ইবরাহীম, উমায়র, যায়দ ও মুহাম্মাদ। আর কন্যা ছিল চারজন।
এ হাদীছের বর্ণনায় প্রসঙ্গক্রমে বলা হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে আসার সময় রাত্রিবেলায় বাড়িতে প্রবেশ করতেন না। অন্যান্য হাদীছেও মুসাফিরকে রাতে ঘরে ঢুকতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা একটা সতর্কতা। কেননা আকস্মিক প্রবেশ করলে হয়তো এমন কিছু চোখে পড়বে, যা পারিবারিক অশান্তির কারণ হবে। হাদীছে দেরি করে ঘরে ঢুকতে বলার কারণ এই বলা হয়েছে, যাতে সেই অবকাশে স্ত্রী তার মলিন বেশভূষা পরিবর্তন করে স্বামীর জন্য সাজগোজ করে নিতে পারে। অবশ্য এ হুকুম ফরয বা ওয়াজিব পর্যায়ের নয়, সুন্নত পর্যায়ের। তবে সুন্নত অনুসরণের ভেতরে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, তা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনের জন্য উপকারী ও সাফল্যজনক।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা শোকে-দুঃখে ধৈর্যধারণের উৎসাহ লাভ হয়।
খ. নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল সাহাবীই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষায় নিজেদের কতটা আদর্শনীয়রূপে গড়ে তুলেছিলেন, তাও জানা যায়। আমাদের কর্তব্য তাদের আদর্শ অনুসরণ করা।
গ. বাবা-মায়ের কর্তব্য শিশুর উত্তম তরবিয়াত করা। সুন্দর নাম রাখা এবং বুযুর্গানে দীনের দু'আ ও বরকত লাভ করাও তার অন্তর্ভুক্ত।
ঘ. স্ত্রীর কর্তব্য স্বামী ঘরে ঢোকার পর ঘরের কোনও দুঃসংবাদ তাকে আকস্মিকভাবে না শোনানো।
ঙ. শিশুকে আদর-স্নেহ করা ও হাস্য-পরিহাসের মাধ্যমে তাকে আনন্দদানের শিক্ষাও এ হাদীছ দ্বারা লাভ হয়।
এ হাদীছে আরও বহু শিক্ষণীয় বিষয় আছে। মনোযোগী পাঠক চিন্তা-ভাবনা করলে সহজেই তা বুঝতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)