আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৫- অনুমতি গ্রহণ - প্রদান সংক্রান্ত

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬২৪৫
৩৩০৩. তিনবার সালাম দেওয়া ও অনুমতি চাওয়া।
৫৮১১। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার আমি আনসারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবু মুসা (রাযিঃ) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেনঃ আমি তিনবার উমর (রাযিঃ) এর নিকট অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হল না। তাই আমি ফিরে এলাম। উমর (রাযিঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে কিসে বাঁধা দিল? আমি বললামঃ আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অমুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হল না। তাই আমি ফিরে এলাম। (কারণ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনুমতি চায়। কিন্তু তাকে অনুমতি দেওয়া না হয়, তবে সে যেন ফিরে যায়। তখন উমর রাঃ বলেনঃ আল্লাহর কসম! তোমাকে এ কথার উপর অবশ্যই প্রমাণ পেশ করতে হবে। তিনি সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আর কেউ আছে কি? যিনি নবী (ﷺ) থেকে এ হাদীস শুনেছেন? তখন উবাই ইবনে কা'ব (রাযিঃ) বললেনঃ আল্লাহর কসম! তাঁর নিকট আপনার পক্ষে প্রমাণ দিতে দলের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তিই উঠে দাঁড়াবে। আর আমিই দলের সর্বকনিষ্ঠ ছিলাম। সুতরাং আমি তার সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বললামঃ নবী (ﷺ) অবশ্যই এ কথা বলেছেন।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন