আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৪- আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ৬১১০
৩২৩৭. আল্লাহর বিধি-নিষেধের ব্যাপারে রাগ করা ও কঠোরতা অবলম্বন করা জায়েয।
৫৬৮০। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... আবু মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নবী (ﷺ) এর নিকট এসে বললেন, অমুক ব্যক্তি নামায দীর্ঘ করার কারণে আমি ফজরের নামায থেকে পিছনে থাকি। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে কোন ওয়াযের মধ্যে সেদিন থেকে বেশী রাগান্বিত হতে আর দেখিনি। রাবী বলেন, এরপর তিনি বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী আছে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ লোকদের নিয়ে নামায আদায় করে, সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ, তাদের মধ্যে রোগী, বৃদ্ধ এবং কর্মব্যস্ত লোক থাকে।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত আবু মাস'উদ রাযি. জানিয়েছেন যে, জনৈক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাছ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার ইমাম সম্পর্কে ফজরের নামায দীর্ঘ করার অভিযোগ জানায়। অভিযোগকারী সাহাবীর নাম কী, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। যে ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ছিলেন হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি. সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বিশিষ্ট কারী ছিলেন। তিমি কুরআন খুব ভালো জানতেন। খুব সুন্দর পড়তেন। স্বাভাবিকভাবেই সব সাহাবীয় কুরআনের আশেক ছিলেন। যিনি কুরআন বেশি জানতেন এবং খুব সুন্দর পড়তে পারতেন, তাঁর কুরআনের প্রতি ইশক ও মহব্বত একটু বেশিই হবে বৈ কি। এরূপ ব্যক্তি ইমাম হলে ফজরের নামাযে তার তিলাওয়াত অনেক বেশি ভক্তিপূর্ণ হয়ে থাকে। ফজরের সময়টা কুরআনপাঠের পক্ষে অনেক বেশি অনুকূল। কাজেই কুরআনের আশেক ও একজন বিশিষ্ট কারী হযরত উবাঈ ইবন কা'ব রাযি.-এর না জানি এ নামাযে কুরআনপাঠের আগ্রহ-উদ্দীপনা কী গভীর ছিল! সুতরাং তিনি ফজরের নামাযে লম্বা লম্বা কিরাআত পড়তেন। খুবসম্ভব তা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিরাআত অপেক্ষাও বেশি লম্বা হত। কেননা তিনি কিরাআত যে পরিমাণ লম্বা করতেন, হযরত উবাঈ রাযি.-এর কিরাআত সে পরিমাণ হলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার কথা নয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও সে অভিযোগ আমলে নেওয়ার কথা নয়। তিনি বিষয়টি আমলে নিয়েছেন। হযরত উবাঈ রাযি.-এর উপর খুব রাগও করেছেন এবং তাঁকে কঠিনভাবে ধমকও দিয়েছেন।
লক্ষণীয়, অভিযোগকারী তার অভিযোগে হযরত উবাঈ রাযি.-এর নাম নেননি। বরং বলেছেন- مِنْ أَجْلِ فُلَانٍ مِمَّا يُطِيْلُ بِنَا 'আমি অমুকের কারণে ফজরের নামায থেকে পিছিয়ে থাকি। কেননা সে আমাদের নিয়ে (নামায) দীর্ঘায়িত করে'। অর্থাৎ অমুক ব্যক্তি ফজরের নামায অনেক বেশি লম্বা করে বলে আমি জামাত ধরি না। নাম না বলে 'অমুক' বলাটা ছিল তার ভদ্রতা। সরাসরি নাম ধরে অভিযোগ করলে এক রকম রূঢ়তা প্রকাশ পায়। সাহাবী বিষয়টির সুরাহা চাচ্ছিলেন। ইমামের বিচার দাবি করছিলেন না। তা নাই করুন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখলেন। হযরত আবূ মাস'উদ রাযি.-এর বর্ণনা অনুযায়ী সেদিন নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন রাগের সঙ্গে ওয়াজ করলেন যে, অতটা রাগ তাঁকে আর কখনও কোনও ওয়াজে করতে দেখা যায়নি। তিনি বললেন-
يا أَيُّهَا النَّاسُ، إنَّ مِنكُم مُنَفِّرِينَ (হে লোকসকল! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী)। অর্থাৎ তাদের কর্মপন্থা মানুষকে ইবাদতের প্রতি অনাগ্রহী করে তোলে। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। নামায সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সকলের উচিত এর প্রতি মানুষের আগ্রহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি করা, বিশেষত ইমামের। ইমাম মানুষকে নিয়ে নামায কায়েম করে। তার চেষ্টা থাকবে জামাতে মুসল্লীর সংখ্যা কত বাড়ানো যায়। এর বিপরীত তার কর্মপন্থার কারণে যদি মুসল্লীর সংখ্যা কমে, তবে তা তার পদ মর্যাদার সঙ্গে কিছুতেই সঙ্গতিপূর্ণ হয় না।
লক্ষণীয়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণভাবে বলেছেন 'হে লোকসকল'। তিনি নির্দিষ্টভাবে উবাঈ রাযি.-এর নাম নিয়ে বলেননি যে, তুমি মানুষকে নামাযের প্রতি অনাগ্রহী করে তুলছ। এটা ছিল তাঁর ইসলাহ ও সংশোধনের তরিকা। যার কোনও ভুল হত, তিনি সকলের সামনে তার নাম ধরে ধমকাতেন না। উদ্দেশ্য তো হল সংশোধন করা, মানুষের সামনে হেয় করা নয়। নাম ধরে তিরস্কার করলে হেয় করা হয়। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হতে বিরত থাকতেন। তিনি সাধারণভাবে সকলকে সম্বোধন করে ভুলত্রুটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। যেমন বলতেন, মানুষের কী হল যে, তারা এরূপ এরূপ করছে। এতে করে যাদের বোঝার তারা ঠিকই বুঝে যেত। ফলে তারা নিজেদের সংশোধন করে নিত আবার তাদের মান-সম্মানও রক্ষা পেত।
উল্লেখ্য, যেসব কারণে জামাতে মুসল্লীর সংখ্যা কমে, নামাযকে অতিরিক্ত লম্বা করাও তার একটি। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করলেন। তিনি বললেন- فَأَيُّكُمْ أَمَّ النَّاسَ فَلْيُوْجِز (তোমাদের মধ্যে কেউ মানুষের ইমামত করলে সে যেন নামায সংক্ষেপ করে)। অর্থাৎ ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ যথাযথ আদায়ের পর নামায যেন বাড়তি লম্বা না করে। নামাযে কিরাআতের মাসনূন পরিমাপ আছে। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যে নামাযে যে পরিমাণ কিরাআত পড়তেন, সে পরিমাণ পড়াই সুন্নত। তারচে' বেশি না পড়াই সমীচীন। তবে বিনা ওজরে তারচে' কম পড়াও মুনাসিব নয়। কেন নামায এরূপ সংক্ষেপ করতে হবে, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাদীছটিতে বলা হয়েছে-
فَإِنَّ مِنْ وَرَائِهِ الْكَبِيرَ وَالصَّغِيْرَ وَذَا الْحَاجَةِ (কেননা তার পেছনে বৃদ্ধ, শিশু ও এমন লোক থাকে, যার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে)। কোনও কোনও বর্ণনায় দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তির কথাও আছে। বৃদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। শিশুর পক্ষে শারীরিকভাবে কষ্টকর না হলেও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য তার থাকে না। যে ব্যক্তি শারীরিকভাবে দুর্বল বা অসুস্থ, তার পক্ষেও নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন। এমনিভাবে যার বিশেষ প্রয়োজন আছে, নামায বেশি লম্বা করলে তার সে প্রয়োজন পূরণ করা অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। যেমন হয়তো সময়মতো গাড়ি ছেড়ে দেবে। নামায লম্বা করার কারণে সে তা ধরতে পারবে না। হয়তো কারও সঙ্গে সাক্ষাতের ওয়াদা আছে। নামায বেশি লম্বা করায় সে ওয়াদা রক্ষা করা হবে না। এমনিভাবে কারও হয়তো ডাক্তারের কাছে এপয়েন্টমেন্ট দেওয়া আছে, কেউ হয়তো তার কোনও রোগী বসিয়ে রেখে এসেছে এবং এরকম আরও নানা জরুরত মানুষের থাকে। মানুষের সেসব জরুরতের দিকে লক্ষ রাখাও ইমামের কর্তব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও বিরুদ্ধে তার মুরুব্বীর কাছে অভিযোগ করার সময় তার নাম না বলে অন্য কোনও ভাবে ইশারা-ইঙ্গিত করে বোঝানো ভদ্রতার পরিচায়ক।
খ. দীনী বিষয়ে কেউ কোনও আপত্তিকর কাজ করলে তার উপর রাগ করা জায়েয।
গ. নিষিদ্ধ কাজ হারাম পর্যায়ের না হলেও সে কাজে আপত্তি করা জায়েয আছে।
ঘ. সুন্নত পরিমাণের চেয়ে নামায বেশি লম্বা করা ইমামের জন্য সমীচীন নয়।
ঙ. ইমাম কোনও নামায সুন্নত পরিমাণের চেয়ে বেশি লম্বা করলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সুযোগ আছে।
চ. কারও সংশোধন করার প্রয়োজন হলে লোকসম্মুখে তাকে হেয় না করে এমনভালে কথা বলা উচিত, যাতে সে তার ত্রুটি সম্পর্কে সতর্কও হয়ে যায় আবার তার মান-সম্মানও রক্ষা পায়।
লক্ষণীয়, অভিযোগকারী তার অভিযোগে হযরত উবাঈ রাযি.-এর নাম নেননি। বরং বলেছেন- مِنْ أَجْلِ فُلَانٍ مِمَّا يُطِيْلُ بِنَا 'আমি অমুকের কারণে ফজরের নামায থেকে পিছিয়ে থাকি। কেননা সে আমাদের নিয়ে (নামায) দীর্ঘায়িত করে'। অর্থাৎ অমুক ব্যক্তি ফজরের নামায অনেক বেশি লম্বা করে বলে আমি জামাত ধরি না। নাম না বলে 'অমুক' বলাটা ছিল তার ভদ্রতা। সরাসরি নাম ধরে অভিযোগ করলে এক রকম রূঢ়তা প্রকাশ পায়। সাহাবী বিষয়টির সুরাহা চাচ্ছিলেন। ইমামের বিচার দাবি করছিলেন না। তা নাই করুন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গেই দেখলেন। হযরত আবূ মাস'উদ রাযি.-এর বর্ণনা অনুযায়ী সেদিন নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন রাগের সঙ্গে ওয়াজ করলেন যে, অতটা রাগ তাঁকে আর কখনও কোনও ওয়াজে করতে দেখা যায়নি। তিনি বললেন-
يا أَيُّهَا النَّاسُ، إنَّ مِنكُم مُنَفِّرِينَ (হে লোকসকল! তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী)। অর্থাৎ তাদের কর্মপন্থা মানুষকে ইবাদতের প্রতি অনাগ্রহী করে তোলে। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। নামায সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সকলের উচিত এর প্রতি মানুষের আগ্রহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি করা, বিশেষত ইমামের। ইমাম মানুষকে নিয়ে নামায কায়েম করে। তার চেষ্টা থাকবে জামাতে মুসল্লীর সংখ্যা কত বাড়ানো যায়। এর বিপরীত তার কর্মপন্থার কারণে যদি মুসল্লীর সংখ্যা কমে, তবে তা তার পদ মর্যাদার সঙ্গে কিছুতেই সঙ্গতিপূর্ণ হয় না।
লক্ষণীয়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণভাবে বলেছেন 'হে লোকসকল'। তিনি নির্দিষ্টভাবে উবাঈ রাযি.-এর নাম নিয়ে বলেননি যে, তুমি মানুষকে নামাযের প্রতি অনাগ্রহী করে তুলছ। এটা ছিল তাঁর ইসলাহ ও সংশোধনের তরিকা। যার কোনও ভুল হত, তিনি সকলের সামনে তার নাম ধরে ধমকাতেন না। উদ্দেশ্য তো হল সংশোধন করা, মানুষের সামনে হেয় করা নয়। নাম ধরে তিরস্কার করলে হেয় করা হয়। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হতে বিরত থাকতেন। তিনি সাধারণভাবে সকলকে সম্বোধন করে ভুলত্রুটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। যেমন বলতেন, মানুষের কী হল যে, তারা এরূপ এরূপ করছে। এতে করে যাদের বোঝার তারা ঠিকই বুঝে যেত। ফলে তারা নিজেদের সংশোধন করে নিত আবার তাদের মান-সম্মানও রক্ষা পেত।
উল্লেখ্য, যেসব কারণে জামাতে মুসল্লীর সংখ্যা কমে, নামাযকে অতিরিক্ত লম্বা করাও তার একটি। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতে নিষেধ করলেন। তিনি বললেন- فَأَيُّكُمْ أَمَّ النَّاسَ فَلْيُوْجِز (তোমাদের মধ্যে কেউ মানুষের ইমামত করলে সে যেন নামায সংক্ষেপ করে)। অর্থাৎ ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ যথাযথ আদায়ের পর নামায যেন বাড়তি লম্বা না করে। নামাযে কিরাআতের মাসনূন পরিমাপ আছে। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যে নামাযে যে পরিমাণ কিরাআত পড়তেন, সে পরিমাণ পড়াই সুন্নত। তারচে' বেশি না পড়াই সমীচীন। তবে বিনা ওজরে তারচে' কম পড়াও মুনাসিব নয়। কেন নামায এরূপ সংক্ষেপ করতে হবে, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে হাদীছটিতে বলা হয়েছে-
فَإِنَّ مِنْ وَرَائِهِ الْكَبِيرَ وَالصَّغِيْرَ وَذَا الْحَاجَةِ (কেননা তার পেছনে বৃদ্ধ, শিশু ও এমন লোক থাকে, যার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে)। কোনও কোনও বর্ণনায় দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তির কথাও আছে। বৃদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা কষ্টকর। শিশুর পক্ষে শারীরিকভাবে কষ্টকর না হলেও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ধৈর্য তার থাকে না। যে ব্যক্তি শারীরিকভাবে দুর্বল বা অসুস্থ, তার পক্ষেও নামাযে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন। এমনিভাবে যার বিশেষ প্রয়োজন আছে, নামায বেশি লম্বা করলে তার সে প্রয়োজন পূরণ করা অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। যেমন হয়তো সময়মতো গাড়ি ছেড়ে দেবে। নামায লম্বা করার কারণে সে তা ধরতে পারবে না। হয়তো কারও সঙ্গে সাক্ষাতের ওয়াদা আছে। নামায বেশি লম্বা করায় সে ওয়াদা রক্ষা করা হবে না। এমনিভাবে কারও হয়তো ডাক্তারের কাছে এপয়েন্টমেন্ট দেওয়া আছে, কেউ হয়তো তার কোনও রোগী বসিয়ে রেখে এসেছে এবং এরকম আরও নানা জরুরত মানুষের থাকে। মানুষের সেসব জরুরতের দিকে লক্ষ রাখাও ইমামের কর্তব্য।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. কারও বিরুদ্ধে তার মুরুব্বীর কাছে অভিযোগ করার সময় তার নাম না বলে অন্য কোনও ভাবে ইশারা-ইঙ্গিত করে বোঝানো ভদ্রতার পরিচায়ক।
খ. দীনী বিষয়ে কেউ কোনও আপত্তিকর কাজ করলে তার উপর রাগ করা জায়েয।
গ. নিষিদ্ধ কাজ হারাম পর্যায়ের না হলেও সে কাজে আপত্তি করা জায়েয আছে।
ঘ. সুন্নত পরিমাণের চেয়ে নামায বেশি লম্বা করা ইমামের জন্য সমীচীন নয়।
ঙ. ইমাম কোনও নামায সুন্নত পরিমাণের চেয়ে বেশি লম্বা করলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সুযোগ আছে।
চ. কারও সংশোধন করার প্রয়োজন হলে লোকসম্মুখে তাকে হেয় না করে এমনভালে কথা বলা উচিত, যাতে সে তার ত্রুটি সম্পর্কে সতর্কও হয়ে যায় আবার তার মান-সম্মানও রক্ষা পায়।


বর্ণনাকারী: