আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৪- আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
৫৬৫২। আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... ইয়াহয়া ইবনে আবু ইসহাক (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইস্তাবরাক কী? আমি বললামঃ তা মোটা ও সুন্দর রেশমী বস্ত্র। তিনি বললেনঃ আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমরকে বলতে শুনেছি যে, উমর (রাযিঃ) এক ব্যক্তির গায়ে একজোড়া মোটা রেশমী বস্ত্র দেখলেন। তখন তিনি সেটা নিয়ে নবী (ﷺ) এর খেদমতে এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এটি কিনে নিন। যখন আপনার নিকট কোন প্রতিনিধিদল আসবে, (তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য) তখন আপনি এটি পরবেন। তিনি বললেনঃ রেশমী বস্ত্র একমাত্র ঐ ব্যক্তি পরিধান করতে পারে, যার (আখিরাতে) কোন হিসসা নেই। এরপর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নবী (ﷺ) উমর (রাযিঃ) এর নিকট সেরূপ একজোড়া কাপড় পাঠালেন। তখন তিনি সেটি নিয়ে নবী (ﷺ) এর খিদমতে এসে বললেনঃ আপনি এটা আমার নিকট পাঠালেন, অথচ নিজেই এ জাতীয় বস্ত্র সম্পর্কে যা বলার তা বলেছিলেন। তিনি বললেনঃ আমি তো এটা একমাত্র এজন্য তোমার নিকট পাঠিয়েছি, যেন তুমি এর বিনিময়ে কোন মাল গ্রহণ করতে পার। এ হাদীসের প্রেক্ষিতে ইবনে উমর (রাযিঃ) কারুকার্য খচিত কাপড় পরিধান করতে অপছন্দ করতেন।
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ ‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩) কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না। প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়? এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না। হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে। খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন