ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার
৪২. ইহসান-আত্মশুদ্ধির অধ্যায়
হাদীস নং: ২৬৩৪
তাকওয়া ও সুন্দর আচরণের মর্যাদা
(২৬৩৪) আবু হুরাইরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করাবে কিসে? তিনি বলেন, আল্লাহর তাকওয়া (আল্লাহর অসন্তুষ্টির ভয়ে আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্ম বর্জন) এবং সুন্দর আচরণ।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن أكثرما يدخل الناس الجنة فقال: تقوى الله وحسن الخلق.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
সাহাবায়ে কেরাম দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ছিলেন না। তারা আখিরাতমুখী জীবন যাপন করতেন। দুনিয়ার প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করার ভেতর দিয়েও তারা সর্বদা আখিরাত সম্পর্কে সচেতন থাকতেন। কীভাবে জাহান্নাম থেকে রক্ষা পেয়ে জান্নাতবাসী হওয়া যাবে, এটাই ছিল তাদের জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য। তাই এমনসব কাজ করতেই সচেষ্ট থাকতেন, যা জান্নাতলাভে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তারা এরূপ আমলেরই অনুসন্ধানে থাকতেন। জানতে চাইতেন কোন আমল জান্নাতলাভের পক্ষে বেশি সহায়ক। এ হাদীছটিও সেরকমই। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে- মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে সর্বাপেক্ষা বেশি কোন জিনিস? উত্তরে তিনি বললেন-
تَقْوَى اللَّهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ (আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র)। কথা সংক্ষেপ, কিন্তু মর্ম ব্যাপক। এতে দু'টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ দু'টি হল দীনের সারমর্ম। গোটা দীন এর মধ্যে এসে গেছে। কেননা দীনের সারকথা দু'টি- আল্লাহ তা'আলার হক আদায় ও বান্দার হক আদায়। আল্লাহভীতি দ্বারা ইঙ্গিত হয়েছে আল্লাহর হক আদায়ের প্রতি। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, স্বাভাবিকভাবেই সে তাঁর যাবতীয় হক আদায়ে সচেষ্ট থাকবে। আর সচ্চরিত্রের প্রকাশ ঘটে বান্দাদের পারস্পরিক বিষয়াবলিতে। যার চরিত্র ভালো, সে অন্যকে কোনওভাবে কষ্ট দেবে না; বরং সে সর্বদা অন্যের উপকার করতে সচেষ্ট থাকবে। সে কারও কোনও হক নষ্ট করবে না। বরং যার যা হক আছে তা পুরোপুরি আদায়ের চেষ্টা করবে। বলাবাহুল্য, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার হক আদায় করে এবং বান্দারও হক আদায় করে, সে একজন পূর্ণাঙ্গ দীনদার, পূর্ণাঙ্গ মুমিন ও মুসলিম। জান্নাত তো এরূপ ব্যক্তিরই জন্য।
যদি কেউ পাপ-পুণ্য উভয়টাই করে, তার পরিণাম আশঙ্কাজনক। তাই পুণ্যের কাজ করার পাশাপাশি পাপকর্ম থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি। কেননা পাপকর্ম মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছায়। পাপকর্ম হয় মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা। কোনও অঙ্গ দ্বারা পাপ বেশি হয়, কোনও অঙ্গ দ্বারা কম। এমনিভাবে কোনও অঙ্গ দ্বারা অপেক্ষাকৃত অন্য অঙ্গের চেয়ে গুরুতর পাপ হয়। তাই এটাও জানা জরুরি যে, কোন অঙ্গ জাহান্নামে পৌঁছার বড় কারণ হয়ে থাকে, যাতে সে অঙ্গের ব্যাপারে বেশি সচেতন থাকা যায়। তাই সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে সর্বাপেক্ষা বেশি কোন জিনিস?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- الْفَمُ وَالْفَرْجُ (মুখ ও লজ্জাস্থান)। এখানে দু'টি অঙ্গের কথা বলা হয়েছে, যার কারণে মানুষ বেশি জাহান্নামে যাবে। তার একটি হল মুখ। মুখ একটি ছোট অঙ্গ, কিন্তু এর দ্বারা অনেক বেশি পাপ এবং বড় বড় পাপ হয়ে থাকে। যেমন কুফর, গীবত, অপবাদ, চুগলখোরী, গালাগালি, কটু কথা, অশ্লীল বাক্য, মিথ্যা কথা, মিথ্যার পক্ষপাত ইত্যাদি। তাই তো এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ
মানুষকে তাদের জিহ্বার অর্জন ছাড়া অন্য কিছু কি উল্টোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে (অর্থাৎ এর কারণেই তারা জাহান্নামে যাবে)?(জামে তিরমিযী: ২৬১৬; সুনানে ইবন মাজাহ ৩৯৭৩; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৬৪৯৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১১৬; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৫৪৮)
আর দ্বিতীয় যে অঙ্গের কারণে মানুষ বেশি জাহান্নামে যাবে, তা হল লজ্জাস্থান। কেননা এটি ব্যভিচারের কারণ। আর এক ব্যভিচার হাজারও পাপের কারণ। তাই এ অঙ্গের ব্যাপারে সতর্ক থাকা অতীব জরুরি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমরা যখন যেখানে যে অবস্থায়ই থাকি না কেন, আল্লাহভীতির সঙ্গে থাকব।
খ. সচ্চরিত্র জান্নাতলাভের একটি বড় কারণ। তাই মানুষের সঙ্গে আচার-ব্যবহার ও লেনদেনে সচ্চরিত্রের পরিচয় দেবে।
গ. মুখের ব্যবহারে সতর্কতা অতীব জরুরি। কারণ এর দ্বারাই সবচে' বেশি ও সবচে' বড় বড় পাপ হয়ে থাকে।
ঘ. লজ্জাস্থানের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন কর্তব্য। কেননা এটি মানুষের জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার একটি বড় কারণ।
تَقْوَى اللَّهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ (আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র)। কথা সংক্ষেপ, কিন্তু মর্ম ব্যাপক। এতে দু'টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ দু'টি হল দীনের সারমর্ম। গোটা দীন এর মধ্যে এসে গেছে। কেননা দীনের সারকথা দু'টি- আল্লাহ তা'আলার হক আদায় ও বান্দার হক আদায়। আল্লাহভীতি দ্বারা ইঙ্গিত হয়েছে আল্লাহর হক আদায়ের প্রতি। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, স্বাভাবিকভাবেই সে তাঁর যাবতীয় হক আদায়ে সচেষ্ট থাকবে। আর সচ্চরিত্রের প্রকাশ ঘটে বান্দাদের পারস্পরিক বিষয়াবলিতে। যার চরিত্র ভালো, সে অন্যকে কোনওভাবে কষ্ট দেবে না; বরং সে সর্বদা অন্যের উপকার করতে সচেষ্ট থাকবে। সে কারও কোনও হক নষ্ট করবে না। বরং যার যা হক আছে তা পুরোপুরি আদায়ের চেষ্টা করবে। বলাবাহুল্য, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার হক আদায় করে এবং বান্দারও হক আদায় করে, সে একজন পূর্ণাঙ্গ দীনদার, পূর্ণাঙ্গ মুমিন ও মুসলিম। জান্নাত তো এরূপ ব্যক্তিরই জন্য।
যদি কেউ পাপ-পুণ্য উভয়টাই করে, তার পরিণাম আশঙ্কাজনক। তাই পুণ্যের কাজ করার পাশাপাশি পাপকর্ম থেকেও বেঁচে থাকা জরুরি। কেননা পাপকর্ম মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছায়। পাপকর্ম হয় মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা। কোনও অঙ্গ দ্বারা পাপ বেশি হয়, কোনও অঙ্গ দ্বারা কম। এমনিভাবে কোনও অঙ্গ দ্বারা অপেক্ষাকৃত অন্য অঙ্গের চেয়ে গুরুতর পাপ হয়। তাই এটাও জানা জরুরি যে, কোন অঙ্গ জাহান্নামে পৌঁছার বড় কারণ হয়ে থাকে, যাতে সে অঙ্গের ব্যাপারে বেশি সচেতন থাকা যায়। তাই সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে সর্বাপেক্ষা বেশি কোন জিনিস?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- الْفَمُ وَالْفَرْجُ (মুখ ও লজ্জাস্থান)। এখানে দু'টি অঙ্গের কথা বলা হয়েছে, যার কারণে মানুষ বেশি জাহান্নামে যাবে। তার একটি হল মুখ। মুখ একটি ছোট অঙ্গ, কিন্তু এর দ্বারা অনেক বেশি পাপ এবং বড় বড় পাপ হয়ে থাকে। যেমন কুফর, গীবত, অপবাদ, চুগলখোরী, গালাগালি, কটু কথা, অশ্লীল বাক্য, মিথ্যা কথা, মিথ্যার পক্ষপাত ইত্যাদি। তাই তো এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ
মানুষকে তাদের জিহ্বার অর্জন ছাড়া অন্য কিছু কি উল্টোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে (অর্থাৎ এর কারণেই তারা জাহান্নামে যাবে)?(জামে তিরমিযী: ২৬১৬; সুনানে ইবন মাজাহ ৩৯৭৩; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৬৪৯৮; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১১৬; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৫৪৮)
আর দ্বিতীয় যে অঙ্গের কারণে মানুষ বেশি জাহান্নামে যাবে, তা হল লজ্জাস্থান। কেননা এটি ব্যভিচারের কারণ। আর এক ব্যভিচার হাজারও পাপের কারণ। তাই এ অঙ্গের ব্যাপারে সতর্ক থাকা অতীব জরুরি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমরা যখন যেখানে যে অবস্থায়ই থাকি না কেন, আল্লাহভীতির সঙ্গে থাকব।
খ. সচ্চরিত্র জান্নাতলাভের একটি বড় কারণ। তাই মানুষের সঙ্গে আচার-ব্যবহার ও লেনদেনে সচ্চরিত্রের পরিচয় দেবে।
গ. মুখের ব্যবহারে সতর্কতা অতীব জরুরি। কারণ এর দ্বারাই সবচে' বেশি ও সবচে' বড় বড় পাপ হয়ে থাকে।
ঘ. লজ্জাস্থানের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন কর্তব্য। কেননা এটি মানুষের জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার একটি বড় কারণ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
