ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

১২. জিহাদ অধ্যায়

হাদীস নং: ১৮৬৮
আল্লাহর পথে জিহাদকারীর মর্যাদা
(১৮৬৮) আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর পথে নিহত হওয়া একমাত্র ঋণ ছাড়া বাকি সকল গোনাহ মার্জনা করে দেয়।
عن عبد الله بن عمرو بن العاص مرفوعا: القتل في سبيل الله يكفر كل شيء إلا الدين (يغفر للشهيد كل ذنب إلا الدين).

হাদীসের ব্যাখ্যা:

শহীদ হওয়ার দ্বারা দেনা মাফ হয় না।

অন্য বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বলুন তো, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই, তবে কি আমার গুনাহসমূহের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে? রাসলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, যদি তুমি ধৈর্যশীল, ছাওয়াবের আশাবাদী ও সামনে অগ্রগামী হয়ে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী না হয়ে আল্লাহর পথে নিহত হও। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কী বললে? সে (ব্যক্তি) উত্তর দিলেন, বলুন তো, আমি যদি আল্লাহর পথে নিহত হই, তবে কি আমার গুনাহসমূহের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাঁ, তুমি যদি ধৈর্যশীল, ছাওয়াবের আশাবাদী ও সামনে অগ্রগামী এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী না হয়ে (নিহত হয়ে) থাক। তবে দেনা ব্যতিক্রম (অর্থাৎতা মাফ হবে না)। জিবরাঈল আমাকে এ কথা বলেছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৮৮৫)

উপরের কথা দ্বারা বোঝা যাচ্ছিল শহীদ হওয়ার ফলে যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যায়, তা আল্লাহর হক সংক্রান্ত হোক বা বান্দার হক সংক্রান্ত হোক। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই সাহাবীকে তার প্রশ্নটি পুনরায় উল্লেখ করতে বললেন। সেই সাহাবী পুনরায় তা উল্লেখ করলেন। এবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগের মতই উত্তর দিলেন, তবে সেইসঙ্গে জুড়ে দিলেন যে- الا الدين 'দেনা ছাড়া'। অর্থাৎ শহীদ হওয়ার দ্বারা মানুষের দেনা মাফ হয় না। তুমি যদি মানুষের কোনও হক নষ্ট করে থাক, তবে তা দুনিয়ায় হোক বা আখিরাতে, পরিশোধ করতেই হবে। দুনিয়ায় পরিশোধ না করে গেলে আখিরাতে তোমার ছাওয়াব কেটে তা পরিশোধ করা হবে। তাতেও পরিশোধ না হলে পাওনাদারের গুনাহ কেটে তোমার ওপর চাপানো হবে, যেমন অন্যান্য হাদীছে বর্ণিত আছে। এর দ্বারা মানুষের হক কত গুরুত্বপূর্ণ তা উপলব্ধি করা যায়। জিহাদ ও শাহাদাতের মত এত বড় ফযীলতের আমল দ্বারাও তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, এটা তখনই, যখন মানুষের হক আদায়ের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা আদায়ে গড়িমসি করা হয়। পক্ষান্তরে যদি তা আদায়ের কোনও সামর্থ্যই না থাকে কিন্তু মনে মনে তা আদায়ের নিয়ত থাকে এবং সংকল্প থাকে যে, যখনই সামর্থ্য লাভ হবে তখনই তা আদায় করে দেবে, তবে আশা করা যায় আল্লাহ তা'আলা নিজ দয়ায় তাকে মুক্তি দান করবেন এবং পাওনাদারকে অন্য কোনওভাবে খুশি করে দেবেন।

হাদীছটির শেষে আছে, জিবরীল আমাকে এ কথা বলেছেন। এর দ্বারা বাহ্যত বোঝা যায় ওই মুহূর্তেই জিবরীল আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এই ওহী নিয়ে এসেছিলেন যে, শহীদ হওয়ার দ্বারা মানুষের দেনা মাফ হয় না। অথবা এমনও হতে পারে যে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আগেই তা জানিয়েছিলেন, যা প্রথমবার উত্তর দেওয়ার সময় তাঁর স্মরণ ছিল না, পরক্ষণেই স্মরণ হয়ে যায়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. শাহাদাত দ্বারা বান্দার হক মাফ হয় না। তাই বান্দার হক আদায়ের ব্যাপারে কিছুতেই গড়িমসি করা উচিত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
ফিকহুস সুনান - হাদীস নং ১৮৬৮ | মুসলিম বাংলা