ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৮. তালাক - ডিভোর্স অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭২৭
পিতামাতা, সন্তানসন্ততি ও পরিবারের সদস্যদের খরচপত্র ও সদ্ব্যবহার
(১৭২৭) তারিক মুহারিবি রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যাদের ভরণপোষণ তোমার দায়িত্বে তাদের জন্য তুমি সর্বাগ্রে ব্যয় করবে। তোমার মাতা, তোমার পিতা, তোমার বোন, তোমার ভাই; অতঃপর তোমার বেশী নিকটবর্তী, এরপর যে বেশী নিকটবর্তী।
عن طارق المحاربي رضي الله عنه مرفوعا: وابدأ بمن تعول أمك وأباك وأختك وأخاك ثم أدناك أدناك

হাদীসের ব্যাখ্যা:

খরচের খাতসমূহের মধ্যে অগ্রগণ্য কোটি
খরচে কাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, এ সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য হাদীছে ইরশাদ করেন- وابدا بمن تعول (তুমি যাদের লালন পালন কর তাদের থেকে খরচ শুরু কর)। অর্থাৎ নিজ সত্তা, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, পিতামাতা এবং আরও যারা নিজ লালন-পালনাধীন থাকে, প্রথম খরচটা তাদের পেছনেই করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও যদি সকলের পেছনে খরচ করা সম্ভব হয় তবে তো সেটাই করবে, অন্যথায় প্রথমে খরচ করবে নিজের জন্য, তারপর কিছু বেঁচে থাকলে শিশুসন্তানের জন্য, তারপর স্ত্রীর জন্য, তারপর পিতা, তারপর মাতা, তারপর দাদা, তারপর বালেগ সন্তান- এ ধারাবাহিকতা অনুসরণ করবে। তারপরও বেঁচে থাকলে পর্যায়ক্রমে অন্যান্যদের মধ্যে খরচ করা হবে। পরিবারের লোককে বঞ্চিত করে অন্যত্র খরচ করা জায়েয নয়। নিজ পোষ্য হওয়ার কারণে তাদের জরুরত পূরণ করা ওয়াজিব ও অবশ্যকর্তব্য। অন্যসব খরচা হয়তো নফল পর্যায়ের অথবা ওয়াজিব হলেও তা এর পরবর্তী স্তরের। কাজেই এদেরকে পেছনে রাখার কোনও সুযোগ নেই।। একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জনৈক সাহাবীর হাতে কিছু দিরহাম দিয়ে তাঁকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে ابدأ بنفسك فتصدق عليها، فإن فضل شيء، فلأهلك، فإن فضل عن أهلك شيء فلذي قرابتك، فإن فضل عن ذي قرابتك شيء فهكذا وهكذا يقول فبين يديك وعن يمينك وعن شمالك 'তুমি এটা সর্বপ্রথম খরচ করবে তোমার নিজের উপর। তারপর কিছু বেঁচে থাকলে তোমার পরিবার-পরিজনের উপর, তারপর কিছু বেঁচে থাকলে তোমার নিকটাত্মীয়দের উপর। তাদের উপর খরচ করার পরও যদি কিছু বেঁচে থাকে, তবে তা এভাবে এভাবে অর্থাৎ তোমার সামনে, ডানে ও বামে বিতরণ করবে।
হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে আছে, জনৈক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (যদি এমন হয় যে,) আমার কাছে একটি দীনার আছে। তিনি বললেন, এটি তোমার নিজের উপর খরচ কর। সে বলল, আমার কাছে আরেকটি দীনার আছে। তিনি বললেন, এটি তোমার সন্তানের উপর খরচ কর। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে আরেকটি আছে। তিনি বললেন, এটি তোমার স্ত্রীর উপর খরচ কর। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে আরেকটি আছে। তিনি বললেন, এটি তোমার খাদেমের (অর্থাৎ গোলামের) উপর খরচ কর। সে বলল, আমার কাছে আরও একটি আছে। তিনি বললেন, এটি কী করবে সে ব্যাপারে তুমিই ভালো জান। এ হাদীছটি বর্ণনা করার পর হযরত আবূ হুরায়রা রাযি. বলতেন, এমন না হলে তোমার সন্তান বলবে আমাকে খাওয়াও, তুমি আমাকে কার হাতে ছাড়ছ? স্ত্রী বলবে, আমার খাবার দাও নয়তো আমাকে তালাক দাও। খাদেম বলবে, আমার খাবার দাও নয়তো আমাকে বিক্রি করে দাও।
অবশ্য নিজেকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যেকের সবর ও তাওয়াক্কুলের মাত্রার উপর নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে যার দুর্বলতা আছে, সে নিজের উপরই প্রথম খরচ করবে। যার সবর ও তাওয়াক্কুল অনেক শক্তিশালী, সে নিজেকে পেছনে রেখে অন্যকে অগ্রাধিকার দিলে তা প্রশংসনীয় বৈকি। সাহাবায়ে কেরাম তো এ চরিত্রেরই ছিলেন। নিজে ক্ষুধার্ত থেকে পিতামাতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে। এমনকি নিজেকে অভুক্ত রেখে অতিথিকে খাওয়ানোর নজিরও আছে অনেক। নিজ স্ত্রী ও ছেলেমেয়েকে এ মাত্রার সবর ও তাওয়াক্কুলের উপর গড়ে তোলা গেলে তাদের উপরও অতিথি বা অন্য কোনও ক্ষুধার্তকে খাওয়ানোর অবকাশ আছে। এ নীতিকে ‘ঈছার’ বলে। কুরআন ও হাদীছে এর প্রশংসা করা হয়েছে। ইসলাম তার অনুসারীদের এরকম উচ্চতর আদর্শে উপনীত হওয়ার উৎসাহ যোগায়।
ইমাম সামহূদী রহ. বলেন, এ হাদীছটির সম্পর্ক যদিও আর্থিক ব্যয়ের সঙ্গে, তবে মুহাক্কিকগণ একে পরকালীন বিষয়েও ব্যবহার করেছেন। যেমন আলেম ব্যক্তি অন্যদের আগে নিজ পরিবারবর্গকে দীনের শিক্ষাদান করবে। কুরআন মাজীদের আয়াত দ্বারাও এর সমর্থন পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا “তোমরা নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।
জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায় শরীআতের অনুসরণ। শরীআতের অনুসরণ করার জন্য প্রথমে শরীআতের ইলম অর্জন করা চাই। সর্বপ্রথম কর্তব্য যখন নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো, তখন ইলমে দীনের শিক্ষায়ও নিজেকে প্রথম স্থানে রাখা জরুরি। তারপর পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো জরুরি হওয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদেরকে দীনী ইলম শেখানো কর্তব্য। তারপর সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে অন্যদের দিকে নজর দেওয়ার পালা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পরিবার-পরিজন থেকেই খরচ আরম্ভ করা উচিত। তাদেরকে কষ্টে রেখে অন্যত্র দান-খয়রাত করা শরীআতসম্মত কাজ নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান