ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৮. তালাক - ডিভোর্স অধ্যায়

হাদীস নং: ১৭২২
খালার মর্যাদা মাতার মতো
(১৭২২) বারা ইবন আযিব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, খালা মায়ের মর্যাদায় অভিষিক্ত । (মায়ের অবর্তমানে সন্তানের প্রতিপালনের অধিকার খালারই সবচেয়ে বেশী)।
عن البراء بن عازب رضي الله عنه مرفوعا: الخالة بمنزلة الأم

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটির একটি প্রেক্ষাপট আছে। তা এরকম-
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬ষ্ঠ হিজরীতে উমরা আদায়ের লক্ষ্যে মক্কা মুকাররামার সফর করেছিলেন। কিন্তু হুদায়বিয়ায় পৌঁছার পর মক্কার মুশরিকদের পক্ষ থেকে তিনি বাধার সম্মুখীন হন। ফলে তার পক্ষে উমরা আদায় করা সম্ভব হয়নি। তিনি তাদের সঙ্গে সন্ধি স্থাপন করে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মদীনা মুনাউওয়ারায় ফিরে আসেন। এটিই বিখ্যাত 'হুদায়বিয়ার সন্ধি' নামে পরিচিত। এ সন্ধির একটি শর্ত ছিল পরবর্তী বছর তিনি উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে মক্কা মুকাররামায় যেতে পারবেন। সেমতে পরের বছর সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে তিনি উমরা আদায় করেন। উমরা আদায়ের পর তিনি যখন মক্কা থেকে মদীনা মুনাউওয়ারায় ফিরে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন, তখন হযরত হামযা রাযি.-এর শিশুকন্যা 'চাচা চাচা' বলে ছুটে আসল।

হযরত হামযা রাযি. হিজরী ৩য় সনে উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী সালমা বিনতে উমায়স রাযি. তখনও হিজরত করেননি। এ কারণে তাঁর কন্যা উমারা বর্ণনান্তরে উমামা মায়ের সঙ্গে মক্কা মুকাররামায় থেকে গিয়েছিলেন। এবার তিনি মদীনা মুনাউওয়ারায় যেতে চাইলেন এবং সে উদ্দেশ্যে চাচা চাচা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে ছুটে চললেন।

উমারা যদিও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো বোন ছিলেন, তা সত্ত্বেও চাচা বলার কারণ হয়তো তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অথবা তা বলেছিলেন এ কারণে যে, তার পিতা হযরত হামযা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হলেও তাঁরা দু'জন একই দুধমায়ের দুধ পান করেছিলেন। সে হিসেবে তাঁরা দুধভাইও।

যাহোক হযরত আলী রাযি. উমারাকে সঙ্গে নিয়ে নিলেন। তিনি তাকে নিয়ে হযরত ফাতিমা রাযি.-এর হাতে তুলে দিলেন। বললেন, এ তোমার চাচাতো বোন। এর যত্ন নিও। তিনি তাকে নিজের সাথে বাহনে তুলে নিলেন। তারপর সেখানেই অথবা মদীনায় আসার পর তার লালন-পালনের অধিকার নিয়ে হযরত আলী রাযি.. হযরত জা'ফর রাযি. ও যায়দ ইবন হারিছা রাযি.-এর মধ্যে বিরোধ দেখা দিল। তাদের প্রত্যেকেই সে মেয়ের লালন-পালনের অধিকার দাবি করলেন। হযরত আলী রাযি. বললেন, সে আমার চাচাতো বোন এবং আমিই তাকে সঙ্গে করে এনেছি। হযরত জাফর রাযি. বলছিলেন, সে আমার চাচাতো বোন এবং তার খালা আমার স্ত্রী। হযরত যায়দ রাযি. বলছিলেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে। ভাইয়ের মেয়ে এ হিসেবে যে, হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপন করেন, তখন হযরত যায়দ রাযি.-কে হযরত হামযা রাযি.-এর ভাই বানিয়ে দিয়েছিলেন। সে হিসেবেই উমারা হযরত যায়দ রাযি.-এর ভাতিজী হন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সে দাবি-দাওয়ার মধ্যে যখন ফয়সালা দান করেন, তখনই এ নীতিবাক্যটি উচ্চারণ করেন যে-
الخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ (খালা মায়ের সমতুল্য)। কাজেই একে এর খালার হাতে ন্যস্ত করা হোক। এই বলে তিনি উমারাকে তার খালা এবং হযরত জা'ফর রাযি.-এর স্ত্রী আসমা বিনতে উমায়স রাযি.-এর কাছে সমর্পণ করেন। তারপর তাদের তিনওজনের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করলেন। হযরত আলী রাযি.-কে বললেন, আমি তোমার সঙ্গে এবং তুমি আমার সঙ্গে রয়েছ। হযরত জাফর রাযি.-কে বললেন, তুমি আকৃতি ও প্রকৃতিতে আমারই মত। আর হযরত যায়দ রাযি.-কে বললেন, তুমি আমার ভাই ও মাওলা (আদাযকৃত গোলাম বা বন্ধু)।

এর দ্বারা জানা গেল, প্রতিপালনের অধিকার খালারই জন্য সংরক্ষিত; আসাবা (যাবিল ফুরূয ব্যতীত অন্যান্য উত্তরাধিকারী)-এর জন্য নয়। হযরত হামযা রাযি.-এর আপন বোন সাফিয়্যা রাযি. তখনও জীবিত ছিলেন। যদিও জানা যায় না, তিনি লালন- পালন করতে চেয়েছিলেন কি না, কিন্তু তাঁর বর্তমান থাকা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খালা মায়েরই মত। এ কথা বলেননি যে, ফুফুর দাবি না করার কারণে খালা মায়ের মত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. খালা মায়ের মত। কাজেই মায়ের মতই তার খেদমত ও ভক্তি-সম্মান করা উচিত।

খ. বিচারকের উচিত ন্যায়সম্মত ফয়সালা দানের পর বাদী-বিবাদী উভেয়ের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন