ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৩. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১১০৯
জানাযার সালাতের মর্যাদা
(১১০৯) আয়িশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে কোনো মৃতের জন্য যদি একদল মানুষ সালাত আদায় করে, যাদের সংখ্যা ১০০ পর্যন্ত পৌঁছায়, তারা সকলেই তার জন্য শাফাআত (সুপারিশ) করে, তাহলে তার বিষয়ে তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে।
عن عائشة رضي الله عنها مرفوعا: ما من ميت تصلي عليه أمة من المسلمين يبلغون مائة كلهم يشفعون له إلا شفعوا فيه

হাদীসের ব্যাখ্যা:

জানাযার নামায ফরযে কেফায়াহ। এ নামায দ্বারা মায়্যিতের জন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে শাফা'আত করা হয়। শাফা'আত মানে সুপারিশ করা। জানাযার দু'আর মাধ্যমে সুপারিশ করা হয় যেন আল্লাহ তা'আলা মায়্যিতকে ক্ষমা করে দেন। মায়্যিতকে আল্লাহ যাতে ক্ষমা করেন, সে কামনা প্রত্যেক মুসলিমেরই থাকা উচিত। সকল মুসলিম ভাই ভাই। এর দাবি হল প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানের কল্যাণ কামনা করবে। পরকালীন জীবনের কল্যাণ কামনা অধিকতর জরুরি, যেহেতু সে জীবন অনন্তকালের। তাই কোনও মুসলিম ব্যক্তি মারা গেলে জীবিতদের উচিত অতি আগ্রহের সঙ্গে তার জানাযায় অংশগ্রহণ করা। এ হাদীছটি সে উৎসাহই দান করছে। যে ব্যক্তিই জানাযায় অংশগ্রহণ করবে, সে মায়্যিতের পক্ষে একজন সুপারিশকারী। হাদীছটি দ্বারা জানা যাচ্ছে, এরকম সুপারিশকারীর সংখ্যা একশ' হলে আল্লাহ তা'আলা তাদের সুপারিশ কবুল করেন এবং মায়্যিতকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তা'আলা কত বড়ই না মেহেরবান। কোনও মায়্যিতের জানাযায় একশজন লোক উপস্থিত থাকা কঠিন কিছু নয়। একেক পাড়ায়, মহল্লায় শত শত লোক বাস করে। মৃত ভাইয়ের জন্য অন্তরে দরদ ও শুভকামনা থাকলে তার জানাযায় একশজন লোক হাজির হয়ে যাওয়া খুবই সহজ। কাজটি সহজ, অথচ তার সুফল কত বড়? বলাবাহুল্য, যে ব্যক্তি আগ্রহের সঙ্গে অন্যের জানাযায় হাজির থাকবে, আল্লাহ তা'আলা তার জানাযায়ও হাজির থাকার জন্য মানুষের অন্তরে আগ্রহ পয়দা করে দেবেন। আল্লাহ তা'আলা এটা আমাদেরকে এর উপর আমল করার তাওফীক দান করুন।

হাদীছটি দ্বারা এটা উপলব্ধি করা যায় যে, আল্লাহ তা'আলার কাছে একজন মুসলিম ব্যক্তির কী উঁচু মর্যাদা! সে যদি মুসলিম হয়, অর্থাৎ আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী হয়, তবে আল্লাহ তা'আলা তাকে একজন শাফা'আতকারীর মর্যাদা দান করেন। পাপী ব্যক্তির পক্ষে তার শাফা'আত কবুল করেন, যদি সে পাপী ব্যক্তি নিজেও একজন মুসলিম হয়। অমুসলিমের পক্ষে জানাযাও নেই, সুপারিশও নেই। আখিরাতের নাজাত কেবল মুসলিমদের জন্যই নির্ধারিত।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. জানাযার নামাযে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করা উচিত।

খ. জানাযার নামায দ্বারা মায়্যিতের জন্য মাগফিরাতের সুপারিশ করা হয়।

গ. জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা একশ' হলে আল্লাহর কাছে তাদের সুপারিশ কবুল হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন