ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৩. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১০৬৭
রোগমুক্তির জন্য ঝাড়ফুঁক
(১০৬৭) ইবন আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যদি কেউ এমন কোনো অসুস্থ মানুষকে দেখতে যায় যার মৃত্যুর মুহূর্ত উপস্থিত হয় নি এবং তার কাছে সে সাতবার বলে, 'আমি প্রার্থনা করছি মহান আরশের প্রভু মহামহিম আল্লাহর কাছে যেন তিনি তোমাকে রোগমুক্তি দান করেন', তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে সেই রোগ থেকে সুস্থতা প্রদান করবেন।
عن ابن عباس رضي الله عنهما مرفوعا: من عاد مريضا لم يحضر أجله فقال عنده سبع مرار: أسأل الله العظيم رب العرش العظيم أن يشفيك إلا عافاه الله من ذلك المرض

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছটির সারমর্ম হল, যে রোগীর আয়ু ফুরিয়ে যায়নি, তার কাছে গিয়ে যদি বর্ণিত দু'আটি সাতবার পড়া হয়, তবে সে অবশ্যই আরোগ্য লাভ করবে, সে রোগী নারী হোক বা পুরুষ এবং তার রোগ যাই হোক না কেন। আয়ু ফুরিয়ে গেলে তখন আর কোনও দু'আ-দাওয়াই কাজে আসে না। কারও যখন মৃত্যুর সময় এসে যায়, তখন কোনও উপায়েই তা টলানো যায় না। এক মুহূর্ত আগেও হয় না, পরেও নয়। অবশ্য কার মৃত্যু কখন তা কারও জানা নেই। রোগী যেই রোগে আক্রান্ত, সেই রোগে তার মৃত্যু হবে কি না, তা কেউ বলতে পারে না। কাজেই যে-কোনও রোগীর কাছেই দু'আটি পড়া চাই। মৃত্যু এসে গেলে তা ঠেকানো যাবে না বটে, কিন্তু দু'আ পড়া বৃথা যাবে না। দু'আ করা ইবাদত। তা কবুল হবেই। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার কাছে অবশ্যই ছাওয়াব পাওয়া যাবে। আর যদি আয়ু ফুরিয়ে না গিয়ে থাকে, তবে আল্লাহ চাহেন তো রোগ থেকে নিরাময় লাভ হবে। হাদীছের দু'আটি হল-
أسأل الله العظيم رب العرش العظيم أن يشفيك ( প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহর কাছে, মহান আরশের অধিপতির কাছে, যেন তোমাকে আরোগ্য দান করেন)। এতে প্রথমে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করা হয়েছে যে, তিনি নিজে মহান এবং মহা আরশের অধিপতি । আরশ আল্লাহ তা’আলার বিশাল সৃষ্টি। তা সারা আসমান-যমীন ঘিরে রেখেছে। এর উল্লেখ দ্বারা আল্লাহ তা'আলার বড়ত্ব ও তাঁর অসীম কুদরতের গুণগাণ করা হয়েছে। দু'আর শুরুতে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করা দু'আ কবুলের পক্ষে সহায়ক হয়। সুতরাং হাদীছে দু'আটি যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবেই পড়তে হবে। এটি পড়তে হবে সাতবার। 'সাত' সংখ্যার বিশেষ আছর আছে। বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা এটা জানা যায়। তাই সাতবার পড়লেই দু'আটির যথাযথ সুফল পাওয়ার আশা থাকে।

প্রকাশ থাকে যে, যে-কোনও দু'আ কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত আছে। যেমন কবুলের প্রবল আশা রাখা, গভীর মনোযোগ ও দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দু'আ করা, দু'আ কবুলের পক্ষে যা অন্তরায় তা দূর করা ইত্যাদি। হারাম খাদ্য দু'আ কবুলের পক্ষে অনেক বড় বাধা। সুতরাং দু'আ কবুলের আশাবাদীকে অবশ্যই হারাম খাদ্য ও হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকতে হবে। হারাম উপার্জন কেবল দু'আ কবুলের জন্যই বাধা নয়, জান্নাতপ্রাপ্তির পথেও অন্তরায়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আয়ু ফুরিয়ে গেলে মৃত্যু অবধারিত। চিকিৎসা বা অন্য কোনও ব্যবস্থা দ্বারা তা রোধ করা যায় না।

খ. কার মৃত্যু কখন তা কারও জানা নেই। তাই রোগীর চিকিৎসা ও তার সুস্থতার জন্য দু'আ অব্যাহত রাখা চাই।

গ. রোগী দেখতে গিয়ে হাদীছে বর্ণিত দু'আটি পড়া উচিত।

ঘ. দু'আর ক্ষেত্রে হাদীছে বর্ণিত সংখ্যার বিশেষ আছর রয়েছে। তাই দু'আটি নির্দিষ্ট সংখ্যায়ই পড়া উচিত।

ঙ. আরশ আল্লাহর মাখলুক। সেটি সুবিশাল। এর প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান