ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

৩. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ১০৬৫
রোগমুক্তির জন্য ঝাড়ফুঁক
(১০৬৫) উসমান ইবন আবুল আস সাকাফি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে নিজের কষ্টের কথা জানিয়ে বলেন যে, তিনি ইসলাম গ্রহণের সময় থেকে তার দেহে একটি বেদনা অনুভব করছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বলেন, তোমার দেহের যে স্থানে ব্যাথা সেই স্থানের উপরে তোমার হাত রাখবে এবং তিনবার 'বিসমিল্লাহ' (আল্লাহর নামে) বলবে । এবং সাতবার বলবে, 'আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহর এবং তাঁর ক্ষমতার, আমি যা অনুভব করছি এবং যা ভয় পাচ্ছি তার অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে’ ।
عن عثمان بن أبي العاص الثقفي رضي الله عنه أنه شكا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وجعا يجده في جسده منذ أسلم فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: ضع يدك على الذي تألم من جسدك وقل: باسم الله ثلاثاً وقل سبع مرات: أعوذ بالله وقدرته من شر ما أجد وأحاذر

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত উছমান ইবন আবুল 'আস রাযি. যখন তায়েফ গোত্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মদীনা মুনাউওয়ারায় গমন করেন এবং কিছুদিন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে কাটান, সেই সময়ের কথা। তাঁর শরীরের একটি অঙ্গে ব্যথা ছিল। তিনি সে কথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালে তাঁকে এই রুকয়া শিখিয়ে দেন যে, ব্যথার জায়গায় হাত রেখে তিনবার বিসমিল্লাহ বলবে, তারপর সাতবার পড়বে– أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأَحَاذِرُ (আমি আল্লাহর পরাক্রম ও তাঁর কুদরতের আশ্রয় গ্রহণ করছি সেই বিষয়ের অনিষ্ট থেকে, যা আমি অনুভব করছি এবং যার আশঙ্কাবোধ করছি)। এ দু'আর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার কুদরত ও অসীম ক্ষমতার কথা স্বীকার করার দ্বারা বোঝানো হচ্ছে যে, সবরকম রোগ-বালাই ও বিপদ-আপদও তাঁরই ক্ষমতাধীন। তাঁর ইচ্ছায়ই তা দেখা দেয় এবং তাঁর ইচ্ছায়ই তা দূর হয়। তাই আমি তাঁর ক্ষমতার আশ্রয় গ্রহণ করছি, যাতে তিনি আমার বর্তমান ব্যথা-বেদনা ও কষ্ট-ক্লেশ দূর করে দেন এবং ভবিষ্যতে যে দুঃখ-কষ্ট ও ভয়ভীতির আশঙ্কা আমি করছি, তা থেকেও যেন তিনি আমাকে হেফাজত করেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপশমলাভের এ রুকয়া হযরত উছমান ইবন আবুল 'আস রাযি.- কে শিক্ষা দিলেও এটি কেবল তাঁর জন্যই নির্দিষ্ট নয়; সকলের জন্যই অনুসরণীয়। কাজেই যে-কেউ ব্যথা-বেদনার নিরাময় লাভ করার জন্য পরম বিশ্বাসের সঙ্গে এ রুকয়া অবলম্বন করবে, আশা করা যায় সে এর উপকার পাবে। সুন্নতের অনুসরণ করার কারণে ছাওয়াব তো পাবেই। তাছাড়া এর মধ্যে আল্লাহ তা'আলার যে যিকির আছে তার বরকতও অবশ্যই হাসিল হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রোগ-ব্যাধির কথা এ উদ্দেশ্যে অন্যের কাছে প্রকাশ করা যেতে পারে, যাতে এ বিষয়ে উপযুক্ত পরামর্শ লাভ হয় এবং নিরাময়ের জন্য তার দু'আও পাওয়া যায়।

খ. বেদনার স্থানে হাত রেখে দু'আপাঠের দ্বারা নিশ্চিত উপকার লাভ হয়, যদিও সে উপকারের ধরন-ধারণ সর্বদা উপলব্ধি করা যায় না। উপকার তো আল্লাহ তা'আলা নিজ ইচ্ছামতোই দিয়ে থাকেন, যা সর্বদা বান্দার বোধগম্য হওয়া অপরিহার্য নয়।

গ. রুকয়া ও দু'আপাঠে তিন, সাত ইত্যাদি সংখ্যার বিশেষ আছর আছে। তাই হাদীছে যে ক্ষেত্রে যে সংখ্যার উল্লেখ আছে তা রক্ষা করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন