আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৬৩- পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা
৫৪১৭। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ......... ইমরান ইবনে হিত্তান (রাহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাযিঃ) এর নিকট রেশম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এর নিকটে যাও এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা কর। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেনঃ ইবনে উমরের রাঃ নিকট জিজ্ঞাসা কর। আমি ইবনে উমর রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেনঃ আবু হাফস অর্থাৎ উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ দুনিয়ায় রেশমী কাপড় সে ব্যক্তিই পরিধান করে, যার আখিরাতে কোন অংশ নেই। আমি বললামঃ তিনি সত্য বলেছেন। আবু হাফস রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর মিথ্যা আরোপ করেননি।
আব্দুল্লাহ ইবনে রাজা (রাহঃ) ......... ইমরানের সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদীসের ব্যাখ্যাঃ
হাদীছে জানানো হয়েছে, রেশমী পোশাক পরে এমন ব্যক্তি, আখিরাতে যার কোনও অংশ নেই। অর্থাৎ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। তার মানে এটা অমুসলিমদের পোশাক। অন্য হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরে, সে আখিরাতে রেশমী পোশাক পরবে না। আর এ কারণে মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক পরতে নিষেধ করা হয়েছে। সারমর্ম হল- রেশমি পোশাক দুনিয়ায় অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিম ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায়। এটা পরা জায়েয নয়। তা সত্ত্বেও কোনও মুসলিম ব্যক্তি যদি রেশমী পোশাক পরে, তবে আখিরাতে সে এ পোশাক পরতে পারবে না। অর্থাৎ এ হুকুম অমান্য করার কারণে সে শুরুতে জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতের পোশাক রেশমী পোশাক। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ ‘সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের’ (সূরা ফাতির, আয়াত ৩৩) কাজেই 'দুনিয়ায় যে মুমিন রেশমী পোশাক পরে, আখিরাতে সে তা পরবে না' দ্বারা বোঝানো হয়েছে সে প্রথমে জান্নাতে যেতে পারবে না। প্রথমে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঈমানের বদৌলতে সে জান্নাত লাভ করবে। জান্নাত লাভ করার পর জান্নাতের অপরাপর নি'আমতের মতো রেশমী পোশাকও সে পাবে। কেউ কেউ বলেন, দুনিয়ায় যে মুমিন ব্যক্তি রেশমী পোশাক পরবে, সে জান্নাত লাভ করলেও জান্নাতের অন্যান্য নি'আমত ঠিকই পাবে, কিন্তু রেশমী পোশাক পাবে না। প্রশ্ন দাঁড়ায়, তবে তো তার মনে রেশমী পোশাক না পাওয়ার কষ্ট থেকে যাবে, অথচ জান্নাত কষ্টের জায়গা নয়? এর উত্তর হল, জান্নাতে এমন ব্যক্তির অন্তর থেকে রেশমী পোশাকের চাহিদাই দূর করে দেওয়া হবে। অন্তরে যখন এ পোশাকের চাহিদা থাকবে না, তখন না পাওয়ার দরুন কোনও কষ্টও সে পাবে না, যেমন সাধারণ স্তরের জান্নাতীগণ উচ্চস্তরের জান্নাতবাসীগণের মতো মর্যাদা না পাওয়ার কারণে কোনও কষ্ট বোধ করবে না। হাদীছের মূল বার্তা হল মুমিনদেরকে রেশমী পোশাক সম্পর্কে সতর্ক করা, যাতে তারা এটা না পরে। কেননা এটা পরলে শরী'আতের হুকুম অমান্য করা হবে। পরিণামে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যদি না আল্লাহ তা'আলা মাফ করেন। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক অমুসলিমদের পোশাক। তাই মুসলিমদেরকে অবশ্যই এ পোশাক পরিধান করা হতে বিরত থাকতে হবে। খ. রেশমী পোশাক পরিধান করলে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। গ. দুনিয়ায় রেশমী পোশাক পরিধান করলে জান্নাতে এ নি'আমত থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।

তাহকীক:
তাহকীক নিষ্প্রয়োজন