আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৩- পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৪১০
আন্তর্জতিক নং: ৫৮২৭

পরিচ্ছেদঃ ৩০৮৩. সাদা পোশাকের বর্ণনা।

৫৪১০। আবু মা’মার (রাহঃ) ......... আবু যর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) এর নিকট আসলাম। তার পরিধানে তখন সাদা পোশাক ছিল। তখন তিনি নিদ্রিত ছিলেন। কিছুক্ষণ পর আবার এলাম, তখন তিনি জেগে গেছেন। তিনি বললেনঃ যেকোন বান্দা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং এ অবস্থার উপরে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললামঃ সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে? তিনি বললেনঃ যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও। আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও। আমি বললামঃ যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও? তিনি বললেনঃ যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও। আবু যরের নাসিকা ধূলাচ্ছন্ন হলেও। আবু যর (রাযিঃ) যখনই এ হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন আবু যরের নাসিকা ধূলাচ্ছন্ন হলেও বাক্যটি বলতেন।
আবু আব্দুল্লাহ বুখারী রাহঃ বলেন, এ কথা প্রযোজ্য হয় মৃত্যুর সময় বা তার পূর্বে যখন সে তাওবা করে ও লজ্জিত হয় এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, তখন তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

হাদীসের ব্যাখ্যাঃ

এ হাদীছ দ্বারা সাধারণভাবে বোঝা যাচ্ছে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক না করা অবস্থায় মারা যাবে, তাকে জাহান্নামে যেতে হবে না, সে সরাসরি জান্নাতে চলে যাবে। সন্দেহ নেই অনেক বড় সুসংবাদ। এ সুসংবাদ যে-কোনও মুমিন-মুসলিমকে আপ্লুত করবে। কিন্তু এর উপর প্রশ্নও ওঠে। কেননা কোনও কোনও হাদীছে কোনও কোনও গুনাহ সম্পর্কে স্পষ্টই বলা হয়েছে তাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে জাহান্নামে যেতে হবে। সে জান্নাতে যেতে পারবে না। যেমন এক হাদীছে আছে- لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِع "আত্মীয়তা ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।" অপর এক হাদীছে আছে- لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ، وَلَا عَاق، وَلَا مُدْمِنُ خَمْرٍ "দান করার পর যে ব্যক্তি খোঁটা দেয়, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং মদ পানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।" এরকম আরও বহু হাদীছ আছে, যা প্রমাণ করে কোনও কোনও কবীরা গুনাহের কারণে মুমিনদেরকেও জাহান্নামে যেতে হবে। তারা জান্নাতে যেতে পারবে না। হাদীসে আছে, হযরত আবু যার রাযি.তখন প্রশ্ন করলেন- (যদিও সে ব্যভিচার করে এবং যদিও সে চুরি করে)? অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি যদি তাওহীদের অবস্থায় মারা যায় এবং সে শিরকে লিপ্ত না হয়ে থাকে, কিন্তু সে ব্যভিচার বা চুরির মত মহাপাপ করে থাকে, তবুও কি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-(যদিও সে ব্যভিচার করে, যদিও সে চুরি করে)। অর্থাৎ এরূপ মহাপাপ করা সত্ত্বেও সে জান্নাতে যাবে। আর এ উভয় কথার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। কেননা শিরকে লিপ্ত না থাকা অবস্থায় মারা গেলে যে জান্নাতে প্রবেশ করবে তার অর্থ তার যদি কোনও কবীরা গুনাহ না থাকে তবে শুরুতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর কবীরা গুনাহ থাকলে প্রথমে জাহান্নামে তার নির্দিষ্ট শাস্তি ভোগ করবে এবং শাস্তির মেয়াদ পূরণ হওয়ার পর সে জান্নাতে যাবে। হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ ক. তাওহীদ আঁকড়ে ধরা চাই। এটাই আখিরাতে মুক্তিলাভের আসল উপায়। খ. সদা সর্বদা সতর্ক থাকা উচিত যাতে কোনওক্রমেই শিরকে জড়িয়ে পড়া না হয়। কেননা শিরককারী জান্নাতে যেতে পারবে না। গ. কিছুতেই কবীরা গুনাহ করা উচিত নয়। কখনও হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে ফেলা চাই। অন্যথায় জাহান্নামের শাস্তিভোগের আশঙ্কা রয়েছে।


tahqiq

তাহকীক:

তাহকীক নিষ্প্রয়োজন