মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

২৪. আহকাম (রাষ্ট্রনীতি) অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৮৭
আহকামের বর্ণনা
হাদীস নং- ৪৮৭

হযরত আবু যর (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ হে আবু যর। ইমারত (রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা) হলো একটি আমানত এবং কিয়ামতের দিন হবে লাঞ্ছনা, অপমান ও অনুশোচনার কারণ। কিন্তু ঐ ব্যক্তির জন্য লাঞ্ছনা ও অপমানকর নয়) যে ব্যক্তি ইমারত ও রাষ্ট্রের হক আদায় করে এবং যে দায়িত্ব তার উপর অর্পিত ছিল, তা যথাযথভাবে আদায় করে। রাষ্ট্রের এ হক ও যিম্মাদারী আদায় হয় কোথায়?
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, হযরত আবু যর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন: ইমারত (إمارت) হলো একটি আমানত। এটাই কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা ও অপমানের কারণ হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তার উপর অর্পিত হক ও যিম্মাদারী সঠিকভাবে পালন করবে (তার জন্য লাঞ্ছনার কারণ হবে না)। অতঃপর হুযূর (ﷺ) বললেনঃ এ দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় হয় কোথায়?
عَنِ الْهَيْثَمِ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَبَا ذَرٍّ! الْإِمْرَةُ أَمَانَةٌ، وَهِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةٌ، إِلَّا مَنْ أَخَذَهَا مِنْ حَقِّهَا، وَأَدَّى الَّذِيْ عَلَيْهِ، وَأَنَّى ذَلِكَ».
وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ أَبِيْ غَسَّانَ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الْإِمْرَةُ أَمَانَةٌ، وَهِيَ [ص: 526] يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةٌ، إِلَّا مَنْ أَخَذَهَا مِنْ حَقِّهَا، وَأَدَّى الَّذِيْ عَلَيْهِ، وَأَنَّى ذَلِكَ يَا أَبَا ذَرٍّ!»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

তিবরানী ও বাযযার সহীহ সনদের দ্বারা হযরত আউফ ইব্ন মালিক (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : أولها ملامة وثانيها زرامة وثالثها عذاب يوم القيامة الأمن عدل - “ইমারতের প্রারম্ভে হলো নিন্দা ও ভৎসনা, দ্বিতীয় স্তরে হলো অপমান এবং তৃতীয় স্তরে হলো কিয়ামতের শাস্তি।” তবে ঐ ব্যক্তি, যে ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে (তার জন্য নিন্দা, অপমান ও শাস্তির ভয় নেই)।
মুসলিম শরীফেও একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে উক্ত হাদীসের প্রারম্ভে এ বাক্য অতিরিক্ত রয়েছে যে, হযরত আবূ যর (রা) হুযূর (সা)-এর নিকট আবেদন করে বললেন হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে কোথাও কার্যনিবাহী কর্মকর্তা বা গভর্নর নিয়োজিত করেন না কেন? তিনি তাঁর কাঁধে হাত রেখে বললেন : হে আবূ যর! তুমি দুর্বল। অতঃপর হাদীসে বর্ণিত বিষয়ে উপদেশ প্রদান করেন। মোটকথা এ হাদীসে রাষ্ট্র, শাসন কর্তৃত্ব, আধিপত্বের গুরুত্ব ও দায়িত্বের সঠিক ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যারা রাষ্ট্রকে খেল-তামাশা মনে করে এটাকে দুনিয়ার আনন্দ উল্লাস এবং জৈবিক চাহিদা পূরণের মাধ্যম তৈরি করে নেয়, তাদের জন্য এক মারাত্মক চাবুকের আঘাতের মত যে, রাষ্ট্র ক্ষমতাকে যেখানে আমানত বলা হয়েছে, এর হক বা দাবি সঠিকভাবে যে আদায় না করে, তাকে খেয়ানতকারী বলা হয়েছে, সুতরাং এরূপ ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত ও অপমানিত হতে হবে এবং আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে।
এ ছাড়া এ আমানত খুব সাধারণ নয়। হাকিম বা বিচারকের কাঁধের উপর আল্লাহর হক আদায়ের বোঝা অর্পিত হয়ে থাকে এবং অসংখ্য লোকের অধিকারের দায়িত্বও তার উপর থাকে। তাই এমন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি কে আছে, যে এ সমস্ত হক ও অধিকারসমূহ পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করে এবং এ কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়? তাই আঁ হযরত (সা) বলেছেনঃ "وأنى ذلك, "এরূপ কোথায় হয়?" কেননা হাযারের মধ্যে একটি বের হলে তা না হওয়ার মতই। কোন কোন উলামায়ে কিরামের মত হলো এই যে, আল্লাহ পাকের বাণীঃ إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ (৩৩ঃ৭২)-এর দ্বারা গুত্বপূর্ণ আমানত বলতে রাষ্ট্র বা হুকুমতকে বুঝানো হয়েছে এবং এতে আমানতের গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যদি মানুষের মন ও মস্তিষ্কে রাষ্ট্রের এ গুরুত্বের বিষয়টি বসে যায়, তা হলে মানুষ রাষ্ট্রের যিম্মাদারী নিতে এরূপ ভয় করত, যেরূপ মৃত্যুকে ভয় করে থাকে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৪৮৭ | মুসলিম বাংলা