মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

২২. আদাব - শিষ্টাচার অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৬৯
জ্যোতির্বিজ্ঞানে দৃষ্টি দেয়া নিষিদ্ধ
হাদীস নং- ৪৬৯

হযরত আবু বুরদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আনসারদের এক কওমের বাড়িতে গমন করে তাদের সাথে সাক্ষাত করেন। তারা তাঁর মেহমানদারীর জন্য একটি বকরী যবেহ করে এবং এরদ্বারা আহার্য দ্রব্য তৈরী করে। হুযূর (ﷺ) (আহারের সময়) গোশতের এক টুকরা মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ চিবালেন কিন্তু গলাধঃকরণ করতে পারলেন না। তখন তিনি বললেন। এটা কি ধরনের গোশত। লোকজন বলল, এটা অমুক ব্যক্তির বকরী ছিল। তার অনুমতি ব্যতীত) আমরা এটা যবেহ করেছি- এ আশায় যে, তিনি (বকরীর মালিক) আগমণ করলে তাকে বকরীর মূল্য প্রদান করে সম্মত করিয়ে নেব। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : এ গোশত বন্দীদেরকে খাওয়াও।
অপর এক বিওয়ায়েতে ইব্ন কুলায়ব থেকে বর্ণিত আছে, হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা (ﷺ)-এর সাহাবাদের মধ্যে এক ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য তৈরী করে তাঁকে দাওয়াত করলেন। হুযূর (ﷺ) গমন করলেন, আমরাও তাঁর সাথে গিয়েছি। যখন আহার্য দ্রব্য রাখা হলো, তখন তিনি গোশতের একটি টুকরা মুখে রাখলেন এবং বেশ কিছুক্ষণ চিবালেন কিন্তু তা গলাধঃকরণ করতে পারলেন না। তখন তিনি তা মুখ থেকে বের করে ফেলে দিলেন এবং খানা থেকে হাত উঠিয়ে বললেন : এ গোশত কোথা থেকে সংগ্রহ করেছ, তা আমাকে বল। মেজবান বললেন, হে আল্লাহর রাসূল। এটা আমাদের এক সাথীর বকরী ছিল। সে উপস্থিত ছিল না যে, আমরা তার থেকে ক্রয় করব। সুতরাং আমরা এটা জলদি করে যবেহ করেছি এবং আপনার খেদমতে উপস্থিত করেছি। শুধু এ আশায় যে, বকরীর মালিক আগমণ করবে এবং তাকে বকরীর মূল্য আদায় করে দেব। তখন নবী করীম (ﷺ) ঐ খাদ্য উঠিয়ে নেয়ার জন্য বললেন এবং বন্দীদেরকে খাওয়ানোর জন্য নির্দেশ দান করলেন। আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, আমি হযরত আবু হানীফা (রাহঃ)-কে বললাম, আপনি এ মাসআলা কোথায় পেলেন যে, যদি কেউ কারো মাল তার অনুমতি ব্যতীত ব্যবহার করে, তা হলে সে এর লাভ সদকা করে দেবে? তিনি বললেনঃ হযরত আসিম (রাহঃ)-এর হাদীস থেকে।
عَنْ عَاصِمِ عَنْ أَبِي بُرْدَةَ: " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَارَ قَوْمًا مِنَ الْأَنْصَارِ فِي دِيَارِهِمْ، فَذَبَحُوا لَهُ شَاةً، وَصَنَعُوا لَهُ مِنْهَا طَعَامًا، فَأَخَذَ مِنَ اللَّحْمِ شَيْئًا فَلَاكَهُ، فَمَضَغَهُ سَاعَةً لَا يُسِيغُهُ، فَقَالَ: " مَا شَأْنُ هَذَا اللَّحْمِ؟ فَقَالُوا: شَاةٌ لِفُلَانٍ ذَبَحْنَاهَا حَتَّى يَجِيءَ، فَنُرْضِيَهِ مِنْ ثَمَنِهَا، قَالَ: فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَطْعِمُوهَا الْأُسَرَاءَ "، وَفِي رِوَايَةٍ: عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبِ، عَنْ أَبِيهِ: أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " صَنَعَ طَعَامًا، فَدَعَاهُ فَقَامَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقُمْنَا مَعَهُ، فَلَمَّا وَضَعَ الطَّعَامَ تَنَاوَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِضْعَةً مِنْ ذَلِكَ اللَّحْمِ، فَلَاكَهَا فِي فِيهِ طَوِيلًا، فَجَعَلَ لَا يَسْتَطِيعُ أَنْ يَأْكُلَهَا، فَأَلْقَهَا مِنْ فِيهِ، وَأَمْسَكَ عَنِ الطَّعَامِ، فَلَمَّا رَأَيْنَا مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَلِكَ أَمْسَكْنَا عَنْهُ، فَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَاحِبَ الطَّعَامِ، فَقَالَ: " أَخْبِرْنِي عَنْ لَحْمِ هَذَا، مِنْ أَيْنَ هُوَ؟ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، شَاةٌ كَانَتْ لِصَاحِبٍ لَنَا، فَلَمْ يَكُنْ عِنْدَنَا فَنَشْتَرِيَهَا، وَعَجِلْنَا بِهَا، وَذَبَحْنَاهَا، وَصَنَعْنَاهَا لَكَ حَتَّى يَجِيءَ، فَنُعْطِيَهُ ثَمَنَهَا، فَأَمَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِرَفْعِ الطَّعَامِ وَأَمَرَ أَنْ يُطْعِمَهُ الْأُسَرَاءَ "، قَالَ عَبْدُ الْوَاحِدِ: قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي حَنِيفَةَ: مِنْ أَيْنَ أَخَذْتَ هَذَا: " الرَّجُلُ يَعْمَلُ فِي مَالِ الرَّجُلِ بِغَيْرِ إِذْنِهِ، يَتَصَدَّقُ بِالرِّبْحِ؟ قَالَ: أَخَذْتُهُ مِنْ حَدِيثِ عَاصِمٍ "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসে একটি মাসয়ালা বর্ণিত হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তির বকরী অনুমতি ব্যতীত যবেহ করে, তা হলে এর মূল্য প্রদানের দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হবে। এবং তার উপর এটা সদকা করা ওয়াজিব হবে। এ ছাড়া যতক্ষণ পর্যন্ত বকরীর মূল্য আদায় না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ বকরী দ্বারা কোন উপকার লাভ করার অধিকার তার প্রতিষ্ঠিত হবে না। এ অবস্থায় বকরী তার মালিকের মালিকানা থেকে বের হয়ে যায়। যদি তার মালিকানা থেকে বের না হতো, তা হলে আঁ হযরত (সা) এটাকে সদকা করার নির্দেশ দান করতেন না। বরং মালিককে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন অথবা তার হাতে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতেন এবং এর মূল্য মালিকের জন্য হিফাযতে রাখার নির্দেশ দিতেন। কেননা জরুরী অবস্থায় কোন ব্যক্তির মাল বিক্রি করার ক্ষমতা আমীরের রয়েছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৪৬৯ | মুসলিম বাংলা