মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
১৯. পানাহারের দ্রব্যাদি, কুরবানী, শিকার এবং যবেহ সম্পর্কে বর্ণনা
হাদীস নং: ৩৯৯
গুইসাপ খাওয়ার বিধান
হাদীস নং- ৩৯৯
হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, কোন এক ব্যক্তি হাদিয়া হিসেবে তাঁর নিকট গুইসাপ প্রেরণ করে। তিনি বলেন, আমি এটা খাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করি। তিনি এটা খেতে নিষেধ করেন। এরপর একজন ভিক্ষুক আগমণ করে। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, আমি এ গুইসাপ তাকে দেয়ার নির্দেশ দান করি। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ যা তোমরা নিজেরা খাও না, তা অপরকে কেন খাওয়াতে চাও?
হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, কোন এক ব্যক্তি হাদিয়া হিসেবে তাঁর নিকট গুইসাপ প্রেরণ করে। তিনি বলেন, আমি এটা খাওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করি। তিনি এটা খেতে নিষেধ করেন। এরপর একজন ভিক্ষুক আগমণ করে। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, আমি এ গুইসাপ তাকে দেয়ার নির্দেশ দান করি। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ যা তোমরা নিজেরা খাও না, তা অপরকে কেন খাওয়াতে চাও?
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا " أَنَّهُ أُهْدِيَ لَهَا ضَبٌّ، فَسَأَلَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَهَاهَا عَنْ أَكْلِهِ، فَجَاءَ سَائِلٌ، فَأَمَرَتْ لَهُ بِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتُطْعِمِينَ مَا لَا تَأْكُلِينَ!»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীসে গুইসাপ খাওয়ার ব্যাপারে যে বিধান রয়েছে, এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীহা (র), ইমাম শাফিঈ ও ইমাম মালিক (র)-এর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আযম একে মাকরূহ বলেছেন এবং অন্যান্য ইমামগণ এটা হালাল বলেছেন।
ইমাম শাফিঈ ও ইমাম মালিক (র) বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত খালিদ ইব্ন ওয়ালিদ (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সা)-এর সাথে আমার খালা মায়মূনার নিকট গমন করি। তাঁর নিকট একটি ভুনাকরা গুইসাপ দেখে আঁ হযরত (সা) এর দিকে পবিত্র হাত বাড়ালেন। এ সময় একজন মহিলা বললেন, আপনার সামনে এটা কি পেশ করা হয়েছে, তা তো আপনাকে বলা প্রয়োজন। এটা হলো গুইসাপ। তখন আঁ হযরত (সা) স্বীয় হাত গুটিয়ে নিলেন। হযরত খালিদ (রা) জিজ্ঞাসা করেন, এটা কি হারাম? তিনি বললেন না, তবে এটা যেহেতু আমাদের এখানে নেই, তাই আমি এটাকে মাকরূহ জানি। হযরত খালিদ (রা) বললেন, এরপর আমি খেতে থাকি এবং তিনি তা প্রত্যক্ষ করছিলেন কিন্তু আমাকে নিষেধও করেন নি।
ইমাম আবূ হানীফা (রা)-এর মাযহাবের স্বপক্ষে সহীহ সনদ সম্বলিত হাদীসসমূহ দলীল পেশ করেছেন। প্রথমত বর্ণিত হাদীস, যাতে নবী করীম (সা) হযরত আয়েশা (রা)-কে গুইসাপ খাওয়া থেকে বাধা প্রদান করেছেন। এর দ্বারা সম্পূর্ণরূপে হারাম না হলেও কমপক্ষে মাকরূহ তো অবশ্যই হবে।
দ্বিতীয়ত আবু দাউদে হযরত আবদুর রহমান ইব্ন শাযীদ (রা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেনঃنهى عن أكل لحم الضب (নবী করীম (সা) গুইসাপের গোশত খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। এ হাদীস দূর্বল প্রমাণ করার জন্য প্রতিপক্ষ অনেক সমালোচনা করেছেন এবং স্বয়ং নিজের কলম দ্বারা স্বীয় বক্তব্য খণ্ডন করেছেন। কেননা প্রতিপক্ষ যমযম ইব্ন যুরআ (র) রেওয়ায়েত করেছেন। তাই এদেরকে সমালোচনার জন্য চিহ্নিত করেছেন। ইমাম বায়হাকী (রা) যদিও ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ تفرد به إسماعيل بن عياش وليس بحجة (ইসমাঈল এর সনদে তিনি একক হওয়ার কারণে দলীল হওয়ার যোগ্য নয়)। "কেউ কি তাদেরকে এটা স্মরণ করিয়ে নেয়নি যে, হযরত! আপনি তো নিজেই স্বীয় সুনানে অধ্যায়ে ترك الوضوء من الدم বলে এসেছেন যে, ইসমাঈলের রিওয়ায়েত শামীদের থেকে সহীহ এবং যমযম (র) নিঃন্দেহে শামী। এ ছাড়া অন্যান্য সমীক্ষকগণ, যেমন ইমাম বুখারী ও ইয়াহইয়া ইব্ন মুঈন (র) ও ব্যাখ্যা করেছেন যে, ইসমাঈলের রিওয়ায়েত শামীদের থেকে সহীহ। সুতরাং ইমাম আবু দাউদ এ হাদীসের উপর নীরবতা অবলম্বন করেছেন যা এর সহীহ বা হাসান হওয়ার সুস্পষ্ট দলীল। সুতরাং এর বিরুদ্ধে উক্তি করা হঠকারিতা ও অনর্ধক ধরে নেয়া যায়।
তৃতীয়ত ঐ হাদীস যা ইমাম আহমদ, বাযযার, তিবরানী ও অন্যান্যগণ আবদুর রহমান ইব্ন হাসানার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা আঁ হযরত (সা)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। আমরা এমন যায়গায় গিয়ে অবস্থান করলাম যেখানে প্রচুর গুইসাপ ছিল। আমরা একটি শিকার করে যবেহ করি এবং রান্নার জন্য ডেকচীর মধ্যে রাখার পর তা টগবগ করছিল। এ সময় নবী করীম (সা) সেখানে আগমণ করেন এবং তিনি এটা দেখে বললেন : বনী ইসরাঈলের একটি দল যমীনের কীট-পতঙ্গের আকৃতিতে রূপান্তর হয়ে যায়। আমার ভয় হচ্ছে যে, উক্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। হুযূর (সা)-এর শুধু ভয় ও আশংকাই কোন বস্তুর হারাম বা মাকরূহ হওয়াকে প্রমাণ করে। সুতরাং এ হাদীস গুইসাপের কমপক্ষে মাকরূহ হওয়ার জন্য সুস্পষ্ট দলীল।
চতুর্থত মুসলিম শরীফে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে গুইসাপ হাযির করা হয়, তিনি এটা খাওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন এবং বলেন : আমি জানি না যে, হয়ত এ সমস্ত লোক আকৃতি পরিবর্তিত দলের মধ্যে গণ্য হয়ে যায়। এ সমস্ত হাদীস হলো বিশেষ করে গুইসাপ মাকরূহ হওয়ার দলীল। এ ছাড়াও হযরত নাফে এবং হযরত ইব্ন উমর (রা) সূত্রে হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা (র) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসেও যমীনের কীট-পতঙ্গ হারাম হওয়া প্রমাণ করে এবং গুইসাপ খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টিও এর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কেননা এটাও যমীনের কীট-পতঙ্গের মধ্যে গণ্য হওয়ায় ঐ বিধানের অন্তর্ভুক্ত এবং নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টিও এর উপর আবর্তিত হবে। ইমাম নববী (র) অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন:
وأجمع المسلمون على أن الضب حلال ليس بمكروه إلا ما حكي عن أصحاب أبي حنيفة من كراهته وإلا ما حكاه القاضي عياض عن قوم أنهم قالوا هو حرام وما أظنه يصح عن أحد وإن صح عن أحد فمحجوج بالنصوص وإجماع من قبله
"মুসলমানগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, গুইসাপ খাওয়া হালাল, মাকরূহ নয়। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর ছাত্রদের থেকে এর বিপরীত অর্থাৎ মাকরূহ বলে বর্ণনা রয়েছে। কাযী আয়ায কোন কোন দল থেকে এর হারাম হওয়া সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। আমার (ব্যাখ্যাকারের) মতে, কারো থেকেই সহীহ পদ্ধতিতে প্রমাণিত নয়। যদিও প্রমাণিত হয়, তবুও সহীহ রিওয়ায়েত হলো এর বিপরীত দলীল এবং পূর্বের ঐকমত্যও এর বিপরীত। “এখানে ইমাম নববী (র) থেকে পদস্খলন হয়ে গেছে।"
মোল্লা আলী কারী বলেন, দিমায়রী বলেছেন, গুইসাপ হালাল হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে, এ ভুল বর্ণনার জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অথচ তিরমিযী সুস্পষ্টভাবে বলেছেঃ وقد اختلف أهل العلم في أكل الضب فرخص فيه بعض أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم وغيرهم وكرهه بعضهم
“উলামায়ে কিরাম গুইসাপ খাওয়ার ব্যাপারে অনৈক্য প্রকাশ করেছেন। নবী করীম (সা)-এর সাহাবাগণের মধ্যে কোন কোন আহলে ইলম এতে অনুমতি প্রদান করেছেন। আবার কেউ কেউ মাকরূহ বলেছেন।"
তা হলে কি ইমাম নববী এবং দিমায়রী ইজমার দাবি করার সময় ইমাম তিরমিযী (র)-এর বর্ণনা প্রত্যক্ষ করেননি এবং হানাফী মাযহাবের প্রমাণে উল্লেখিত রিওয়ায়েত তাদের ইলমের বহির্ভূত ছিল। এ সমস্ত ছিল বিভিন্ন রিওয়ায়েতের দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা। কিয়াসের দৃষ্টিকোণ থেকেও কয়েকটি কারণে এটা মাকরূহ প্রমাণিত হয়। প্রথমত, এখানে দলীলের মধ্যে পরস্পর বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে এবং দলীলের মধ্যে বিরোধ বা অনৈক্য মাকরূহ হওয়ার প্রমাণই কিয়াসের দৃষ্টিতে অধিক।
দ্বিতীয়, উসুলের সর্বজন স্বীকৃত বিধান হলো এই যে, হারাম ও হালালের রিওয়ায়েত যখন এক জায়গায় একত্র হয়, তখন হারামই অগ্রগণ্য হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত, সতর্কতার মূল উদ্দেশ্য এই যে, হারাম হওয়াকে বিবেচনা করা। কেননা যদি হালালও হয় এবং খাওয়া না হয়, তা হলে কোন পাপ নেই। কিন্তু যদি হারাম হয় এবং খাওয়া হয়, তা হলে মারাত্মক পাপী হতে হবে।
ইমাম শাফিঈ ও ইমাম মালিক (র) বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত খালিদ ইব্ন ওয়ালিদ (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সা)-এর সাথে আমার খালা মায়মূনার নিকট গমন করি। তাঁর নিকট একটি ভুনাকরা গুইসাপ দেখে আঁ হযরত (সা) এর দিকে পবিত্র হাত বাড়ালেন। এ সময় একজন মহিলা বললেন, আপনার সামনে এটা কি পেশ করা হয়েছে, তা তো আপনাকে বলা প্রয়োজন। এটা হলো গুইসাপ। তখন আঁ হযরত (সা) স্বীয় হাত গুটিয়ে নিলেন। হযরত খালিদ (রা) জিজ্ঞাসা করেন, এটা কি হারাম? তিনি বললেন না, তবে এটা যেহেতু আমাদের এখানে নেই, তাই আমি এটাকে মাকরূহ জানি। হযরত খালিদ (রা) বললেন, এরপর আমি খেতে থাকি এবং তিনি তা প্রত্যক্ষ করছিলেন কিন্তু আমাকে নিষেধও করেন নি।
ইমাম আবূ হানীফা (রা)-এর মাযহাবের স্বপক্ষে সহীহ সনদ সম্বলিত হাদীসসমূহ দলীল পেশ করেছেন। প্রথমত বর্ণিত হাদীস, যাতে নবী করীম (সা) হযরত আয়েশা (রা)-কে গুইসাপ খাওয়া থেকে বাধা প্রদান করেছেন। এর দ্বারা সম্পূর্ণরূপে হারাম না হলেও কমপক্ষে মাকরূহ তো অবশ্যই হবে।
দ্বিতীয়ত আবু দাউদে হযরত আবদুর রহমান ইব্ন শাযীদ (রা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেনঃنهى عن أكل لحم الضب (নবী করীম (সা) গুইসাপের গোশত খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। এ হাদীস দূর্বল প্রমাণ করার জন্য প্রতিপক্ষ অনেক সমালোচনা করেছেন এবং স্বয়ং নিজের কলম দ্বারা স্বীয় বক্তব্য খণ্ডন করেছেন। কেননা প্রতিপক্ষ যমযম ইব্ন যুরআ (র) রেওয়ায়েত করেছেন। তাই এদেরকে সমালোচনার জন্য চিহ্নিত করেছেন। ইমাম বায়হাকী (রা) যদিও ব্যাখ্যা করে বলেছেনঃ تفرد به إسماعيل بن عياش وليس بحجة (ইসমাঈল এর সনদে তিনি একক হওয়ার কারণে দলীল হওয়ার যোগ্য নয়)। "কেউ কি তাদেরকে এটা স্মরণ করিয়ে নেয়নি যে, হযরত! আপনি তো নিজেই স্বীয় সুনানে অধ্যায়ে ترك الوضوء من الدم বলে এসেছেন যে, ইসমাঈলের রিওয়ায়েত শামীদের থেকে সহীহ এবং যমযম (র) নিঃন্দেহে শামী। এ ছাড়া অন্যান্য সমীক্ষকগণ, যেমন ইমাম বুখারী ও ইয়াহইয়া ইব্ন মুঈন (র) ও ব্যাখ্যা করেছেন যে, ইসমাঈলের রিওয়ায়েত শামীদের থেকে সহীহ। সুতরাং ইমাম আবু দাউদ এ হাদীসের উপর নীরবতা অবলম্বন করেছেন যা এর সহীহ বা হাসান হওয়ার সুস্পষ্ট দলীল। সুতরাং এর বিরুদ্ধে উক্তি করা হঠকারিতা ও অনর্ধক ধরে নেয়া যায়।
তৃতীয়ত ঐ হাদীস যা ইমাম আহমদ, বাযযার, তিবরানী ও অন্যান্যগণ আবদুর রহমান ইব্ন হাসানার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা আঁ হযরত (সা)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। আমরা এমন যায়গায় গিয়ে অবস্থান করলাম যেখানে প্রচুর গুইসাপ ছিল। আমরা একটি শিকার করে যবেহ করি এবং রান্নার জন্য ডেকচীর মধ্যে রাখার পর তা টগবগ করছিল। এ সময় নবী করীম (সা) সেখানে আগমণ করেন এবং তিনি এটা দেখে বললেন : বনী ইসরাঈলের একটি দল যমীনের কীট-পতঙ্গের আকৃতিতে রূপান্তর হয়ে যায়। আমার ভয় হচ্ছে যে, উক্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে। হুযূর (সা)-এর শুধু ভয় ও আশংকাই কোন বস্তুর হারাম বা মাকরূহ হওয়াকে প্রমাণ করে। সুতরাং এ হাদীস গুইসাপের কমপক্ষে মাকরূহ হওয়ার জন্য সুস্পষ্ট দলীল।
চতুর্থত মুসলিম শরীফে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর খেদমতে গুইসাপ হাযির করা হয়, তিনি এটা খাওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন এবং বলেন : আমি জানি না যে, হয়ত এ সমস্ত লোক আকৃতি পরিবর্তিত দলের মধ্যে গণ্য হয়ে যায়। এ সমস্ত হাদীস হলো বিশেষ করে গুইসাপ মাকরূহ হওয়ার দলীল। এ ছাড়াও হযরত নাফে এবং হযরত ইব্ন উমর (রা) সূত্রে হযরত ইমাম আযম আবু হানীফা (র) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসেও যমীনের কীট-পতঙ্গ হারাম হওয়া প্রমাণ করে এবং গুইসাপ খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টিও এর অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কেননা এটাও যমীনের কীট-পতঙ্গের মধ্যে গণ্য হওয়ায় ঐ বিধানের অন্তর্ভুক্ত এবং নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টিও এর উপর আবর্তিত হবে। ইমাম নববী (র) অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন:
وأجمع المسلمون على أن الضب حلال ليس بمكروه إلا ما حكي عن أصحاب أبي حنيفة من كراهته وإلا ما حكاه القاضي عياض عن قوم أنهم قالوا هو حرام وما أظنه يصح عن أحد وإن صح عن أحد فمحجوج بالنصوص وإجماع من قبله
"মুসলমানগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, গুইসাপ খাওয়া হালাল, মাকরূহ নয়। কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর ছাত্রদের থেকে এর বিপরীত অর্থাৎ মাকরূহ বলে বর্ণনা রয়েছে। কাযী আয়ায কোন কোন দল থেকে এর হারাম হওয়া সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। আমার (ব্যাখ্যাকারের) মতে, কারো থেকেই সহীহ পদ্ধতিতে প্রমাণিত নয়। যদিও প্রমাণিত হয়, তবুও সহীহ রিওয়ায়েত হলো এর বিপরীত দলীল এবং পূর্বের ঐকমত্যও এর বিপরীত। “এখানে ইমাম নববী (র) থেকে পদস্খলন হয়ে গেছে।"
মোল্লা আলী কারী বলেন, দিমায়রী বলেছেন, গুইসাপ হালাল হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে, এ ভুল বর্ণনার জন্য আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অথচ তিরমিযী সুস্পষ্টভাবে বলেছেঃ وقد اختلف أهل العلم في أكل الضب فرخص فيه بعض أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم وغيرهم وكرهه بعضهم
“উলামায়ে কিরাম গুইসাপ খাওয়ার ব্যাপারে অনৈক্য প্রকাশ করেছেন। নবী করীম (সা)-এর সাহাবাগণের মধ্যে কোন কোন আহলে ইলম এতে অনুমতি প্রদান করেছেন। আবার কেউ কেউ মাকরূহ বলেছেন।"
তা হলে কি ইমাম নববী এবং দিমায়রী ইজমার দাবি করার সময় ইমাম তিরমিযী (র)-এর বর্ণনা প্রত্যক্ষ করেননি এবং হানাফী মাযহাবের প্রমাণে উল্লেখিত রিওয়ায়েত তাদের ইলমের বহির্ভূত ছিল। এ সমস্ত ছিল বিভিন্ন রিওয়ায়েতের দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা। কিয়াসের দৃষ্টিকোণ থেকেও কয়েকটি কারণে এটা মাকরূহ প্রমাণিত হয়। প্রথমত, এখানে দলীলের মধ্যে পরস্পর বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে এবং দলীলের মধ্যে বিরোধ বা অনৈক্য মাকরূহ হওয়ার প্রমাণই কিয়াসের দৃষ্টিতে অধিক।
দ্বিতীয়, উসুলের সর্বজন স্বীকৃত বিধান হলো এই যে, হারাম ও হালালের রিওয়ায়েত যখন এক জায়গায় একত্র হয়, তখন হারামই অগ্রগণ্য হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত, সতর্কতার মূল উদ্দেশ্য এই যে, হারাম হওয়াকে বিবেচনা করা। কেননা যদি হালালও হয় এবং খাওয়া না হয়, তা হলে কোন পাপ নেই। কিন্তু যদি হারাম হয় এবং খাওয়া হয়, তা হলে মারাত্মক পাপী হতে হবে।
