মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১৮. ফযীলত ও সম্মানের বর্ণনা

হাদীস নং: ৩৬৪
নবী করীম (ﷺ)-এর ফযীলত ও সম্মান
হাদীস নং- ৩৬৪

হযরত আনাস (রাযিঃ) বর্ণিত, হযরত আবু বকর (রাযিঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে একটু সুস্থ দেখতে পেলেন, তখন আনসারের বাগানে অবস্থানরত স্বীয় স্ত্রী বিনতে খারিজার নিকট যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। অথচ এ সুস্থতা অত্যন্ত সাধারণ ছিল কিন্তু এটা তিনি উপলব্ধি করতে পারেন নি। নবী করীম (ﷺ) তাঁকে অনুমতি দান করেন এবং ঐ রাতেই তিনি ইনতিকাল করেন। ভোর হওয়ার পর লোকজন হুযুর (ﷺ)-এর বাড়ির দিকে জমা হতে লাগলেন। হযরত আবু বকর (রাযিঃ) তাঁর গোলামকে সঠিক খবর শুনে তাকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দান করেন। হযরত আবু বকর (রাযিঃ) বলেন, আমি লোকজনকে এ কথা বলতে শুনছি যে, হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) ইনতিকাল করেছেন। তখন হযরত আবু বকর (রাযিঃ) এটা বলে দ্রুত রওয়ানা হলেন, হায় আফসোস! কোমর ভেঙ্গে গেল। হযরত আবু বকর (রাযিঃ) তখনও মসজিদে নববীতে পৌঁছেননি, ফলে লোকজন ধারণা করলেন যে, তিনি এখনো সংবাদ পাননি। মুনাফিকের দল এ কথা ছড়াতে লাগল যে, হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) যদি নবী হতেন তা হলে ইনতিকাল করতেন না।
এ সংবাদ শুনে হযরত উমর (রাযিঃ) বলেন, আমি যেন কাউকে এটা বলতে না শুনি যে, হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) ইনতিকাল করেছেন। অন্যথায় তাকে আমি তলোয়ার দিয়ে হত্যা করব। তাঁর এ কথায় মুনাফিকের দল থেমে যায়।।
অতঃপর যখন হযরত আবু বকর (রাযিঃ) আগমণ করেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পবিত্র দেহ কাপড় দ্বারা আবৃত ছিল। হযরত আবু বকর (রাযিঃ) তাঁর পবিত্র চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে কপালে চুমো খেলেন এবং বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা দু'টি মৃত্যুর তিক্ততা বা কষ্ট আপনাকে আস্বাদন করাবেন না। আপনি আল্লাহর নিকট এর চেয়েও অধিক সম্মানিত (এ কথার দ্বারা হযরত উমরের কথার বিরোধিতা করাও উদ্দেশ্য ছিল)। এরপর আবু বকর (রাযিঃ) বাইরে এসে বললেন, হে লোক সকল! যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের ইবাদত করত (তোমরা জেনে রাখ), তিনি ইনতিকাল করেছেন এবং যারা মুহাম্মাদের রবের ইবাদত করত (তোমরা জেনে রাখ), কখনো মুহাম্মাদের রব ইনতিকাল করবেন না। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ

وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ

“মুহাম্মাদ একজন রাসূল ব্যতীত আর কেউ নন। নিশ্চয়ই তার পূর্বেও অনেক রাসূল পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। যদি তিনি ইনতিকাল করেন অথবা নিহত হন, তাহলে কি তোমরা ফিরে যাবে? যে ব্যক্তি ফিরে যাবে (স্বীয় দল থেকে), তারা আল্লাহর কিছুই অনিষ্ট করতে পারবে না। অচিরেই আল্লাহ তা'আলা তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে পুরস্কার প্রদান করবেন।" (৩:১৪৪)
হযরত উমর (রাযিঃ) বলেন, মনে হয় আমরা যেন এর পূর্বে কখনো এ আয়াত তিলাওয়াত করিনি। অতঃপর লোকজন হযরত আবু বকর (রাযিঃ)-এর কথার মত বলতে লাগলেন এবং একই আয়াত পাঠ করতে লাগলেন। সোমবার রাতে আঁ হযরত (ﷺ) ইনতিকাল করেন এবং দু'দিন ও দু'রাত অতিবাহিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবারে তাঁর দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। (গোসলের সময়) হযরত উসামা ইব্‌ন যায়দ ও হযরত আউস ইব্‌ন খাওলা (রাযিঃ) পানি ঢালেন এবং হযরত আলী ও হযরত ফযল ইব্‌ন 'আব্বাস (রাযিঃ) হুযুর (ﷺ)-কে গোসল দিয়েছেন।
عَنْ يَزِيدَ، عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، " أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رَأَى مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خِفَّةً، فَاسْتَأْذَنَهُ إِلَى امْرَأَتِهِ بِنْتِ خَارِجَةَ، وَكَانَتْ فِي حَوَائِطِ الْأَنْصَارِ، وَكَانَ ذَلِكَ رَاحَةَ الْمَوْتِ وَلَا يَشْعُرُ، فَأَذِنَ، ثُمَّ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ، فَأَصْبَحَ، فَجَعَلَ يَرَى النَّاسَ يَتَرَامَوْنَ، فَأَمَرَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ غُلَامًا يَسْتَمِعُ، ثُمَّ يُخْبِرُهُ، فَقَالَ: أَسْمَعُهُمْ يَقُولُونَ: مَاتَ مُحَمَّدٌ، فَاشْتَدَّ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَهُوَ يَقُولُ: وَاقَطْعَ ظَهْرَاهُ، فَمَا بَلَغَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ الْمَسْجِدَ، حَتَّى ظَنُّوا أَنَّهُ لَمْ يَبْلُغْ، وَأَرْجَفَ الْمُنَافِقُونَ، فَقَالُوا: لَوْ كَانَ مُحَمَّدٌ نَبِيًّا لَمْ يَمُتْ، فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: لَا أَسْمَعُ رَجُلًا يَقُولُ: مَاتَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إِلَّا ضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ.
فَكَفُّوا لِذَلِكَ، فَلَمَّا جَاءَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسَجًّى، كَشَفَ الثَّوْبَ عَنْ وَجْهِهِ، ثُمَّ جَعَلَ يَلْثَمُهُ، فَقَالَ: مَا كَانَ اللَّهُ لِيُذِيقَكَ الْمَوْتَ مَرَّتَيْنِ، أَنْتَ أَكْرَمُ عَلَى اللَّهِ مِنْ ذَلِكَ، فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، مَنْ كَانَ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا فَإِنَّ مُحَمَّدًا قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ رَبَّ مُحَمَّدٍ فَإِنَّ رَبَّ مُحَمَّدٍ لَا يَمُوتُ، ثُمَّ قَرَأَ: {وَمَا مُحَمَّدٌ إِلا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ} [آل عمران: 144] .
قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: لَكَأَنَّا لَمْ نَقْرَأْهَا قَبْلَهَا قَطُّ، فَقَالَ النَّاسُ مِثْلَ مَقَالَةِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَقِرَاءَتِهِ.
وَمَاتَ لَيْلَةَ الْإِثْنَيْنِ، فَمَكَثَ لَيْلَتَيْنِ وَيَوْمَيْنِ، وَدُفِنَ يَوْمَ الثُّلَاثَاءِ، فَكَانَ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ وَأَوْسُ بْنُ خَوْلِيٍّ يَصُبَّانِ عَلَيْهِ الْمَاءَ وَعَلِيٌّ وَالْفَضْلُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يُغَسِّلَانِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আঁ হযরত (সা)-এর ইনতিকালের মাধ্যমে নবুওয়তের উজ্জ্বল প্রদীপ চিরতরে অস্ত যাওয়ার ঘটনাটি এমন হৃদয় বিদারক, দুঃখ-বেদনা ও মর্মান্তিক ঘটনা ছিল যে, হযরত উমরের মত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষও এ সময় ধৈর্যধারণ করতে পারেন নি। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এ সময় হযরত আবূ বকর (রা)-কে ধৈর্য ও সহনশীলতা দান করেন এবং তিনি মিম্বরে দাঁড়িয়ে এমন উপদেশ ও শিক্ষনীয় খুতবা প্রদান করেন, যার ফলে লোকজনের ধারণা ঠিক হয়ে যায় এবং বিবেকের আচ্ছন্নতা দূরীভূত হয়। জ্ঞান ও বিবেক ফিরে আসে। স্বয়ং হযরত উমর (রা) বলেন, এ মোহাবিষ্ট ও আচ্ছন্নতার সময় যখন হযরত আবূ বকর (রা) وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ الايه তিলাওয়াত করেন, তখন মনে হয় যে, আমরা এ আয়াত এইমাত্র প্রথম শ্রবণ করলাম।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান