মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
১৭. ক্রয়-বিক্রয়ের বিধান
হাদীস নং: ৩৫০
শুফআর বর্ণনা
হাদীস নং- ৩৫০
হযরত মিসওয়ার ইব্ন মাখরামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত সাআদ (রাযিঃ) স্বীয় ঘর বিক্রির ইচ্ছা করেন। তখন তিনি তাঁর প্রতিবেশী [হযরত আবু রাফে (রাযিঃ)]-কে বললেন, তুমি এটা সাত’শ দিরহাম দিয়ে নিয়ে যাও। অবশ্য আমি এর জন্য আটশ' দিরহাম পেতে পারি। কিন্তু আমি তোমাকে এটা কম মূল্যে (সাতশ' দিরহামে) এজন্য দিচ্ছি, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, প্রতিবেশী তার শুফআর ব্যাপারে বেশী হকদার।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, হযরত মিসওয়ার ইব্ন মাখরামা হযরত রাফে' ইব্ন খাদীজ (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত সাআদ ইব্ন মালিক (রাযিঃ) আমার নিকট তার ঘর বিক্রির কথা পেশ করে বললেন, তুমি এ ঘর নিয়ে যাও, অবশ্য তুমি আমাকে যা দিচ্ছ, এর চেয়ে বেশী মূল্য আমি পেতে পারি কিন্তু তুমি এর বেশী হকদার। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, প্রতিবেশী তার শুফআর ব্যাপারে বেশী অধিকার রাখে।
অপর এক রিওয়ায়েতে আছে, মিসওয়ার আবু রাফে' (রাযিঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি এ ঘর চার’শ দিরহাম নিয়ে নাও। অবশ্য আমি এর পরিবর্তে আটাশ দিরহাম পেতে পারি। কিন্তু আমি তোমাকে ঐ হাদীসের কারণে দিচ্ছি যা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন: প্রতিবেশী শুফআর ব্যাপারে বেশী হকদার। অন্য এক রিওয়ায়েতে হযরত সাআদ ইব্ন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি চারশ' দিরহানে নিজের ঘর তাঁর এক প্রতিবেশীকে দিতে ইচ্ছা করেন। কিন্তু আমি এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, প্রতিবেশী তার শুফআর ব্যাপারে অধিক হকদার।
হযরত মিসওয়ার ইব্ন মাখরামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত সাআদ (রাযিঃ) স্বীয় ঘর বিক্রির ইচ্ছা করেন। তখন তিনি তাঁর প্রতিবেশী [হযরত আবু রাফে (রাযিঃ)]-কে বললেন, তুমি এটা সাত’শ দিরহাম দিয়ে নিয়ে যাও। অবশ্য আমি এর জন্য আটশ' দিরহাম পেতে পারি। কিন্তু আমি তোমাকে এটা কম মূল্যে (সাতশ' দিরহামে) এজন্য দিচ্ছি, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, প্রতিবেশী তার শুফআর ব্যাপারে বেশী হকদার।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, হযরত মিসওয়ার ইব্ন মাখরামা হযরত রাফে' ইব্ন খাদীজ (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত সাআদ ইব্ন মালিক (রাযিঃ) আমার নিকট তার ঘর বিক্রির কথা পেশ করে বললেন, তুমি এ ঘর নিয়ে যাও, অবশ্য তুমি আমাকে যা দিচ্ছ, এর চেয়ে বেশী মূল্য আমি পেতে পারি কিন্তু তুমি এর বেশী হকদার। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, প্রতিবেশী তার শুফআর ব্যাপারে বেশী অধিকার রাখে।
অপর এক রিওয়ায়েতে আছে, মিসওয়ার আবু রাফে' (রাযিঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি এ ঘর চার’শ দিরহাম নিয়ে নাও। অবশ্য আমি এর পরিবর্তে আটাশ দিরহাম পেতে পারি। কিন্তু আমি তোমাকে ঐ হাদীসের কারণে দিচ্ছি যা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন: প্রতিবেশী শুফআর ব্যাপারে বেশী হকদার। অন্য এক রিওয়ায়েতে হযরত সাআদ ইব্ন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি চারশ' দিরহানে নিজের ঘর তাঁর এক প্রতিবেশীকে দিতে ইচ্ছা করেন। কিন্তু আমি এটা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, প্রতিবেশী তার শুফআর ব্যাপারে অধিক হকদার।
عَنْ عَبْدِ الْكَرِيمِ، عَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ، قَالَ: أَرَادَ سَعْدٌ بَيْعَ دَارٍ لَهُ، فَقَالَ لِجَارِهِ: خُذْهَا بِسَبْعِ مِائَةٍ، فَإِنِّي قَدْ أَعْطَيْتُ بِهَا ثَمَانِ مِائَةِ دِرْهَمٍ، وَلَكِنْ أَعْطَيْتُكَهَا، لِأَنِّي سَمِعْتُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَتِهِ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: عَنِ الْمِسْوَرِ، عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ، قَالَ: عَرَضَ عَلَيَّ سَعْدٌ بَيْتًا، فَقَالَ لَهُ: خُذْهُ، أَمَا إِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ بِهِ أَكْثَرَ مِمَّا تُعْطِينِي، وَلَكِنَّكَ أَحَقُّ بِهِ، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَتِهِ» .
وَفِي رِوَايَةٍ: عَنِ الْمِسْوَرِ، عَنْ رَافِعٍ مَوْلَى سَعْدٍ، أَنَّهُ قَالَ لِرَجُلٍ يَعْنِي: سَعْدًا: آخُذُ هَذَا الْبَيْتَ بِأَرْبَعِ مِائَةٍ: فَيَقُولُ: أَمَا إِنِّي أُعْطِيتُ ثَمَانِ مِائَةِ دِرْهَمٍ، وَلَكِنْ أَعْطَيْتُكَهُ، لِحَدِيثٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَتِهِ» .
وَفِي رِوَايَةٍ: عَنْ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّهُ عَرَضَ بَيْتًا لَهُ عَلَى جَارِهِ بِأَرْبَعِ مِائَةٍ، وَقَالَ: وَقَدْ أُعْطِيتُ ثَمَانِ مِائَةٍ، وَلَكِنْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَتِهِ»
وَفِي رِوَايَةٍ: عَنِ الْمِسْوَرِ، عَنْ رَافِعٍ مَوْلَى سَعْدٍ، أَنَّهُ قَالَ لِرَجُلٍ يَعْنِي: سَعْدًا: آخُذُ هَذَا الْبَيْتَ بِأَرْبَعِ مِائَةٍ: فَيَقُولُ: أَمَا إِنِّي أُعْطِيتُ ثَمَانِ مِائَةِ دِرْهَمٍ، وَلَكِنْ أَعْطَيْتُكَهُ، لِحَدِيثٍ سَمِعْتُهُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَتِهِ» .
وَفِي رِوَايَةٍ: عَنْ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّهُ عَرَضَ بَيْتًا لَهُ عَلَى جَارِهِ بِأَرْبَعِ مِائَةٍ، وَقَالَ: وَقَدْ أُعْطِيتُ ثَمَانِ مِائَةٍ، وَلَكِنْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الْجَارُ أَحَقُّ بِشُفْعَتِهِ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কোন কোন বর্ণনায় রাফে' ইব্ন খাদীজা (রা)-কে হযরত সাআদ ইব্ন মালিকের গোলাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যে, তিনি হযরত সাআদের (রা) আযাদকৃত গোলাম ছিলেন। কিন্তু সঠিক হলো এই যে, তিনি আঁ হযরত (সা)-এর গোলাম ছিলেন,হযরত সাআদের নয়। অধিকাংশ রিওয়ায়েতে এটাই বলা হয়েছে। অথবা সাআদের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করে مولى শব্দের অর্থ বন্ধু ও সাহায্যকারীর অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে।
শুফ‘আ (شفعه) সম্পর্কে ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমদ ও ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। মতপার্থক্যের বিষয় হলো এই যে, তিনজন ইমামের মতে শুফ‘আ শরীক তথা অংশীদারদের জন্য, প্রতিবেশীর জন্য নয়। তাঁদের দলীল বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত জাবির (রা)-এর হাদীস :
قضى النبي صلى الله عليه وسلم بالشفعة في كل ما لم يقسم فإذا وقعت الحدود وصرفت الطرق فلا شفعة
“নবী করীম (রা) প্রত্যেক এমন বস্তুতে শুফ‘আর বিধান জারী করেন যা এখনো বন্টন করা হয়নি। অতঃপর যখন সীমানা নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং রাস্তাঘাট পরিবর্তন করে আলাদা করা হয়ে যায়, তখন শুফআ থাকে না।
ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মাযহাবের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে অনেক হাদীস রয়েছে। বর্ণিত হাদীস প্রথম অথবা এরও পরের, যাতে বলা হয়েছেঃ শুফ’আ প্রতিবেশীর জন্য।
দ্বিতীয়ত বুখারী শরীফে বর্ণিত আবূ রাফে (রা)-এর হাদীসে আছেঃ أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول الجار أحق بشفعته "তিনি নবী করীম (সা)-কে বলতে শুনেছেন যে, (নিকটবর্তী হওয়ার কারণে) শুফ’আর অধিক হকদার।
তৃতীয়ত আবদুল মালিক ইব্ন আবী সুলায়মান এবং আতা (র)-এর সূত্রে হযরত জাবির (রা) থেকে তিরমিয়ী ও সিহাহ সিত্তাহর অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হাদীস : الجار أحق بشفعة ينتظر به وإن كان غائبا إذا كان طريقهما واحدا “প্রতিবেশী শুফআর বেশি অধিকার রাখে। যদি সে অনুপস্থিত থাকে, তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটা হবে যখন তার রাস্তা এক হয়।
চতুথর্ত তিরমিযী ও অন্যান্য গ্রন্থে একই বাক্যে বর্ণিত হাদীসঃ جار الدار أحق بالدار ঘরের প্রতিবেশী ঘরের বেশি হকদার।"
পঞ্চমত নাসাঈ শরীফে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত মরফু' হাদীসঃ قضى بالشفعة بالجوار আঁ হযরত (সা) প্রতিবেশীর জন্য শুফআর বিধার জারী করেছেন।”
হানাফী মাযহাবের মত অগ্রহণযোগ্য বলে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতিপক্ষ দুটি পথ অবলম্বন করেছেন। প্রথমত তাদের মতে হানাফী মাযহাবের পক্ষ থেকে পেশকৃত হাদীসঃ " جار " শব্দের অর্থ প্রতিবেশী নয়, বরং শরীক, কোন বাড়ি বা জমির অংশীদার। অথচ جار শব্দের অর্থ প্রতিবেশী, এটা খুবই প্রসিদ্ধ। মূলত প্রতিপক্ষের এরূপ অর্থ গ্রহণ করা অর্থহীন। কেননা এটা প্রথম বাস্তবতা বিরোধী। কেননা এর প্রকৃত অর্থ প্রতিবেশী। যদি ধরে নেয়া হয় এটা রূপক (مجاز) অর্থ হবে, কিন্তু রূপক অর্থের জন্য পূর্বাপর সম্পর্ক ও দলীল থাকতে হবে। এখানে কোন দলীল নেই বরং যে কোন অবস্থায় এটাকেই সবাই বিরাট দলীল হিসেবে জানে। দ্বিতীয়ত অন্যান্য সহীহ রিওয়ায়েতে এ ব্যাখ্যা কঠোরভাবে খন্ডন করে। যেমন নাসাঈ, ইব্ন মাজাহ, ইব্ন আবী শায়বা, আমর ইব্ন শরীফ (র) থেকে রিওয়ায়েত করেন এবং তিনি তার পিতা থেকে, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জমিতে কারো কোন অংশ নেই, কোন শরীক ও নেই, তবে প্রতিবেশী রয়েছে, তখন তিনি বলেন : “প্রতিবেশী অধিক হকদার নিকটবর্তীদের থেকে।" সুতরাং এ হাদীস এ বিষয়ের উপর দলীল হলো যে, শুফআর অধিকার শরীক ও অংশীদার ছাড়া প্রতিবেশী হওয়ার কারণেও লাভ হয়ে থাকে এবং এখানে جار -এর অর্থ শরীক নয়। ইমাম হালওয়ানী (র) অত্যন্ত আশ্চর্য ও আফসোস করে বলেন :
ترك الشافعية العمل بمثل هذا الحديث مع شهرته وصحته وهم سموا أنفسهم بأصحاب الحديث وكيف يراد بالجار الشريك وقد أخرج ابن أبي شيبة الأخر
“এ হাদীস মশহূর ও সহীহ হওয়া সত্ত্বেও শাফিঈগণ এ হাদীসের উপর আমল পরিত্যাগ করেছেন অথচ তারা নিজেদের নাম রেখেছে আসহাবে হাদীস বা আহলে হাদীস হিসেবে এবং جار দ্বারা শরীক অর্থ গ্রহণ করেছেন। বস্তুত ইব্ন আবী শায়বা (র) এ হাদীসটি তৎসংকলিত কিতাবে বর্ণনা করেছেন।”
এ ছাড়া ও নাসাঈ, ইব্ন মাজাহ ও তাহাভী শুরায়ক নামক রাবী থেকে বর্ণনা করেন : أنه صلى الله عليه وسلم قال الجار والشريك أحق بالشفعة ما كان يأخذها ويترك "নবী করীম (সা) বলেছেন, প্রতিবেশী ও অংশীদার শুফআর ব্যাপারে বেশি হকদার, চাই গ্রহণ করুক অথবা পরিত্যাগ করুক।”
এখানে শব্দ شريك কে جار শব্দের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, جار ও شريك একার্থবোধক শব্দ নয়, বরং উভয়ের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন। মোট কথা এ ধরনের সমস্ত রিওয়ায়েত এ কথারই প্রতিধ্বনি করে যে, جار শব্দের ব্যাখ্যা شريك দ্বারা করার কোন অর্থ হয় না।
হানাফী মাযহাবের মতামত খন্ডন করার লক্ষ্যে প্রতিপক্ষ দ্বিতীয় পথ এটা অবলম্বন করেছেন যে, আবদুল মালিক ইব্ন আবী সুলায়মানের সূত্রে হযরত জাবির (রা) বর্ণিত সহীহ হাদীসসমূহকে দুর্বল (ضعيف) প্রমাণ করার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এ চেষ্টা প্রথম পদক্ষেপের চেয়েও অধিক হাস্যকর হয়েছে। তাদের অভ্যাস হলো এই যে, যখন কোন মাযহাবের বর্ণনাকারীকে দুর্বল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছা করেন, তখন কোন সমালোচককে নিয়োগ করে থাকেন এবং ভাবতেও চেষ্টা করেন না যে, এ ব্যক্তি কে, তারা একজন না একাধিক। এরপর তাদের মতামতকে কঠোরভাবে উপেক্ষা করে। যারা বর্ণনাকারী আবদুল মালিকের সমালোচনা করছেন, তারা শুধু সন্দেহ পেয়েছেন এবং দলবদ্ধ হয়ে একজনকে উদ্দেশ্য করে এ মতামত পেশ করেন যে, এ হাদীস দুর্বল (ضعيف)।
তানকীহ গ্রন্থ প্রণেতা স্পষ্ট বলেছেন যে, এ হাদীসের বর্ণনাকারী সন্দেহের কারণে অভিযুক্ত আবদুল মালিকের মধ্যে কোন অনিষ্টতা নেই। কেননা তিনি নির্ভরযোগ্য এবং ফিকহশাস্ত্রে পারদর্শীদের অন্তর্ভুক্ত। এতে কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহের অভিযোগ ছাড়া অন্য বিষয়ে যারা এতে সমালোচনা করেছেন, তারা শুধু সন্দেহের অনুসরণ করেছেন। বাস্তবে তাদের অভ্যাস হলো এই যে, যখন কেউ একজনের সাথে একমত পোষণ করেন, তখন ঐ ব্যক্তি একজন থাকেন না, বরং তা ناس দ্বারা পরিবর্তন হয়ে যায় এবং বলতে থাকেন تكلم فيه الناس "লোকজন এ বিষয়ে সমালোচনা করেছে" এখানে ناس দ্বারা নিজকে বুঝানো হয়েছে। এভাবে লোকজনকে ভীতিগ্রস্থ করে। তাই তানকীহ প্রণেতা এর ব্যাখ্যা করে বলেছেন, মুসলিম শরীফ আবদুল মালিক থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন। ইমাম বুখারী (র), এর থেকে সনদ গ্রহণ করেছেন। মুনযিরী তাঁর মুখতাসারুস সুনানে এ সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন। বায়হাকী বলেন, কেউ শুবাকে বলেন, আপনারা আবদুল মালিকের সূত্রে বর্ণিত হাদীস পরিত্যাগ করেন, কামাল প্রণেতাও ইব্ন মুঈন-এর কথা বর্ণনা করেছেন যে, আবদুল মালিক-এর উপর কথা বলা যায় কিন্তু আবদুল মালিক হলেন নির্ভরযোগ্য (ثقه) ও সত্যবাদী। এরূপ ব্যক্তির মধ্যে কোন অনিষ্টতা আবিষ্কার করা যায় না। ইমাম তিরমিযী (র)-ও তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন। কিন্তু তাদের নীতি হলো এই যে, বর্ণনাকারীর সবচেয়ে দুর্বলতা বিরোধী মাযহাবের রিওয়ায়েত খন্ডন করে দেয়া। কাজেই তাদের এ পদ্ধতিও ফলপ্রসূ হয়নি।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, হানাফী মাযহাবের হানীসসমূহ এর বাহ্যিক অর্থই প্রকাশ করে, কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। অবশ্য ইমামব্রয় হযরত জাবির (রা)-এর যে হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন, এর কয়েকটি জওয়াব দেয়া যায় যা কিয়াসের নিকটবর্তী এবং বিবেকও তা সমর্থন করে। প্রথম একটি বিষয় উল্লেখ করায় দ্বিতীয় বিষয় অস্বীকার করতে হবে কেন? দ্বিতীয় হাদীসে এতটুকু তো আছে। কিন্তু সীমাবদ্ধতার অর্থ প্রকাশ করার মত এখানে কোন শব্দ নেই। তৃতীয় فلا شفعة শব্দ যা প্রকৃত ভুলের কারণ, এরদ্বারা এ অর্থ গ্রহণ করা বিবেক ও কিয়াস বিরোধী। কেননা যখন সীমানা নির্ধারণ হয়ে যায় এবং রাস্তা পরিবর্তন করে দেয়া হয়, অতঃপর কোন প্রকার শুফ'আর অস্তিত্ব থাকে না। এটা কেন অর্থ হবে না যা প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন মানুষ উপলব্ধি করতে পারে এবং যার প্রকৃত অর্থ যে, বর্ণিত অবস্থায় শরীকের জন্য শুফআ নেই। কেননা শরীকের জন্য শুফআ যেমন, প্রতিবেশীর জন্যও তেমন এক বিশেষ গুরুত্ব রাখে যার উদ্দেশ্য ও ধারণা ভিন্ন। সুতরাং শরীকের জন্য তা না হলে প্রতিবেশীর জন্য শুফআ কেন হবে?
শুফ‘আ (شفعه) সম্পর্কে ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমদ ও ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। মতপার্থক্যের বিষয় হলো এই যে, তিনজন ইমামের মতে শুফ‘আ শরীক তথা অংশীদারদের জন্য, প্রতিবেশীর জন্য নয়। তাঁদের দলীল বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত জাবির (রা)-এর হাদীস :
قضى النبي صلى الله عليه وسلم بالشفعة في كل ما لم يقسم فإذا وقعت الحدود وصرفت الطرق فلا شفعة
“নবী করীম (রা) প্রত্যেক এমন বস্তুতে শুফ‘আর বিধান জারী করেন যা এখনো বন্টন করা হয়নি। অতঃপর যখন সীমানা নির্দিষ্ট হয়ে যায় এবং রাস্তাঘাট পরিবর্তন করে আলাদা করা হয়ে যায়, তখন শুফআ থাকে না।
ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মাযহাবের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে অনেক হাদীস রয়েছে। বর্ণিত হাদীস প্রথম অথবা এরও পরের, যাতে বলা হয়েছেঃ শুফ’আ প্রতিবেশীর জন্য।
দ্বিতীয়ত বুখারী শরীফে বর্ণিত আবূ রাফে (রা)-এর হাদীসে আছেঃ أنه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول الجار أحق بشفعته "তিনি নবী করীম (সা)-কে বলতে শুনেছেন যে, (নিকটবর্তী হওয়ার কারণে) শুফ’আর অধিক হকদার।
তৃতীয়ত আবদুল মালিক ইব্ন আবী সুলায়মান এবং আতা (র)-এর সূত্রে হযরত জাবির (রা) থেকে তিরমিয়ী ও সিহাহ সিত্তাহর অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হাদীস : الجار أحق بشفعة ينتظر به وإن كان غائبا إذا كان طريقهما واحدا “প্রতিবেশী শুফআর বেশি অধিকার রাখে। যদি সে অনুপস্থিত থাকে, তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এটা হবে যখন তার রাস্তা এক হয়।
চতুথর্ত তিরমিযী ও অন্যান্য গ্রন্থে একই বাক্যে বর্ণিত হাদীসঃ جار الدار أحق بالدار ঘরের প্রতিবেশী ঘরের বেশি হকদার।"
পঞ্চমত নাসাঈ শরীফে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত মরফু' হাদীসঃ قضى بالشفعة بالجوار আঁ হযরত (সা) প্রতিবেশীর জন্য শুফআর বিধার জারী করেছেন।”
হানাফী মাযহাবের মত অগ্রহণযোগ্য বলে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতিপক্ষ দুটি পথ অবলম্বন করেছেন। প্রথমত তাদের মতে হানাফী মাযহাবের পক্ষ থেকে পেশকৃত হাদীসঃ " جار " শব্দের অর্থ প্রতিবেশী নয়, বরং শরীক, কোন বাড়ি বা জমির অংশীদার। অথচ جار শব্দের অর্থ প্রতিবেশী, এটা খুবই প্রসিদ্ধ। মূলত প্রতিপক্ষের এরূপ অর্থ গ্রহণ করা অর্থহীন। কেননা এটা প্রথম বাস্তবতা বিরোধী। কেননা এর প্রকৃত অর্থ প্রতিবেশী। যদি ধরে নেয়া হয় এটা রূপক (مجاز) অর্থ হবে, কিন্তু রূপক অর্থের জন্য পূর্বাপর সম্পর্ক ও দলীল থাকতে হবে। এখানে কোন দলীল নেই বরং যে কোন অবস্থায় এটাকেই সবাই বিরাট দলীল হিসেবে জানে। দ্বিতীয়ত অন্যান্য সহীহ রিওয়ায়েতে এ ব্যাখ্যা কঠোরভাবে খন্ডন করে। যেমন নাসাঈ, ইব্ন মাজাহ, ইব্ন আবী শায়বা, আমর ইব্ন শরীফ (র) থেকে রিওয়ায়েত করেন এবং তিনি তার পিতা থেকে, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জমিতে কারো কোন অংশ নেই, কোন শরীক ও নেই, তবে প্রতিবেশী রয়েছে, তখন তিনি বলেন : “প্রতিবেশী অধিক হকদার নিকটবর্তীদের থেকে।" সুতরাং এ হাদীস এ বিষয়ের উপর দলীল হলো যে, শুফআর অধিকার শরীক ও অংশীদার ছাড়া প্রতিবেশী হওয়ার কারণেও লাভ হয়ে থাকে এবং এখানে جار -এর অর্থ শরীক নয়। ইমাম হালওয়ানী (র) অত্যন্ত আশ্চর্য ও আফসোস করে বলেন :
ترك الشافعية العمل بمثل هذا الحديث مع شهرته وصحته وهم سموا أنفسهم بأصحاب الحديث وكيف يراد بالجار الشريك وقد أخرج ابن أبي شيبة الأخر
“এ হাদীস মশহূর ও সহীহ হওয়া সত্ত্বেও শাফিঈগণ এ হাদীসের উপর আমল পরিত্যাগ করেছেন অথচ তারা নিজেদের নাম রেখেছে আসহাবে হাদীস বা আহলে হাদীস হিসেবে এবং جار দ্বারা শরীক অর্থ গ্রহণ করেছেন। বস্তুত ইব্ন আবী শায়বা (র) এ হাদীসটি তৎসংকলিত কিতাবে বর্ণনা করেছেন।”
এ ছাড়া ও নাসাঈ, ইব্ন মাজাহ ও তাহাভী শুরায়ক নামক রাবী থেকে বর্ণনা করেন : أنه صلى الله عليه وسلم قال الجار والشريك أحق بالشفعة ما كان يأخذها ويترك "নবী করীম (সা) বলেছেন, প্রতিবেশী ও অংশীদার শুফআর ব্যাপারে বেশি হকদার, চাই গ্রহণ করুক অথবা পরিত্যাগ করুক।”
এখানে শব্দ شريك কে جار শব্দের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, جار ও شريك একার্থবোধক শব্দ নয়, বরং উভয়ের অর্থ ভিন্ন ভিন্ন। মোট কথা এ ধরনের সমস্ত রিওয়ায়েত এ কথারই প্রতিধ্বনি করে যে, جار শব্দের ব্যাখ্যা شريك দ্বারা করার কোন অর্থ হয় না।
হানাফী মাযহাবের মতামত খন্ডন করার লক্ষ্যে প্রতিপক্ষ দ্বিতীয় পথ এটা অবলম্বন করেছেন যে, আবদুল মালিক ইব্ন আবী সুলায়মানের সূত্রে হযরত জাবির (রা) বর্ণিত সহীহ হাদীসসমূহকে দুর্বল (ضعيف) প্রমাণ করার জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এ চেষ্টা প্রথম পদক্ষেপের চেয়েও অধিক হাস্যকর হয়েছে। তাদের অভ্যাস হলো এই যে, যখন কোন মাযহাবের বর্ণনাকারীকে দুর্বল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছা করেন, তখন কোন সমালোচককে নিয়োগ করে থাকেন এবং ভাবতেও চেষ্টা করেন না যে, এ ব্যক্তি কে, তারা একজন না একাধিক। এরপর তাদের মতামতকে কঠোরভাবে উপেক্ষা করে। যারা বর্ণনাকারী আবদুল মালিকের সমালোচনা করছেন, তারা শুধু সন্দেহ পেয়েছেন এবং দলবদ্ধ হয়ে একজনকে উদ্দেশ্য করে এ মতামত পেশ করেন যে, এ হাদীস দুর্বল (ضعيف)।
তানকীহ গ্রন্থ প্রণেতা স্পষ্ট বলেছেন যে, এ হাদীসের বর্ণনাকারী সন্দেহের কারণে অভিযুক্ত আবদুল মালিকের মধ্যে কোন অনিষ্টতা নেই। কেননা তিনি নির্ভরযোগ্য এবং ফিকহশাস্ত্রে পারদর্শীদের অন্তর্ভুক্ত। এতে কোন সন্দেহ নেই। সন্দেহের অভিযোগ ছাড়া অন্য বিষয়ে যারা এতে সমালোচনা করেছেন, তারা শুধু সন্দেহের অনুসরণ করেছেন। বাস্তবে তাদের অভ্যাস হলো এই যে, যখন কেউ একজনের সাথে একমত পোষণ করেন, তখন ঐ ব্যক্তি একজন থাকেন না, বরং তা ناس দ্বারা পরিবর্তন হয়ে যায় এবং বলতে থাকেন تكلم فيه الناس "লোকজন এ বিষয়ে সমালোচনা করেছে" এখানে ناس দ্বারা নিজকে বুঝানো হয়েছে। এভাবে লোকজনকে ভীতিগ্রস্থ করে। তাই তানকীহ প্রণেতা এর ব্যাখ্যা করে বলেছেন, মুসলিম শরীফ আবদুল মালিক থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন। ইমাম বুখারী (র), এর থেকে সনদ গ্রহণ করেছেন। মুনযিরী তাঁর মুখতাসারুস সুনানে এ সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন। বায়হাকী বলেন, কেউ শুবাকে বলেন, আপনারা আবদুল মালিকের সূত্রে বর্ণিত হাদীস পরিত্যাগ করেন, কামাল প্রণেতাও ইব্ন মুঈন-এর কথা বর্ণনা করেছেন যে, আবদুল মালিক-এর উপর কথা বলা যায় কিন্তু আবদুল মালিক হলেন নির্ভরযোগ্য (ثقه) ও সত্যবাদী। এরূপ ব্যক্তির মধ্যে কোন অনিষ্টতা আবিষ্কার করা যায় না। ইমাম তিরমিযী (র)-ও তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন। কিন্তু তাদের নীতি হলো এই যে, বর্ণনাকারীর সবচেয়ে দুর্বলতা বিরোধী মাযহাবের রিওয়ায়েত খন্ডন করে দেয়া। কাজেই তাদের এ পদ্ধতিও ফলপ্রসূ হয়নি।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, হানাফী মাযহাবের হানীসসমূহ এর বাহ্যিক অর্থই প্রকাশ করে, কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। অবশ্য ইমামব্রয় হযরত জাবির (রা)-এর যে হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেন, এর কয়েকটি জওয়াব দেয়া যায় যা কিয়াসের নিকটবর্তী এবং বিবেকও তা সমর্থন করে। প্রথম একটি বিষয় উল্লেখ করায় দ্বিতীয় বিষয় অস্বীকার করতে হবে কেন? দ্বিতীয় হাদীসে এতটুকু তো আছে। কিন্তু সীমাবদ্ধতার অর্থ প্রকাশ করার মত এখানে কোন শব্দ নেই। তৃতীয় فلا شفعة শব্দ যা প্রকৃত ভুলের কারণ, এরদ্বারা এ অর্থ গ্রহণ করা বিবেক ও কিয়াস বিরোধী। কেননা যখন সীমানা নির্ধারণ হয়ে যায় এবং রাস্তা পরিবর্তন করে দেয়া হয়, অতঃপর কোন প্রকার শুফ'আর অস্তিত্ব থাকে না। এটা কেন অর্থ হবে না যা প্রত্যেক বিবেকসম্পন্ন মানুষ উপলব্ধি করতে পারে এবং যার প্রকৃত অর্থ যে, বর্ণিত অবস্থায় শরীকের জন্য শুফআ নেই। কেননা শরীকের জন্য শুফআ যেমন, প্রতিবেশীর জন্যও তেমন এক বিশেষ গুরুত্ব রাখে যার উদ্দেশ্য ও ধারণা ভিন্ন। সুতরাং শরীকের জন্য তা না হলে প্রতিবেশীর জন্য শুফআ কেন হবে?


বর্ণনাকারী: