মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১৭. ক্রয়-বিক্রয়ের বিধান

হাদীস নং: ৩৪৮
বন্ধকের বিবরণ
হাদীস নং- ৩৪৮

হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক ইয়াহুদীর নিকট থেকে খাদ্য ক্রয় করেন এবং তার নিকট লৌহ বর্ম বন্ধক রাখেন।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: «أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اشْتَرَى مِنَ الْيَهُودِيِّ طَعَامًا، وَرَهَنَهُ دِرْعًا»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আঁ হযরত (সা)-এর এ বদ্ধককৃত বর্ম ছিল লৌহ নির্মিত এবং তিনি এটা ত্রিশ সা (صاع) মূল্য দিয়ে ক্রয় করেছেন। অধিকাংশ বর্ণনার দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয় যে, হুযূর (সা)-এর ইনতিকাল পর্যন্ত বর্মটি বন্ধক ছিল। ইবনুল মাতলা' বলেন, তাঁর ইনতিকালের পর হযরত আবূ বকর (রা) বন্ধক থেকে এটি ছাড়িয়ে আনেন। এ হাদীস থেকে বন্ধকের কয়েকটি প্রয়োজনীয় মাসয়ালা বের হয়ে থাকে।
প্রথমত, হাদীসের দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয় যে,ইয়াহুদী অথবা অন্যান্য যিম্মীদের সাথে মুসলমান লেনদেন ও ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করতে পারে। যদিও ইয়াহুদী সুদ গ্রহণ করে থাকে। পবিত্র কুরআনেও এ সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে। মূলত শরীয়তে মুসলমানদের তাদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন করা বৈধ রেখেছে।
দ্বিতীয়ত, যদি কারো অধিকাংশ মাল হারাম হয়, তবে তার থেকেও কোন দ্রব্য নেয়া যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এটা অবগত হওয়া না যায় যে, যে দ্রব্য তার থেকে নেয়া হয়েছে, তা হারাম পদ্ধতিতে অর্জন করা হয়েছে।
তৃতীয় হলো, সফরেও বন্ধক রাখা যায়। যদিও কুরআন করীমে সফরের প্রেক্ষাপটে এর উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা এখানে সফরের কথা ঘটনাক্রমে এসেছে। এখানে এ মাসয়ালার বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। বন্ধকী দ্রব্য থেকে ঋণদাতা বা বন্ধক গ্রহণকারী উপকার লাভ করার অধিকার রাখে না। কেননা উক্ত দ্রব্যের মূল্য তার পক্ষ থেকে এক প্রকার ঋণ যা বদ্ধক প্রদানকারীর উপর আদায় করা ওয়াজিব। যদি সে বন্ধকী দ্রব্য থেকে উপকারিতা লাভ করে, তা হলে ঋণের উপর কোন বিনিময় ব্যতীত উপরকার লাভ হলো। এটা সুস্পষ্টভাবে সুদ ও হারাম। বন্ধকী দ্রব্য শুধু বন্ধকগ্রহীতার সান্ত্বনা ও ভরসার জন্য রাখা হয়, কিন্তু তার ফায়দা হাসিলের জন্য নয়। কেননা বন্ধকী দ্রব্য থেকে বন্ধক প্রদানকারীর মালিকানা বাতিল হয় না। তাই এর লাভও তারই হবে এবং তার ক্ষতিপূরণও তার যিম্মায় থাকবে, বন্ধক গ্রহণকারীর যিম্মায় নয়। সুতরাং এরপর বন্ধকী দ্রব্য থেকে বন্ধক গ্রহণকারী কিভাবে ফায়দা হাসিল করবে?
ইমাম শাফিঈ (র) সাঈদ ইব্ন মুসায়্যিব (রা) থেকে মুরসাল হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, আঁ হযরত (সা) বলেছেনঃ لايعلق الرهن الرهن من صاحبه الذي رهنه وله غنمه وعليه غرمه - “কোন বস্তু বন্ধক রাখার দ্বারা তা বন্ধক প্রদানকারী ব্যক্তির মালিকানা থেকে বের হয়ে যায় না। যে ব্যক্তি বন্ধক রাখে, তার জন্যই এর লাভ থাকবে এবং তার উপরই এর ক্ষতিপূরণ থাকবে।” তৎপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের মতে এ হাদীস রহিত হয়ে গিয়েছে যা তিরমিযীতে হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে মরফূ' বর্ণিত আছেঃ
الظهر يركب إذا كان مرهونا ولبن الدر يشرب إذا كان مرهونا . وعلى الذي يركب ويشرب نفقته
“যখন আরোহণের জন্তু বন্ধকী হয়, তখন আরোহী এর ব্যবহার করবে এবং দুগ্ধবতী জন্তুর দুধও পান করবে যখন তা বন্ধকী হয় এবং যে আরোহণের জন্তু নেবে ও দুধপান করবে, তার উপর এর পানাহারের দায়িত্ব থাকবে।”
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৩৪৮ | মুসলিম বাংলা