মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
১৬. জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং: ৩১৯
সেনাবাহিনী প্রেরণের সময় যে ওসীয়ত করা হয়, এর বর্ণনা
হাদীস নং-৩১৯
হযরত বুরায়দা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোন বিরাট সেনাবাহিনী অথবা ক্ষুদ্র বাহিনী কোথাও যুদ্ধের জন্য প্রেরণ করতেন, তখন ঐ বাহিনীর (সেনাপতিকে) বিশেষ করে স্বীয় অন্তরে আল্লাহকে ভয় করার জন্য ওসীয়ত করতেন এবং মুসলিম বাহিনীকে (অন্যের (প্রতি) কল্যাণ ও দয়া প্রদর্শনের জন্য ওসীয়ত করতেন। অতঃপর বলতেন? আল্লাহর নামে তাঁর সাহায্য কামনা করে এবং তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জিহাদ কর। যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে, তাদের সাথে যুদ্ধ কর। গনীমতের মালে খিয়ানত করো না। কোন নিহত ব্যক্তির নাক ও কান কর্তন কর না। কোন শিশু বা অতিবৃদ্ধ ব্যক্তিকে হত্যা কর না। যখন তোমরা তোমানের শত্রুর সম্মুখীন হও, তখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত নিবে। যদি তারা ইসলাম গ্রহণে অস্বীকার করে, তবে তাদেরকে জিযিয়া প্রদানে উদ্বুদ্ধ করবে। যদি এটাও অস্বীকার করে, তাহলে তাদের সাথে জিহা কর। যখন তোমরা কোন পূর্ণ অবরোধ করবে এবং তারা তোমাদের নিকট ইচ্ছা পোষণ করে যে, তোমরা আল্লাহর নির্দেশে অবতরণ কর, তাহলে এরূপ করবে না। কেননা তোমরা জান না আল্লাহর নির্দেশ কি। বরং তোমরা তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি অনুসারে তাদের নিকট নেমে আসবে। যদি তারা তোমাদের নিকট এটা ইচ্ছা পোষণ করে যে, তোমরা তাদেরকে আল্লাহর নিরাপত্তা দান করবে এবং তাঁর অঙ্গীকার ও যিম্মায় নিয়ে নেবে, তা হলে তোমরা তাদেরকে তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের যিম্মায় নিয়ে নাও। কেননা তোমাদের স্বীয় যিম্মা ত্যাগ বা ভঙ্গ করা তোমাদের উপর অনেক বেশী সহজ, বিপরীতে আল্লাহর যিম্মা ত্যাগ করা থেকে।
অপর এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, যদি তারা তোমাদের নিকট এটা চায় যে, তোমরা তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মায় ছেড়ে দেবে, তাহলে তোমরা তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মায় ছেড়ে দেবে না। কেননা তোমাদের নিজ পূর্ব পুরুষদের যিম্মা ত্যাগ করা অধিকতর সহজ।
হযরত বুরায়দা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন কোন বিরাট সেনাবাহিনী অথবা ক্ষুদ্র বাহিনী কোথাও যুদ্ধের জন্য প্রেরণ করতেন, তখন ঐ বাহিনীর (সেনাপতিকে) বিশেষ করে স্বীয় অন্তরে আল্লাহকে ভয় করার জন্য ওসীয়ত করতেন এবং মুসলিম বাহিনীকে (অন্যের (প্রতি) কল্যাণ ও দয়া প্রদর্শনের জন্য ওসীয়ত করতেন। অতঃপর বলতেন? আল্লাহর নামে তাঁর সাহায্য কামনা করে এবং তাঁরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জিহাদ কর। যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে, তাদের সাথে যুদ্ধ কর। গনীমতের মালে খিয়ানত করো না। কোন নিহত ব্যক্তির নাক ও কান কর্তন কর না। কোন শিশু বা অতিবৃদ্ধ ব্যক্তিকে হত্যা কর না। যখন তোমরা তোমানের শত্রুর সম্মুখীন হও, তখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত নিবে। যদি তারা ইসলাম গ্রহণে অস্বীকার করে, তবে তাদেরকে জিযিয়া প্রদানে উদ্বুদ্ধ করবে। যদি এটাও অস্বীকার করে, তাহলে তাদের সাথে জিহা কর। যখন তোমরা কোন পূর্ণ অবরোধ করবে এবং তারা তোমাদের নিকট ইচ্ছা পোষণ করে যে, তোমরা আল্লাহর নির্দেশে অবতরণ কর, তাহলে এরূপ করবে না। কেননা তোমরা জান না আল্লাহর নির্দেশ কি। বরং তোমরা তোমাদের বিবেক-বুদ্ধি অনুসারে তাদের নিকট নেমে আসবে। যদি তারা তোমাদের নিকট এটা ইচ্ছা পোষণ করে যে, তোমরা তাদেরকে আল্লাহর নিরাপত্তা দান করবে এবং তাঁর অঙ্গীকার ও যিম্মায় নিয়ে নেবে, তা হলে তোমরা তাদেরকে তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের যিম্মায় নিয়ে নাও। কেননা তোমাদের স্বীয় যিম্মা ত্যাগ বা ভঙ্গ করা তোমাদের উপর অনেক বেশী সহজ, বিপরীতে আল্লাহর যিম্মা ত্যাগ করা থেকে।
অপর এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, যদি তারা তোমাদের নিকট এটা চায় যে, তোমরা তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মায় ছেড়ে দেবে, তাহলে তোমরা তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যিম্মায় ছেড়ে দেবে না। কেননা তোমাদের নিজ পূর্ব পুরুষদের যিম্মা ত্যাগ করা অধিকতর সহজ।
عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذَا بَعَثَ جَيْشًا أَوْ سَرِيَّةً أَوْصَى أَمِيرَهُ فِي خَاصَّةِ نَفْسِهِ بِتَقْوَى اللَّهِ تَعَالَى، وَأَوْصَى فِيمَنْ مَعَهُ مِنَ الْمُسْلِمِينَ خَيْرًا، ثُمَّ قَالَ: «اغْزُوا بِسْمِ اللَّهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، قَاتِلُوا مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ، لَا تَغْلُوا، وَلَا تَغْدِرُوا، وَلَا تُمَثِّلُوا، وَلَا تَقْتُلُوا وَلِيدًا وَلَا شَيْخًا كَبِيرًا، فَإِذَا لَقِيتُمْ عَدُوَّكُمْ، فَادْعُوهُمْ إِلَى الْإِسْلَامِ، فَإِنْ أَبَوْا فَادْعُوهُمْ إِلَى إِعْطَاءِ الْجِزْيَةِ؛ فَإِنْ أَبَوْا فَقَاتِلُوهُمْ، فَإِذَا حَاصَرْتُمْ أَهْلَ الْحِصْنِ، فَأَرَادُوكُمْ أَنْ تَنْزِلُوا عَلَى حُكْمِ اللَّهِ تَعَالَى فَلَا تَفْعَلُوا، فَإِنَّكُمْ لَا تَدْرُونَ مَا حُكْمُ اللَّهِ، وَلَكِنْ أَنْزِلُوهُمْ عَلَى حُكْمِكُمْ، ثُمَّ احْكُمُوا فِيهِمْ مَا بَدَا لَكُمْ، فَإِنْ أَرَادُوكُمْ أَنْ تُعْطُوهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ فَأَعْطُوهُمْ ذِمَمَكُمْ وَذِمَمَ آبَائِكُمْ، فَإِنَّكُمْ إِنْ تُخْفِرُوا بِدِينِكُمْ أَهْوَنُ مِنْ أَنْ تُخْفِرُوا بِذِمَّةِ اللَّهِ فِي رَقَبَتِكُمْ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: «فَإِنْ أَرَادُوكُمْ أَنْ تَقْطَعُوهُمْ ذِمَّةَ اللَّهِ وَذِمَّةَ رَسُولِهِ فَلَا تَقْطَعُوهُمْ، وَلَكِنْ أَعْطُوهُمْ ذِمَمَكُمْ وَذِمَمَ آبَائِكُمْ، فَإِنَّكُمْ أَنْ تُخْفِرُوا ذِمَمَكُمْ وَذِمَمَ آبَائِكُمْ أَيْسَرُ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীস যুদ্ধের মূলনীতি ও আইন-কানুনের উৎস। এতে সর্বাগ্রে আল্লাহর ভয়কে প্রাধান্য দেয়ার জন্য সেনাপতির প্রতি দিক-নির্দেশনা রয়েছে। কেননা এরদ্বারা সমস্ত কর্মকান্ডের মূল শক্ত, অটল ও বিশুদ্ধ হয়ে থাকে। আল্লাহভীতি মানুষকে সমস্ত পাপ ও অন্যায় পথ থেকে বিরত রাখে।
দ্বিতীয়ত সৈন্যবাহিনীর সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ এবং তাদের প্রতি কল্যাণ প্রদর্শনের জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কেননা সেনাপতির উত্তম ও সুন্দর আচরণ সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার নির্দেশ পালনকে নিজের জন্য গৌরবজনক মনে করে।
তৃতীয়ত, নির্দেশ এই যে, আল্লাহর নামে যুদ্ধ শুরু কর, এতে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে অগ্রাধিকার প্রদান কর এবং লোক দেখানো ও আত্মপ্রচারের বিন্দুমাত্র কামনা করো না। কেননা আমল যতবেশি হোক না কেন, আল্লাহর দরবারে নিয়্যতের পবিত্রতা ও আন্তরিকতা ব্যতীত তা অকার্যকর হবে। বরং শাস্তির কারণ ও নিন্দনীয় হবে।
চতুর্থত, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের জন্য এ উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, গনীমতের মাল চুরি করো না। কেননা এটা অত্যন্ত বড় পাপ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে খিয়ানতের অন্তর্ভুক্ত। কদর্য ও নোংরা কাজের অঙ্গীকার পুরণ করো না, কেননা এটা হীনমন্যতা ও দুশ্চরিত্রের লক্ষণ। নিহত ব্যক্তির নাক-কান কর্তন করো না। কেননা এটা অত্যন্ত হিংস্রতা ও বর্বরতার কাজ। শিশু ও বৃদ্ধকে হত্যা করো না। কেননা এটা খোদদ্রোহী, অন্যায় ও অত্যন্ত নিষ্ঠুর কাজ।
পঞ্চমত, এতে ওসীয়ত করা হয়েছে যে, যখন শত্রুর সম্মুখীন হবে, তখন প্রথম তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেবে। যদি তারা এটা গ্রহণ না করে, তা হলে তাদেরকে জিযিয়া প্রদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। যেন তারা ইসলামের আওতায় যিম্মী হিসেবে থাকে। যদি এতেও তারা সম্মত না হয়, তা হলে যুদ্ধ করবে।
ষষ্ঠত, এ নির্দেশ প্রদান করা হয় যে, যদি শত্রু দূর্বল হয়ে পড়ে এবং তোমাদের কাছে নিরাপত্তা কামনা করে, তা হলে তাদেরকে তোমাদের যিম্মাদারীর মধ্যে নিয়ে নাও; আল্লাহ ও রাসুলের যিম্মাদারীতে নয়।
দ্বিতীয়ত সৈন্যবাহিনীর সাথে উত্তম আচরণের নির্দেশ এবং তাদের প্রতি কল্যাণ প্রদর্শনের জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কেননা সেনাপতির উত্তম ও সুন্দর আচরণ সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার নির্দেশ পালনকে নিজের জন্য গৌরবজনক মনে করে।
তৃতীয়ত, নির্দেশ এই যে, আল্লাহর নামে যুদ্ধ শুরু কর, এতে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকে অগ্রাধিকার প্রদান কর এবং লোক দেখানো ও আত্মপ্রচারের বিন্দুমাত্র কামনা করো না। কেননা আমল যতবেশি হোক না কেন, আল্লাহর দরবারে নিয়্যতের পবিত্রতা ও আন্তরিকতা ব্যতীত তা অকার্যকর হবে। বরং শাস্তির কারণ ও নিন্দনীয় হবে।
চতুর্থত, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের জন্য এ উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, গনীমতের মাল চুরি করো না। কেননা এটা অত্যন্ত বড় পাপ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে খিয়ানতের অন্তর্ভুক্ত। কদর্য ও নোংরা কাজের অঙ্গীকার পুরণ করো না, কেননা এটা হীনমন্যতা ও দুশ্চরিত্রের লক্ষণ। নিহত ব্যক্তির নাক-কান কর্তন করো না। কেননা এটা অত্যন্ত হিংস্রতা ও বর্বরতার কাজ। শিশু ও বৃদ্ধকে হত্যা করো না। কেননা এটা খোদদ্রোহী, অন্যায় ও অত্যন্ত নিষ্ঠুর কাজ।
পঞ্চমত, এতে ওসীয়ত করা হয়েছে যে, যখন শত্রুর সম্মুখীন হবে, তখন প্রথম তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেবে। যদি তারা এটা গ্রহণ না করে, তা হলে তাদেরকে জিযিয়া প্রদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। যেন তারা ইসলামের আওতায় যিম্মী হিসেবে থাকে। যদি এতেও তারা সম্মত না হয়, তা হলে যুদ্ধ করবে।
ষষ্ঠত, এ নির্দেশ প্রদান করা হয় যে, যদি শত্রু দূর্বল হয়ে পড়ে এবং তোমাদের কাছে নিরাপত্তা কামনা করে, তা হলে তাদেরকে তোমাদের যিম্মাদারীর মধ্যে নিয়ে নাও; আল্লাহ ও রাসুলের যিম্মাদারীতে নয়।


বর্ণনাকারী: