মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১৪. শপথ করার বর্ণনা

হাদীস নং: ৩০৮
অর্থহীন কসমের বর্ণনা
হাদীস নং- ৩০৮

হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেন, পবিত্র কুরআনের আয়াত : لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ (আল্লাহ্ তোমাদেরকে অর্থহীন কসমের জন্য দায়ী করবেন না) এর ব্যাখ্যায় শুনেছি, يمين اللغو বা নিরর্থক কসমের অর্থ মানুষের এ কথা যেমন لا والله وبلى والله অর্থাৎ না, আল্লাহর কসম এবং হ্যাঁ, আল্লাহর কসম।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: سَمِعْتُ فِي قَوْلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ: " {لا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ} [البقرة: 225] هُوَ قَوْلُ الرَّجُلِ: لَا وَاللَّهِ، وَبَلَى وَاللَّهِ "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বর্ণিত হাদীসে মুলত لغو قسم বা নিরর্থক কসম ও শপথের মাসয়ালা বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমত কসমও তিন প্রকার :
প্রথম হলোঃ-- ইয়ামীন গমুস (يمين غموس) : ইয়ামীনে গমুস হলো এই যে, অতীতের কোন বিষয়ের উপর শপথ (قسم) করা। এরদ্বারা মানুষ পাপী হয়ে থাকে এবং শরীয়তে এরজন্য কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আঁ হয়রত (সা) বলেছেন: যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করবে, আল্লাহ তাকে দোযখে প্রবেশ করাবেন। এর প্রতিকার বা সংশোধনের উপায় হলো তওবা ও ইসতিগফার। হানাফী মাযহাবমতে এতে কাফফারা নেই। শাফিঈ মাযহাব অনুযায়ী এতে কাফফারা রয়েছে।
দ্বিতীয় হলোঃ-- ইয়ামীনে মুনআকিদা (يمين منعقده) : ইয়ামীনে মুনআকিদা হলো এই যে, ভবিষ্যতে কোন কাজ করবে বা করবে না, এ বিষয়ে কোন ব্যক্তির শপথ করা। এতে শপথ ভঙ্গ করা হলে কাফফারা ওয়াজিব হবে। কেননা আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন। وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُمُ الْأَيْمَانَ (কিন্তু যে সব শপথ তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কর, সে সবের জন্য তিনি তোমাদেরকে দায়ী করবেন)। (৫ঃ৮৯)
তৃতীয় হলোঃ-- ইয়ামীনে লাগব (يمين لغو) : এর ব্যাখ্যায় সাহাবায়ে কিরাম ও এর পরবর্তীগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেছেন।ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে يمين لغو হলো এই যে, মানুষ না বুঝে কোন চিন্তা ছাড়াই মুখে কসমের বাক্য উচ্চারণ করে। কথায় কথায় এরূপ শপথ বাক্য উচ্চারণ করা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে يمين لغو হলো এই যে, কোন অতীত কাজ বা কথার উপর কসম করা, যেন সে তার ভুল বুঝতে সক্ষম হয়েছে। মোট কথা সে তার জ্ঞান অনুযায়ী সঠিকভাবে কসম করেছে। যেমন কোন একটি কথার ব্যাপারে তার বিশ্বাস রয়েছে যে, আমি বলেছি এবং সে তার বলার উপরই কসম করে। কিন্তু পরে চিন্তা করে যে, সে এটা বলেনি বা করেনি অথবা এর বিপরীত করেছে। অথবা যেমন দূর থেকে এক ব্যক্তিকে দেখে বলল, আল্লাহর কসম, এ ব্যক্তি হলো যায়দ, কিন্তু পরে দেখা গেল সে যায়দ নয়, বরং উমর। এতে কোন কাফ্ফারা নেই। হযরত ইব্ন আব্বাস (রা) মুজাহিদ, হাসান, ইবরাহীম, নাসাঈ, কাতাদা, মাকহুল (র) ও অন্যান্যগণ لغو কসমের এ ব্যাখ্যা করেছেন।
হযরত আলী (রা)-এর মতে لغو হলো ঐ কসম যা ক্রোধের সময় বলা হয়। সাঈদ ইব্ন যুবায়র (রা)-এর মতে ঐ কসমকে বলা হয় যা বিপদের সময় করা হয়। উপরে মাসয়ালা সম্পর্কে একটি সাধারণ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এবার বর্ণিত হাদীসের ব্যাপারে মীমাংসা হলো এই যে, এ হাদীস বাহ্যিক দৃষ্টিতে শাফিঈ মাযহাবের সমর্থন করে থাকে, হানাফী মাযহাবের নয়। ইমাম মুহাম্মদ (র) স্বীয় হাদীস গ্রন্থ মুয়াত্তায় এ সমস্যাকে হাদীসের বাহ্যিক দৃষ্টিতে শাফিঈ মাযহাবের স্বপক্ষে মানা সত্ত্বেও বলেছেন, যদি মানুষ মুখে এ বাক্য (কসম) বলে থাকে এবং দৃঢ়ভাবে এটা তার বিশ্বাস হয় যে, আমিই সঠিক কিন্তু এরপর ঘটনা বিপরীত প্রমাণিত হয় এবং তার বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হয় (তবে এতে কাফফারা হবে না)। কেননা হানাফী মাযহাব মতে ইচ্ছা (لغو يمين (قصد এর মধ্যে গণ্য, কিন্তু শাফিঈ মাযহাবে গণ্য নয়। অতঃপর এটাও লক্ষণীয় বিষয় যে, ইমাম আবূ হানীফা থেকে দুর্বল (ضعيف) সূত্রে এ হাদীস বর্ণিত। মোট কথা ইমাম আবূ হানীফার প্রসিদ্ধ মাযহাব স্বীয় স্থানে সহীহ মানতে হবে।
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ৩০৮ | মুসলিম বাংলা