মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১৪. শপথ করার বর্ণনা

হাদীস নং: ৩০৭
পাপের কাজে মান্নত করা এবং এতে যে কাফফারা ওয়াজিব হয় তা পূর্ণ না করার বর্ণনা
হাদীস নং- ৩০৭

হযরত ইমরান ইব্ন হুসাইন (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন: আল্লাহ্ তা'আলার নাফরমানীর কাজে মান্নত করা হলে তা পূরণ করতে হবে না এবং এর কাফফারা অঙ্গীকার বা কসমের কাফফারার অনুরূপ।
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ، وَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِينٍ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বর্ণিত হাদীসের কাফফারা সংক্রান্ত বিষয়ে ইমামগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম শাফিঈ ও ইমাম মালিক (র)-এর মতে পাপের কাজে মান্নত করা হলে কোন কাফফারা দিতে হবে না। কেননা পাপের কাজে মান্নত নিরর্থক ও বাতিল। সুতরাং এতে কাফফারার কোন প্রয়োজন নেই। হাদীসের অধ্যায়ে তাঁরা ঐ সমস্ত হাদীস উল্লেখ করে থাকেন যেগুলোতে কাফফারার কথা নেই । অথবা শুধু এ বাক্য উল্লেখ করেন। لا وفاء لنذر في معصية (পাপের কাজে মান্নত পূর্ণ করার প্রয়োজন নেই)। অথবা لا نذر في معصية الله (আল্লাহর নাফরমানীর কাজে মান্নত পূর্ণ করতে হবে না)। ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম আহমদ ও ইমাম ইসহাক (র)-এর মতে নাফরমানীর কাজে মান্নতের কাফফারা শপথ বা কসমের কাফফারার মত আদায় করতে হবে। তাঁদের দলীল হলো হযরত ইমরান ইব্ন হুসাইন (রা)-এর বর্ণিত হাদীস, যাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, এতে কসমের কাফফারার মত কাফফারা দিতে হবে। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসের সমালোচনার কোন অবকাশ নেই। তিরমিযী ও অন্যান্য হাদীসে হযরত আয়েশা (রা) থেকে মরফু হাদীস বর্ণিত আছে, মান্নতের কাফফারা কসমের কাফফারার মত। ইমাম নববী (র) মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে কাফফারার পক্ষে মতামত প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন : أما حديث كفاديته كفارة اليمين فضعيف باتفاق المحدثين অর্থাৎ হাদীস كفادية كفارة اليمين মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মতিক্রমে মতে দুর্বল (ضعيف)। অবশেষে বলেছেন, এ হাদীসকে ইমাম তাহাভী ও ইবনুল মিসকীন (র) সহীহ বলেছেন। সুতরাং এ হাদীসের দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য অটুট থাকেনি। এ ছাড়া কিয়াসও এ মাযহাবের সমর্থন করে। কেননা জরুরী কসম মান্নতের সাথে সম্পর্কিত। উভয় অবস্থায় মান্নত পূর্ণ হয়ে থাকে মুবাহ বা হালালের স্বীকৃতির সাথে। অর্থাৎ একটি মুবাহ্ বস্তুকে নিজের উপর ওয়াজিব করে নেয়া এবং এটা হালালকে হারাম করে নেয়াকে অপরিহার্য করে তোলে যা অঙ্গীকার বা কসমের মূল উৎস। সুতরাং আল্লাহ তাআলা আঁ হযরত (সা)-এর বাণীর প্রতিধ্বনি করে ঘোষণা করেন : لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ (কেন আপনি হারাম করে নিয়েছেন ঐ বস্তু, যা আল্লাহ তা'আলা আপনার জন্য হালাল করেছেন)। (৬৬ঃ১)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান