মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১৩. মুদাব্বার করার বর্ণনা

হাদীস নং: ৩০২
মুদাব্বার-এর বিক্রয়ের বর্ণনা
হাদীস নং- ৩০২

হযরত জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, ইবরাহীম ইব্ন নুআয়ম নাহ্হামের একজন গোলান ছিল। তিনি তাকে মুদাব্বার (مدبر) করে দেন। এরপর গোলামের মূল্য (অর্থ) তার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সুতরাং নবী করীম (ﷺ) আটাশ দিরহামের বিনিময়ে তাকে ক্রয় করেন। অপর এক রিওয়ায়েতে আছে, তিনি এক মুদাব্বার গোলামকে খরিদ করেন।
عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ عَبْدًا كَانَ لِإِبْرَاهِيمَ بْنَ نُعَيْمٍ النَّحَّامُ فَدَبَّرَهُ، ثُمَّ احْتَاجَ إِلَى ثَمَنِهِ، «فَبَاعَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَمَانِ مِائَةِ دِرْهَمٍ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «بَاعَ الْمُدَبَّرَ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

مدبر হলো ঐ গোলাম যাকে তার মুনিব এটা বলে দিয়েছে যে, আমি যদি মৃত্যুবরণ করি, তাহলে তুমি আযাদ বা স্বাধীন। এ হাদীসে একটি বিতর্কিত মাসয়ালা ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। মতপার্থক্যের কারণ হলো এই যে,مدبر গোলাম ক্রয় করা জায়েয কিনা।
ইমাম শাফিঈ-এর মতে জায়েয আছে। তিনি বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। উক্ত হাদীসে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি তার গোলামকে مدبر করার পর তার কাছে আর কোন মাল ছিল না। এ সংবাদ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট পৌছার পর তিনি বললেনঃ এ গোলামটি কে আমার থেকে ক্রয় করবে? নুআয়ম ইব্ন আবদুল্লাহ আট'শ দিরহাম দিয়ে তাকে খরিদ করেন। নবী করীম (সা) এ টাকা তাকে প্রদান করেন।
নাসাঈ শরীফে বর্ণিত আছে, ঐ ব্যক্তি দেনাদার ছিল। হুযূর (সা) এ গোলামকে বিক্রি করে উক্ত টাকা তাকে দিয়ে বললেনঃ এর দ্বারা করয আদায় কর। বর্ণিত হাদীস এর সমর্থন করে।
ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে مدبر গোলাম বিক্রয় করা জায়েয নয়। তিনি দারে কুতনীতে হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রা) থেকে বর্ণিত মরফূ' হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন: المدبر لا يباع ولا يوهب وهو حر من ثلث المال (মুদাব্বার গোলাম বিক্রয় বা হেবা করা জায়েয নয় এবং সে এক-তৃতীয়াংশ মাপ দ্বারা আযাদ হবে)।
এ হাদীসের মরফু হওয়ার ব্যাপারে কেউ কেউ সমালোচনা করে থাকেন। তবে মওকুফ হাদীস তো নিঃসন্দেহে সহীহ। দারে কুতনী ও এ হাদীসকে মওকুফ সহীহ বলেছেন। সুতরাং এটা সাহাবীর বর্ণনা এবং যেখানে কিয়াসের কোন অধিকার নেই, সেখানে সাহাবীর বর্ণনাকে মরফূ হাদীসের মর্যাদায় স্থান দেয়া হয়ে থাকে। তাই এ বর্ণনা মরসূ হাদীসের মধ্যে গণ্য হবে।
এবার হযরত জাবির (রা)-এর হাদীসের জওয়াব হলো এই যে, এ হাদীস বিশেষ কোন ঘটনা বর্ণনা করেছে যা হযরত ইব্ন উমর (রা)-এর হাদীসের ব্যাপকতাকে খন্ডন করে না। হাঁ, তবে প্রতিবন্ধকতা ঐ সময় সৃষ্টি হয় যখন একই বাক্যে ও বিষয়ে অন্য কোন হাদীস পাওয়া যায়।মুদাব্বার গোলাম বিক্রয় করা যায়। অতঃপর ঐ হাদীস যা আবু জাফর থেকে দারে কুতনী ও বায়হাকী বর্ণনা করেছেন, তা হলো দারে কুতনী আবদুল মালিক ইব্ন আবূ সুলায়মান সূত্রে এবং বায়হাকী হাকিম সূত্রে হযরত জাবির (রা)-এর এই فعلى حديث এর ব্যাখ্যা। ঐ বাহ্যিক অন্তরায় এভাবে দূরীভূত করেঃ لا بأس ببيع خدمة المدبر (মুদাব্বার গোলামের খেদমত ও সেবা বিক্রয় করা কোন দুষণীয় নয়)। ইব্‌ন কাতান এটাকে وصلا وارسالا উভয় পদ্ধতিতে সহীহ বলেছেন। কাজেই এ হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে হযরত জাবির (রা)-এর হাদীসের এ ব্যাখ্যা দেয়া যায় যে, এ বিক্রি হলো উক্ত গোলামের খেদমত বিক্রি যা বৈধ ও জায়েয। গোলামের বিক্রি নয়।مدبر তার মনিবের অঙ্গীকার অনুযায়ী তার মৃত্যুর পর আযাদ হয়ে যাবে।