মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

১১. ত্বালাক - বিবাহ বিচ্ছেদ অধ্যায়

হাদীস নং: ২৯৮
কথার মাধ্যমে ঈলা
হাদীস নং- ২৯৮

হযরত আলকামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, মু’লীর (ঈলাকারী) প্রত্যাবর্তন বা ফিরিয়ে নেয়ার পদ্ধতি হলো সহবাস করা। কিন্তু তার এমন কোন ওযর বা অক্ষমতা যা তাকে সহবাস থেকে বিরত রাখে। (যেমন পুরুষ অথবা নারীর কোন রোগে আক্রান্ত হওয়া, নারীর অবস্থান পুরুষের অবগত না হওয়া। তাদের মধ্যে চার মাসের দূরত্ব হতে হবে। স্বামীর পুরুষাঙ্গ কর্তন হওয়া অথবা স্ত্রীর দৈহিক এমন কোন রোগ হওয়া যার ফলে সে সহবাস করার ব্যাপারে অযোগ্য হয়ে পড়ে)। এমন অবস্থায় তার প্রত্যাবর্তন হবে কথার মাধ্যমে।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ فِي الْمَوْلَى: «فَيْئُهُ الْجِمَاعُ إِلَّا أَنْ يَكُونَ لَهُ عُذْرٌ، فَفَيْئُهُ بِاللِّسَانِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ঈলার (ايلاء) পদ্ধতি হলো এই যে, এক ব্যাক্তি শপথ করল, আমি চার মাস যা এর চেয়ে অধিক সময়ের জন্য আমার স্ত্রীর নিকট গমন করব না। তা হলে এ ব্যক্তি হবে মু’লী (مولى) এবং তার এ কাজটি হবে ঈলা ( ايلاء)। ঈলা সম্পর্কে কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন : لِلَّذِينَ يُؤْلُونَ مِنْ نِسَائِهِمْ الايه (ঐ সমস্ত লোক, যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ঈলা করে.....) (২:২২৬)
ঈলার বিধান হলো এই যে, যদি ঈলাকারী ব্যক্তি উক্ত সময়ের মধ্যে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে, তা হলে ঈলা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং তার উপর কসমের কাফফারা ওয়াজিব হবে এবং ঈলা শেষ হয়ে যাবে। যদি নির্ধারিত সময়ে সে স্ত্রীর নিকট গমন না করে এবং ইত্যাবসরে সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তা হলে এর বিধান সম্পর্কে শাফিঈ, মালিকী, হাম্বলী এবং হানাফীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। উপরোক্ত মাযহাবসমূহের দৃষ্টিকোণ থেকে সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাকে বিচারকের সামনে হাযির করতে হবে এবং বাধ্য করতে হবে যে, সে তার স্ত্রীকে তালাক দিবে অথবা ফিরিয়ে নেবে। সুতরাং এটা বলা যায় যে, ঈলার সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের মতে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার স্বামীর রয়েছে।
হানাফীদের মতে সময় অতিবাহিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই এক তালাকে বাইন কার্যকর হয়ে যাবে এবং এরপর তাকে ফিরিয়ে নেয়ার কোন অধিকার স্বামীর থাকবে না। সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে নিতে পারবে, কিন্তু সময়ের পরে নয়। এটাই হলো জমহুর সাহাবায়ে কিরামের মত। এঁদের মধ্যে হযরত উমর, হযরত উসমান, হযরত আলী, হযরত ইব্ন উমর, হযরত ইব্ন মাসউদ, হযরত ইব্ন আব্বাস, হযরত যায়দ ইব্ন সাবিত (রা) অন্যতম। শীর্ষস্থানীয় তাবেঈগণ, যেমন হযরত আতা, ইকরামা, সাঈদ ইব্ন মুসায়্যিব, আবূ বকর ইব্ন আবদুর রহমান, মাকহুল, ইবনুল হানাফিয়্যা, শাবী, নাখঈ, মাসরুক (র) ও অন্যান্য বুযর্গ হানাফীদের সাথে ঐকমত্যে রয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা যে, জমহুর সাহাবায়ে কিরাম হানাফীদের বিরোধী। বরং সবচেয়ে সহীহ রিওয়ায়েত হানাফী মাযহাবের পক্ষ ও সমর্থনে রয়েছে। যেমন আবদুর রাযযাক স্বীয় মুসান্নাফের রিওয়ায়েতে বলেন, উসমান ও যায়দ ইব্ন সাবিত (রা) ঈলার ব্যাপারে বলতেন, যখন চার মাস অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন এক তালাক হবে এবং একজন নারী তার নিজ সত্তার ব্যাপারে অধিক ইখতিয়ারের অধিকারী। সে তালাকপ্রাপ্তার মত ইদ্দত পালন করবে। অতঃপর কাতাদা (র)-এর সূত্রে হযরত আলী (রা), হযরত ইব্ন মাসউদ এবং হযরত ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, মুদ্দত (সময়) অতিবাহিত হওয়ার পর এক তালাকে বাইন কার্যকর হয়ে যাবে। এ সমস্ত রিওয়ায়েতের বর্ণনাকারী বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসেরও বর্ণনাকারী অথবা এ দু'হাদীসের শর্তের অনুরূপ। এমনিভাবে কুরআন মজীদের একটি আয়াতও হানাফী মাযহাবের পক্ষে রয়েছে। আল্লামা ইবনুল হুমাম (র) ফতহুল কাদীরে অত্যন্ত স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে এর ব্যাখ্যা করেছেন।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান