মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৮. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ২৭৬
আযলের বর্ণনা
হাদীস নং- ২৭৬

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাযিঃ)-এর নিকট আযল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা যদি কোন বস্তুর প্রকাশের অঙ্গীকার করেন যা পাথরের মধ্যে লুক্কায়িত আছে, তা হলে নিশ্চয়ই এটাও বের হয়ে পড়বে বা প্রকাশ হবে (অর্থাৎ আযল দ্বারা কোন ফায়দা হবে না বা প্রতিরোধ করা যাবে না)।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ مَسْعُودٍ سُئِلَ عَنِ الْعَزْلِ، فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَوْ أَنَّ شَيْئًا أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَهُ اسْتُودِعَ صَخْرَةً لَخَرَجَ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইমাম আহমদ হযরত আনাস (রা) থেকে মরফু হাদীস বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) বলেছেনঃ যদি তোমরা ঐ পানি যা দ্বারা শিশুর জন্ম হয়, তা কোন কংকরময় স্থানে রেখে দাও, তা হলেও আল্লাহ্ তা'আলা এর থেকে মানব শিশু জন্মের ব্যবস্থা করবেন।
আযল বলা হয় নারীদের সাথে মিলনের সময় বীর্য নির্গত হওয়ার প্রাক্কানে পুরুষাঙ্গ যোনী থেকে বের করে বীর্য বাইরে ফেলে দেয়া বা বের করা।
আযলের মাসয়ালা সম্পর্কে ইমাম আবু হানীফা (র), ইমাম মালিক (র) ও ইমাম শাফিঈ (র)-এর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মালিক (র)-এর মতে আযাদ ও স্বাধীন নারীর অনুমতি ব্যতীত আমল করা মাকরূহ। বিবাহিত বাঁদীর মনিবের অনুমতি ব্যতীত ও নিজ বাদীর অনুমতি ব্যতীত আযল জায়েয মনে করেন।
ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে মাকরূহ ছাড়াই সব কটি ক্ষেত্রে আযল জায়েয। তবে সন্তান থেকে পরিত্রাণলাভের উদ্দেশ্যে হলে তাঁর মতেও আমল করা মাকরূহ। তিনি বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত জাবির (রা)-এর হাদীস দ্বারা তাঁর যুক্তি পেশ করেছেন। كُنَّا نَعْزِلُ وَالْقُرْآنُ يَنْزِلُ ("আমরা আযল করতাম এবং তখন কুরআন নাযিল হচ্ছিল)।" অর্থাৎ কুরআন নাযিল হওয়ার যুগেও আমরা আযল করেছি।
ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম মালিক (র) কয়েকটি হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। ইবন আবি শায়বা (র) হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেনঃ تستامر الحرة وتعزل عن الامة ("আযাদ মহিলা থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং বাঁদীর সাথে আযাল করা যাকে)।" আবদুর রাযযাক এবং ইমাম বায়হাকী (র) হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেনঃ نهى عن عزل الحرة إلا بإذنها রাসুলুল্লাহ (সা) আযাদ মহিলার অনুমতি ব্যতীত আযাল করা থেকে নিষেধ করেছেন।। “ইমাম বায়হাকী হযরত ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি স্বীয় বাদীর সাথে আযল করতেন এবং আযাদ মহিলা থেকে অনুমতি গ্রহণ করতেন।
ইমাম ইবন মাজাহ হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেনঃ " نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يعزل عن الحرة إلا بإذنها "রাসূলুল্লাহ (সা) আযাদ মহিলার অনুমতি ব্যতীত আযল থেকে নিষেধ করেছেন।"
এখানে হানাফী মাযহাবের যুক্তি হলো এই যে, যৌন সংসর্গ মূলত নারীদের অধিকার এবং বাহাত যৌন সংসর্গে এটাকেই মান্য করা হয় যাতে আযল করা না হয়। সুতরাং যদি আযলের প্রয়োজন হয়, তা হলে নারীর কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। মুসলিম শরীফে জুযামার হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: আযল وأد خفى বা সূক্ষ্মভাবে জীবিতকে দাফন করা। সুতরাং এ আযল মহিলাদের ব্যাপারে (অনুমতি সাপেক্ষে) প্রযোজ্য হবে। কেননা যৌন সংসর্গের প্রয়োগ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর উপর হয়ে থাকে।