মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৮. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ২৬৭
সম্মতি ব্যতীত মহিলাদের বিবাহ বৈধ নয়
হাদীস নং- ২৬৭

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। জনৈক মহিলার স্বামী ইনতিকাল করার পর তার দেবর তার জন্য বিবাহের প্রস্তাব প্রেরণ করে। কিন্তু মহিলার পিতা এ বিবাহে সম্মত না হয়ে অপর এক ব্যক্তির সাথে মেয়ের বিবাহ দান করেন। সুতরাং ঐ মহিলা নবী করীম (ﷺ)-এর খেদমত হাযির হয়ে সমস্ত খুলে বলেন। তিনি মহিলার পিতাকে ডেকে পাঠালেন। লোকটি আগমণ করলে তিনি বললেনঃ এ মহিলা কি বলছে? তিনি জওয়াবে বললেন, সে সত্য বলছে। কিন্তু আমি তাকে এরূপ ব্যক্তির সাথে বিবাহ দিয়েছি যে তার দেবর থেকে উত্তম। তখন হুযূর (ﷺ) ঐ (সদ্য বিবাহিত) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ করে দেন এবং ঐ মহিলাকে তার চাচাত ভাই (দেবরের সাথে বিবাহের (যার সাথে বিবাহে তার অভিপ্রায় ছিল) ব্যবস্থা করেন।
অপর এক রেওয়ায়েতে হযরত ইবন আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, আসমা নাম্মী এক মহিলাকে বিবাহের জন্য তার চাচাত ভাই (দেবর) এবং অন্য এক ব্যক্তি তার পিতার নিকট প্রস্তাব করেন। পিতা তার দেবরের পরিবর্তে অপর ব্যক্তির সাথে তাকে বিবাহ দিয়ে দেন। তখন ঐ মহিলা নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এসে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। তিনি (সমস্ত কিছু অবগত হয়ে) অপর ব্যক্তির সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে তাকে তার দেবরের সাথে বিবাহের ব্যবস্থা করেন।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, এক মহিলার স্বামী ইনতিকাল করেন। তখন তার দেবর তার নিকট বিবাহের প্রস্তাব পেশ করে। কিন্তু তার পিতা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপর এক ব্যক্তির সাথে তার বিবাহ দেন। অতঃপর মহিলা নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট আগমণ করে ঘটনা বর্ণনা করেন। তখন তিনি মহিলার পিতাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি কি তোমার মেয়েকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দিয়েছ? সে বলল, আমি তাকে এমন এক ব্যক্তির সাথে বিবাহ দিয়েছি যে তার দেবরের চেয়েও উত্তম। অতঃপর হুযূর (ﷺ) ঐ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ করে তার দেবরের সাথে তাকে বিবাহ দিয়ে দেন।
অপর এক রেওয়ায়েতে আছে, এক মহিলার স্বামী ইনতিকাল করে। এই স্বামীর একটি ছেলে সন্তান ছিল। তখন মহিলার দেবর তাকে বিবাহের জন্য মহিলার পিতার নিকট প্রস্তাব পেশ করে। মহিলা এ লোকটির সাথে তাকে বিবাহ দেয়ার জন্য তার পিতাকে বললেন। কিন্তু পিতা এতে সম্মত হলেন না, বরং সে মহিলার (কন্যার) ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য এক ব্যক্তির সাথে তার বিবাহ দেন। তখন ঐ মহিলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খেদমতে এসে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন । তিনি তার পিতাকে এ বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। লোকটি বলল, জ্বি হ্যাঁ, আমি তাকে তার দেবরের চেয়ে উত্তম এক ব্যক্তির নিকট বিবাহ দিয়েছি। (সব কিছু অবগত হবে।) হুযুর (ﷺ) এ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ করে মহিলার (ইচ্ছা অনুযায়ী) তার দেবরের সাথে বিবাহ সম্পন্ন করে।
عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: " أَنَّ امْرَأَةً تُوُفِّيَ عَنْهَا زَوْجُهَا، ثُمَّ جَاءَ عَمُّ وَلَدِهَا، فَخَطَبَهَا، فَأَبَى الْأَبُ أَنْ يُزَوِّجَهَا، فَأَتَتِ الْمَرْأَةُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ ذَلِكَ لَهُ، فَبَعَثَ إِلَى أَبِيهَا فَحَضَرَ، فَقَالَ: مَا تَقُولُ هَذِهِ؟ قَالَ: صَدَقَتْ، وَلَكِنِّي زَوَّجْتُهَا مِمَّنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ، فَفَرَّقَ بَيْنَهُمَا، وَزَوَّجَهَا عَمَّ وَلَدِهَا "، وَفِي رِوَايَةٍ: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ أَسْمَاءَ خَطَبَهَا عَمُّ وَلَدِهَا وَرَجُلٌ آخَرُ إِلَى أَبِيهَا، فَزَوَّجَهَا مِنَ الرَّجُلِ، فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَاشْتَكَتْ ذَلِكَ إِلَيْهِ «فَنَزَعَهَا مِنَ الرَّجُلِ، وَزَوَّجَ عَمَّ وَلَدِهَا» ، وَفِي رِوَايَةٍ: " أَنَّ امْرَأَةً تُوُفِّيَ عَنْهَا زَوْجُهَا، فَخَطَبَهَا عَمُّ وَلَدِهَا، فَزَوَّجَهَا أَبُوهَا بِغَيْرِ رِضَاهَا مِنْ رَجُلٍ آخَرَ، فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ ذَلِكَ لَهُ، فَدَعَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: أَزَوَّجْتَهَا بِمَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ؟ قَالَ: زَوَّجْتُهَا بِمَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ، فَفَرَّقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ زَوْجِهَا، وَزَوَّجَهَا مِنْ عَمِّ وَلَدٍ لَهَا ".
وَفِي رِوَايَةٍ: " أَنَّ امْرَأَةً تُوُفِّيَ عَنْهَا زَوْجُهَا، وَلَهَا مِنْهُ وَلَدٌ، فَخَطَبَهَا عَمُّ وَلَدِهَا إِلَى أَبِيهَا، فَقَالَتْ: زَوِّجْنِيهِ، فَأَبَى وَزَوَّجَهَا مِنْ غَيْرِهِ بِغَيْرِ رِضًا مِنْهَا، فَأَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ ذَلِكَ، فَسَأَلَهُ عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَ: نَعَمْ، زَوَّجْتُهَا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْ عَمِّ وَلَدِهَا، فَفَرَّقَ بَيْنَهُمَا، وَزَوَّجَهَا مِنْ عَمِّ وَلَدِهَا "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসে বর্ণিত মাসয়ালা সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। হাদীসের মূল বিষয় হলো এই যে, যদি কোন প্রাপ্তবয়স্কা ও বিজ্ঞ মহিলা নিজেই নিজের বিবাহ (পসন্দ অনুযায়ী) করে, তা হলে এটা জায়েয হবে কিনা। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে তা জায়েয হবে না। ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে জায়েয হবে। তবে তাঁর মতে غير كفو বা
সমমর্যাদাসম্পন্ন পরিবারে না হলে অভিভাবকদের ঐ বিবাহে হস্তক্ষেপের অধিকার রয়েছে।
ইমামত্রয়ের সকলেই পবিত্র কুরআন ও হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন এবং যুক্তি-তর্ক ও রেওয়ায়েত দ্বারা তা প্রমাণ করেছেন। কুরআন মজীদের দলীল হলো এই যে, অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে : فَلَا تَعْضُلُوهُنَّ أَنْ يَنْكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ

“নারীদেরকে তাদের স্বামীদের সাথে বিবাহের ব্যাপারে বাধা দেবে না।" (২:২৩২)
এতে প্রতীয়মান হয় যে, বিবাহের ব্যাপারে অভিভাবকদের অধিকার রয়েছে। যদি তাদের অধিকার বা ক্ষমতা না থাকত, তা হলে বাধা দেয়ার কি অর্থ হতে পারে।
হাদীস দ্বারাও এ বিষয়ে দলীল পেশ করেছেন। এগুলোর মধ্যে আবূ দাউদ, নাসাঈ, ইবন মাজাহ এবং তিরমিযী শরীফে হযরত আবু মুসা আশআরী (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসের মূল বক্তব্য হলো এই যে, যে মহিলা স্বীয় অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত নিজের বিবাহ সম্পন্ন করে, তার বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে। তিনবার হুযুর (সা) এ বিষয়টি পুনরাবৃত্তি করেছেন। জ্ঞান-বুদ্ধি ও যুক্তি হলো এই যে, বিবাহের কয়েকটি উদ্দেশ্য সামনে রাখা হয়েছে। যেমন একটি হলো, বিবাহের দ্বারা বংশের ক্রমধারা অব্যাহত রাখা। নারী যেহেতু অনেকেই জ্ঞানে অপরিপক্ক এবং পরিণাম ফল সম্পর্কে সাধারণত পরিপক্ক নয়, তাই এ সমস্ত বিষয় ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্বামী-নির্বাচনের বিষয়টি তাদের উপর ছেড়ে দেয়া সঠিক নয়। এটা হলো ইমামত্রয়ের দলীল।
হযরত ইমাম আবু হানীফার মাযহাবেও পবিত্র কুরআন, হাদীস এবং যুক্তি-তর্ক দ্বারা দলীল পেশ করা হয়েছে। যেমন কুরআন মজীদে ঘোষণা করা হয়েছে। حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য স্বামী গ্রহণ না করে।" (২:২৩০)
এ আয়াতে সুস্পষ্ট বাক্যের দ্বারা বিবাহের বিষয়টি নারীর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেন নারী এ ব্যাপারে স্বাধীন ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত। বস্তুত এখানে নারীকে বিবাহ কার্যক্রমের (فعل نكاح) কর্ত্রী নির্ধারণ করা হয়েছে। অথবা পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: أَنْ يَنْكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ অথবা বলা হয়েছে : فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنْفُسِهِنَّ "তোমাদের উপর এ বিষয়ে কোন গুনাহ্ নেই যা তারা (নারীরা) নিজেদের জন্য করে।" (২:২৩৪)।
এ সমস্ত আয়াতে বিবাহের বিষয়টি নারীদের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এতে তাদের অধিকারের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে। বর্ণিত হাদীসে এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, হুযুর (সা) বিবাহ বাতিল করেছেন এবং উভয়কে পৃথক করে দিয়েছেন।
মোল্লা আলী ক্বারী (র) এ হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছেন, ইবন কাত্তান বলেছেন যে, হযরত ইবন আব্বাস (রা)-এর বর্ণিত এ হাদীস সহীহ এবং ঐ মহিলা ছিল খানসা বিনত খিযাম (রা)। বুখারী শরীফে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কেননা এ মহিলা (খানসা) আপ্তবয়স্ক (ثيبة) ছিল, বরং কেউ কেউ খানসাকে কুমারী বা অপ্রাপ্ত বয়স্কা বলেও উল্লেখ করেছেন। নাসাঈ শরীফের হাদীসে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। অথবা বুখারী শরীফের হাদীস স্বীয় স্থানে সহীহ ও সঠিক এবং ঘটনা ছিল বিভিন্ন। সুতরাং দারে কুতনী (دار قطنى) হযরত ইবন আব্বাস (রা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সা) অপ্রাপ্ত ও প্রাপ্ত বয়স্কার (باكره و ثيبة) বিবাহ বাতিল করেছেন। মোট কথা এ সমস্ত রেওয়ায়েতের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজন প্রাপ্তবয়স্কা মহিলার হাতেই তার বিবাহের পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
দ্বিতীয়ত হানাফী মাযহাবের স্বপক্ষে হযরত ইবন আব্বাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত মরফু হাদীস রয়েছে। একই বাকো মুসলিম শরীফে ও অন্যান্য গ্রন্থে এ হাদীস বর্ণিত আছে যে, الأيم أحق بنفسها من وليها، والبكر تستأذن في نفسها “অবিবাহিতা মহিলা নিজের (বিবাহের) ব্যাপারে তার অভিভাবকের চেয়ে বেশি অধিকার রাখে এবং একজন অপ্রাপ্ত বয়স্কা তার নিজের ব্যাপারে অনুমতি প্রদান করবে।" এ হাদীসে أيم শব্দটি অভিধানের দৃষ্টিতে প্রত্যেক ঐ মহিলার ব্যাপারে প্রয়োগ হয়ে থাকে, যার স্বামী নেই। সে অপ্রাপ্ত হোক কিংবা প্রাপ্তবয়স্কা, সে তালাকপ্রাপ্তা হোক অথবা বিধবা। যখন এর প্রকৃত অর্থ গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই, তাহলে অপ্রাপ্ত বা (باكره) বাকেরার বিপরীতে এর রূপক অর্থ ( ثيبة) (প্রাপ্তবয়স্কা) কেন গ্রহণ করা হবে? যেমন হযরত ইমাম শাফিঈ (র) এমত পেশ করেছেন।
মোট কথা অভিভাকের বিবাহ পড়ানোর যে অধিকার রয়েছে। এতে এটাও সংযুক্ত রয়েছে। একটি অকাট্য দলীল স্বয়ং হযরত (সা)-এর বাস্তব জীবনে রয়েছে। যখন হযরত উম্মে সালমা (রা) বিবাহের সময় বললেন, হুযূর! আমার কোন অভিভাবক নেই। তখন নবী করীম (সা) বললেন, উপস্থিত বা অনুপস্থিত তোমার এমন কোন অভিভাবক নেই যিনি তোমার এ কাজ অপসন্দ করবে। এটা বলে তিনি উমর ইবন আবি সালমা (রা)-কে নির্দেশ দিলেন, যিনি ঐ সময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন এবং অভিভাবক হওয়ার যোগ্য ছিলেন না। কিন্তু তিনিই বিবাহের কাজ সম্পন্ন করেন। যদি বিবাহ সম্পন্ন করার জন্য অভিভাবকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক হতো, তা হলে হযরত উম্মে সালমা (রা)-এর বিবাহ কিভাবে সঠিক হলো? সুতরাং এ সমস্ত যথার্থ ও যুক্তিসম্মত দলীলের দৃষ্টিকোণ থেকে হানাফী মাযহাব অধিকতর গ্রহণযোগ্য।
এবার অন্যান্য মাযহাবের জওয়াব পেশ করা হলো। পবিত্র কুরআনের আয়াতে তাদের উপলব্ধির কিছু ত্রুটি রয়েছে। কেননা এত অভিভাবকের (اولياء) প্রতি নির্দেশ নয়, বরং স্বামীর প্রতি নির্দেশ রয়েছে। কুরআন মজীদে আল্লাহ বলেছেন, وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ "যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদেরকে তালাক দেবে তখন তাদেরকে তাদের ইদ্দত পূরণ করতে দাও।" (২ : ২৩২) সুতরাং এখানে اولياء অর্থ গ্রহণ করা কুরআনের স্পষ্ট বিরোধিতা করা হয়। হাদীসের ব্যাপারেও এটা বলা যায় যে, উভয় হাদীস সনদের দৃষ্টিতে সংশয়পূর্ণ। হযরত ইমাম যুহরীর সূত্রে স্বয়ং ইমাম তিরমিযী হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস দুর্বল(ضعيف) বলে ইঙ্গিত করেছেন। হাদীসে সুলায়মান ইবন মুসা নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন যাকে ইমাম বুখারী (র) (দুর্বল) বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইমাম নাসাঈ (র) বলেছেন, এ হাদীসে দুর্বলতা রয়েছে। এমনিভাবে আবূ মূসা (রা)-এর বর্ণিত হাদীসে সম্পর্কে উলামায়ে কিরাম সমালোচনা করেছেন। এ সমস্ত হাদীসের বিপরীতে হানাফী ইমামগণের পেশকৃত হাদীস নির্ভরশীল ও সহীহ।
এবার তাদের কিয়াস বা যুক্তির জওয়াব হলো এই যে, ভোগ-দখল ও ব্যবহারের মধ্যে অধিকারের ক্ষমতা বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার উপর নির্ভরশীল। কেননা বালেগ হওয়ার পর মানুষ তার যাবতীয় কার্যক্রম ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারে। তবে সমগোত্র ( غير كفو) না হলে সেখানে নারীদের অপকৌশলের আশংকা থাকে, তাই এখানে অভিভাবকের ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রয়েছে।