মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৭. হজ্ব - উমরার অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৯
মুহরিম ব্যক্তির বিবাহ করা সম্পর্কে
হাদীস নং-২৩৯

হযরত ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মায়মূনা বিনতে হারিস (রাযিঃ)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আব্দ্ধ হন, তখন তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন।
باب نكاح المحرم
عَنْ سِمَاكٍ، عَنِ ابْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «تَزَوَّجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَيْمُونَةَ بِنْتَ الْحَارِثِ، وَهُوَ مُحْرِمٌ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসের বিষয়বস্তু নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। মতপার্থক্যের বিষয় হলো এই যে, মুহরিম ও মুহরিমা (ইহরামরত পুরুষ ও মহিলা) ইহরাম অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে কিনা ? হানাফী মাযহাবমতে ইহরাম অবস্থায় উভয়ের বিবাহ জায়েয আছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আনাস ইবনে মালিক (রা) এবং সাঈদ ইবনে জুবায়র, আতা, তাউস, মুজাহিদ, ইকরামা, জাবির, আমর ইবনে দীনার (র) ও ইরাকবাসীগণ এই মত পোষণ করেন। ইমাম শাফিঈ, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (র)-এর মতে মুহরিম ও মুহরিমার বিবাহ জায়েয নয়। এটাই হযরত উমর (রা) ও হযরত আলী (রা)-এর ধারণা।

হানাফী মাযহাবের পক্ষ থেকে কুরআন, সুন্নতে রাসূল ও কিয়াসের দ্বারা দলীল পেশ করা হয়েছে। যেমনঃ পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেঃ وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ অথবা فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِنَ النِّسَاءِ الاية এই আয়াতদ্বয়ের বিধান হলো সাধারণ বা সামগ্রিক (مطلق)। এর মধ্যে মুহরিম ও ইহরামবিহীন সকলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হাদীস বা خبرواحد-এর দ্বারা ইহরামবিহীন-এর সংযুক্তি কুরআনের উপর সীমা লংঘন করার অন্তর্ভুক্ত। এই হাদীস সিহাহ সিত্তাহ গ্রন্থে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তাহাবী, মুজাহিদ, আতা, তাউস, সাঈদ ইবনে জুবায়র, ইকরামা, জাবির ইবনে যায়দ (র)-এর সূত্রে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে এই হাদীস বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথমত হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর ইল্‌ম যা তিনি আঁ হযরত (সা)-এর দু'আর বরকতে হাসিল করেছিলেন, তাই তিনি পবিত্র কুরআনের বড় ব্যাখ্যাদাতা এবং হুযুর (সা)-এর বাণীর গূঢ় রহস্য উপলব্ধি করতে সক্ষম ছিলেন। যার ফলে বয়সে কম হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ইলমের উপর কেউ কোন অভিযোগ করার সাহস পাননি। হযরত উমর (রা) বলতেন, ইবনে আব্বাস (রা) যদি আমাদের বয়স লাভ করেন, তাহলে আমাদের মধ্যে কেউ তাঁর সমকক্ষ হতে পারবে না। সুতরাং ইবনে আব্বাস (রা)-এর বর্ণিত হাদীস হানাফী মাযহাবের বিশুদ্ধতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। তবে উপরোক্ত হাদীসের সাথে এর স্বপক্ষে আরো সহীহ বর্ণিত আছে। যেমন, ইমাম তাহাবী শরহে মাঝানিল আসার (شرح معانى الا ثار) নামক গ্রন্থে এবং বাযযায স্বীয় মুসনাদে হযরত আয়েশা (রা) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে বলা হয়েছে যে, আঁ হযরত (সা) ইহরাম অবস্থায় কোন কোন মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। সুহায়লী (র) বলেছেন, কোন কোন (بعض) দ্বারা হযরত মায়মূনাকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম তাহারী (র) বলেছেন, এই হাদীসের সমস্ত বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। এই হাদীস দারে কুতনী এবং তাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে রিওয়ায়েত করেছেন। এর বিষয়বস্তু হলো এই যে, আঁ হযরত (সা) ইহরাম অবস্থায় হযরত মায়মুনা (রা)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
বস্তুত কিয়াসও উপরোক্ত বিষয়ের সমর্থন করে থাকে। প্রথমত বিবাহ অন্যান্য ধর্মীয় বিধানের মত যা ইহরাম অবস্থায় জায়েয। সুতরাং বিবাহের মধ্যে হারামের কি আছে? দ্বিতীয়ত যদি ইহরাম অবস্থায় বিবাহ জায়েয না হয়, তা হলে কিয়াস এটাই বলে যে, ইহরামের পূর্বে বিবাহ বাকী থাকবে না। কেননা যে বস্তু বিবাহের বিরোধী এবং এটা বাতিলকারী, সেটা বিবাহ হতেও দিবে না এবং তা বাকীও রাখবে না। এতে শুরু ও বাকী (ابتداء-بقاء) উভয়ই সমান। তৃতীয়ত বিবাহতো সহবাসের মত কোন বিষয় নয় যে, তা সহবাসের মত হারাম হবে। কাজেই এ অবস্থায় বিবাহ করা জায়েয। অবশ্য বিরত থাকা উত্তম। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আমল ছিল শুধু জায়েয় হিসেবে প্রচার করা বা প্রচলনের জন্য। যদি বলা হয় বিবাহ এইজন্য জায়েয নয় যে, এটা স্ত্রী সঙ্গমের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে ইহরাম অবস্থায় স্বীয় স্ত্রীকে সাথে রাখাও জায়েয হতো না। কেননা এটা সঙ্গম বা সহবাসের কারণ হতে পারে। চতুর্থত হযরত মায়মুনা (রা) হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর সম্পর্কে খালা ছিলেন, তাই খালার বিবাহ সম্পর্কে তাঁর যা কিছু জানা থাকার কথা, তা অন্যদের জানা কিভাবে সম্ভব? মোট কথা হানাফী মাযহাবের দলীলসমূহ বাতিল করা সম্ভব নয়।

ইমাম শাফিঈ, ইমাম মালিক এবং ইমাম হাম্বল (র)-এর মতে ইহরাম অবস্থায় বিবাহ জায়েয নয়। তাঁদের মাযহাবের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে তাঁরা কয়েকটি হাদীস পেশ করেছেন। প্রথমত স্বয়ং হযরত মায়মূনা (রা)-এর হাদীস, দ্বিতীয়ত ইয়াজিদ ইবনে আসামের হাদীস, তৃতীয়ত নবী করীম (সা)-এর গোলাম আবূ রাফি (রা)-এর হাদীস, এই তিনটি হলো فعلى حديث এবা কর্মমূলক হাদীস। চতুর্থত হযরত উসমান (রা) থেকে বর্ণিত قولى حديث বা বর্ণনামূলক হাদীস। হযরত মায়মুনা (রা)-এর হাদীস আবূ দাউদ, তিরমিযী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, আমার সাথে নবী করীম (সা) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন যখন আমরা উভয়ের ইহরামবিহীন অবস্থায় ছিলাম। যেহেতু বিষয়টি তাঁদের নিজেদের, তাই তাঁদের কথাই গ্রহণযোগ্য। আমরা এর সাথে একমত। তবে এটা শুধু বিবাহের ব্যাপারে। কিন্তু মূল বিতর্ক আঁ হযরত (সা) -এর ইহরাম সম্পর্কে মায়মূনা (রা) এবং অন্যান্য সাহাবা (রা) একই মর্যাদা প্রাপ্য। বরং হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর বর্ণনা তাঁর ইলমের দূরদর্শিতা, হিফয ও অন্যান্য কারণে গ্রহণযোগ্য নির্ভরযোগ্য। পক্ষান্তরে হুযুর (সা)-এর সাথে হযরত মায়মুনা (রা)-এর সরফ (مقام سرف) নামক স্থানে ইহরামবিহীন অবস্থায় প্রথম মিলন হয়। এটা ইহরাম অবস্থায় ছিল না যে, তাঁর বর্ণনা অন্যান্যের উপর প্রাধান্য পাবে। এবার এই হাদীসের সনদের বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। প্রথমত বুখারী শরীফে এই হাদীস নেই। অর্থাৎ ইমাম বুখারী এই হাদীস গ্রহণ না করায় এর দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত তিরমিযী এই হাদীসকে গরীব (غريب) বলেছেন। তৃতীয়ত এই হাদীসের সনদে জারীর ইবনে হাশিম ইবনে যায়দ ইবনে আবদুল্লাহ আল-আযমী, যাঁর সম্পর্কে তাকরীবে (تقريب) বলা হয়েছে যে, যখন তিনি স্বীয় হিফয দ্বারা হাদীস রিওয়ায়েত করেন, তখন তাঁর সন্দেহ সৃষ্টি হয়। চতুর্থত এটাও বাস্তব সত্য যে, পুরুষ মহিলার চেয়ে হিফয, দূরদর্শিতা ও ফিকহের বিষয়ে অধিক শক্তিশালী হয়ে থাকে। সুতরাং ইবনে আব্বাস (রা)-এর হাদীসের মুকাবিলায় তাঁর (হযরত মায়মুনা (রা)]-এর হাদীস দলীল হতে পারে না।
তাঁদের দ্বিতীয় দলীল ইয়াযীদ ইবনে আসাম (রা)-এর হাদীস সম্পর্কে তারা বলে থাকেন যে, যদি হযরত মায়মূনা (রা)-এর ভাগ্নে হওয়ার কারণে হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর মর্যাদা লাভ হয়ে থাকে, তা হলে একইভাবে হযরত মায়মূনা (রা)-এর ভাগ্নে হওয়ার কারণে ইয়াযীদেরও সেই মর্যাদা লাভ হবে এবং তা হলে একইভাবে উভয়েই সমান মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। এছাড়া ইয়াযীদের হাদীস তাহাবী ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, আঁ হযরত (সা) হযরত মায়মুনা (রা)-এর সাথে ইহরামবিহীন অবস্থায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।
হানাফী মাযহাবের পক্ষ থেকে এর জওয়াব এভাবে দেওয়া যায় যে, যদি আত্মীয়তার কারণে অগ্রাধিকার নির্ধারিত হয়, তাহলেও ইবনে আব্বাস (রা)-এর অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা। কেননা তিনি একদিকে হযরত মায়মুনা (রা)-এর ভাগ্নে, অন্য দিকে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চাচাত ভাই । এই মর্যাদাসম্পন্ন আত্মীয়তার সম্পর্ক ইয়াযীদ কিভাবে লাভ করবেন ? তবে এখানে শুধু সম্পর্কে কারণেই নয়; বরং সাথে সাথে হযরত ইবন আব্বাসের প্রজ্ঞাপূর্ণ ইলমের যোগ্যতাও রয়েছে। এছাড়া ইয়াযীদের মুকাবিলায় শুধু ইবনে আব্বাসের হাদীসই নয়, বরং হযরত আয়েশা (রা) এবং হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-ও রয়েছেন। এঁরা উভয়েই ইয়াযীদ থেকে অগ্রগণ্য। সুতরাং এখন একটি পথ বাকী আছে, ইয়াযীদ ও হযরত মায়মুনার হাদীসের ব্যাখ্যা করে তা ইবনে আব্বাসের হাদীসের সাথে সমন্বয় করে নেয়া এবং তা এভাবে করা যায় যে, (تزوج) এর দ্বারা বাগদান উদ্দেশ্য হবে, আকদ নয়। কেননা (تزوج) বাগদান বা মিলনের পূর্ব কারণ ও প্রস্তুতি পর্ব এবং এটা নিঃসন্দেহে ইহরামবিহীন অবস্থায় হয়েছে।
উপরোক্ত ব্যাখ্যা কিয়াসের নিকটবর্তী। এটা নয় যে, ইবনে আব্বাস (রা)-এর হাদীসে ইহুরামকে হেরেমে প্রবেশ অথবা হারামের মাস অর্থে নেয়া হয়েছে যাতে বিবাহ হওয়ার বিষয়টি ঐ সময় প্রকাশ হয়, যখন তিনি ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। কেননা হানাফীদের পক্ষ থেকে একই ব্যাখ্যা ইয়াযীদের হাদীসেও করা যেতে পারে এবং এটা কিয়াসও হবে। অধিকাংশ রিওয়ায়েতে تزوج ميمونة وهى حلال -এর অর্থ এই যে, বিবাহ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ঐ সময় প্রকাশ পায় যখন তিনি ইহরামবিহীন অবস্থায় ছিলেন। অর্থাৎ বিবাহ ইহরাম অবস্থায়ই হয়েছিল এবং ইহরামবিহীন অবস্থায় তা প্রকাশ পেয়েছে। শাফিঈ মাযহাবের পক্ষ থেকে দলীল হিসেবে পেশকৃত হাদীস হানাফী মাযহাবের দলীল হিসেবে গণ্য করা হয়। কেননা হযরত ইয়ামীন ইবনে আসাম (আ) এই বিবাহে ঘটক বা দূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। দূত সাধারণত অতি নিকট থেকে প্রত্যক্ষ করে থাকেন। এর জওয়াবে এ কথা বলা যায়, যা হযরত মায়মুনা (রা)-এর হাদীসের জওয়াবে বলা হয়েছে যে, বিবাহের ব্যাপারে তাঁর যোগাযোগ তাঁর বর্ণনাকে শক্তিশালী করে, না কি আঁ হযরত (সা)-এর محرم ও غيرمحرم অর্থাৎ ইহরাম ও ইহরামবিহীন হওয়া সম্পর্কে বস্তুত এটা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এতে তিনি ও অন্যান্য সাহাবা (রা) একই সমান, বরং অন্যান্য সাহাবা, বিশেষ করে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) সর্বদিক দিয়ে তাঁর উপর অগ্রগণ্য। এছাড়া সনদের দিক থেকেও এই হাদীসে বিভিন্ন প্রকার কথা রয়েছে। প্রথমত বুখারী ও মুসলিম শরীফে এ হাদীস গ্রহণ করা হয়নি। তিরমিযী শরীফে এই হাদীস গৃহীত হয়েছে কিন্তু তিরমিযী তাই হাদীসকে শুধু হাসান (حسن) বলেছেন। যেন তাঁর মতে এই হাদীস বিশুদ্ধতার (صحة) মর্যাদা পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। দ্বিতীয়ত এই হাদীসের যোগসূত্রে (اتصال) ইবনে আবদুল বার-এর অভিযোগ রয়েছে। কেননা সুলায়মান ইবনে ইয়াসারের জন্মের তিন বৎসর পর আবু রাফে' ইনতিকাল করেন। সুতরাং আবূ রাফে' থেকে সুলায়মানের শ্রবণ (سماع) কিভাবে প্রমাণিত হয়? তৃতীয়ত মাতার ওয়াররাক (مطروراق) এই সনদে দুর্বল (ضعيف)। ইয়াহহিয়া ইবনে সাঈদ এবং ইমাম আহমদ উভয়ে তাঁকে দুর্বল বা ضعيف বলেছেন।
এ যাবত فعلى বা কর্মমূলক হাদীস-এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এবার قولى বা বর্ণনামূলক হাদীস নিয়ে আলোচনা করা হবে। এখানে হযরত উসমান (রা)-এর বর্ণনামূলক হাদীস রয়েছে। সুতরাং এ ব্যাপারে একটি নীতি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যে, বর্ণনামূলক হাদীস বা قولى حديث কর্মমূলক বা فعلى حديث -এর উপর অগ্রগণ্য এবং এটা ঐ সময়, যখন সনদের দিক দিয়ে قولى حديث বা বর্ণনামূলক হাদীস فعلى حديث বা কর্মমূলক হাদীস-এর উপর অধিক শক্তিশালী বাঁ নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু এখানে তা নেই। কেননা হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনাকারী ফকীহ, হাফিয ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রয়েছেন যাঁদের বিপরীত হযরত উসমান (রা)-এর হাদীসে একজনও এঁদের সমকক্ষ নেই। যেমন : সাঈদ ইবনে যুবায়র, আতা, তাউস, মুজাহিদ, ইকরামা, জাবির ইবনে যায়দ (র)। পক্ষান্তরে হযরত উসমানের হাদীস নাবীয়াহ ইবনে ওয়াহাব থেকে বর্ণিত হয়েছে, যিনি আমর ইবনে দীনারের মত মর্যাদাসম্পন্ন নন এবং জাবির ইবনে যায়দের সমকক্ষও নন। এমন কি মাসরূকের (مسروق) সমপর্যায়েরও নন- যিনি হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন।
আল্লামা কাসতাল্লানী (علامه قسطلانى) ইরশাদে সারী নামক গ্রন্থে বলেছেন, ইমান বুখারী হযরত উসমান (রা)-এর হাদীসকে দুর্বল (ضعيف) বলেছেন। কেননা এই সনদে নাবীয়াহ ইবনে ওয়াহাব রয়েছেন। তৃতীয়ত قولى حديث و فعلى حديث এর মধ্যে এভাবে সমন্বয় করা যায় যে, এটা نهى تنزيهي যেমন বিবাহের পয়গাম, نهى تحريمي নয়। অর্থাৎ ইহরাম অবস্থায় এটা হাজীদের মর্যাদা ও পরিবেশের পরিপন্থী। কেননা এ ধরনের কাজে ব্যস্ত হওয়ার কারণে তাদের ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। এ সময় পয়গাম প্রেরণ, বর-কনের প্রশ্ন-উত্তর ও মেহমানদের আপ্যায়নসহ বিভিন্ন কাজে এমন ব্যস্ত হতে হয়, যার ফলে তার সমস্ত ইবাদতে বিঘ্ন ও একাগ্রতা দূরীভূত হয়ে পেরেশানীর সৃষ্টি হয়। তবে যেহেতু হযরত (সা)-এর সব কিছুর উপর পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ ছিল, তাই তাঁর জন্য এগুলো জায়েয ছিল। অতঃপর শাফিঈদের ধারণা ও মতামত এই ব্যাখ্যার সমর্থন করে যে, তাঁরা ولا يخطب এর মধ্যে نهى تنزيهي মেনে নিয়েছেন। সুতরাং لاينكح যেহেতু এর মতই, তাহলে এখানে কেন মেনে নেয়া হবে না? সুতরাং উপরের আলোচনা দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, কুরআন, সুন্নাহ ও কিয়াসের দৃষ্টিতে হানাফী মাযহাৰ সঠিক। والله اعلم بحقيقة الحال
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ২৩৯ | মুসলিম বাংলা