মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৭. হজ্ব - উমরার অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩৭
মুহরিমের জন্য শিকারের গোশত খাওয়া
হাদীস নং-২৩৭

হযরত আবু কাতাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন আমি নবী করীম (ﷺ)-এর একদল সাহাবার সাথে গমন করি এবং সমগ্র দলের মধ্যে আমি ছাড়া কোন ব্যক্তি ইহরামবিহীন ছিলেন না (অন্য সবাই ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ছিলেন)। এরপর একদল বন্য গাধার প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ল। আমি সামনে এগিয়ে আমার ঘোড়ার উপর আরোহণ করি কিন্তু জলদি করার কারণে চাবুকের কথা ভুলে যাই। আমি আমার সাথীদেরকে বললাম, আমার চাবুকটি একটু উঠিয়ে দিন। কিন্তু তারা অস্বীকার করেন। তখন আমি নিজেই নেমে আমার চাবুক নিলাম। অতঃপর আমি গাধাগুলোর পিছনে অনুসরণ করতে লাগলাম, অবশেষে এগুলোর মধ্য থেকে একটি শিকার করলাম। এরপর ঐ শিকারের গোশত আমিও খেয়েছি এবং তারাও (সাহাবগণ) খেয়েছেন।
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، قَالَ: " خَرَجْتُ فِي رَهْطٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَيْسَ فِي الْقَوْمِ حَلَالٌ غَيْرِي، فَنَظَرْتُ نَعَامَةً، فَسِرْتُ إِلَى فَرَسِي، فَرَكِبْتُهَا وَعَجِلْتُ عَنْ سَوْطِي، فَقُلْتُ لَهُمْ: نَاوِلُونِيهِ فَأَبَوْهُ، فَنَزَلْتُ عَنْهَا، فَأَخَذْتُ سَوْطِي، فَطَلَبْتُ النَّعَامَةَ، فَأَخَذْتُ مِنْهَا لَحْمًا، فَأَكَلْتُ وَأَكَلُوا "

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত আবু কাতাদা (রা) বর্ণিত উপরোক্ত হাদীস অন্যান্য সহীহ হাদীসেও বর্ণিত আছে। হাদীসে বর্ণিত বিষয়টি একটি বিতর্কিত মাসয়ালা, আলিমদের মধ্যে মতপার্থক্যের বিষয় হলো এই যে, হালাল বা ইহরামবিহীন ব্যক্তি যদি কোন শিকার করে, তবে তা মুহরিম বা ইহরামরত ব্যক্তি খেতে পারবে কি না? হযরত ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে খেতে পারবে। তবে শর্ত হলো এই যে, ইহরামরত ব্যক্তি শিকারীকে কোন প্রকার সাহায্য যদি না করে থাকে এবং তার জন্য ঐ শিকার না করা হয়ে থাকে, তবেই খাওয়া জায়েয হবে। ইমাম শাফিঈ (র)এর মতে যদি ইহরামবিহীন ব্যক্তি মুহরিম (محرم) বা ইহরামরত ব্যক্তির জন্য শিকার করে থাকে, তা হলে এই শিকার তার জন্য হালাল হবে না। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মাযহাবের দলীল হলো হযরত জাবির (রা) বর্ণিত মরফূ' হাদীস যা আবূ দাউদ, তিরমিযী ও নাসাঈ রিওয়ায়েত করেছেনঃ صيد البر لكم حلال مالم تصيدوه او يصادلكم….. الخ “স্থলজ শিকার তোমাদের জন্য হালাল যদি তোমরা শিকার না করে থাক অথবা তা তোমাদের জন্য শিকার করা হয়।"
ইমাম আবূ হানীফা (র) উপরে হাদীস দ্বারা তাঁর মাযহাবের স্বপক্ষে দলীল পেশ করেছেন। সিহাহ সিত্তাহ বা ছয়টি সহীহ হাদীসেও এর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে যে, এক সফরে হযরত কাতাদা (রা) এবং কয়েকজন সাহাবা (রা) পিছনে ছিলেন। পথিমধ্যে হযরত কাতাদা (রা) একটি গাধা শিকার করেন। কোন কোন সাহাবা এটা খেয়েছেন আবার কেউ কেউ খাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। যখন তাঁরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে এসে মিলিত হয়েছেন, তখন বিষয়টি তাঁর খেদমতে পেশ করেন। আঁ হযরত (সা) শুধু এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কি আবূ কাতাদাকে শিকারের কথা বলে দিয়েছিলে অথবা এর জন্য প্রেরণা বা উৎসাহ দিয়েছিলে? সবাই এটা অস্বীকার করলেন। তখন হুযূর (সা) বললেনঃ তোমরা এর গোশত খেতে পার। সুতরাং এতে প্রতীয়মান হয় যে, গোশত হালাল না হওয়ার জন্য এ সমস্ত কারণই যথেষ্ট যা হুযুর (সা) বর্ণনা করেছেন । যদি অন্য কোন বিষয় হালাল হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধকতা হতো, যেমন শিকার তোমাদের জন্য করা হয়নি। তাহলে তিনি এটা খোলাখুলিভাবে জিজ্ঞাসা করতেন। সুতরাং হযরত জাবির (রা) এবং হযরত কাতাদা (রা)-এর হাদীসের মধ্যে বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখানে হযরত কাতাদা (রা)-এর হাদীস অগ্রগণ্য হবে। কেননা এই হাদীস বুখারী ও মুসলিমসহ অন্য হাদীস গ্রন্থেও রয়েছে।
পক্ষান্তরে বিরোধী পক্ষের হাদীস বুখারী ও মুসলিম শরীফে নেই। অথবা এই হাদীসের ব্যাখ্যা করা হলে উভয়ের মধ্যে সমন্বয়ে হয়ে যাবে। যেমন او يصادلكم -এর অর্থ হলো এই যে, তোমাদের নির্দেশ ও প্রেরণায় এটা শিকার করা হয়েছে এবং অধিকাংশ সময় এরূপ হয়ে থাকে যে, ফরমায়েশের কারণেই কারো জন্য কিছু করা হয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান