মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৬. রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ২০৫
রোযার ফযীলত
২০৫। হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, বিলাল যখন রাতে আযান দিতে থাকে তখন তোমরা পানাহার করতে থাক, যতক্ষণ পর্যন্ত ইবনে উম্মে মাকতূম আযান না দেয়। কেননা যখন সে আযান দেয়, তখন নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যায়।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ بِلَالًا يُنَادِي بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُنَادِيَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، فَإِنَّهُ يُؤَذِّنُ، وَقَدْ حَلَّتِ الصَّلَاةُ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উপরোক্ত হাদীস একই বাক্য সহকারে বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ও অন্য হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি বিতর্কিত মাসয়ালা রয়েছে। ইমাম শাফিঈ (র), ইমাম মালিক (র) এবং ইমাম আহমদ (র)-এর মতে ফজরের নামাযের আযান, বিশেষ করে ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ সুবহে সাদিকের পূর্বে দেওয়া জায়েয আছে। ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে ফজর নামায সহ অন্য যে কোন নামাযের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে আযান দেওয়া জায়েয নেই। উপরে বর্ণিত হাদীসের দ্বারা তিনজন ইমাম তাঁদের দলীল পেশ করে থাকেন। ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে অনেক সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে ফজরের আযান দেওয়া কখনো জায়েয নয়। যেমন আবূ দাউদ শরীফে হযরত শাদ্দাদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত বিলাল (রা) একবার সুবহে সাদিকের পূর্বে ফজরের আযান দেন। তখন হুযুর (সা) তাঁকে নির্দেশ দান করেন, যেন তিনি চিৎকার করে এই ঘোষণা দেন যে, আমি ভুলক্রমে সময় হওয়ার পূর্বেই আযান দিয়ে ফেলেছি। এটা শুধু এইজন্য, যাতে মানুষের ভুল ধারণা দূর হয়ে যায় এবং এটা যেন মনে না করে যে, ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে আযান জায়েয আছে।
এবার ইমামত্রয়ের দলীল উপরোক্ত হাদীসের জওয়াবে বলা যায়, উক্ত ঘটনা ছিল রমযান মাসের। যেমন ইমাম মুহাম্মদ (র) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, পবিত্র রমযান মাসে হযরত বিলাল (রা)-এর আযান সাহরী খাওয়ার জন্য একটি আহবানের মত ছিল, এটা ফজর নামাযের আযান ছিল না এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা) ফজর নামাযের আযান দিতেন। সুবহে সাদিকের পর কিভাবে পানাহার জায়েয হতে পারে? সুতরাং হযরত বিলাল (রা)-এর থেকে ফিরে থাকা ঠিক নয়। খুব সম্ভব বরং কিয়াসও এটাই বলে যে, আঁ হযরত (সা)-এর উপরোক্ত নির্দেশের মূল উদ্দেশ্য হলো এই যে, হযরত বিলাল (রা) যেহেতু ভুল করেন, তাই সাহরী শেষ করার ব্যাপারে তাঁর আযানের উপর নির্ভর করো না; বরং হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম (র) আযানের উপর নির্ভর কর। কেননা তিনি অন্ধ ছিলেন। তিনি যখন আযান দিতেন, তখন ফর্সা হয়ে যেত এবং লোকজন তাকে বলত, সুবহে সাদিক হয়ে গেছে। যেমন মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিকে বর্ণিত আছে, ঐ সময় পানাহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। এরদ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হানাফী মাযহাব সঠিক।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন