মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ১৬২
নামাযে কথাবার্তা বলা নিষিদ্ধ
১৬২। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন আবিসিনিয়া হতে আগমণ করেন, তখন হুযূর (ﷺ)-কে সালাম পেশ করেন। এই সময় তিনি নামাযে মগ্ন ছিলেন। সুতরাং তিনি সালামের জওয়াব দান করেন নি। যখন তিনি নামায থেকে অবসর হলেন, তখন হযরত ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, আমি আল্লাহ এবং তাঁর নিয়ামত অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর ক্রোধ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। নবী করীম (ﷺ) বললেনঃ আশ্রয় চাওয়ার কারণ কি? হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) আরয করলেন, আমি আপনাকে সালাম পেশ করেছি কিন্তু আপনি এর জাওয়াব দান করেন নি (এর ফলে আমি চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়েছি)। তখন নবী (স) বলেনঃ নিশ্চয়ই নামাযে আল্লাহর প্রতি একাগ্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয়ে থাকে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেন, এরপর থেকে আমরা নামাষের মধ্যে সালামের জওয়াব দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّهُ لَمَّا قَدِمَ مِنْ أَرْضِ الْحَبَشَةِ سَلَّمَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ يُصَلِّي، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلَامَ، فَلَمَّا انْصَرَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ ابْنُ مَسْعُودٍ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ سَخَطِ نِعْمَةِ اللَّهِ، قَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَمَا ذَاكَ؟ ! قَالَ: سَلَّمْتُ عَلَيْكَ، فَلَمْ تَرُدَّ عَلَيَّ، قَالَ: «إِنَّ فِي الصَّلَاةِ لَشُغْلًا» .
فَلَمْ نَرُدَّ السَّلَامَ عَلَى أَحَدٍ مِنْ يَوْمِئِذٍ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে নামাযের মধ্যে কথাবার্তা এবং সালামের জওয়াব দেওয়া জায়েয ছিল। ইসলামের উন্নতি ও অগ্রগতির সাথে সাথে কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাই ইমাম বুখারী ও মুসলিম হযরত যায়দ ইবনে আরকাম (রা) থেকে বর্ণনা যে, ইসলামের প্রথম যুগে আমরা নামাযে লোকের সাথে কথাবার্তা বলতাম। কিন্তু যখন পবিত্র কুরআনের আয়াতঃ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ (আল্লাহর জন্য নামাযে চুপ হয়ে দাড়াও) নাযিল হয়, তখন আমাদের উপর চুপ থাকার নির্দেশ হয় এবং আমরা নামাযে কথাবার্তা বলা বন্ধ করে দেই। হযরত ইবনে মাসউদ (রা) আবিসিনিয়া গমনের পূর্বে নামাযে কথাবার্তা ও সালামের জওয়াব দেওয়ার বিধান ছিল। যখন তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন, তখন তাঁর মনে পূর্ববর্তী বিধানের কথা স্মরণ ছিল। অথচ ইতিমধ্যে পূর্ববর্তী বিধান রহিত হয়ে নামাযে চুপ থাকার বিধান (وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ) নাযিল হয়। হুযুর (সা)-এর পক্ষ থেকে যখন সালামের জাওয়াব পাওয়া যায়নি, তখন হযরত ইবনে মাসউদ (রা) আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই ভেবে যে, তাঁর কোন আচরণের কারণে হুযুর (সা) কোন প্রকার মনঃক্ষুণ হলেন কিনা। তাই প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, নামাযে যেহেতু সরাসরি আল্লাহর সাথে যোগাযোগ ও একতা সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাই নামাযে কথাবার্তা বলা হলে ঐ একাগ্রতা বিনষ্ট হয়ে যায়। তবে প্রথম যুগে তা জায়েয ছিল এবং পরে রহিত হয়ে যায়।