মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৪. নামায অধ্যায়

হাদীস নং: ১৫৫
বিতরের বর্ণনা
১৫৫। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিতরের তিন রাকাআত আদায় করতেন। প্রথম রাকাআতে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى দ্বিতীয় রাকাআতে قُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُونَ এবং তৃতীয় রাকাআতে قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ তিলাওয়াত করতেন।
অন্যএক রিওয়ায়েতে আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বিতরের প্রথম রাকাআতে الحمد لله এবং سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى দ্বিতীয় রাকাআতে الحمد لله এবং قُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُونَ এবং তৃতীয় রাকাআতে الحمد لله এবং قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ তিলাওয়াত করতেন।
অপর এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বিতর তিন রাকাআত পড়তেন।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ: " كَانَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ، يَقْرَأُ فِي الْأُولَى: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَفِي الثَّانِيَةِ: بِقُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُونَ، وَفِي الثَّالِثَةِ: بِقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ "، وَفِي رِوَايَةٍ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَقْرَأُ فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى مِنَ الْوِتْرِ: بِأُمِّ الْكِتَابِ وَسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى، وَفِي الثَّانِيَةِ: بِأُمِّ الْقُرْآنِ وَقُلْ يَأَيُّهَا الْكَافِرُونَ، وَفِي الثَّالِثَةِ: بِأُمِّ الْكِتَابِ وَقُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ".
وَفِي رِوَايَةٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «كَانَ يُوتِرُ بِثَلَاثٍ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উপরোক্ত হাদীসের প্রেক্ষাপটে বিতর কত রাকাআত, এটা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে বিতর তিন রাকাআত এবং ইমাম মালিক (রা) ও ইমাম শাফিঈ (র) বিতর এক রাকাআতের পক্ষে মত পোষণ করেছেন। উভয় দল বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হযরত ইবনে উমর (রা)-এর হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। বাক্য বিভিন্ন হলেও এ সবের অর্থ প্রায় নিকটবর্তী। যেমন এক ব্যক্তি হুযূর (সা)-এর নিকট রাতের নামায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন তিনি বলেনঃمثنى مثنى، فإذا خشيت الصبح، فصل ركعة توتر لك صلوتك “(রাতের নামায) দু'-দু'রাকাআত, যখন তুমি ভোর হওয়ার আশংকা কর, তখন এক রাকাআত পড়ে নাও। এতে তোমার নামায বিতর (বেজোড়) হয়ে যাবে।" অন্য এক রিওয়ায়েতে আছেঃ فاوتروا بواحدة "এক রাকাআত মিলিয়ে দু'রাকাআতকে বিতর করে নাও।"

ইমাম আবু হানীফা (র) স্বীয় মযহাবের স্বপক্ষে কতিপয় জোরালো দলীল পেশ করেছেন। প্রথমতঃ হাদীস يوتر بثلث "আঁ হযরত (সা) বিতর তিন রাকাআত পড়তেন।" অতঃপর প্রত্যেক রাকাআতের জন্য পৃথক কিরাআত নির্ধারিত ছিল এবং পৃথক তাহরিমা ব্যতীত তৃতীয় রাকাআত মিলিয়ে পড়ার বিধান জারী ছিল। দ্বিতীয়তঃ বুখারী ও মুসলিম শরীফের শর্ত অনুযায়ী হাকেম হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلث لا يسلم إلا في آخرهن “রাসূলুল্লাহ্ (সা) বিতর তিন রাকাআত পড়তেন এবং শেষে সালাম ফিরাতেন।” তৃতীয়তঃ নাসাঈ শরীফে হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত আছে- "নবী করীম (সা) বিতরের দুই রাকাআতে সালাম ফিরাতেন না।" চতুর্থতঃ দারে কুতনী হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন, وتر الليل ثلاث كوتر النهار صلوة المغرب "রাতের বিতর নামায় হলো তিন রাকাআত যেমন দিনের বিতর নামায় মাগরিব হলো তিন রাকাআত।" এখানে একটি প্রশ্ন হতে পারে যে, এই হাদীস মরফু, সহীহ্ নয়। সুফিয়ান। সাওরী ও অন্যান্য আইম্মা এটি মওকৃষ (موقوف) হিসেবে গ্রহণ করেছেন। সুতরাং এখানে বলা যায়, হাদীসে মওকূফও দলীল হওয়ার মর্যাদা রাখে। সুতরাং তৃতীয় রাকাআতকে প্রথম দু'রাকাআত থেকে পৃথক করার কোন সুযোগ নেই। অতঃপর এই মতের স্বপক্ষে আরো দলীল হলো এই যে, ইমাম তাহাবী আবূ খালিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, আবুল আলিয়াকে বিতর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন তিনি বলেছেন: সাহাবায়ে কিরাম (রা) আমাদেকে মাগরিবের নামাযের মত বিতর শিক্ষা দিয়েছেন। এটা হলো রাতের বিতর এবং মাগরিব হলো দিনের বিতর। পঞ্চমতঃ ইমাম বুখারী (র) কাসিম ইবনে মুহাম্মদ (র) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন: আমরা লোকদেরকে বিতরের তিন রাকাআত পড়তে দেখেছি। ষষ্ঠতঃ হযরত উমর (রা)-এর আমলও এটাই ছিল। হাকেম মুস্তাদরাক নামক গ্রন্থে হাবীবে মুআল্লিম থেকে বর্ণনা করেন যে, কোন এক ব্যক্তি হযরত হাসান (রা)-এর নিকট বলেন : হযরত ইবনে উমর (রা) বিতরের দু'রাকাআতের পর সালাম ফিরিয়ে থাকেন। হযরত হাসান (রা) বলেনঃ হযরত উমর (রা) হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে অধিক ফকীহ ছিলেন। তিনি দু'রাকাআতের পর তাকবীর বলে উঠে যেতেন। সপ্তমতঃ ইবনে আবী শায়বা হযরত হাসান (রা) থেকে বর্ণনা করেন اجتمع المسلمون على ان الوتر ثلث لا يسلم الا فى اخر منها "জমহুর মুসলমান এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, বিতর হলো তিন রাকাআত এবং নামায শেষ করা ব্যতীত কেউ সালাম ফিরায়নি।” এরপর ইমাম মুহাম্মদ (র) মুয়াত্তায় হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, এক রাকাআত কখনো যথেষ্ট নয় এবং উভয় ইমামের দলীল দেখা যেতে পারে। فاوتر بواحدة অথবা توتر لك صلوتك যদি উপরোক্ত দু'হাদীস শাফিঈ ও মালিকী মাযহাবের দলীল হয়, তা হলে হানাফী মাযহাবেরও এই হাদীস দলীল হবে। কেননা এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, ঐ দু'রাকাআত নামাযের সাথে এক রাকাআত মিলিয়ে তিন রাকাআত বিতর করে নাও। কিন্তু নতুন তাহরীমার মাধ্যমে বিতরকে এক রাকাআত হিসেবে পৃথক আদায় করে নেয়া- এটা হাদীসের অর্থ নয়। এটা শুধু মনের খেয়াল ও ধারণা। অতঃপর এরূপ শব্দ, যাতে উভয় অর্থের প্রকাশ পায়, তা কিভাবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। বিশেষ করে বিরোধী পক্ষের নিকট যখন সুস্পষ্ট মরফূ' ও মওকুফ সহীহ হাদীস রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ فإذا خشيت الصبح এর দৃষ্টিকোণ থেকে ভোরে সূর্য উদয় হওয়ার আশংকার সাথে সম্পৃক্ত। বস্তুত এই নির্দেশ শর্ত না পাওয়ার ফলে অকার্যকর হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে সহীহ হাদীসসমূহের দৃষ্টিকোণ থেকে তৃতীয় পদ্ধতি জায়েয নয় এবং দু'রাকাআতের পর নতুন তাহরিমার মাধ্যমে পৃথক করে এক রাকাআত পড়া জায়েয নয়।
মুসনাদে আবু হানীফা রহঃ - হাদীস নং ১৫৫ | মুসলিম বাংলা