মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
৪. নামায অধ্যায়
হাদীস নং: ১৫৩
বিতরের বর্ণনা
১৫৩। হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ তেমাদের উপর ফরয নামাযের পর আর এক নামায অতিরিক্ত করে দিয়েছেন, তা হলো বিতর।
অপর এর রিওয়ায়েতে আছে, আল্লাহ্ তোমাদের উপর নামায ফরয করেছেন এবং অতিরিক্ত করে দিয়েছেন বিতর।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, আল্লাহ্ তোমাদের জন্য এক নামায অতিরিক্ত করেছেন তা
হলো বিতর। সুতরাং এর হিফাযত কর।
অপর এর রিওয়ায়েতে আছে, আল্লাহ্ তোমাদের উপর নামায ফরয করেছেন এবং অতিরিক্ত করে দিয়েছেন বিতর।
অন্য এক রিওয়ায়েতে আছে, আল্লাহ্ তোমাদের জন্য এক নামায অতিরিক্ত করেছেন তা
হলো বিতর। সুতরাং এর হিফাযত কর।
عَنْ أَبِي يَعْفُورَ الْعَبْدِيِّ، عَنْ مَنْ حَدَّثَهُ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى زَادَكُمْ صَلَاةً وَهُوَ وِتْرٌ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى افْتَرَضَ عَلَيْكُمْ، وَزَادَكُمُ الْوِتْرَ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى زَادَكُمْ صَلَاةَ الْوِتْرِ» ، وَفِي رِوَايَةٍ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى زَادَكُمْ صَلَاةً، وَهِيَ الْوِتْرُ، فَحَافِظُوا عَلَيْهَا»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত ইমাম আবূ হানীফা (র) থেকে বিতর সম্পর্কে বিভিন্ন বিওয়ায়েত বর্ণিত আছে, সুতরাং এটা জানা একান্ত প্রয়োজন যে, তিনি বিতরকে ফরয, ওয়াজিব অথবা সুন্নত মনে করতেন। তবে ওয়াজিব হওয়ার রিওয়ায়েত অধিক সহীহ বলে মনে হয়। কেননা বিতর ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে কয়েকটি সহীহ হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা যায়। উপরোক্ত হাদীস এর মধ্যে অন্যতম। এই হাদীস বিভিন্ন সাহাবা (রা) থেকে বর্ণিত আছে। এঁদের মধ্যে হযরত খারিজা ইবনে হুযাফা (রা), হযরত আমর ইবনে আস (রা), হযরত উকবা ইবনে আমের (রা), হযরত ইবনে আব্বাস (রা), হযরত আবূ বসরা গাফ্ফারী (রা), এবং হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা) অন্যতম। এই হাদীসের সনদের ক্রমধারায় কারো কারো কিছু সমালোচনা রয়েছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে থাকে। মোটকথা এই হাদীস সর্বদিক দিয়ে ওয়াজিব হওয়াকে সমর্থন করে। কেননা হাদীসে زادكم শব্দ রয়েছে। এতে বিতর সুন্নত না হওয়ার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে। বরং এরদ্বারা ওয়াজিব হওয়াকেই প্রমাণ করেছে। কেননা অতিরিক্ত (زيادتى) হওয়ার ইঙ্গিত আল্লাহর দিকে করা হয়েছে, নবী করীম (সা)-এর দিকে নয়, হলে এটা সুন্নত হতো। ফরয এইজন্য নয় যে, এ হাদীস অকাট্য দলীল (دليل قطعى) নয়। সুতরাং ফরয ও সুন্নতের মধ্যবর্তী একটি হতে হবে। দ্বিতীয়ত অতিরিক্ত (زيادتى) দ্বারা এই বিষয়ের দিকে সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা ওয়াজিবের জন্য অতিরিক্ত (زيادتى) নির্ধারিত সংখ্যা দ্বারা হবে। অধিকন্তু এর কোন সংখ্যা গণনা নির্ধারিত নেই যার দ্বারা অতিরিক্ত (زيادتى) করা যাবে। তৃতীয়ত কোন বস্তুর উপর অতিরিক্ত বৃদ্ধি করতে হলে একই শ্রেণীর বস্তু দ্বারা তা স্বাভাবিক। এখানে ফরযের উপর বৃদ্ধি করা হয়েছে, তাই এটাও ফরয হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু এর জন্য অকাট্য দলীল (دليل قطعى) নেই বলে ফরয না হয়ে ওয়াজিব হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ দারে কুতনী গ্রন্থে আমর ইবনে শুআইব (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হলো, তখন আমরা একত্র হলাম। হামদ ও সানার পর তিনি এই বাক্য বর্ণনা করেন। অপর এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, তিনি এই অবস্থায় বের হলেন যে, তাঁর পবিত্র চেহারা লাল ছিল। তিনি মিম্বরের উপর আরোহণ করেন এবং হামদ ও সানার পর এই হাদীস বর্ণনা করলেন। সুতরাং একত্র করা, চেহারা লাল হওয়া, হামদ ও সানা পাঠ করা, এই সমস্ত বিতরের সুন্নতের উপর অন্য কিছু হওয়ার গুরুত্ব প্রমাণ করে। হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর হাদীসে فصلوها নির্দেশবাচক শব্দ রয়েছে। আমর ইবনে শুআইব (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে امرنا শব্দ রয়েছে। অর্থাৎ আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত হযরত আবূ আইয়ুন আনসারী (রা) থেকে আবূ দাউদে বর্ণিত হাদীস বিতর ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ বহন করে। এ হাদীসে বলা হয়েছে: الوتر حق على كل مسلم "বিতর আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর হক বা কর্তব্য"। হক-এর আদায় যেহেতু ওয়াজিব, তাই এরদ্বারাও বিতর ওয়াজিব বলে প্রমাণিত হয়। আবু দাউদ শরীফে ইবনে বুরায়দা (রা) থেকে একই হাদীস বর্ণিত আছে। এতে কিছু অতিরিক্ত রয়েছে: فمن لم يوتر فليس منا "যে বিতর আদায় করে না, সে আমাদের মধ্যে গণ্য নয়।" এ বাক্যটি তিনি তিনবার বলেছেন। সুতরাং এরূপ কঠোর হুঁশিয়ারী এবং উচ্চস্বরে তা তিনবার উচ্চারণ করা বিতর ওয়াজিব হওয়াকে প্রমাণিত করে। মুসলিম শরীফে হযরত আবূ সাঈদ (রা) থেকে امرنا শব্দ বর্ণিত আছে যা ওয়াজিব হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে। হযরত ইমাম মালিক (র) বর্ণনা করেন, কোন এক ব্যক্তি হযরত ইবনে উমর (রা)-কে জিজ্ঞাসা করেন যে, বিতর কি ওয়াজিব? তিনি বলেনঃ বিতর হুযূর (সা) ও মুসলমানগণ পড়েছেন। প্রশ্নকারী পুনরায় একই প্রশ্ন করেন। তিনিও একই জওয়াব প্রদান করেন। তিনবার একই ধরনের প্রশ্ন ও উত্তর চলে। এরদ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিতর ওয়াজিব। অধিকন্তু এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি এ কথা বলতে চেয়েছেন যে, আঁ হযরত (সা) এবং মুসলমানগণ যখন সর্বদা এই নামায আদায় করেছেন, তা হলে কেন এটা ওয়াজিব হবে না। সুতরাং এই সমস্ত রিওয়ায়েতের বাক্যসমূহ কোনটা সুস্পষ্ট, কোনটা ইঙ্গিতে বিতর ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে প্রকাশ্য ও স্পষ্ট দলীল- যাতে কোন সন্দেহ নেই।
দ্বিতীয়তঃ দারে কুতনী গ্রন্থে আমর ইবনে শুআইব (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হলো, তখন আমরা একত্র হলাম। হামদ ও সানার পর তিনি এই বাক্য বর্ণনা করেন। অপর এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, তিনি এই অবস্থায় বের হলেন যে, তাঁর পবিত্র চেহারা লাল ছিল। তিনি মিম্বরের উপর আরোহণ করেন এবং হামদ ও সানার পর এই হাদীস বর্ণনা করলেন। সুতরাং একত্র করা, চেহারা লাল হওয়া, হামদ ও সানা পাঠ করা, এই সমস্ত বিতরের সুন্নতের উপর অন্য কিছু হওয়ার গুরুত্ব প্রমাণ করে। হযরত আবূ হুরায়রা (রা)-এর হাদীসে فصلوها নির্দেশবাচক শব্দ রয়েছে। আমর ইবনে শুআইব (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে امرنا শব্দ রয়েছে। অর্থাৎ আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত হযরত আবূ আইয়ুন আনসারী (রা) থেকে আবূ দাউদে বর্ণিত হাদীস বিতর ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ বহন করে। এ হাদীসে বলা হয়েছে: الوتر حق على كل مسلم "বিতর আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর হক বা কর্তব্য"। হক-এর আদায় যেহেতু ওয়াজিব, তাই এরদ্বারাও বিতর ওয়াজিব বলে প্রমাণিত হয়। আবু দাউদ শরীফে ইবনে বুরায়দা (রা) থেকে একই হাদীস বর্ণিত আছে। এতে কিছু অতিরিক্ত রয়েছে: فمن لم يوتر فليس منا "যে বিতর আদায় করে না, সে আমাদের মধ্যে গণ্য নয়।" এ বাক্যটি তিনি তিনবার বলেছেন। সুতরাং এরূপ কঠোর হুঁশিয়ারী এবং উচ্চস্বরে তা তিনবার উচ্চারণ করা বিতর ওয়াজিব হওয়াকে প্রমাণিত করে। মুসলিম শরীফে হযরত আবূ সাঈদ (রা) থেকে امرنا শব্দ বর্ণিত আছে যা ওয়াজিব হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে। হযরত ইমাম মালিক (র) বর্ণনা করেন, কোন এক ব্যক্তি হযরত ইবনে উমর (রা)-কে জিজ্ঞাসা করেন যে, বিতর কি ওয়াজিব? তিনি বলেনঃ বিতর হুযূর (সা) ও মুসলমানগণ পড়েছেন। প্রশ্নকারী পুনরায় একই প্রশ্ন করেন। তিনিও একই জওয়াব প্রদান করেন। তিনবার একই ধরনের প্রশ্ন ও উত্তর চলে। এরদ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিতর ওয়াজিব। অধিকন্তু এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি এ কথা বলতে চেয়েছেন যে, আঁ হযরত (সা) এবং মুসলমানগণ যখন সর্বদা এই নামায আদায় করেছেন, তা হলে কেন এটা ওয়াজিব হবে না। সুতরাং এই সমস্ত রিওয়ায়েতের বাক্যসমূহ কোনটা সুস্পষ্ট, কোনটা ইঙ্গিতে বিতর ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে প্রকাশ্য ও স্পষ্ট দলীল- যাতে কোন সন্দেহ নেই।
