মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
৪. নামায অধ্যায়
হাদীস নং: ১৫২
সওয়ারী বা বাহনের উপর নামায
১৫২।হযরত মুজাহিদ (রাহঃ) বলেনঃ মক্কা থেকে মদীনা গমনের সময় আমি হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ)-এর সাথী ছিলাম। তিনি নিজের সাওয়ারীর (উটের) উপর বসে মদীনার দিকে মুখ করে নামায আদায় করেন। (রুকু ও সিজদার জন্য) তিনি ইশারা করতেন। কিন্তু ফরয ও বিতর সওয়ারী থেকে অবতরণ করে পড়তেন। মুজাহিদ (রাহঃ) বলেন: মদীনার দিকে সওয়ারীর মুখমণ্ডল থাকা অবস্থায় (কিবলা থেকে অন্যদিকে) সওয়ারীর উপর নামায পড়া সম্পর্কে আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সওয়ারীর উপর নফল নামায আদায় করতেন এ অবস্থায় যে, মুখ যে দিকে হোক না কেন এবং তিনি রুকু ও সিজদা ইশারা করে আদায় করতেন।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ: أَنَّهُ صَحِبَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا مِنْ مَكَّةَ إِلَى الْمَدِينَةِ، فَصَلَّى عَلَى رَاحِلَتِهِ قَبْلَ الْمَدِينَةِ يُومِي إِيمَاءً إِلَّا الْمَكْتُوبَةَ وَالْوِتْرَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَنْزِلُ لَهُمَا عَنْ دَابَّتِهِ، قَالَ: فَسَأَلْتُهُ عَنْ صَلَاتِهِ عَلَى رَاحِلَتِهِ، وَوَجْهُهُ إِلَى الْمَدِينَةِ؟ فَقَالَ لِي: «كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصلِّي عَلَى رَاحِلَتِهِ تَطَوُّعًا حَيْثُ كَانَ وَجْهُهُ، يُومِي إِيمَاءً»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা যে সমস্ত মাসয়ালা বের হয়ে থাকে, তা হলো এই যে, সফরে সওয়ারীর উপর কোন্ কোন্ নামায আদায় করা যায় এবং কোন্টি আদায় করা যায় না। ইমাম শাফিঈ (র) ও ইমাম আহমদ (র)-এর মাযহাব হলো এই যে, সফরে দু'নামায সওয়ারীর উপর আদায় করা যাবে। শুধু ফরয মাটির উপর নেমে আদায় করতে হবে। ইমাম শাফিঈ (র) দলীল হিসেবে বুখারী শরীফে হযরত নাফে'(রা)-এর সূত্রে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণিত হাদীস পেশ করেছেনঃكان ابن عمر يصلي على راحلته ويوتر عليها “হযরত ইবনে উমর (রা) সওয়ারীর উপর নামায পড়তেন এবং এর উপর বিতরের নামাযও পড়তেন।" ويخبر أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يفعله"এবং নবী করীম (সা) এরূপ করতেন বলে বর্ণনা করতেন।" এছাড়া হযরত সাঈদ ইবনে ইয়াসার (রা) বর্ণিত হাদীস [যা ইমাম মালিক (রা) তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন] দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। হাদীসের মূল বক্তব্য হলো এই যে, আমি এক সফরে হযরত ইবনে উমর (র)-এর সহযাত্রী ছিলাম। কিন্তু ঘটনাক্রমে আমি পিছনে পড়ে যাই। হযরত ইবনে উমর (রা) জিজ্ঞাসা করেন, তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, বিতর আদায় করছিলাম। তিনি বললেন, এ সম্পর্কে হুযুর (সা)-এর কোন উত্তম পদ্ধতি কি তোমার জানা নেই? আমি তাঁকে সাওয়ারীর উপর বিতর পড়তে দেখেছি।
ইমাম আবূ হানীফা (র) হযরত ইবনে উমর (রা)-এর হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং এই হাদীস তিনটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে। প্রথমত মুজাহিদ (র)-এর সূত্রে সুস্পষ্ট বর্ণিত আছে, হযরত ইবনে উমর (রা) ফরয ও বিতর নামায মাটির উপর আদায় করতেন। দ্বিতীয়ত হুসাইন (র)-এর সূত্রে ইমাম মুহাম্মদ (র)-এর মুয়াত্তা গ্রন্থে উল্লেখিত হাদীসে : فاذا كانت الفريضة او الوتر نزل فصلى "যখন ফরয অথবা বিতর নামায হতো তখন মাটিতে অবতরণ করতেন এবং নামায পড়তেন।” তৃতীয়ত হযরত নাফে' (রা)-এর সূত্রে ইমাম তাহাবী উল্লেখ করেছেন: كان يصلي على راحلته ويوتر بالارض "সওয়ারীর উপর তিনি (নফল) নামায পড়তেন এবং বিতর মাটির উপর পড়তেন।" এবার এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয়। যে, হযরত ইবনে উমর (রা) সওয়ারীর উপর বিতর আদায় করেছেন। অথবা হযরত সাঈদ ইবনে ইয়াসার (রা)-কে এরজন্য হিদায়াত প্রদান-এর ব্যাখ্যা হলো এই যে, সম্ভবত কোন ওযরের কারণে এরূপ হয়েছে, যেমন কাদা-পানি অথবা কোন ভয়ের কারণে তিনি সওয়ারী থেকে অবতরণ করতে পারেন নি। কেননা ওযরের কারণে ফরযও সওয়ারীর উপর পড়া যায়। অথবা ঐ সময় পর্যন্ত হয়ত বিতর ওয়াজিব হয়নি। কেননা ইসলামের প্রাথমিক যুগে শরীয়াতের আহকামের মধ্যে অনেক কিছু সহজ ও স্বাধীন ছিল। পরে এর সাথে কিছু বিধি-নিষেধ ও কঠোরতা আরোপ করা হয়। সওয়ারীর উপর যা পড়া হতো, তা শুধু সুন্নতের মধ্যে গণ্য হতো। নতুবা এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে, হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে সওয়ারীর উপর নামায পড়া সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত আছে, অথচ তিনি এর বিপরীত আমল করবেন?
ইমাম আবূ হানীফা (র) হযরত ইবনে উমর (রা)-এর হাদীস দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং এই হাদীস তিনটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে। প্রথমত মুজাহিদ (র)-এর সূত্রে সুস্পষ্ট বর্ণিত আছে, হযরত ইবনে উমর (রা) ফরয ও বিতর নামায মাটির উপর আদায় করতেন। দ্বিতীয়ত হুসাইন (র)-এর সূত্রে ইমাম মুহাম্মদ (র)-এর মুয়াত্তা গ্রন্থে উল্লেখিত হাদীসে : فاذا كانت الفريضة او الوتر نزل فصلى "যখন ফরয অথবা বিতর নামায হতো তখন মাটিতে অবতরণ করতেন এবং নামায পড়তেন।” তৃতীয়ত হযরত নাফে' (রা)-এর সূত্রে ইমাম তাহাবী উল্লেখ করেছেন: كان يصلي على راحلته ويوتر بالارض "সওয়ারীর উপর তিনি (নফল) নামায পড়তেন এবং বিতর মাটির উপর পড়তেন।" এবার এ হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয়। যে, হযরত ইবনে উমর (রা) সওয়ারীর উপর বিতর আদায় করেছেন। অথবা হযরত সাঈদ ইবনে ইয়াসার (রা)-কে এরজন্য হিদায়াত প্রদান-এর ব্যাখ্যা হলো এই যে, সম্ভবত কোন ওযরের কারণে এরূপ হয়েছে, যেমন কাদা-পানি অথবা কোন ভয়ের কারণে তিনি সওয়ারী থেকে অবতরণ করতে পারেন নি। কেননা ওযরের কারণে ফরযও সওয়ারীর উপর পড়া যায়। অথবা ঐ সময় পর্যন্ত হয়ত বিতর ওয়াজিব হয়নি। কেননা ইসলামের প্রাথমিক যুগে শরীয়াতের আহকামের মধ্যে অনেক কিছু সহজ ও স্বাধীন ছিল। পরে এর সাথে কিছু বিধি-নিষেধ ও কঠোরতা আরোপ করা হয়। সওয়ারীর উপর যা পড়া হতো, তা শুধু সুন্নতের মধ্যে গণ্য হতো। নতুবা এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে যে, হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে সওয়ারীর উপর নামায পড়া সম্পর্কে হাদীস বর্ণিত আছে, অথচ তিনি এর বিপরীত আমল করবেন?
