মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ
৪. নামায অধ্যায়
হাদীস নং: ৮১
নামায অধ্যায়
৮১। হযরত আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে, একবার হযরত আবু যর (রাযিঃ) নামায আদায় করেন এবং তা সংক্ষিপ্ত করেন (অর্থাৎ কয়েক রাকআত নামায আদায় করেন যার কিয়াম সংক্ষিপ্ত করেন) । কিন্তু অধিক পরিমাণে রুকু-সিজদা করেন। যখন নামায শেষে ফিরে আসেন তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একজন সাহাবী। কিন্তু এভাবে নামায আদায় করেন ? আবু যর (রাযিঃ) বলেন, আমি হুযূর (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি দরজা বুলন্দ করবেন ( করবেন)। সুতরাং আমার এ বিষয়টি পছন্দ হল যে, আমার কয়েকটি দরজা বৃদ্ধি হোক।
ইবরাহীম নখঈ (রাহঃ) থেকে অপর একটি রিওয়ায়েতে আছে যে, রাবাহ নামক স্থানে। যর (রাযিঃ)-এর নিকট দিয়ে এক ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। তিনি সংক্ষিপ্তভাবে নামায আদায় করছিলেন এবং অধিক পরিমাণে রুকু-সিজদা করেছেন (অর্থৎ রাকআতসমূহের মধ্যে কম সময় ব্যয় করেছেন কিন্তু তা ছিল অধিক সংখ্যক)। যখন তিনি সালাম ফিরালেন তখন লোকটি বলল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একজন সাহাবী অথচ এমনভাবে নামায আদায় করেন ? তখন আবু যর (রাযিঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি দরজা (মর্যাদা) বৃদ্ধি করবেন। তাই আমি নামাযে অধিক সিজদা করি (অর্থাৎ রাকআতের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি)।
ইবরাহীম নখঈ (রাহঃ) থেকে অপর একটি রিওয়ায়েতে আছে যে, রাবাহ নামক স্থানে। যর (রাযিঃ)-এর নিকট দিয়ে এক ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। তিনি সংক্ষিপ্তভাবে নামায আদায় করছিলেন এবং অধিক পরিমাণে রুকু-সিজদা করেছেন (অর্থৎ রাকআতসমূহের মধ্যে কম সময় ব্যয় করেছেন কিন্তু তা ছিল অধিক সংখ্যক)। যখন তিনি সালাম ফিরালেন তখন লোকটি বলল, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর একজন সাহাবী অথচ এমনভাবে নামায আদায় করেন ? তখন আবু যর (রাযিঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি দরজা (মর্যাদা) বৃদ্ধি করবেন। তাই আমি নামাযে অধিক সিজদা করি (অর্থাৎ রাকআতের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছি)।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّهُ صَلَّى صَلَاةً فَخَفَّفَهَا، وَأَكْثَرَ الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ، فَلَمَّا انْصَرَفَ، قَالَ لَهُ رَجُلٌ: أَنْتَ صَاحِبُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتُصَلِّي هَذِهِ الصَّلَاةَ؟ فَقَالَ أَبُو ذَرٍّ: أَلَمْ أُتِمَّ الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ؟ قَالَ: بَلَى، قَالَ: فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَنْ سَجَدَ لِلَّهِ سَجْدَةً رُفِعَ بِهَا دَرَجَةً فِي الْجَنَّةِ» ، فَأَحْبَبْتُ أَنْ تُؤْتَى دَرَجَاتٌ، أَوْ تُكْتَبُ لِي دَرَجَاتٌ، وَفِي رِوَايَةٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ مَنْ حَدَّثَهُ: أَنَّهُ مَرَّ بِأَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ بِالْرَبْذَةِ، وَهُوَ يُصَلِّي صَلَاةً خَفِيفَةً، يُكْثِرُ فِيهَا الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ، فَلَمَّا سَلَّمَ أَبُو ذَرٍّ، قَالَ لَهُ الرَّجُلُ: تُصَلِّي هَذِهِ الصَّلَاةَ، وَقَدْ صَحِبْتَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ ! فَقَالَ أَبُو ذَرٍّ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَنْ سَجَدَ لِلَّهِ سَجْدَةً رَفَعَهُ اللَّهُ تَعَالَى بِهَا دَرَجَةً فِي الْجَنَّةِ» .
فَلِذَلِكَ أُكْثِرُ فِيهَا السُّجُودَ
فَلِذَلِكَ أُكْثِرُ فِيهَا السُّجُودَ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে একটি সূত্র আলোচনা রয়েছে। তা হলো এই যে, নামাদের কিয়ামের মধ্যে অধিক সময় ব্যয় করে নামায দীর্ঘ করা উত্তম, না রাকআতের সংখ্যা বৃদ্ধি করে রুকু ও সিজদার সংখ্যা বৃদ্ধি করা অধিক সওয়াবের কাজ। এই বিষয়টি নিয়ে উলামায়ে কিরামের মে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ নামাযে দীর্ঘক্ষণ কিয়ামকে উত্তম ও সওয়াবের কারণ হয়ে করেন। কেউ কেউ উভয়টিতে সমান ফযীলত মনে করেন। সুতরাং এ বিষয়টি নিয়ে তিনটি মতামত দেখা যায়। সহীহ হাদীসসমূহে কিয়াম, রুকূ ও সিজদার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। ইমান আযম (র) বলেন, যেহেতু হাদীসে উভয়ের ফযীলত সম্পর্কে দলীল রয়েছে, তাই একটির উপর অপরটিকে প্রাধান্য দেওয়ার কোন সংগত কারণ নেই। সুতরাং তিনি এ ব্যাপারে কোন ফয়সাল প্রদান করেননি।
যাঁরা অধিক সিজদায় ফযীলতের পক্ষে মত পোষণকারী, তাঁরা দলীল হিসেবে এ হাদীসটি পেশ করেন। এছাড়া মুসলিম শরীফে হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসটিও দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত (সা) বলেছেন : "বান্দা ঐ সময় আল্লাহর অতি নিকটবর্তী হয়ে থাকে, যখন সে সিজদা অবস্থায় থাকে। সুতরাং এ সময়ে অধিক দু'আ করবে। এ হাদীস দ্বারা সিজদার ফযীলত এবং সিজদার মধ্যে অধিক সময় ব্যয় করার সওয়াব প্রমাণিত হয়,
যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী কিয়ামকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন, তাঁরা সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। উক্ত হাদীসে হুযূর (সা) বলেছেনঃ أفضل الصلاة بول القنوت "উত্তম হলো ঐ নামায যেখানে দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করা হয়।”পক্ষান্তরে কিয়াম কিরাআতের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং সিজদা তাসবীহর সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর কিরাআত তাসবীহ্ থেকে উত্তম। এ কারণেই হুযূর (সা) সিজদা থেকে কিয়ামে অধিক সময় ব্যয় করতেন। এছাড়া পরিশ্রম ও কষ্ট অনুযায়ী সওয়াব মিলে থাকে। কিয়ামে দৈহিক যে কষ্ট হয়, সিজদায় তা হয় না। তাই দীর্ঘক্ষণ সিজদার চেয়ে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম। হানাফী মাযহাবের তিনজন ইমাম এ মত পোষণ করেন। ইসহাক ইবনে রাহওয়ায়হ (র) এ মতামতের মধ্যে একটি মৎকার ও সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দিবাভাগের নামাযে রুকু-সিজদার মধ্যে আধিক্য এবং রাতের নামাযে দীর্ঘক্ষণ কিয়াম সংগতিপূর্ণ। ইমাম তিরমিযী (র) বলেছেনঃ তিনি হয়ত এ দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বলেছেন যে, হুযূর (সা) দিবাভাগের নামাযের চেয়ে রাতের নামাযের কিয়াম দীর্ঘ করতেন বলে বর্ণিত আছে। মোটকথা, এ ধারণা হুযূর (সা)-এর সুন্নত থেকে গৃহীত হয়েছে।
যাঁরা অধিক সিজদায় ফযীলতের পক্ষে মত পোষণকারী, তাঁরা দলীল হিসেবে এ হাদীসটি পেশ করেন। এছাড়া মুসলিম শরীফে হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসটিও দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত (সা) বলেছেন : "বান্দা ঐ সময় আল্লাহর অতি নিকটবর্তী হয়ে থাকে, যখন সে সিজদা অবস্থায় থাকে। সুতরাং এ সময়ে অধিক দু'আ করবে। এ হাদীস দ্বারা সিজদার ফযীলত এবং সিজদার মধ্যে অধিক সময় ব্যয় করার সওয়াব প্রমাণিত হয়,
যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী কিয়ামকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন, তাঁরা সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। উক্ত হাদীসে হুযূর (সা) বলেছেনঃ أفضل الصلاة بول القنوت "উত্তম হলো ঐ নামায যেখানে দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করা হয়।”পক্ষান্তরে কিয়াম কিরাআতের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং সিজদা তাসবীহর সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর কিরাআত তাসবীহ্ থেকে উত্তম। এ কারণেই হুযূর (সা) সিজদা থেকে কিয়ামে অধিক সময় ব্যয় করতেন। এছাড়া পরিশ্রম ও কষ্ট অনুযায়ী সওয়াব মিলে থাকে। কিয়ামে দৈহিক যে কষ্ট হয়, সিজদায় তা হয় না। তাই দীর্ঘক্ষণ সিজদার চেয়ে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম। হানাফী মাযহাবের তিনজন ইমাম এ মত পোষণ করেন। ইসহাক ইবনে রাহওয়ায়হ (র) এ মতামতের মধ্যে একটি মৎকার ও সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দিবাভাগের নামাযে রুকু-সিজদার মধ্যে আধিক্য এবং রাতের নামাযে দীর্ঘক্ষণ কিয়াম সংগতিপূর্ণ। ইমাম তিরমিযী (র) বলেছেনঃ তিনি হয়ত এ দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বলেছেন যে, হুযূর (সা) দিবাভাগের নামাযের চেয়ে রাতের নামাযের কিয়াম দীর্ঘ করতেন বলে বর্ণিত আছে। মোটকথা, এ ধারণা হুযূর (সা)-এর সুন্নত থেকে গৃহীত হয়েছে।
