মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৩. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৬০
মোযার উপর মাসেহ করা
৬০। হযরত মুগীরা ইবনে শু'বা (রাযিঃ) বলেন, আমি একবার রাসূল (ﷺ)-এর সাথে সফরে বের হয়েছিলাম (তাবুকের দিকে)। (পথিমধ্যে) হুযূর (ﷺ) ইস্‌তিনজা করার জন্য একটু দূরে গমন করেন এবং তা শেষ করে ফিরে আসেন। তিনি সংকীর্ণ ও চাপা রূমী জুব্বা পরিধান করেছিলেন। তিনি এটা উপরে উঠাতে চাইলেন কিন্তু হাত থেকে আস্তিন উঠছিল না। তাই তিনি জুব্বা উপরে উঠিয়ে নিলেন। হযরত মুগীরা (রাযিঃ) বলেন, আমার নিকট যে চামড়ার পাত্র ছিল, আমি এর দ্বারা পানি ঢালছিলাম। হুযূর (ﷺ) নামাযের জন্য উযূ করেন এবং মোযা না খুলে এর উপর মাসেহ করেন। অতঃপর সামনে গিয়ে নামায আদায় করেন।
عَنْ حَمَّادٍ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ: " أَنَّهُ خَرَجَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَانْطَلَقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى قَضَى حَاجَتَهُ، ثُمَّ رَجَعَ وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ رُومِيَّةٌ ضَيِّقَةُ الْكُمَّيْنِ، فَرَفَعَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ ضِيقِ كُمِّهَا، قَالَ الْمُغِيرَةُ: فَجَعَلْتُ أَصُبُّ عَلَيْهِ مِنَ الْمَاءِ مِنْ إِدَاوَةٍ مَعِي، فَتَوَضَّأَ وُضُوءَهُ لِلصَّلَاةِ، وَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ وَلَمْ يَنْزَعْهُمَا، ثُمَّ تَقَدَّمَ وَصَلَّى

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ ঘটনা বিভিন্ন বাক্যের পার্থক্য সহকারে সিহাহ সিত্তাহ নামক ছয়টি হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এ সমস্ত রিওয়ায়েত থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা উদ্ভাবিত হয়। তা হলো এই যে, হযরত মুগীরা (রা) বলেন, গাযওয়ায়ে তাবূকে আমি হুযুর (সা)-এর সাথে ছিলাম। তিনি পথিমধ্যে বাহনটি থামালেন এবং ইস্‌তিন্জা করার জন্য একটু দূরে গমন করেন। ফিরে আসার পর আমি তাঁর হাতে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি হাত ধৌত করলেন, অতঃপর মুখমন্ডল এবং কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করলেন। এরপর মাথা মাসেহ করেন। অতঃপর মোযার উপর মাসেহ করেন। উযূ শেষ করার পর আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলাম, লোকজন হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা)-কে ইমাম বানিয়ে ফজর নামায আদায় করছে। হযরত আবদুর রহমান। (রা) সালাম ফিরালেন। তখন হুযূর (সা) এক রাকআত পূর্ণ করলেন। হযরত (সা)-কে ছেড়ে নামায আদায় করায় লোকজন ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি সবাইকে অভয় দিয়ে বললেনঃ তোমরা ঠিকই করেছ।
উপরোক্ত হাদীস ও বর্ণিত ঘটনা থেকে আমরা কয়েকটি মাসয়ালা ও এর সমাধান পেয়ে থাকি। যেমনঃ হযরত (সা) যে জুব্বা পরিধান করেছিলেন, এর হাতা চাপা ছিল। সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, চাপা হাতাওয়ালা জামা পরিধান করা যাবে। বিশেষ করে জিহাদে যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে এই ধরনের জামা পরিধান করা জায়েয আছে। দ্বিতীয়তঃ যদি সওয়াবের আশায় কেউ দ্বিতীয়বার নতুন উযূ করে, তাহলে এটা জায়েয হবে। তৃতীয়তঃ মোযার উপর মাসেহ করার মাসয়ালাটির সমাধান হয়েছে এবং امسحوا برؤوسكم -এর সন্দেহ দূরীভূত হয়েছে। চতুর্থতঃ উক্ত হাদীস দ্বারা এটাও প্রতীয়মান হল যে, যদি সময় সংকীর্ণ হয় তাহলে ইমামের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। এছাড়া এটাও প্রতীয়মান হল যে, উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি অপেক্ষাকৃত কম মর্যাদাসম্পন্নের পিছনে নামাযে ইকতিদা করতে পারবে। কেননা হযরত (সা) স্বীয় উম্মতের একজনের পিছনে নামায আদায় করেছেন। পঞ্চমতঃ এটাও প্রমাণিত হয় যে, মোযা পরিধানের সময় পা পবিত্র হওয়া শর্ত। কেননা এক রিওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, হযরত মুগীরা (রা) মোযা খোলার জন্য সামনে ঝুঁকেন, তখন হুযূর (সা) বলেন, না, খুলতে হবে না। কেননা আমি পা পবিত্র অবস্থায় মোযা পরিধান করেছি।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান