মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৩. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৭
মোযার উপর মাসেহ করা
৫৭। হযরত বুরায়দা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (ﷺ) মক্কা বিজয়ের দিন একই উযূ দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন এবং মোযার উপর মাসেহ করেন (যা পূর্বে কখনো করেননি)। হযরত উমর (রাযিঃ) আরয করলেন, (হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)!) আজকের পূর্বে তো আপনাকে কখনো এরূপ করতে দেখিনি। তখন নবী (ﷺ) বলেনঃ হে উমর। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে এরূপ করেছি।
عَنْ عَلْقَمَةَ عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ «صَلَّى خَمْسَ صَلَوَاتٍ بِوُضُوءٍ وَاحِدٍ، وَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ» ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: مَا رَأَيْنَا صَنَعْتَ هَذَا قَبْلَ الْيَوْمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «عَمْدًا صَنَعْتُهُ يَا عُمَرُ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসে হযরত উমর (রা)-এর অবাক হওয়ার মূলত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথম কারণ এই যে, হুযূর (সা) উযূর মধ্যে পা ধৌত না করে মাসেহ করেছেন। দ্বিতীয়তঃ একই উযু দ্বারা তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেছেন। হযরত (সা) عمدا صنعت يا عمر এ বাক্যের দ্বারা দু'টি বিষয়কে সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, মোযার উপর মাসেহ করা শরীয়ত জায়েয রেখেছে এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুন উযূ করা আমার জন্য ফরয বা ওয়াজিব নয়। আমিও তোমাদের মত একই উযূ দ্বারা কয়েক ওয়াক্ত নামায আদায় করতে পারি। হযরত (সা) এর দ্বারা হযরত উমর (রা)-এর সামনে বিশেষভাবে মাসেহের গুরুত্ব সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। নতুবা মক্কা বিজয়ের পূর্বেই মাসেহ জায়েয করা হয়েছে। এর জায়েয হওয়ার সূচনা মক্কা বিজয় সাথে হয়নি। হুযূর (সা) অতীত জীবনে কখনো এরূপ করেননি; বরং মক্কা বিজয়ের পূর্বে তিনি প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুন উযূ করতেন। সম্ভবতঃ তিনি মুস্তাহাবের উপর আমল করেছেন, ফরয হওয়ার কারণে নয়।
অথবা পবিত্র কুরআনের আয়াত: اذا قمتم الى الصلاة فاغسلوا وجوهكم এর উপর আমল করার জন্য তিনি নতুন উযূ জরুরী মনে করেছিলেন। কারো কারো মতে এ আয়াত শুধু অপবিত্রতার জন্যই নয়, বরং পবিত্র অপবিত্র সবার জন্য। অর্থাৎ যখন তোমরা নামাযের ইচ্ছা করবে, তখন নতুন উযূ কর। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, হযরত সাআদ (রা) সমস্ত নামায এক উযূ দ্বারা আদায় করতেন এবং হযরত আলী (রা) প্রত্যেক নামাযের জন্য নতুন উযূ করতেন। হযরত দারিমী (র) বলেন, হুযূর (সা)-এর উপরোক্ত আমল দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, উক্ত আয়াত শুধু অপবিত্রতার জন্য। তিনি দলীল হিসেবে এ হাদীস পেশ করেন لا وضوء إلا من حدث অর্থাৎ অপবিত্রতার জন্যই উযূ। যদি উযূ ভেঙ্গে যায়, তাহলে উযূ কর। নতুবা করো না। অথচ এই ইঙ্গিতের জন্য কোন বিশেষ দলীল নেই। মোটকথা, এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, উযূ করা হযরত (সা)-এর জন্যও ফরয ছিল, এ আয়াতের দ্বারা হোক বা অন্য আয়াতের দ্বারা এবং মক্কা বিজয়ের সময় ঐ ফরয রহিত হয়ে যায়। এ রহিত হওয়াকে হযরত (সা) স্বীয় আমলের দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রকাশ করেছেন।
এটাও সাথে সাথে মানতে হবে যে, উম্মতের উপর উযূর নিয়মানুবর্তিতা ছিল না। কেননা বুখারী, আবূ দাউদ ও ইবনে মাজাহ শরীফে হযরত আনাস ইবন মালিক (রা) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সা) প্রত্যেক নামাযের জন্য উযূ করতেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, তখন আপনারা কি করতেন? তিনি বললেন, উযূ নষ্ট না হলে একই উযূ আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। এমনিভাবে তিরমিযী শরীফে হযরত আনাস (রা) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে। উপরোক্ত হাদীসের দ্বারা তাদের মতামতকে খন্ডন করা হয়েছে যারা বলেন, সকলের উপর নতুন উযূ করা ফরয এবং মক্কা বিজয়ের পর তা বাতিল হয়েছে। মোল্লা আলী ক্বারী (র) এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, হযরত (সা)-ই আমলের দ্বারা মাসেহ জায়েয হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন এবং উপরোক্ত আয়াত বাতিল (মানসূখ) না হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। বরং اَرْجُلَكُمْ শব্দে যের ও জবর উভয় কিরাআত নিজ নিজ অর্থে ব্যবহৃত হবে। জবর হলে উভয় পা ধৌত করার উপর এবং যের হলে মোষার উপর মাসেহ করার অর্থে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু এ ধারণাও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। কেননা মাসেহ করার জন্য গোড়ালির সীমা নেই কিন্তু এখানে সীমা রয়েছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন