মুসনাদে ইমাম আযম আবু হানীফা রহঃ

৩. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৪
বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দ্বারা উযূ করার বর্ণনা
৪৪। হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার উযূ করার ইচ্ছা করেন। এ সময় একটি বিড়াল এসে উযূর পানি থেকে পানি পান করে। তিনি ঐ পানি দ্বারা উযূ করেন এবং অবশিষ্ট পানি জমির মধ্যে ছিটিয়ে দেন।
عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «تَوَضَّأَ ذَاتَ يَوْمٍ فَجَاءَتِ الْهِرَّةُ، فَشَرِبَتْ مِنَ الْإِنَاءِ، فَتَوَضَّأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَمَّ مِنْهُ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইমাম তাহাবী ও দারে কুতনী (র) হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সা) বিড়ালের দিকে থালা ঝুঁকিয়ে দিতেন যাতে বিড়াল এর থেকে পানি পান করে।

বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পবিত্র না অপবিত্র, এটা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। আয়িয়াম্মে সালাসা অর্থাৎ হযরত ইমাম শাফিঈ (র), হযরত ইমাম মালিক (র) এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র)-এর মতে মাকরূহ ছাড়াই বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পবিত্র। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে মাকরূহ তানযীহ। তিনজন আয়িম্মার দলীল উপরে বর্ণিত স্পষ্ট হাদীস। অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, এই বিড়াল তোমাদের নিকটে ও আশেপাশে যাতায়াত ও গমনাগমন করে থাকে। এর উচ্ছিষ্ট পবিত্র। কেননা এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। ইমাম সাহেব (র)-এর মাকরূহ বলার দলীল একই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে অবস্থার প্রেক্ষিতে হাদীসের বর্ণনামতে হুযূর (সা)-এর উযূ দ্বারা পানির পবিত্রতা প্রমাণিত হয়, কিন্তু হাদীসের শেষভাগে বলা হয়েছে وَرَشَّ مَا بَقىَ অর্থাৎ অবশিষ্ট পানি তিনি জমির উপর ছিটিয়ে দিয়েছেন। যাতে অন্য কেউ তা ব্যবহার করতে না পারে। কেননা ব্যবস্থা না থাকলে বাধ্য হয়ে এ পানি মাকরূহ হওয়া সত্ত্বেও ব্যবহার জায়েয; এটা তা'লীম দেওয়ার জন্যই হুযূর (সা) এই পানি ব্যবহার করেছেন। অন্যরা এই মর্যাদা কিভাবে লাভ করতে পারে? বরং তারা এটা সাধারণ মনে করে ব্যবহার করতে থাকবে। তাই তিনি অবশিষ্ট পানি ফেলে দিয়েছেন। এর দ্বারা হুযূর (সা) উক্ত পানি মাকরূহ হওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। অন্য এক হাদীসে হুযূর (সা) বলেছেনঃ এটা অপবিত্র নয়, طَوَّافُوْنَ عَلَى بُيُوْتِكُمْ অর্থাৎ এগুলো (বিড়ালগুলো) তোমাদের বাসস্থানে গমনাগমন করে থাকে।

এই বর্ণনার দ্বারা প্রকৃত বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে যে, বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি যদিও মাকরূহ কিন্তু বাধ্য হয়ে এটা জায়েয রাখা হয়েছে। অন্য এক হাদীসে আছে اَلْهِرَّةَ سَبُعُ অর্থাৎ বিড়াল এক প্রকার হিংস্র জন্তু। সুতরাং অন্যান্য হিংস্র জন্তুর উচ্ছিষ্ট যেমনি অপবিত্র, তেমনি বিড়ালের উচ্ছিষ্টও অপবিত্র হওয়া উচিত। কিন্তু বিড়াল যেহেতু মানুষের গৃহপালিত পশুর মত। ফলে এর উচ্ছিষ্ট অপবিত্র বলে গণ্য করা হলে মানুষের জন্য জীবন যাপন কষ্টকর হয়ে পড়বে। তাই হযরত (সা) طَوَّافُوْنَ عَلَى بُيُوْتِكُمْ বলে উম্মতকে এ কষ্ট থেকে রক্ষা করেছেন এবং ইমাম সাহেব (র) স্বীয় তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার দ্বারা এই মত ও সিদ্ধান্ত প্রদান করেন যে, বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পবিত্র কিন্তু মাকরূহ তানযীহ।

ইসলামে অক্ষমতা ও সংকীর্ণতার সময় এ ধরনের সুযোগ সাধারণভাবে প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন ঘরে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু পবিত্র কুরআনে ওজরবশতঃ طَوَّافُونَ عَلَيْكُمْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ গোলাম ও শিশুদের জন্য তা রহিত করা হয়েছে; বরং দীনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একই উদ্দেশ্যে এ ধরনের সুযোগ দান করা হয়ে থাকে। কেননা দীন সংকীর্ণতার জন্য নয়; বরং সংকীর্ণতা দূর করে তা সহজ সরল করার জন্য।